স্যটেলাইট নাকি ক্ষেপণাস্ত্র, কিসের প্রস্তুত নিচ্ছে উ. কোরিয়া?
উত্তর
কোরিয়া একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মঙ্গলবার সিউলের
একটি পত্রিকা একথা জানিয়েছে। বাইরের দেশের পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে দিয়ে
বলেছেন যে, পারমাণবিক ক্ষমতাধর এ রাষ্ট্রের মহাকাশ কর্মসূচি হচ্ছে অস্ত্র
পরীক্ষার একটি কৌশল মাত্র। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোয়
জাতিসঙ্ঘ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এছাড়া দেশটির
বিরুদ্ধে স্যাটেলাইটসহ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোন
ধরণের পরীক্ষা চালানোও ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক জনগাং ইলবোর খবরে বলা হয়,
‘বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি যে উত্তর কোরিয়া
নতুন একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে। তাদের
এ স্যাটেলাইটের নাম কোয়াংমিয়ংসং-৫।’ এক্ষেত্রে ‘তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে
ক্যামেরা ও টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইস সম্বলিত একটি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন
করা।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর কোরিয়া তাদের কোয়াংমিয়ংসং-৪
নামের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ
অব স্টাফের মুখপাত্র জানান, এতে এখন আশঙ্কার কোন কারণ না থাকলেও সিউল
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আড়ালে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ উত্তর কোরিয়ার
উস্কানিমূলক যেকোনো ধরণের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। উত্তর কোরিয়ার
ক্ষমতাসীন দলের পত্রিকা রোডং সিনমুন সরকারের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও মহাকাশ
প্রযুক্তি উন্নয়নের অধিকারকে সমর্থন করার পর জনগাং ইলবোর এই প্রতিবেদনটি
প্রকাশিত হল। উ. কোরিয়ার সাথে যুদ্ধ বাধলে তিন সপ্তাহে মরবে ২০ লাখ লোক
উত্তর কোরিয়া বলেছে, তাদের ওপর জাতিসঙ্ঘের সবশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুদ্ধ
ঘোষণার শামিল। গত মাসে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর শাস্তি
হিসেবেই জাতিসঙ্ঘের এ নিষেধাজ্ঞা। পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার সাথে
সত্যিই যুদ্ধ বেধে গেলে কী ঘটবে সে সম্পর্কে দুইজন উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ এ
নিয়ে কথা বলেছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুমানের ভিত্তিতে বলেছেন, এ রকম
একটি যুদ্ধে প্রথম কয়েক দিনে বা কয়েক সপ্তাহে অকল্পনীয় মাত্রায় মানুষের
মৃত্যু ঘটবে। তারা বলেন, প্রথম এক সপ্তাহেই মৃত্যু হবে সামরিক ও বেসামরিক
লোকসহ তিন থেকে চার লাখ মানুষের। আর তিন সপ্তাহ শেষ হতে হতে মৃত্যু ঘটবে ২০
লাখেরও বেশি। দুই বিশেষজ্ঞের একজন হলেন ডেভিড ম্যাক্সওয়েল, যিনি মার্কিন
সেনাবাহিনীর হয়ে কোরিয়া অঞ্চলে কাজ করেছেন এবং আরেকজন ব্রুস বেকটল - যিনি
পেন্টাগনের সাবেক একজন বিশ্লেষক। ডেভিড ম্যাক্সওয়েল বলছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার
একজন সেনানায়ক এ ক্ষেত্রে যা করতে চাইবেন তা হলো তাদের গোলন্দাজ বাহিনীর
ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার- যার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় যত বেশি সম্ভব মৃত্যু ও
ধ্বংস ঘটানো।
প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উত্তর কোরিয়া থেকে আক্ষরিক অর্থেই
লাখ লাখ কামানের গোলা ও রকেট বৃষ্টির মতো পড়তে থাকবে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর।
এর অনেকগুলো পড়বে রাজধানী সিউলের ওপর। উত্তর কোরিয়ার রিজার্ভ বাহিনীর
সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। তাই তাদের বলা যেতে পারে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ সামরিক
বাহিনী। তিনি বলেন, ‘যখনই তাদের নেতা কিম জং আন মনে করবেন যে তিনি হুমকির
মুখে- তখনই তিনি আক্রমণের নির্দেশ দেবেন। এ নির্দেশ বহু কারণে আসতে পারে।
মার্কিন বাহিনীর বা তাদের মিত্ররা যদি নিজেরাই আগে আক্রমণ করে, বা কোনো
একটা ভুল পদক্ষেপও নেয়- তা থেকেও এটা ঘটে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে
আমেরিকানদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ব্রুস বেকটল বলছেন, তাদের কৌশল হবে
বিমানবাহিনীর শক্তি ব্যবহার করা এবং উত্তর কোরিয়ার বাহিনীকে যতটা সম্ভব
আটকে রাখার চেষ্টা করা- সময় নেয়া, যাতে ট্যাংক, ট্রাক, সাঁজোয়া যান, কামান
ইত্যাদি ভারী সামরিক সরঞ্জাম এবং স্থল সেনাদের যুদ্ধজাহাজের বহরে ওঠানো
যায়। মেরিন কোরের সৈন্যরা জাপান থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে তিন বা চার
দিন। টেক্সাস থেকে ভারী ট্যাংকগুলোকে নিয়ে আসতে সময় লাগবে তিন সপ্তাহ।’
যুদ্ধের সমাপ্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর
সমরাস্ত্র, খাদ্য, জ্বালানি ইত্যাদির যা মজুত আছে তাতে তারা দুই থেকে তিন
সপ্তাহ যুদ্ধ করতে পারবে। তাদের পরিকল্পনার মূল কথাই হবে যে এ সময়ের মধ্যেই
যা করার তা করে ফেলতে হবে। কারণ এরপর তাদের কিছুই থাকবে না।’ তাদের সামরিক
ইউনিটগুলো ভেঙে পড়তে শুরু করার সাথে সাথে যুদ্ধের তীব্রতাও কমে আসবে। সে
সময় কিম জং আন বুঝতে পারবেন যে তার আর যুদ্ধ করার মতো ক্ষমতা নেই। যখন তারা
এটা বুঝতে পারবে, তখন তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার আর কোনো
কারণ থাকবে কি? তারা ভাববে, এর মাধ্যমে কয়েক লাখ আমেরিকানকে তো হত্যা করা
যাবে।- বিবিসি
No comments