ফের মেয়াদ বাড়ছে বেগুনবাড়ী হাতিরঝিল প্রকল্পের
বারবার মেয়াদ বাড়ছে বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের। ফলে সময় ক্ষেপণকারী প্রকল্পের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও ফের দেড় বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এক্ষেত্রে নতুন করে ব্যয় বাড়বে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তবে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্প সমাপ্ত করতে না পারায় কাক্সিক্ষত সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত মেয়াদে প্রকল্পটি সমাপ্ত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানোর কোনো সুযোগ না দেয়াসহ ১২টি শর্তে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করেছে বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. জালাল আকতার ভুঁইয়া রোববার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের মূল কাজ প্রায় শেষ। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। আশা করছি আর মেয়াদ বাড়াতে হবে না। বর্ধিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউলুপ নর্থ অর্থাৎ মেরুল বাড্ডা অংশের ইউটিলিটি সিফটিং কাজ দেরি হওয়া, সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে স্যানিটারি লাইন ডাইভারশন করা এবং তেজগাঁও শিল্প এলাকায় একটি সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সময়মতো করা সম্ভব হয়নি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাতে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। উদ্দেশ্য ছিল বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধে বেগুনবাড়ী খাল এবং হাতিরঝিলের নিন্ম এলাকা খনন ও উন্নয়ন করা। এছাড়া ওয়েস্ট ওয়াটার ডিসপোজাল ইস্যু বিবেচনায় ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে পুরো এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, ঝিলের পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করে রাখতে চারদিকে ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ এবং ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঝিলের চারদিকে সড়ক (অভারপাসসহ) নির্মাণ করা। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ কোটি ৪০ লাখ ১২ হাজার টাকা বাড়িয়ে মোট ১ হাজার ৪৮০ কোটি ৯৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় অনুমোদন করা হয়।
এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৯০ কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ১ হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা এবং মেয়াদ দেড় বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময় এম্পিথিয়েটার বাদ রেখেই প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ প্রকল্পে আরও বেশ কিছু ভৌত কাজ যুক্ত করায় ব্যয় ২৬৪ কোটি ৭১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ২৩৬ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এ সময় মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু ভায়াডাক্ট-৩ সংলগ্ন জমি, সাত রাস্তা সংযোগ সড়কের জন্য জমি, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় সংযোগ সড়কের জন্য জমি এবং উত্তর ইউলুপের জন্য প্রয়োজনীয় জমি নির্ধারিত সময়ে অধিগ্রহণে জটিলতা থাকায় বিশেষ বিবেচনায় চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পে ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর পরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজ অসমাপ্ত থাকা এবং জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় একটি অংশের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে না পারায় আবারও দেড় বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সূত্র জানায়, মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন আইএমইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পরিচালক। পরিদর্শন শেষে তিনি মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ১২টি শর্ত দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রকল্পের মেয়াদ এরপর আর বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে না। এম্পিথিয়েটারে প্রবেশ, প্রস্থান, গ্যালারি ও মঞ্চের পেছনের দিকে দুঘর্টনাবশত কারও পানিতে পড়া রোধে যথেষ্ট নিরাপত্তা অবকাঠামো যুক্ত করতে হবে। উত্তর ইউলুপ নির্মাণ কাজ বর্ষা আসার আগেই রাজউক ও সেনাবাহিনীকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ইউলুপ নির্মাণের সময় রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা ও নির্মাণাধীন এলাকায় ফেন্সিং, নেটসহ অন্যান্য দুঘর্টনা প্রতিরোধী সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। নির্মাণাধীন ১০ তলা ম্যানেজমেন্ট ভবনের পার্কিং থেকে হাতিরঝিল অংশে একটি ফুটওভার সেতু সংযোগ করতে হবে।
No comments