ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
আগামী পাঁচ বছর ফ্রান্সকে নেতৃত্ব দেবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ম্যাক্রোঁ আগামী পাঁচ বছরের জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হচ্ছেন ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। আর ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজয় মেনে নিয়ে ম্যাক্রোঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অভিবাসন-বিরোধী কট্টর-ডানপন্থি মারিন লি পেন। খবর ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ও বিবিসির। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটে এগিয়ে থাকা এই দুই প্রার্থী রোববারের রানঅফ ভোটে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফরাসি ভোটাররা ৩৯ বছর বয়সী সাবেক ব্যাংকার ম্যাক্রোঁকেই বেছে নেন। পরাজয় স্বীকার করে লি পেন তার সমর্থকদের বলেছেন, তার দেশ ‘ধারাবাহিকতার প্রার্থীকে’ বেছে নিয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশ এই নির্বাচনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। কারণ লি পেন জয়ী হলে ইইউর ভবিষ্যৎ সংকটে পড়ত। ফ্রান্সের এ নির্বাচনের প্রভাব পড়তে পারে জার্মানি ও ব্রিটেনের আসন্ন নির্বাচনে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে উগ্র ডানপন্থী যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল, ফ্রান্সের এই নির্বাচনের ফল তাকে কিছুটা স্তিমিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ম্যাক্রোঁ দেশের বাম-ডান বিভাজনের মধ্যে সেতুবন্ধ করতে চান। দেশজুড়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হুজুগ থামাতে চান তিনি। এ ধরনের হুজুগে মার্কিনিরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং ব্রিটিশরা ইইউ জোট ত্যাগ করেছেন। রোববার সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) থেকে দেশজুড়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা)। তবে রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকায় ভোটগ্রহণ শেষ হয় আরও এক ঘণ্টা পর। ফ্রান্সে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক জঙ্গি হামলার ফলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভোটগ্রহণ করা হয়। জরুরি অবস্থার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সারা দেশের ৫০ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়। ম্যাক্রোঁ জয়ী হলে লুভ্যর জাদুঘরে বিজয়ী ভাষণ দেয়ার কথা ছিল।
তবে সেখানে সন্দেহজনক একটি ব্যাগ পাওয়ার পর জায়গাটি খালি করে দেয়া হয়। এ সময় সেখানে ৩০০ সাংবাদিক অনুষ্ঠান কাভারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটার ছিল চার কোটি ৮০ লাখ। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় কম। প্রায় ২৫ ভাগ ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাননি। ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই প্রার্থী সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে দেশটি কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়ে। ম্যাক্রোঁ ইউরোপপন্থী ও উদার নীতির সমর্থক। তিনি এর আগে কখনই নির্বাচিত হননি। ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা ৪৮ বছর বয়সী লি পেন বিশ্বায়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী উগ্র-ডানপন্থী। তিনি প্রচণ্ড মুসলিমবিরোধী। ফ্রান্সে ‘উগ্রপন্থী’ মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন তিনি। ২৩ এপ্রিল ফ্রান্সে প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এতে ম্যাক্রোঁ ২৪ শতাংশ এবং লি পেন ২২ শতাংশ ভোট পান। এবারের ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- গত কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকা সমাজতান্ত্রিক এবং মধ্য ডানপন্থী রিপাবলিকান দলকে নির্বাচনের প্রথম ধাপেই প্রত্যাখ্যান করেছেন ভোটাররা। ম্যাক্রোঁ অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৬ সালে এন মার্শে (এগিয়ে চল) দল প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে দলটি কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তিনিও নেননি। ১৪ মে’র মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন ম্যাক্রোঁ।
No comments