ম্যাক্রোঁর জয়ের নেপথ্যে ৫ কারণ
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভ করে ফ্রান্সের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মধ্যপন্থী এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তবে এক বছর আগেও পরিস্থিতিটা ছিল ভিন্ন। দেশটির সবচেয়ে অজনপ্রিয় সরকারের হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ম্যাক্রোঁ। আর এ বছর ৩৯ বছর বয়সী ম্যাক্রোঁ প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে মূলধারার ডানপন্থী ও বামপন্থী দলের অনুসারীদের হারিয়ে জয়ী হন। বিশ্লেষকরা অবশ্য এই জয়ের পেছনে ম্যাক্রোঁর নিজস্ব ক্যারিশমার পাশাপাশি বেশ কিছু কারণ খুজেঁ বের করেছেন। ভাগ্যবান ম্যাক্রোঁ: নির্বাচনে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় ভোটাররা নতুন কাউকে চেয়েছিল নিজেদের নেতা নির্বাচনে। আর নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সেই জায়গাটিই দখল করতে পেরেছেন বলে মনে করেন প্যারিস বেইজড থিংক ট্যাংক 'টেরা নোভা'র প্রতিনিধি মার্ক ওলিভার পেডিস। চতুর ম্যাক্রোঁ: ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্টের ভাগ্যই কেবল সুপ্রসন্ন ছিল না। বরং সে খুব চতুরতার সঙ্গে নির্বাচনের গতিপথ তৈরি করে নিয়েছিলেন। নির্বাচনে ম্যাক্রোঁ সমাজতান্ত্রিক দলের হয়ে অংশ নিতে পারতেন। তবে সরকারের থাকাকালীন সময়ে তিনি অনুধাবন করেন দলের অবস্থা জনগণের কাছে খুব বেশি গ্রহণযোগ্য নয়। পেডিস বলেন, দূরদর্শী সম্পন্ন ম্যাক্রোঁ দলের অবস্থার বিষয়টি আগেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সেই পথ মাড়াননি। নতুন কিছু করতে চান ম্যাক্রোঁ: নির্বাচনী প্রচারণা কাজে ম্যাক্রোঁ অনেকটা ২০০৮ সালের বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারণার পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এক্ষেত্রে প্রায় ৩ লাখের মতো বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করেন। সেই সব বাড়ির বাসিন্দাদের থেকে তুলের আনেন তাদের চাওয়া পাওয়ার কথা। সে মতেই নিজের নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করেন ম্যাক্রোঁ। এটাও তার সাফল্যের একটি কারণ। ইতিবাচক বার্তা ছিল ম্যাক্রোঁর: নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী লি পেনের চেয়ে ইতিবাচক বার্তা প্রদানের মাধ্যমে অনেক এগিয়ে ছিলেন ম্যাক্রোঁ। লি পেন যখন নিজেকে এলিটদের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন, তখন নবিশ ম্যাক্রোঁ তৃণমূলের কথা তুলে ধরেন। স্বপ্ন দেখান সবাইকে নিয়ে নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী ফ্রান্স গড়ার। লি পেনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন ম্যাক্রোঁ: নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে মেরিন লি পেন বেশ কিছু নেতিবাচক ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে ছিল অভিবাসন বিরোধী ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা।
সে ক্ষেত্রে ম্যাক্রোঁ তার আধুনিক চিন্তার সমন্বয়ে অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত খুলে রাখার পক্ষে মত দেয়ার পাশপাশি ইউরোপিয় ইউনিয়নে তেকে দেশকে সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্থান করার কথা বলেন। নির্বাচনের আগে সর্বশেষ টিভি বিতর্কেও দুই প্রার্থীর মধ্যে এ নিয়ে বেশ চড়া সুরে তর্ক হয়। এ সময় লি পেনকে তার বাবার মতোই কট্টরপন্থী মানসিকতার ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন ম্যাক্রোঁ। অন্যদিকে ভালো প্রচারণা চালিয়েও নিজের কট্টরপন্থী মনোভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে পরাজয় বরণ করে নেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটে এগিয়ে ছিলেন এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও মারিন লি পেন। রোববারের রানঅফ ভোটে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফরাসি ভোটাররা ৩৯ বছর বয়সী সাবেক ব্যাংকার ম্যাক্রোঁকেই বেছে নেন। নির্বাচনের আগে ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই প্রার্থী সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে দেশটি কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়ে। ম্যাক্রোঁ ইউরোপপন্থী ও উদার নীতির সমর্থক। তিনি এর আগে কখনই নির্বাচিত হননি। অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৬ সালে এন মার্শে (এগিয়ে চল) দল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। অন্যদিকে ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা ৪৮ বছর বয়সী লি পেন বিশ্বায়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী উগ্র-ডানপন্থী। তিনি প্রচণ্ড মুসলিমবিরোধী। ফ্রান্সে ‘উগ্রপন্থী’ মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন তিনি। এছাড়া এবারের নির্বাচনে গত কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকা সমাজতান্ত্রিক এবং মধ্য ডানপন্থী রিপাবলিকান দলকে নির্বাচনের প্রথম ধাপেই প্রত্যাখ্যান করেন ভোটাররা। ১৪ মে’র মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন ম্যাক্রোঁ। সূত্র: বিবিসি
No comments