আমাদের রক্তাক্ত দেখে ওরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে
‘ধর্ষকদের নির্যাতনে শেষ রাতের দিকে আমরা দুই বান্ধবী রক্তাক্ত হয়ে রুমের মেঝেতে পড়ে আছি। যন্ত্রণায় ছটফট করছি। অথচ আমাদের এমন অসহায় অবস্থা দেখে ওরা (ধর্ষক) তখন সিনেমার খলনায়কের মতো হো হো করে হাসতে থাকে। আমরা তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করে বলি, আল্লাহর দোহাই, অনেক হয়েছে। আর না। এবারের মতো আমাদের ছেড়ে দাও। আমরা বাড়ি যাব। এ কথা শুনে সাফাত আমার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলে, ‘একদম চুপ। বেশি চিৎকার করলে তোদের আজ মেরেই ফেলব।’ রাজধানীর বনানীর অভিজাত হোটেলে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী বুধবার যুগান্তরের কাছে বর্বরতম নির্যাতনের এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, আমরা সেই রাতের কথা ভুলে যেতে চাই। কারণ আমাদের কাছে ওই রাতটি বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের রাত। এমন রাত যেন আর কোনো নারীর জীবনে না আসে। এদিকে সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলে জনৈক প্রভাবশালী সরকারদলীয় এমপির ছেলে মাহিন হারুনের শেল্টার পান তিন ধর্ষক।
থানায় জেরা ছিল ধর্ষণের মতো : দুই তরুণী বলেন, ধর্ষকদের অব্যাহত হুমকির মুখে বনানী থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েও আমরা হেনস্থার শিকার হয়েছি। থানার ওসি (বিএম ফরমান আলী) আমাদের ৩ দিন ঘুরিয়েছেন। ধর্ষণের অভিযোগ তিনি নিতে রাজি হননি। আমরা প্রতিদিন সকালে থানায় যেতাম। ডিউটি অফিসারের সামনে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর ওসির রুমে আমাদের ডাক পড়ত। ওসি একা দরজা লাগিয়ে তার কক্ষে বসে আমাদের মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শোনেন। ঘটনার বিষয়ে বারবার একই প্রশ্ন করেন। ‘কিভাবে হল’, ‘কেমন করে হল’ এসব অশ্লীল প্রশ্ন করেন তিনি। মতিন নামের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা প্রতিবাদ করনি কেন? হোটেলে গিয়েছিলে কেন। এর আগে এভাবে কোন কোন হোটেলে গিয়েছিলাম- এ রকম অবান্তর প্রশ্ন করেন তিনি। পুলিশের এসব প্রশ্ন শুনে আমরা লজ্জা ছাড়াও আরেক দফা ধর্ষণের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। আমরা অনেক কিছু খোলামেলা বলতে না চাইলে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ধর্ষণের মামলা করতে হলে সব খুলে বলতে হবে। একপর্যায়ে সব শুনে ওসি আমাদের বলেন, ‘তোমরা তো খারাপ মেয়ে। বড় লোকের ছেলেকে ফাঁসাতে ধর্ষণের মামলা করতে চাইছ।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে ধর্ষিত তরুণী বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা এত নির্লজ্জ হতে পারেন?’ তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশের ভাবটা এমন ছিল যে, আমরা খারাপ মেয়ে, হোটেলে গিয়ে ধর্ষিত হয়েছি তাতে এমন কি ক্ষতি হয়েছে। আর আমরা যেহেতু খারাপ মেয়ে তাই আমাদের এখন পুলিশকেও খুশি করতে হবে। অথচ আমরা যথাসাধ্য প্রমাণ নিয়ে থানায় গেছি।’ একজন তরুণী বলেন, বলতে পারেন থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে আমরা পুলিশের হাতে ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছি।
যেভাবে ভিডিও ধারণ : ধর্ষণের ভিডিও ধারণ প্রসঙ্গে এক তরুণী বলেন, রেইনট্রি হোটেলের ৭০২ নং স্যুটে (বিলাসবহুল কক্ষ) সাফাত, নাঈম ও সাকিফ প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা মারত। ওই রুমেই আমাদের ধর্ষণ করা হয়। রুমের ভেতর দেয়ালের সঙ্গে লাগানো একটা কাচের আলমারি আছে। আলমারির দরজা খুললে পেছনে কাচ ঘেরা ওয়াশ রুমটা পরিষ্কার দেখা যায়। একইভাবে ওয়াশ রুম থেকে আলমারির দরজা খুললে বেডরুমে কি হচ্ছে সেটাও দেখা যায়। আমাদের যখন ধর্ষণ করা হয় তখন সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ওই আলমারির পেছন থেকে ভিডিও করে। এটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। একজন তরুণী বলেন, আমরা বিদেশি মুভিতে (সিনেমায়) এসব দেখেছি। কিন্তু একবারও ভাবিনি এমনটা আমাদের জীবনে ঘটে যাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে মামলার বাদী বলেন, সাফাত একা আমাকে কয়েক দফা ধর্ষণ করে। কিন্তু আমার বান্ধবীকে ধর্ষণ করে দু’জন মিলে। যন্ত্রণায় সে চিৎকার করছিল। কিন্তু আমি তার জন্য কিছুই করতে পারছিলাম না। কারণ সাফাত বারবার তার গান (আগ্নেয়াস্ত্র) আমাদের দিকে তাক করছিল। পরে বান্ধবীকে বলেছি, ‘সরি দোস্ত, তোকে সেফ করতে পারলাম না।’ মামলার বাদী বলেন, পুলিশকে এসব বলার পর তারা আমাদের সঙ্গে নিয়ে ওই হোটেলে যায়। আমরা ওই রুমে গিয়ে পুলিশকে সব দেখিয়েছি। কিন্তু পুলিশ নিজে থেকে ওই হোটেলে যেতে চায়নি। এক তরুণী বলেন, হোটেল থেকে এসব দেখেশুনে পুলিশ সাফাতের বাবার সঙ্গে দেখা করে। এরপর কাউকে গ্রেফতার না করে সেখান থেকে চা-নাস্তা খেয়ে চলে আসে। পুলিশের এমন আচরণে আমরা চরম ডিসঅ্যাপয়েন্টেটেড (বিব্রত) হয়েছি।
থানায় জেরা ছিল ধর্ষণের মতো : দুই তরুণী বলেন, ধর্ষকদের অব্যাহত হুমকির মুখে বনানী থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েও আমরা হেনস্থার শিকার হয়েছি। থানার ওসি (বিএম ফরমান আলী) আমাদের ৩ দিন ঘুরিয়েছেন। ধর্ষণের অভিযোগ তিনি নিতে রাজি হননি। আমরা প্রতিদিন সকালে থানায় যেতাম। ডিউটি অফিসারের সামনে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর ওসির রুমে আমাদের ডাক পড়ত। ওসি একা দরজা লাগিয়ে তার কক্ষে বসে আমাদের মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শোনেন। ঘটনার বিষয়ে বারবার একই প্রশ্ন করেন। ‘কিভাবে হল’, ‘কেমন করে হল’ এসব অশ্লীল প্রশ্ন করেন তিনি। মতিন নামের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা প্রতিবাদ করনি কেন? হোটেলে গিয়েছিলে কেন। এর আগে এভাবে কোন কোন হোটেলে গিয়েছিলাম- এ রকম অবান্তর প্রশ্ন করেন তিনি। পুলিশের এসব প্রশ্ন শুনে আমরা লজ্জা ছাড়াও আরেক দফা ধর্ষণের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। আমরা অনেক কিছু খোলামেলা বলতে না চাইলে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ধর্ষণের মামলা করতে হলে সব খুলে বলতে হবে। একপর্যায়ে সব শুনে ওসি আমাদের বলেন, ‘তোমরা তো খারাপ মেয়ে। বড় লোকের ছেলেকে ফাঁসাতে ধর্ষণের মামলা করতে চাইছ।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে ধর্ষিত তরুণী বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা এত নির্লজ্জ হতে পারেন?’ তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশের ভাবটা এমন ছিল যে, আমরা খারাপ মেয়ে, হোটেলে গিয়ে ধর্ষিত হয়েছি তাতে এমন কি ক্ষতি হয়েছে। আর আমরা যেহেতু খারাপ মেয়ে তাই আমাদের এখন পুলিশকেও খুশি করতে হবে। অথচ আমরা যথাসাধ্য প্রমাণ নিয়ে থানায় গেছি।’ একজন তরুণী বলেন, বলতে পারেন থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে আমরা পুলিশের হাতে ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছি।
যেভাবে ভিডিও ধারণ : ধর্ষণের ভিডিও ধারণ প্রসঙ্গে এক তরুণী বলেন, রেইনট্রি হোটেলের ৭০২ নং স্যুটে (বিলাসবহুল কক্ষ) সাফাত, নাঈম ও সাকিফ প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা মারত। ওই রুমেই আমাদের ধর্ষণ করা হয়। রুমের ভেতর দেয়ালের সঙ্গে লাগানো একটা কাচের আলমারি আছে। আলমারির দরজা খুললে পেছনে কাচ ঘেরা ওয়াশ রুমটা পরিষ্কার দেখা যায়। একইভাবে ওয়াশ রুম থেকে আলমারির দরজা খুললে বেডরুমে কি হচ্ছে সেটাও দেখা যায়। আমাদের যখন ধর্ষণ করা হয় তখন সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ওই আলমারির পেছন থেকে ভিডিও করে। এটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। একজন তরুণী বলেন, আমরা বিদেশি মুভিতে (সিনেমায়) এসব দেখেছি। কিন্তু একবারও ভাবিনি এমনটা আমাদের জীবনে ঘটে যাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে মামলার বাদী বলেন, সাফাত একা আমাকে কয়েক দফা ধর্ষণ করে। কিন্তু আমার বান্ধবীকে ধর্ষণ করে দু’জন মিলে। যন্ত্রণায় সে চিৎকার করছিল। কিন্তু আমি তার জন্য কিছুই করতে পারছিলাম না। কারণ সাফাত বারবার তার গান (আগ্নেয়াস্ত্র) আমাদের দিকে তাক করছিল। পরে বান্ধবীকে বলেছি, ‘সরি দোস্ত, তোকে সেফ করতে পারলাম না।’ মামলার বাদী বলেন, পুলিশকে এসব বলার পর তারা আমাদের সঙ্গে নিয়ে ওই হোটেলে যায়। আমরা ওই রুমে গিয়ে পুলিশকে সব দেখিয়েছি। কিন্তু পুলিশ নিজে থেকে ওই হোটেলে যেতে চায়নি। এক তরুণী বলেন, হোটেল থেকে এসব দেখেশুনে পুলিশ সাফাতের বাবার সঙ্গে দেখা করে। এরপর কাউকে গ্রেফতার না করে সেখান থেকে চা-নাস্তা খেয়ে চলে আসে। পুলিশের এমন আচরণে আমরা চরম ডিসঅ্যাপয়েন্টেটেড (বিব্রত) হয়েছি।
আমরা জানি, প্রভাবশালীর ছেলে বলে ওদের গ্রেফতার করবে না পুলিশ। ধর্ষণের শিকার তরুণী বলেন, ২৯ মার্চ সকালে হোটেল থেকে আমরা বেরিয়ে আসি। দু’দিন পর ৩১ মার্চ সাফাত আমাকে ফোন করে। সে ফের ওই হোটেলে যেতে বলে। সাফাত বলে তোরা না এলে ভিডিওটা ইউটিউবে ছেড়ে ভাইরাল করে দেব। হোটেলে যাওয়ার জন্য বারবার ফোন করছিল সাফাত। আমি তাকে বললাম, ‘তুমি যে ভিডিও ইউটিউবে দেবে সেখানে তো তোমার ছবিও আছে। হো হো করে হেসে সাফাত বলল, ‘ভিডিও এডিট করে আমাদের ছবি ঢেকে ইন্টারনেটে ছাড়ব। একথা শুনে আমরা হতবাক। এরপর আমরা নিরুপায় হয়ে নাঈম ও সাফাতের জুনিয়র সাকিফের (রেগনাম সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ জনির ছেলে) মাধ্যমে সবকিছু মিটমাট করতে চেয়েছি। একদিন তেজগাঁওয়ের পিকাসো হোটেলে আমরা বসলাম। সেখানে ভিডিও ডিলিটের কথা বলতেই সাফাত ও নাঈম ক্ষেপে গেল। নাঈম বলল, ওদের এখনই চলে যেত বল। আমার কিন্তু মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমরা পুরুষ। আমাদের ভিডিও ইন্টারেনেটে ছাড়লেও কিচ্ছু হবে না। কিন্তু ওদের সবাই পতিতা বলবে। এটা ওদের জানা দরকার।
আমি ২০ খুনের আসামি : এভাবে আমরা যখন বিষয়টি সুরাহা করতে পারলাম না। তখন পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা বললাম। পুলিশের কাছে যাচ্ছি শুনে সাফাত বলল, ‘জানিস আমি ২০টি খুনের আসামি। পুলিশ আমার পকেটে থাকে। আমাদের স্বর্ণের ব্যবসা। আমরা হলাম দেশের সবচেয়ে বড় স্মাগলার। জানিস না আমার বাবার হাত কত লম্বা। এক তরুণী বলেন, এমন হুমকি পেয়ে একবার আমরা আত্মহত্যার কথাও ভেবেছি। এরপর ভেবেছি, না আমরা মরে গেলে কোনো লাভ হবে না। ওরা অনেক মেয়ের সর্বনাশ করবে। এক তরুণী বলেন, ওরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। হলি আর্টিজানের জঙ্গিরাও ওদের চেয়ে অনেক ভালো। কারণ জঙ্গিরা মেয়েদের মেরে ফেলেছিল। কিন্তু সাফাতদের মতো পশুদের কারণে আমাদের সারাটা জীবন বিষাক্ত হয়ে গেল। বাকি জীবন আমাদের এ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে। সমাজও আমাদের মেনে নেবে না। ধর্ষিতা বলবে। সাফাতের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একজন তরুণী বলেন, আমাদের পূর্বপরিচিত সাকিফ ভাইয়াদের বিল্ডিংয়ে পিকাসো রেস্টুরেণ্ট। সেখানে আমরা মাঝে মাঝে খেতে যেতাম। ওই রেস্টুরেন্টে একদিন এক অনুষ্ঠানে সাফাত ও নাঈমের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় সাকিফ। এরপর ওরা ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। মাঝে মাঝে ফোন করে। এভাবে ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। এ বন্ধুত্ব ২ বছরের। কিন্তু মানুষ চেনা সত্যি মুশকিল। কারও ভেতর দেখে তো বন্ধুত্ব করা যায় না।
আমাদের রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিল : ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এক তরুণী বলেন, ধর্ষণের ভিডিও করে ওরা আমাদের রাখেল (রক্ষিতা) বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল। যখন ওরা ডাকবে আমরা যেতে বাধ্য হব। ওরা এভাবে আরও অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে। কেউ মুখ খোলেনি। তিনি বলেন, বারিধারায় সাফাতের একটা ফ্ল্যাট আছে। সেখানে নাঈম আর সাফাত মদপান করিয়ে মেয়েদের সর্বনাশ করে। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। টাকার জন্য বড় লোকের ছেলেকে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাদী বলেন, ‘আমরা ব্ল্যাকমেইল করতে চাইলে ওরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন। ওরা পুলিশের সামনে আসুক। বলুক অভিযোগ মিথ্যা। এতদিন পর কেন অভিযোগ করলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন মান-সম্মান ও পরিবারের কথা ভেবে চুপ ছিলাম। কিন্তু ভিডিও ছাড়ার ভয় দেখিয়ে সাফাত আর নাঈম আমাদের ব্যবহার করতে চাইছিল। সাফাতের বডিগার্ড অস্ত্র নিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটের নিচে পাহারা দিত। দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করত আমরা কোথায় যাই, কি করি ইত্যাদি। আমরা এসব আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
এ কেমন বাবা : ধর্ষণের শিকার তরুণী বলেন, সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ সেলিম নাকি বলেছেন, হোটেলে যা হয়েছে তা আমাদের সম্মতিতেই হয়েছে। একজন বাবা এমন কথা কিভাবে বলেন? ছেলের এমন নারী কেলেঙ্কারি বাবা হয়ে কিভাবে সাপোর্ট করেন? আজ যদি আমি ছেলে হয়ে এমন ঘটনা ঘটাতাম তবে কি আমার বাবা আমাকে সাপোর্ট করতেন? হোটেলে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় নারী ধর্ষণ কি সমঝোতা করে হয়। স্বেচ্ছায় পার্টিতে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে মামলার বাদী বলেন, মিডিয়ায় এসেছে আমরা নাকি গভীর রাতে সাফাতের পার্টিতে গিয়েছিলাম। আসলে দাওয়াত আর পার্টি কিন্তু ভিন্ন জিনিস। আমরা গেছি সাফাতের জন্মদিনের দাওয়াতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি সাফাত তার বন্ধুদের সঙ্গে বসে ড্রিঙ্ক করছে। তাদের পাশে আরও তিনটা মেয়ে বসা। নাঈম একটু পরপর ইয়াবা সেবন করছিল। এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা যখন চলে আসতে চাইলাম তখনই বিপত্তি ঘটল। ওরা আমাদের রুমের ভেতর আটকে ফেলল। মোবাইল ফোন ও গাড়ির চাবিও ওরা কেড়ে নেয়। আমরা চিৎকার করেছি। হোটেলের লোকজন শুনেছে। কিন্তু তারা এগিয়ে আসেনি। কারণ টাকার বিনিময়ে সাফাতের কাছে হোটেল কর্মচারীরা বিক্রি হয়েছিল।
কঠোর শাস্তি চাই : মামলার বাদী বলেন, আমাদেরকে সমাজ আর কখনোই মেনে নেবে না। আমাদের দিকেই আঙুল তুলবে। পতিতা বলবে। কিন্তু আমরা ধর্ষকদের শাস্তি চাই। আমরা জানি, পুলিশ ওদের কিছুই করবে না। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার চাই। কারণ উনিও একজন মেয়ে ও একজন মা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই, তিনি যেন ধর্ষকদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। তাদের যেন কঠোর শাস্তি দেয়া হয়।
আমি ২০ খুনের আসামি : এভাবে আমরা যখন বিষয়টি সুরাহা করতে পারলাম না। তখন পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা বললাম। পুলিশের কাছে যাচ্ছি শুনে সাফাত বলল, ‘জানিস আমি ২০টি খুনের আসামি। পুলিশ আমার পকেটে থাকে। আমাদের স্বর্ণের ব্যবসা। আমরা হলাম দেশের সবচেয়ে বড় স্মাগলার। জানিস না আমার বাবার হাত কত লম্বা। এক তরুণী বলেন, এমন হুমকি পেয়ে একবার আমরা আত্মহত্যার কথাও ভেবেছি। এরপর ভেবেছি, না আমরা মরে গেলে কোনো লাভ হবে না। ওরা অনেক মেয়ের সর্বনাশ করবে। এক তরুণী বলেন, ওরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। হলি আর্টিজানের জঙ্গিরাও ওদের চেয়ে অনেক ভালো। কারণ জঙ্গিরা মেয়েদের মেরে ফেলেছিল। কিন্তু সাফাতদের মতো পশুদের কারণে আমাদের সারাটা জীবন বিষাক্ত হয়ে গেল। বাকি জীবন আমাদের এ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে। সমাজও আমাদের মেনে নেবে না। ধর্ষিতা বলবে। সাফাতের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একজন তরুণী বলেন, আমাদের পূর্বপরিচিত সাকিফ ভাইয়াদের বিল্ডিংয়ে পিকাসো রেস্টুরেণ্ট। সেখানে আমরা মাঝে মাঝে খেতে যেতাম। ওই রেস্টুরেন্টে একদিন এক অনুষ্ঠানে সাফাত ও নাঈমের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় সাকিফ। এরপর ওরা ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। মাঝে মাঝে ফোন করে। এভাবে ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। এ বন্ধুত্ব ২ বছরের। কিন্তু মানুষ চেনা সত্যি মুশকিল। কারও ভেতর দেখে তো বন্ধুত্ব করা যায় না।
আমাদের রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিল : ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এক তরুণী বলেন, ধর্ষণের ভিডিও করে ওরা আমাদের রাখেল (রক্ষিতা) বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল। যখন ওরা ডাকবে আমরা যেতে বাধ্য হব। ওরা এভাবে আরও অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে। কেউ মুখ খোলেনি। তিনি বলেন, বারিধারায় সাফাতের একটা ফ্ল্যাট আছে। সেখানে নাঈম আর সাফাত মদপান করিয়ে মেয়েদের সর্বনাশ করে। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। টাকার জন্য বড় লোকের ছেলেকে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাদী বলেন, ‘আমরা ব্ল্যাকমেইল করতে চাইলে ওরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন। ওরা পুলিশের সামনে আসুক। বলুক অভিযোগ মিথ্যা। এতদিন পর কেন অভিযোগ করলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন মান-সম্মান ও পরিবারের কথা ভেবে চুপ ছিলাম। কিন্তু ভিডিও ছাড়ার ভয় দেখিয়ে সাফাত আর নাঈম আমাদের ব্যবহার করতে চাইছিল। সাফাতের বডিগার্ড অস্ত্র নিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটের নিচে পাহারা দিত। দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করত আমরা কোথায় যাই, কি করি ইত্যাদি। আমরা এসব আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
এ কেমন বাবা : ধর্ষণের শিকার তরুণী বলেন, সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ সেলিম নাকি বলেছেন, হোটেলে যা হয়েছে তা আমাদের সম্মতিতেই হয়েছে। একজন বাবা এমন কথা কিভাবে বলেন? ছেলের এমন নারী কেলেঙ্কারি বাবা হয়ে কিভাবে সাপোর্ট করেন? আজ যদি আমি ছেলে হয়ে এমন ঘটনা ঘটাতাম তবে কি আমার বাবা আমাকে সাপোর্ট করতেন? হোটেলে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় নারী ধর্ষণ কি সমঝোতা করে হয়। স্বেচ্ছায় পার্টিতে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে মামলার বাদী বলেন, মিডিয়ায় এসেছে আমরা নাকি গভীর রাতে সাফাতের পার্টিতে গিয়েছিলাম। আসলে দাওয়াত আর পার্টি কিন্তু ভিন্ন জিনিস। আমরা গেছি সাফাতের জন্মদিনের দাওয়াতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি সাফাত তার বন্ধুদের সঙ্গে বসে ড্রিঙ্ক করছে। তাদের পাশে আরও তিনটা মেয়ে বসা। নাঈম একটু পরপর ইয়াবা সেবন করছিল। এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা যখন চলে আসতে চাইলাম তখনই বিপত্তি ঘটল। ওরা আমাদের রুমের ভেতর আটকে ফেলল। মোবাইল ফোন ও গাড়ির চাবিও ওরা কেড়ে নেয়। আমরা চিৎকার করেছি। হোটেলের লোকজন শুনেছে। কিন্তু তারা এগিয়ে আসেনি। কারণ টাকার বিনিময়ে সাফাতের কাছে হোটেল কর্মচারীরা বিক্রি হয়েছিল।
কঠোর শাস্তি চাই : মামলার বাদী বলেন, আমাদেরকে সমাজ আর কখনোই মেনে নেবে না। আমাদের দিকেই আঙুল তুলবে। পতিতা বলবে। কিন্তু আমরা ধর্ষকদের শাস্তি চাই। আমরা জানি, পুলিশ ওদের কিছুই করবে না। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার চাই। কারণ উনিও একজন মেয়ে ও একজন মা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই, তিনি যেন ধর্ষকদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। তাদের যেন কঠোর শাস্তি দেয়া হয়।
No comments