চট্টগ্রামে পাল্টে যাবে ভোটের হিসাব
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নতুন জোটে যুক্ত হল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে ইসলামী ফ্রন্টের যোগদানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। সারা দেশে ইসলামী ফ্রন্টের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত থাকলেও চট্টগ্রামে রয়েছে এই দলের বিশাল ভোটব্যাংক ও কর্মী-সমর্থক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণে চট্টগ্রামে এই নতুন জোটের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে এবং এটা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের হিসাবে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। রোববার ঢাকায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নতুন নির্বাচনী জোট- ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স’-ইউএনআই ঘোষণা দেন। এ সময় ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মান্নান, মহাসচিব মাওলানা এমএ মতিনসহ সহস াধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এমএ মতিন রোববার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ইসলামে নারী নেতৃত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসও ভঙ্গুর ও ত্রুটিপূর্ণ। কওমিরাও ইসলামের মূল ধারার সঙ্গে নেই। তাই তারা যেসব জোটে বা দলের সঙ্গে আছে তাদের সঙ্গে ইসলামী ফ্রন্টের জোট হতে পারে না। যেহেতু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন পুরুষ। তাছাড়া ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষায় যেমন অনেক ইতিবাচক কাজ করেছেন, তেমনি দেশের উন্নয়নেও তার অবদান অপরিসীম। তাই ইসলামী ফ্রন্ট জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ জোট জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, ইসলামী ফ্রন্টের রয়েছে ছাত্র ও যুব সংগঠন। ইসলামী ছাত্র সেনা ও ইসলামী যুব সেনা।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে ইসলামী ফ্রন্টের রয়েছে শক্ত অবস্থান। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের যেমন কমিটি রয়েছে, তেমনি জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে রয়েছে ইসলামী ফ্রন্টের কমিটি। পীর-আউলিয়া ও দরবারভিত্তিক এই সংগঠনের রয়েছে শক্ত অবস্থান। সুন্নি আকিদা ও মতাদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে দলটি। ১৯৯১ সাল থেকে ইসলামী ফ্রন্ট নিবন্ধিত দল হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে। ’৯১ সালে সারা দেশে ২৩টি আসনে প্রার্থী দেয় ইসলামী ফ্রন্ট। দলটির প্রতীক মোমবাতি। ১৯৯৬ সালে ২২টি, ২০০১ সালে ২৬টি এবং ২০০৮ সালে ১৮টি আসনে প্রার্থী দেয়। প্রতিটি আসনে গড়ে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার ভোট পায় এই দলের প্রার্থীরা। সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পটিয়া ও বোয়ালখালীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই দল থেকে দু’জন প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেন। সূত্র মতে, কোনো নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী না থাকলে তাদের ভোট যেত আওয়ামী লীগের বাক্সে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এরপরও ইসলামী ফ্রন্টকে কখনই মূল্যায়ন করেনি আওয়ামী লীগ। উল্টো ভোটের হিসাবে উতরে যেতে জামায়াতের লোক হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের নমিনেশন দেয়া হয়েছে। বানানো হয়েছে এমপি। আবার শাপলা চত্বরের জন্ম দিয়েছে যে কওমিরা তাদেরও দেয়া হচ্ছে নানা অন্যায় সুযোগ-সুবিধা। মূলত এসব কারণে সুন্নি আকিদাভিত্তিক এই রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ। যে কারণে তারা শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সঙ্গেই জোট বেঁধেছে।
No comments