ভোটার তুষ্টির বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী
নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার তুষ্টির বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যদিও রাজস্ব আদায়ে নেয়া হচ্ছে উচ্চভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু নতুন করে করের বোঝা জনগণের ওপর চাপবে না- এমন আভাস দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিতর্কিত ভ্যাট আইন নিয়ে বড় চাপে ছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে বুধবারই তিনি ভ্যাট আইনে ‘স্বস্তির’ ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সবকিছুরই ফয়সালা হবে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক বাজেট প্রস্তুতি বৈঠকে। মূলত অর্থমন্ত্রী এবং এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকটি হবে। তবে একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী এ সময় উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বৈঠকেই আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার ও রাজস্ব প্রস্তাবের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের ওপর নতুন করে কোনো করের বোঝা চাপানো হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ থাকবে। বিশেষ করে বিতর্কিত ভ্যাট আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে পণ্য উৎপাদন এবং পণ্যমূল্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যার সুফল পাওয়া যাবে আগামী নির্বাচনে।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে জিডিপির ১২ দশমিক ২ শতাংশ। যা চলতি বছর ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনসহ ১৭টি বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বাড়ছে সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেটের রূপরেখা তৈরি করেছে। সূত্রমতে, আগামী বাজেট সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকার ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১’ রচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজিতে (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) নির্ধারিত লক্ষ্য ও অগ্রাধিকারগুলো বাস্তবায়নের প্রতিফলন ঘটানো হবে বাজেটে। চলতি অর্থবছরের ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সফলতাকে ভিত্তি ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। ফলে নতুন বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, জনগণকে সন্তুষ্ট করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে আগামী বাজেটে। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের ফলনও থাকছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, আগামী বাজেটে রাজস্ব বাড়াতে ছয় ধরনের কৌশল নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে করের পরিধি সম্প্রসারণ, কর অব্যাহতির পরিমাণ হ্রাস, নতুন নতুন ক্ষেত্র শনাক্ত করে করারোপ, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নসহ অটোমেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। এ ছাড়া নন-এনবিআর রাজস্ব আদায়ে হালনাগাদকৃত রেট অনুযায়ী আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ, কর ব্যতীত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ফি ও রেট পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়া চলমান রেখে সে অনুযায়ী আদায় কার্যক্রম জোরদার করা হবে। সূত্রমতে, আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা এবং মোট রাজস্ব আয় ২ লাখ ৭১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। ঘাটতি বাজেটের আকার দাঁড়ায় ১ লাখ ২৯ হাজার ১২ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। মোট রাজস্ব আয়ের মধ্যে এনবিআর কর হচ্ছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৭ কোটি টাকা, নন-এনবিআর কর হচ্ছে ৮ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৭ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। যা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ১১ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি খাতে ব্যয় হবে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি ব্যয় ধরা হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ, পেনশন গ্র্যাচুইটি, প্রণোদনাসহ আনুষঙ্গিক খাতে।
নতুন বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নসহ ১৭টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ও দক্ষতা উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ ও বন্দরসহ সার্বিক ভৌতকাঠামা উন্নয়ন। এ ছাড়া কৃষি ও পল্লী উন্নয়নসহ কর্মসৃজনকেও অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এ বছর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গুরুত্বের তালিকায় রয়েছে বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিকতর ব্যবহার ও প্রবাস আয় বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানির বাজার সৃষ্টি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লা আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামীতে জলবায়ু মোকাবেলায় বিশেষ বরাদ্দ থাকবে। ভর্তুকির পরিমাণ বাড়লেও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমবে। এটি অর্থনীতির স্বস্তির বিষয় হবে। সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্র্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এ জন্য এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভর্তুকি খাতেও ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ। জানা গেছে, আগামী বাজেটে ঘাটতি পূরণ করতে ব্যাংকিং ঋণ নেয়া হবে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ২৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ নেয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও অনুদান ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে ৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা।
No comments