নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে ঝুঁকছে মানুষ
জলবায়ু
পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চাষাবাদের নতুন নতুন পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে
যশোর অঞ্চলের মানুষ। ঘেরের পাড়ে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়া
বিকল্প উপায়ে মাছ চাষ করছেন জেলে পরিবারের নারীরা। এতে তারা সাফল্য
পেয়েছেন, স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর ঘুরে এমন চিত্র
দেখা গেছে। চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
মোকাবেলায় বিকল্প পদ্ধতিতে চাষ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ করা যেতে পারে বলে
মনে করেন গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা। স্থানীয়রা জানান, আগে এ অঞ্চলে দুটো বা
তিনটা ফসল হতো। কিন্তু এখন একটির বেশি ফসল হয় না। এতে অনেক কৃষক বিভিন্ন
ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। তবে নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তারা এখন স্বাবলম্বী।
ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন। কেশবপুরের পাঁজিয়া ইউনিয়নের মাদারদাঙ্গা
গ্রামের কৃষক পুল্লাদ অধিকারীর জমিতে দেখা যায়, তিনি বস্তা পদ্ধতিতে লাউ
চাষ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি অনেক টাকার সবজিও বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন,
আমার এ জমিতে কয়েক বছর ধরে কোনো ফসল হতো না। পানি জমে ফসল নষ্ট হয়ে যেত।
কিন্তু এ বছর বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করে আমি সফল হয়েছি। নতুন করে এ পদ্ধতিতে
মিষ্টিকুমড়া ও শসার চারা লাগিয়েছি। ওই এলাকার ছোট মাদারদাঙ্গার তানজিলা
বেগমকে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়। তিনি বলেন, আমার বাসার সামনের এ জায়গায় আগে
কোনো ফসল চাষ করতে পারতাম না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক সময় পানি জমে
থাকত। কিন্তু বস্তা পদ্ধতির কল্যাণে আমি সব ধরনের সবজি এ জামিতে চাষ করতে
পারছি। এ ফসল বিক্রি করে আমি সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছি। সংসারেও অবদান
রাখছি। তিনি বলেন, আমার এ জমিতে আমি লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শসা, পুঁইশাকসহ
অনেক ধরনের শাকসবজি চাষ করছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন,
আগে পানি জমে থাকার ফলে এসব জমিতে সেভাবে কৃষিকাজ হতো না। কিন্তু বর্তমানে
বস্তা পদ্ধতিতে চাষের বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে পারছেন কৃষক। ফলনও ভালো
পাচ্ছেন। বস্তা পদ্ধতির কল্যাণে বর্ষাকালে সবজি চাষ সহজ হয়ে যাচ্ছে। যশোরের
আরও কিছু অংশে প্রান্তিক চাষীরা জলাবদ্ধ ও নিচু এলাকায় বস্তার মধ্যে পটাশ,
খৈল, চিটা গুড়, ভুসি আর সার দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সবজির চাষ করেন। এতে পানি
বাড়লেও পচেনা সবজির গোড়া।
কেশবপুরের পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
শফিকুল ইসলাম বকুল বলেন, বস্তা পদ্ধতিতে চাষের ফলে পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদ
করে কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে।
আমার এ এলাকায় আগে দুটো বা তিনটা ফসল হতো। কিন্তু এখন একটির বেশি ফসল হয়
না। এ সময়ে আমাদের সামনে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বস্তা চাষ পদ্ধতি। এ
পদ্ধতি আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এদিকে মনিরামপুরের মনোহরপুর ইউনিয়নের
কপালিয়া রাজবংশী পাড়ায় দেখা যায় বিকল্প উপায়ে মাছ চাষ করছেন জেলে পরিবারের
নারীরা। কথা হয় সুবর্ণ, সাথী ও চন্দা দাসের সঙ্গে। তারা জানান, তারা সবাই
জেলে পরিবারের। মাছ চাষ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বর্তমানে
উন্মুক্ত জলাশয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাল ফেলে কিংবা চাঁই দিয়েও আশানুরূপ মাছ
পাওয়া যায় না। তাই তারা শুরু করেছেন বিকল্প উপায়ে মাছ আর সবজির চাষ। ভাসমান
ড্রামের মাচার ওপর মাটি ফেলে ও সার দিয়ে লাউ, বেগুন, কুমড়া চাষ করছেন
তারা। পল্লী কর্মী সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ
বলেন, আমাদের গবেষকরা নতুন নতুন ফসল উদ্ভাবন করছেন। যেসব ফসল লবণাক্ত
পানিতে বা কম পানিতে হয়, সেগুলোকে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে
হবে। পাশাপাশি চাষাবাদের জন্য আমরা এলাকাভিত্তিক চাষাবাদে কৃষকদের বিভিন্ন
এনজিওর মাধ্যমে সাহায্য-সহযোগিতা করছি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের
মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তিগত সহায়তা
দিয়ে থাকি। পাশাপাশি হাতে-কলমেও কৃষকদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। নতুন
পদ্ধতিতে চাষাবাদ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
No comments