বিপ্লবীদের বই থেকে সু চির নাম সরানোর দাবি
বিপ্লবী
ও সাহসী নারীদের নিয়ে রচিত একটি বই থেকে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির
নাম বাদ দেয়ার দাবি উঠেছে। নারী লেখক এলেনা ফাভিলি এবং ফ্রান্সেস্কা
কাভালোর লেখা বইটি গত বছর খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। মেরি কুরি থেকে হিলারি
ক্লিনটন কিংবা সেরেনা উইলিয়ামসসহ একশ’ জন বিপ্লবী ও সাহসী নারীকে নিয়ে লেখা
এই বইতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সু চিকেও। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা
মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর গণহত্যাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে
সমালোচনা হলেও তাকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। রোহিঙ্গাদের
বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন বন্ধে সু চি কোনো পদক্ষেপই নেননি। সে কারণে ‘গুড নাইট
স্টোরিজ ফর রিবেল গার্লস’ নামে ওই বই থেকে মিয়ানমারের নেত্রী সু চির নাম
বাদ দেয়ার দাবি উঠেছে। বইটিতে সু চির যে বিপ্লবী গল্প তুলে ধরা হয়েছে, তা
নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। বইটি লেখার সময়ে সু চি আলোচনার কেন্দ্রে
ছিলেন অন্য কারণে। তিনি তখন বিশ্বের চোখে নির্যাতিতদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো
সাহসী এক কণ্ঠ। শান্তিতে নোবেলজয়ীও। কিন্তু তার সে অবস্থান নড়ে গেছে
রোহিঙ্গা সংকটে। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে
সহিংসতাকে জাতিসংঘ গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছে তা নিয়ে সু চি খুব কম শব্দই
উচ্চারণ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে সু চির নীরবতাই কি সরকারের বা সে দেশের
সেনাবাহিনীকে মদদ যুগিয়েছে।
তাই বইটির পরবর্তী সংস্করণে সু চির নাম বাদ
দেয়ার দাবি উঠেছে। সে দাবি এতটাই জোরালো যে, বইয়ের দুই লেখিকা এলেনা ফাভিলি
এবং ফ্রান্সেস্কা কাভালো বই থেকে সু চির অংশ সরিয়ে দেয়ার কথাই ভাবছেন। এই
বইয়ে নজরকাড়া নারীদের লড়াকু জীবনের সঙ্গে রয়েছে নারী-শিল্পীদের হাতে আঁকা
ছবিও। সু চির ২১ বছরের গৃহবন্দি থাকার দিনগুলো থেকে শুরু করে তার মুক্তি
পর্যন্ত সময়কাল ধরা রয়েছে বইটিতে। সু চিকে নিয়ে এমন সব কথা পড়ে বইটি
কিনেছেন এমন কিছু অভিভাবক এখন রীতিমতো ফুঁসছেন। ফেসবুকে একজন অভিভাবক
লিখেছেন, বইটির ৯৯ শতাংশ খুবই অসাধারণ। কিন্তু জাতিগত নিধনে অভিযুক্ত কেউ
কীভাবে এ বইতে থাকতে পারেন? এটা বিরক্তিকর। তিনি আরও জানান, সু চি এমন
একজন, যিনি কিছুই করেন না। উল্টো জাতিনিধন, শিশু হত্যা, গণধর্ষণের মতো
নির্যাতনের অভিযোগ শুনে চুপ করে থাকেন! উনি এই বইতে, আমি হতবাক! আরেক
অভিভাবক লিখেছেন, ‘তিন বছরের মেয়েকে গোলাপি রাজকুমারির দুনিয়া ছেড়ে অন্য
কিছু শেখাতে চেয়েছিলাম। এ বইতে এমন কয়েকজন নারী রোল মডেলের কথা রয়েছে, যারা
নিজেদের জীবনের লড়াইটা নিজেই লড়েছেন। কোনো রাজপুত্রের ভরসায় থাকেননি।
সেখানে সু চিকে দেখে আমি হতাশ। রোহিঙ্গা সংকটের পরে তাকে আর মেনে নেয়া যায়
না।’
No comments