নেপালে যেভাবে নিরঙ্কুশ প্রভাব খুঁইয়েছে ভারত by প্রশান্ত ঝা
নেপাল
২০১৫ সালে নিজেদের নতুন সংবিধান প্রণয়নে সক্ষম হয়। বছর না ফুরোতেই দেশটির
দক্ষিণাঞ্চলীয় সমতলভূমির মাধেসি জনগোষ্ঠী এই সংবিধানের রাজনৈতিক
প্রতিনিধিত্বের কাঠামো ও যুক্তরাষ্ট্রবাদের সংশোধন চেয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে
তোলে। ভারত-ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত মাধেসি সম্প্রদায়ের নেতাদের যুক্তি ছিল, ওই
সংবিধানের ফলে খুবই পক্ষপাতদুষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। ওই
ঝঞ্ঝাটময় সময়ে এক ভারতীয় কূটনীতিক স্থানীয় এক মাধেসি নেতাকে বলেন, ‘আপনারা
নিজেরাই একটা সংবিধান প্রনয়ণ করছেন না কেন? শুধু তাতেই কাঠমন্ডুর শিক্ষা
হবে। আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে।’
ঠিক দেড় বছর পর, অর্থাৎ ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে নেপালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু, তখনও সংবিধান সংশোধনের দাবিতে অনড় মাধেসি দলগুলো ওই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কারণ, নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে সংবিধানকে মেনে নেওয়ার শামিল। এবারও একজন গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় কূটনীতিক ঠিক আগের ওই মাধেসি নেতার সঙ্গে কথা বলেন। এবার অবশ্য ভাষা আর সুর সম্পূর্ণ আলাদা। ওই কূটনীতিক বলেন, ‘মাধেসি এখন আমাদের বোঝা হয়ে উঠেছে। আপনাদের উচিত হবে কাঠমন্ডুর মূলধারার কাছে নতি স্বীকার করা। তা করতে গিয়ে যদি ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ও হতে হয়, তবুও তা-ই করুন। ভারতের একমাত্র স্বার্থ হলো এখন কাঠমন্ডুকে খুশি রাখা, যাতে তারা চীনের দিকে না ঘেঁষে।’
এই পরস্পরবিরোধী বার্তাতেই নিহিত আছে ভারতের নেপাল-নীতির স্বরূপ। এ থেকেই বোঝা সম্ভব কেন নেপালের সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত ‘কম্যুনিস্ট জোট’ জয় পেয়েছে। এটিও বোঝা যাবে, ভারতের অসামঞ্জস্যপূর্ণতা, অ্যাড-হক ভিত্তিতে নীতি প্রনয়ণ, ক্ষমতার ভারকেন্দ্রের বহুমুখীতা, পরস্পরবিরোধী বার্তা ও সদিচ্ছার অভাব কীভাবে এই নির্বাচনী ফলের জন্ম দিয়েছে।
নেপালে গত দুই বছরে ৫টি ধাপ অতিক্রম করেছে ভারতের কূটনীতি। প্রথমটি ছিল, নেপালের সংবিধান প্রনয়ণ প্রক্রিয়ায় নিজের মূল উদ্বেগকে সংজ্ঞায়িত করা। ২০১৫ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে নেপালের পার্বত্য অঞ্চলের অভিজাতরা খসড়া সংবিধান নিয়ে মতৈক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেন। তখনই মাধেস অঞ্চলে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ওই সময়টাই দিল্লি কাঠমন্ডুকে ইঙ্গিত দিতে থাকে মাধেসিদের উদ্বেগকে আমলে নিয়ে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এমন সংবিধানই কাম্য। এটি ভালো পরামর্শই ছিল। অংশগ্রহণমূলক দু’ পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক ছিল। কারণ, নতুন সংবিধানে সকল নাগরিকের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকতে হবে। ভারতের জন্যও ভাল হবে, কারণ অংশগ্রহণমূলক হলে ভারত-বিরোধী জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত নেপালের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য আসবে। তবে ওই পরামর্শ দিতে দেরি হয়ে গেছে। নেপালের দলগুলোর সঙ্গে আলাপে নিজের প্রভাব ব্যবহার করেনি ভারত। পাশাপাশি, কেন একটি অংশগ্রহণমূলক সংবিধান প্রয়োজন, তা স্পষ্ট করে শক্ত রাজনৈতিক মত গড়তে পারেনি। নেপালের পার্বত্য অভিজাতরা এই সুযোগে প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়। তখনই ভারত সুযোগ হারিয়ে ফেলে।
কথায় আছে, সময়ের এক ফোঁড়, আর অসময়ের দশ ফোঁড়। এ কারণেই শেষমেশ নিজেদের চূড়ান্ত অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত ও দেশটির মাধেসি মিত্ররা। ভারত-সীমান্তবর্তী মাধেসিরা সীমান্ত বন্ধ করে আন্দোলন করতে থাকে। স্থলবেষ্টিত নেপাল তৎক্ষণাৎ ব্যাপক চাপে পড়ে যায়। কিন্তু নতি স্বীকার করার বদলে, নেপাল বরং ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি জাতীয়তাবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পাশাপাশি, দ্বারস্থ হন অপেক্ষারত চীনের কাছে। ওদিকে পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরেও সমালোচনা শুরু হয়। কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে মোদি সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে।
সমালোচনায় জেরবার হয়ে মোদি সরকার নিজের উদ্দেশ্য পুরোপুরি হাসিল না করেই পিছু হটে। অবরোধ প্রত্যাহারে মাধেসিদের চাপ দিতে থাকে ভারত। পুরো বিষয়টিকে নিজেদের বিপুল বিজয় হিসেবে দেখে নেপাল সরকার। কারণ, তারা ভারতের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’কে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হয়েছে। নেপাল বুঝতে পারে চীন কার্ড খেললেই দিল্লি ভয় পেয়ে পিছু হটবে।
এ পর্যায়ে এসে ভারত সিদ্ধান্ত নেয়, অংশগ্রহণমূলক সংবিধান আর তার মাথাব্যাথা নয়। এবারের মিশন কেপি ওলিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ, অথবা তাকে শিক্ষা দেওয়া। ভারত ভেতরে ভেতরে শাসক জোটের অংশীদার প্রচন্ডকে সরে গিয়ে নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি করায়। কেপিকেও শিক্ষা দেওয়া হলো, আর মুখও রক্ষা হলো যে, নেপালের সঙ্গে আর কোনো সমস্যা নেই।
ষোলকলা পূর্ণ হলো যখন ভারত মাধেসি দলগুলোকে নির্বাচিত অংশ নিতে চাপ দিতে থাকে। তারা তখনও সংবিধান নিয়ে খুবই অস্বস্তিতে ছিল। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ফলে দুই বছর ধরে চলমান বয়কট ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। পুরো সময়টাতে ভারতের আনুষ্ঠানিক নীতি ‘অংশগ্রহণমূলক সংবিধানে’র পক্ষে বলা হলেও, শাসক গোষ্ঠির বড় একটি অংশ নেপালকে এই বার্তাই দিচ্ছিল যে, ভারতের স্বার্থ হলো হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, অংশগ্রহণমূলক সংবিধান স্রেফ মুখের কথা। কাঠমন্ডুর নেতারা ভারতের শাসক গোষ্ঠির এই বিভাজনকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে।
এভাবেই নেপালের অভিজাতদের ওপর নিজের প্রভাব হারায় ভারত। প্রথমে মাধেসিদের সমর্থন দিয়েও, পরে পিছু হটেছে ভারত। মাধেসি গোষ্ঠীকে এমন একটি সংবিধান মানতে রাজি করিয়েছে ভারত, যার জন্য তারা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে। এ কারণে তাদের বিরাট এক অস্ত্র, অর্থাৎ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। পাশাপাশি, চীনাদের জন্যও নেপালের দ্বার খুলে গেছে।
এই জাতীয় নির্বাচনে ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত কম্যুনিস্ট জোটের জয়ের ফলে ‘আংশিক স্বার্বভৌম’ রাষ্ট্র থেকে নেপাল ‘প্রায় সম্পূর্ণ স্বার্বভৌম’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আগে নেপালের ঘরোয়া রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ভূমিকা পালন করতো। আর এখন ওই প্রভাব তলানিতে।
নেপালে নিজের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হারানোর অন্যতম কারণ হতে পারে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক, সুশীল সমাজ ও জনমত গঠনকারীদের ওপর ভারতের প্রভাব খাটানোর সীমিত ক্ষমতা এবং দেশটির সঙ্গে ভারতের আবেগীয় সম্পর্কের ঘাটতি। অতীতে নেপালি রাজনীতিতে একাধিপত্যের কারণে ভারত চাইলে যা খুশি তা-ই করতে পারতো। কিন্তু এখন চীন বাম জোটকে জোরালোভাবে সমর্থন দেওয়ায়, ওই একাধিপত্য শেষ। এখন ভারতের সামনে বিকল্প আছে দুইটি। একটি হলো, নেপালের ঘরোয়া রাজনীতির অকার্যকর ও অক্ষম খেলোয়াড় হিসেবে নিজের ভূমিকা অব্যাহত রাখা। অপরটি হলো, সরে দাঁড়ানো এবং চীনকে শূন্যস্থান পূরণের সুযোগ করে দেওয়া। ভারত যে বিকল্পই বেছে নিক না কেন, হারানো বৈ অর্জনের কিছুই কোনটিতে নেই।
(প্রশান্ত ঝা ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক। এই লেখাটি পত্রিকাটিতে প্রকাশিত তার একটি নিবন্ধের অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন: মাহমুদ ফেরদৌস।)
ঠিক দেড় বছর পর, অর্থাৎ ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে নেপালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু, তখনও সংবিধান সংশোধনের দাবিতে অনড় মাধেসি দলগুলো ওই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কারণ, নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে সংবিধানকে মেনে নেওয়ার শামিল। এবারও একজন গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় কূটনীতিক ঠিক আগের ওই মাধেসি নেতার সঙ্গে কথা বলেন। এবার অবশ্য ভাষা আর সুর সম্পূর্ণ আলাদা। ওই কূটনীতিক বলেন, ‘মাধেসি এখন আমাদের বোঝা হয়ে উঠেছে। আপনাদের উচিত হবে কাঠমন্ডুর মূলধারার কাছে নতি স্বীকার করা। তা করতে গিয়ে যদি ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ও হতে হয়, তবুও তা-ই করুন। ভারতের একমাত্র স্বার্থ হলো এখন কাঠমন্ডুকে খুশি রাখা, যাতে তারা চীনের দিকে না ঘেঁষে।’
এই পরস্পরবিরোধী বার্তাতেই নিহিত আছে ভারতের নেপাল-নীতির স্বরূপ। এ থেকেই বোঝা সম্ভব কেন নেপালের সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত ‘কম্যুনিস্ট জোট’ জয় পেয়েছে। এটিও বোঝা যাবে, ভারতের অসামঞ্জস্যপূর্ণতা, অ্যাড-হক ভিত্তিতে নীতি প্রনয়ণ, ক্ষমতার ভারকেন্দ্রের বহুমুখীতা, পরস্পরবিরোধী বার্তা ও সদিচ্ছার অভাব কীভাবে এই নির্বাচনী ফলের জন্ম দিয়েছে।
নেপালে গত দুই বছরে ৫টি ধাপ অতিক্রম করেছে ভারতের কূটনীতি। প্রথমটি ছিল, নেপালের সংবিধান প্রনয়ণ প্রক্রিয়ায় নিজের মূল উদ্বেগকে সংজ্ঞায়িত করা। ২০১৫ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে নেপালের পার্বত্য অঞ্চলের অভিজাতরা খসড়া সংবিধান নিয়ে মতৈক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেন। তখনই মাধেস অঞ্চলে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ওই সময়টাই দিল্লি কাঠমন্ডুকে ইঙ্গিত দিতে থাকে মাধেসিদের উদ্বেগকে আমলে নিয়ে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এমন সংবিধানই কাম্য। এটি ভালো পরামর্শই ছিল। অংশগ্রহণমূলক দু’ পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক ছিল। কারণ, নতুন সংবিধানে সকল নাগরিকের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকতে হবে। ভারতের জন্যও ভাল হবে, কারণ অংশগ্রহণমূলক হলে ভারত-বিরোধী জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত নেপালের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য আসবে। তবে ওই পরামর্শ দিতে দেরি হয়ে গেছে। নেপালের দলগুলোর সঙ্গে আলাপে নিজের প্রভাব ব্যবহার করেনি ভারত। পাশাপাশি, কেন একটি অংশগ্রহণমূলক সংবিধান প্রয়োজন, তা স্পষ্ট করে শক্ত রাজনৈতিক মত গড়তে পারেনি। নেপালের পার্বত্য অভিজাতরা এই সুযোগে প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়। তখনই ভারত সুযোগ হারিয়ে ফেলে।
কথায় আছে, সময়ের এক ফোঁড়, আর অসময়ের দশ ফোঁড়। এ কারণেই শেষমেশ নিজেদের চূড়ান্ত অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত ও দেশটির মাধেসি মিত্ররা। ভারত-সীমান্তবর্তী মাধেসিরা সীমান্ত বন্ধ করে আন্দোলন করতে থাকে। স্থলবেষ্টিত নেপাল তৎক্ষণাৎ ব্যাপক চাপে পড়ে যায়। কিন্তু নতি স্বীকার করার বদলে, নেপাল বরং ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি জাতীয়তাবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পাশাপাশি, দ্বারস্থ হন অপেক্ষারত চীনের কাছে। ওদিকে পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরেও সমালোচনা শুরু হয়। কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে মোদি সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে।
সমালোচনায় জেরবার হয়ে মোদি সরকার নিজের উদ্দেশ্য পুরোপুরি হাসিল না করেই পিছু হটে। অবরোধ প্রত্যাহারে মাধেসিদের চাপ দিতে থাকে ভারত। পুরো বিষয়টিকে নিজেদের বিপুল বিজয় হিসেবে দেখে নেপাল সরকার। কারণ, তারা ভারতের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’কে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হয়েছে। নেপাল বুঝতে পারে চীন কার্ড খেললেই দিল্লি ভয় পেয়ে পিছু হটবে।
এ পর্যায়ে এসে ভারত সিদ্ধান্ত নেয়, অংশগ্রহণমূলক সংবিধান আর তার মাথাব্যাথা নয়। এবারের মিশন কেপি ওলিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ, অথবা তাকে শিক্ষা দেওয়া। ভারত ভেতরে ভেতরে শাসক জোটের অংশীদার প্রচন্ডকে সরে গিয়ে নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি করায়। কেপিকেও শিক্ষা দেওয়া হলো, আর মুখও রক্ষা হলো যে, নেপালের সঙ্গে আর কোনো সমস্যা নেই।
ষোলকলা পূর্ণ হলো যখন ভারত মাধেসি দলগুলোকে নির্বাচিত অংশ নিতে চাপ দিতে থাকে। তারা তখনও সংবিধান নিয়ে খুবই অস্বস্তিতে ছিল। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ফলে দুই বছর ধরে চলমান বয়কট ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। পুরো সময়টাতে ভারতের আনুষ্ঠানিক নীতি ‘অংশগ্রহণমূলক সংবিধানে’র পক্ষে বলা হলেও, শাসক গোষ্ঠির বড় একটি অংশ নেপালকে এই বার্তাই দিচ্ছিল যে, ভারতের স্বার্থ হলো হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, অংশগ্রহণমূলক সংবিধান স্রেফ মুখের কথা। কাঠমন্ডুর নেতারা ভারতের শাসক গোষ্ঠির এই বিভাজনকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে।
এভাবেই নেপালের অভিজাতদের ওপর নিজের প্রভাব হারায় ভারত। প্রথমে মাধেসিদের সমর্থন দিয়েও, পরে পিছু হটেছে ভারত। মাধেসি গোষ্ঠীকে এমন একটি সংবিধান মানতে রাজি করিয়েছে ভারত, যার জন্য তারা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে। এ কারণে তাদের বিরাট এক অস্ত্র, অর্থাৎ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। পাশাপাশি, চীনাদের জন্যও নেপালের দ্বার খুলে গেছে।
এই জাতীয় নির্বাচনে ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত কম্যুনিস্ট জোটের জয়ের ফলে ‘আংশিক স্বার্বভৌম’ রাষ্ট্র থেকে নেপাল ‘প্রায় সম্পূর্ণ স্বার্বভৌম’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আগে নেপালের ঘরোয়া রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ভূমিকা পালন করতো। আর এখন ওই প্রভাব তলানিতে।
নেপালে নিজের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হারানোর অন্যতম কারণ হতে পারে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক, সুশীল সমাজ ও জনমত গঠনকারীদের ওপর ভারতের প্রভাব খাটানোর সীমিত ক্ষমতা এবং দেশটির সঙ্গে ভারতের আবেগীয় সম্পর্কের ঘাটতি। অতীতে নেপালি রাজনীতিতে একাধিপত্যের কারণে ভারত চাইলে যা খুশি তা-ই করতে পারতো। কিন্তু এখন চীন বাম জোটকে জোরালোভাবে সমর্থন দেওয়ায়, ওই একাধিপত্য শেষ। এখন ভারতের সামনে বিকল্প আছে দুইটি। একটি হলো, নেপালের ঘরোয়া রাজনীতির অকার্যকর ও অক্ষম খেলোয়াড় হিসেবে নিজের ভূমিকা অব্যাহত রাখা। অপরটি হলো, সরে দাঁড়ানো এবং চীনকে শূন্যস্থান পূরণের সুযোগ করে দেওয়া। ভারত যে বিকল্পই বেছে নিক না কেন, হারানো বৈ অর্জনের কিছুই কোনটিতে নেই।
(প্রশান্ত ঝা ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক। এই লেখাটি পত্রিকাটিতে প্রকাশিত তার একটি নিবন্ধের অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন: মাহমুদ ফেরদৌস।)
No comments