আরেক ওয়াটারগেটের প্রতিধ্বনি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে জেমস কমিকে বরখাস্ত করেছেন। বস্তুত ট্রাম্প যাকে বরখাস্ত করলেন তিনিই হয়তো তাকে প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছিলেন, আবার তিনিই হয়তো তার প্রেসিডেন্সির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর কোনো প্রেসিডেন্ট তাকে নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেননি। ফলে ট্রাম্পের মঙ্গলবারের শেষ রাতের ওই সিদ্ধান্তকে ‘শনিবার রাতের নিধনযজ্ঞের’ সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরের সেই শনিবারে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ দলের কার্যক্রমে আড়িপাতার অভিযোগ তদন্তকারী বিশেষ প্রসিকিউটর আর্চিবলড কক্সকে বরখাস্ত করেছিলেন। তাতে অবশ্য নিক্সনের শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে পদ ছাড়তে হয়েছিল। ট্রাম্প কমিকে বরখাস্ত করার চিঠিতে যদিও দাবি করেছেন, তিনি তিন দফায় প্রেসিডেন্টকে বলেছেন যে তার বিরুদ্ধে রুশ সংযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না। তার মানে ট্রাম্প আগেভাগেই বলতে চেয়েছেন কমিকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে নয়। তবে সত্য হচ্ছে, ট্রাম্প যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। বিশেষ করে কমি প্রকাশ্যেই বলেছেন যে তার সংস্থা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত করছে এবং জানার চেষ্টা করছে মস্কোর সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা। ট্রাম্পের পদক্ষেপে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট- উভয় দলের নেতারাই বিস্মিত হয়েছেন। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিকভাবে বিস্ফোরক এ তদন্তের ওপর এটা একটি নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ,
যাতে উত্তেজনা আরও বাড়বে। তারা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম চার মাসে ট্রাম্প প্রথাবিরোধী বহু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে আলোচিত একটি ঘটনার তদন্তের মাঝামাঝি এসে এফবিআই পরিচালককে বরখাস্ত করে স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করেছেন। ট্রাম্প মনে করেছিলেন, হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল কেলেঙ্কারি তদন্ত নিয়ে গত বছর কমি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তাতে তাকে বরখাস্ত করায় ডেমোক্রেটরা সমর্থন করবেন, অন্তত মেনে নেবেন। কিন্তু তিনি ভুল হিসাব কষেছেন। ডেমোক্রেটরা তার পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন এবং দাবি তুলেছেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রুশ সংযোগের স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ কাউন্সিল গঠন করতে হবে। ট্রাম্পের পদক্ষেপে এ সন্দেহই প্রকাশ পেল যে তিনি কিছু লুকাতে চান এবং সহকর্মী রিপাবলিকানদের সঙ্গে তার সম্পর্ক তিক্ত হতে পারে। কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া তারা হয়তো ট্রাম্পকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে না। রিপাবলিকান নেতারাও দাবি তুলেছেন, প্রতিনিধি পরিষদ বা সিনেট গোয়েন্দা কমিটির তদন্তের পরিবর্তে রুশ অধ্যায়ের তদন্তে স্বাধীন কমিশন অথবা বিশেষ কংগ্রেস কমিটির তদন্ত। কমির পরিবর্তে ট্রাম্প যাকেই নিয়োগ দেবেন, তার ব্যাপারে সন্দেহ দানা বাঁধবে। ট্রাম্প বলছেন, হিলারির ইমেইল তদন্ত ইস্যুতে তিনি কমিকে বরখাস্ত করেছেন। হিলারিকে জেলে পাঠাতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। হিলারির প্রচার ম্যানেজার জন ডি পোডেস্টা বলেন, হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল নিয়ে তিনি যেভাবে তদন্ত করছিলেন সেকারণে কমিকে বরখাস্ত করার দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কাজেই এখন স্বাধীন তদন্তের প্রয়োজন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
ট্রাম্প যদিও বলছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ শেসন্সের সুপারিশের ভিত্তিতে তিনি কমিকে বরখাস্ত করেছেন, যার নিজের বিরুদ্ধেও রুশ সংযোগের অভিযোগ রয়েছে। তবে ট্রাম্প রুশ সংযোগ নিয়ে কমির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ চাপা রাখতে পারেননি। সোমবার টুইটারে তিনি বলেছেন, রাশিয়া-ট্রাম্প মাখামাখি পুরোটাই ধাপ্পাবাজি। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এ নাটকের অবসান হবে কবে? এক্ষেত্রে ওয়াটারগেটের তুলনা অনিবার্য। বিশেষ প্রসিকিউটর কক্স যখন নিক্সনকে তলব করেন যে হোয়াইট হাউসের টেপের কপি দেখাতে হবে, তখন প্রেসিডেন্ট তাকে বরখাস্ত করেছিলেন। তবে তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিয়ট রিচার্ডসন এবং তার সহকারী উইলিয়ামন রাকেলশস তাতে সম্মতি জানাতে অস্বীকৃতি জানান। বিচার বিভাগের তৃতীয় পদ মর্যদার কর্মকর্তা সলিসিটর জেনারেল রবার্ট এইচ বর্ক প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে একমত হন এবং কক্সকে বরখাস্ত করা হয়। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ডেমোক্রেটরা ওয়াটারগেটের সঙ্গেই তুলনা করছেন। ডেমোক্রেটিক সিনেটর বব কেসি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা নিক্সনিয়ান (নিক্সনের পদক্ষেপতুল)।’ আর ডেমোক্রেটিক সিনেটর রিচার্ড ব্ল–মেন্থাল বলেন, ‘ওয়াটারগেটের পর আমাদের বিচার ব্যবস্থা এভাবে হুমকির মুখে পড়েনি এবং এ ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও একনিষ্ঠতার ওপর আমাদের বিশ্বাসে এভাবে ঝাঁকুনি খায়নি।’ এমনকি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ রজার জে স্টোন জুনিয়র বলেছেন, নিক্সন এখন হাসছেন। একজন টুইটার ব্যবহারকারী বলেছেন, ট্রাম্প নিক্সনেকও ছাড়িয়ে গেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস।
No comments