কাঠালিয়ায় শ্রমিক সঙ্কটে পাকা ধান ঝরে যাচ্ছে মাঠে
ঝালকাঠির
কাঠালিয়ায় চলতি মৌসুমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় সম্প্রতি অসময়ের ঝড়ো
বৃষ্টিতে নিচু এলাকার পাকা ও আধা পাকা ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হওয়ার
উপক্রম হলেও শ্রমিক সংকটে তা কেটে ঘরে তুলতে পারছে না কাঠালিয়ার চাষিরা।
উপকূলীয় এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হলেও হঠাৎ করে ঝড়ো
বৃষ্টির প্রভাবে অধিকাংশ জমির পাকা ও আধা পাকা ধান নিয়ে বিপাকে রয়েছে
কৃষকরা। উপজেলার প্রধানত ৫৪টি গ্রামের চাষিরা এখন পাকা আমন ধান কাটার সময়
শ্রমিক সংকটে পড়েছে। পাকা ধান ক্ষেতেই পেকে ঝরে যাচ্ছে। এ উপজেলায় ১০ হাজার
৯ শত ৫০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক
বিপর্যয়ের পরও ধানের বাজার ভাল থাকায় আমন চাষিরা লাভের স্বপ্ন দেখছিল।
কিন্তু চাষিরা দৈনিক ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাচ্ছে না।
আর এ কারণে মাঠের ধান মাঠে ঝরে গিয়ে উৎপাদন হারাচ্ছে চাষিরা। কৃষি বিভাগ
দাবি করেছে আগামীতে পদ্মা সেতু নির্মান হলে দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে ঝালকাঠি
জেলার কাঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মিল কারখানা গড়ে উঠবে। তখন কৃষি
শ্রমিক সংকট আরও বড় আকার ধারন করবে। তাই কৃষি বিভাগ সেই দিক বিবেচনা করে
কৃষকদের দলবদ্ধ করে চাষাবাদকে যান্ত্রিকতার আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কৃষকদের উপস্থিতিতে কম্বাইন্ড হারবেস্টার, ডিপার মেশিন-
এই যন্ত্রগুলো দিয়ে কৃষকের মাঠের ধান কর্তন করে মাঠ দিবস করা হচ্ছে। একই
সঙ্গে যন্ত্রের উপকারিতা ও অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। কৃষক
জালাল ফকির বলেন, এবছর আমন আবাদ ভালো হয়েছে কিন্তু দৈনিক ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা
মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাচ্ছি না। আর এ কারণে মাঠের ধান মাঠে ঝরে গিয়ে
উৎপাদন হারাচ্ছি আমরা চাষিরা।
কৃষক নূরনবী তালুকদার বলেন, নানা প্রতিকূলতার
মধ্যেও আমানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের সেই স্বপ্ন কষ্টার্জিত ধান এখন
কাঁদা পানিতে লেপ্টে আছে। আশানুরূপ ফলন থেকে এবার কৃষকরা বঞ্চিত হওয়ার
উপক্রম দেখা দিয়েছে। কৃষি শ্রমিক সংকট থাকলে এবার ক্ষেতের ধান সঠিকভাবে
কেটে ঘরে তোলা অসম্ভব বলে মনে মনে হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ
উপজেলায় ১০ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ করা হয়েছে।
কয়েক দিনের বর্ষণে প্রায় ২৩শ’ ৭০ হেক্টর জমির আমন ধান হেলে পানিতে নিমজ্জিত
হয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধানের খড়কুটা পচে যাওয়ায় ও কর্দমাক্ত হওয়ায়
গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিবে বলেও মনে করছে উপজেলা কৃষি অফিস। কাঠালিয়া
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা
সত্ত্বেও রোপা আমন ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের ফলনও
হয়েছে ভালো। তিনি বলেন, আমাদের দেশের স্বনির্ভরতার সবচেয়ে বড় অর্জন এই ধান।
এ বছর কৃষি শ্রমিক সংকটের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, চাষিরা দৈনিক ৫শ’ থেকে ৬শ’
টাকা মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাচ্ছে না। আর এ কারণে মাঠের ধান মাঠে ঝরে
গিয়ে উৎপাদন হারাচ্ছে চাষিরা। ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ
পরিচালক শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানান, কৃষিশ্রমিক সংকটের বিষয়টি মাথায় রেখেই
চাষাবাদে কৃষকদের যান্ত্রিকতায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য রিপার মেশিন ও কম্বাইন্ড
হারবেস্টারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় শুরু করা হয়েছে।
No comments