সংসারী অপুর গল্প
ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উজ্জ্বল এক অধ্যায়ের নাম অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে তার অভিনীত প্রায় সত্তরটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। অধিকাংশ ছবিই ব্যবসায়িক বিচারে সফল। মান-অভিমান থেকে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তিনবার আড়াল হয়েছেন এ নায়িকা। আড়াল ভেঙে তিনবারই চমক নিয়ে হাজির হয়েছেন। প্রথমবার শাকিবের সঙ্গে অভিমান, দ্বিতীয়বার জিরো ফিগারের চমক আর তীয়বার বিয়ের খবর ও সন্তান জয়কে নিয়ে। বর্তমানে সন্তান ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। অভিনয়ে না থাকলেও নানা বিষয়ে আলোচনায় আছেন এ নায়িকা। পাঁচফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার ঢালিউড কুইন অপু বিশ্বাস। বিয়ের পর বিশ্বাস থেকে হয়েছেন অপু ইসলাম খান। নাম্বার ওয়ান নায়িকা হলেও চলনে-বলনে একেবারে পুরো অবয়বে বাঙালিয়ানা স্পষ্ট।
নায়িকা হওয়ার আগে থেকেই একজন বাঙালি মেয়ের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য থাকে তা তার মধ্যেও বিদ্যমান। সুপার হিরোইন এবং দেশের সুপারস্টারের স্ত্রী হওয়ার পরও এ বৈশিষ্ট্যেই আটকে আছেন অপু। নিজেকে নিজের বিশ্বাসের প্রতিনিধি ভাবা এ নায়িকার জন্ম বগুড়া জেলার সদর থানার সাতমাথা এলাকায়। বাবা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং মা শেফালী বিশ্বাসের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার ছোট আদুরে মেয়েটিই হচ্ছেন অপু। জন্ম বগুড়ায় হওয়ায় সেখানেই তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বলে জানিয়েছেন এ নায়িকা। তার প্রথম স্কুল হচ্ছে এসওএস হারম্যান মেইনার। এরপর আলোর মেলা, ক্রিসেন্ট হাইস্কুল এবং সব শেষে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। শুরুতে মূলত বাবা-মায়ের যৌথ উৎসাহেই বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখা শুরু করেন। তারপর শিল্পকলা একাডেমি এবং সবশেষে নৃত্যাঞ্চল। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন নৃত্যাঞ্চল আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন বলেও জানালেন এ শাকিবপত্নী। তবে সেলুলয়েড ফিতার রঙিন দুনিয়ার তারকা হবেন এমন স্বপ্ন তখন তার মধ্যে ছিল না। মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত পাওয়া সব নায়িকারাই এমন কথা বলে থাকেন। কথাটি শোনা মাত্রই একগাল হেসে অপু বলেন, ‘সবাই কী বলে জানি না। ছোট বেলায় এমন স্বপ্ন কখনও আসেনি। আর না এলে কি মিথ্যে বলব!’ অপু বিশ্বাসের ক্যারিয়ার কীভাবে শুরু হল এ বিষয়ে মিডিয়াতে নানা মুখরোচক গল্প রয়েছে। চলচ্চিত্রে আসার আগে তার অবস্থানই বা কেমন ছিল এ বিষয়টি নিয়েও রটনা রয়েছে অনেক। এখানে রটনা আর মুখরোচক গল্পের দিকে না গিয়ে অপুর ভাষ্যের মধ্যেই থাকি। ২০০৫ সালে অবন্তি নামে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘কাল সকালে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। এতে শাবনুর ও ফেরদৌসের সঙ্গে দ্বিতীয় সারির নায়িকা হয়ে অভিনয় করেন তিনি। পরের বছর এফআই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে প্রধান নায়িকা হয়ে বড় পর্দায় হাজির হন। এ ছবির মাধ্যমেই ঘুরে যায় অপুর ভাগ্যের চাকা।
ছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং অপু বিশ্বাস রাতারাতি তারকা বনে যান। শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে তার জুটি দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতা পেলে এফআই মানিক এ জুটি নিয়ে একই বছরে পিতার আসন, চাচ্চু, ও দাদীমা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সব ছবিই সুপার ব্যবসা করে। পরে ২০০৭ সালে এসে নায়ক মান্নার বিপরীতে ‘মেশিনম্যান’ ছবিতে অভিনয় করেন। এর পরের বছর শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ‘কাবিননামা’ ছবিতে। দর্শকরা গ্রহণ করেন এ জুটিকে। বলা হয়ে থাকে সালমান শাহ শাবনুরের পর শাকিব-অপু জুটিই দর্শকদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পান। এ জনপ্রিয়তার রেশ ধরেই অপু শাকিবের সঙ্গে ‘আমাদের ছোট সাহেব, আমার জান আমার প্রাণ, তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, মনে প্রাণে আছ তুমি, ভালোবাসার লাল গোলাপ, মন যেখানে হৃদয় সেখানে, জান আমার জান, মনে বড় কষ্ট, মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি, ও সাথী রে, রাজা বাবু, রাজা ৪২০ ও লাভ ম্যারেজ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এখানেই শেষ নয়। অপু অভিনীত ২০১০ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ এবং বদিউল আলম খোকনের ‘নিঃশ্বাস আমার তুমি’ চলচ্চিত্র দুটি ব্লকবাস্টার হিটের তালিকায় উঠে আসে। অপু অভিনীত বদিউল আলম খোকনের আরেক ছবি ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’ ব্যবসাসফল হয় এবং ঢালিউডের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের সেরা দশে অবস্থান করে। এ ছাড়া চাচ্চু আমার চাচ্চু, টপ হিরো, পরান যায় জ্বলিয়া রে, হায় প্রেম হায় ভালোবাসা, প্রেম মানেনা বাধা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এ সবক’টি চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান। ২০১১ সালে অপু অমিত হাসান প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কে আপন কে পর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া শাকিব খানের বিপরীতে তার অভিনীত কোটি টাকার প্রেম, কিং খান, আদরের জামাই, প্রিয়া আমার জান, তোর কারণে বেঁচে আছি, একবার বল ভালোবাসি এবং মনের ঘরে বসত করে মুক্তি পায়। এক টাকার দেনমোহর, এক মন এক প্রাণ, জিদ্দি মামা চলচ্চিত্রে অভিনয়, বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না, দুর্র্ধর্ষ প্রেমিক মুক্তি, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রে পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া মাই নেম ইজ খান, প্রেমিক নাম্বার ওয়ান, ভালোবাসা এক্সপ্রেস, সেরা নায়ক,
দুই পৃথিবী, ডেয়ারিং লাভার, হিটম্যান, হিরো: দ্যা সুপারস্টারসহ মোট আশিটি ছবি মুক্তি পায় তার। এত গেল ছবির ফিরিস্তি। এর বাইরেও নানা সময়ে নানা বিষয়ে আলোচনায় থেকেছেন এ নায়িকা। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে হুট করে আড়াল হয়ে যান অপু। মূলত পারিবারিক কারণেই তার এ আড়াল হওয়া। ২০১৬ সালে হঠাৎ করে তৃতীয়বারের মতো নিখোঁজ হন। অবশেষে ফুটফুটে সন্তান নিয়ে হাজির হন এ তারকা। এসেই জানান ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ছেলে সন্তান হয়েছে তার। সন্তানের নাম আব্রাম খান জয়। তারও আগে ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ে হয়। অতি গোপনীয়তায় বিয়ের কাজ সারেন ৭০ ছবিতে কাজ করা এ জুটি। সন্তানসহ প্রকাশ্যে আসায় শাকিবের সঙ্গে কিছুটা মন কষাকষি চললেও অবশেষে মিটে যায় সব। এখন সন্তান আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন এ নায়িকা। আর ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। শিগগিরই নতুন রূপে নতুন-পুরনো দাপট নিয়ে চলচ্চিত্রে ফিরবেন এ নায়িকা। ভক্তরাও প্রিয় এ নায়িকার ফেরার পথ চেয়েই আছেন। কবে ফিরবেন এ বিষয়ে খোলাসা করে কিছুই জানাননি এ তারকা। কারণ স্বামী এর আগে বলেছেন ছবি নয়, সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে অপুকে। এখন কেবল দেখার অপেক্ষা। সংসারের ব্যস্ততা সামলে কবে নতুন ছবির সুখবর দেন এ ঢালিউড কুইন।
No comments