কৃষিজমির মাটি দিয়ে ইট!
শরীয়তপুরের
বিভিন্ন ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি। লুকিয়ে
এই কাজটি করা সম্ভব নয়, কিন্তু সবার চোখের সামনে এই সর্বনাশ ঘটে চললেও
কারও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। অবস্থাটা অনেকটাই এমন যে, বাড়িঘর বা উন্নয়ন
হলেই আমাদের চলবে, না খেয়ে থাকলেও হবে! প্রথম আলোর খবর বলছে, শরীয়তপুরের
বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ২৫টি স্থানে ইটভাটার মালিকেরা কৃষকের কাছ থেকে
উচ্চমূল্যে জমি ভাড়া নিয়ে ১০ ফুট থেকে ১২ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিচ্ছেন।
এতে জমির উর্বরতা কমে যাওয়ার মতো যে অপূরণীয় ক্ষতিটি হচ্ছে, তা কারও
বিবেচনায় নেই। কিছু কৃষক বেশি অর্থের লোভে তাঁদের জমির মাটি কেটে নিতে
দিচ্ছেন। কিন্তু এই বেআইনি কাজ বন্ধ করার দায়িত্ব যাদের, তারা কোথায়?
স্থানীয় প্রশাসন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা পরিবেশ অধিদপ্তর করছে
কী? ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, ইট তৈরির
জন্য পাহাড়, টিলা ও কৃষিজমি থেকে মাটি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞদের
মতে, জমির উপরিভাগের চার-ছয় ইঞ্চি মাটিতেই মূলত জমির উর্বরতা শক্তি সবচেয়ে
বেশি থাকে। তাই ওপরের অংশ কেটে নিলে দীর্ঘ সময়ের জন্য কৃষিজমি অনুর্বর হয়ে
পড়ে। ফসল উৎপাদনের ওপর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া মাটি কাটার ফলে
ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। এসব জমি জলাশয়, পুকুর ও মাছের খামারে পরিণত
হচ্ছে। এমনিতেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ক্রমাগত বসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিজমির
পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তার ওপর এভাবে কৃষিজমি নষ্ট হলে এর পরিণতি কী হবে, তা
সহজেই অনুমেয়। শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা ইটভাটা মালিক
সমিতি এ ব্যাপারে ইটভাটার মালিক ও কৃষকদের সতর্ক করলেও এই অপকর্ম বন্ধ
হয়নি। ফলে এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। জড়িত ইটভাটাগুলো বন্ধ
এবং এর মালিক ও কৃষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
No comments