কারাগারে বহুরূপী জুমা by ওয়েছ খছরু
উঠতি
বয়সী যুবক কিংবা টাকাওয়ালা পুরুষ। যারাই এক নজর দেখতো জুমাকে, রূপে পাগল
হয়ে যেত তার। আর এ সুযোগ লুফে নিয়ে সিলেটের বহুরূপী জুমা অল্প বয়সেই
জড়িয়েছে একের পর এক স্ক্যান্ডালে। এরই মধ্যে এক প্রেমিকের মনজয় করে সিলেটী
নাটকে অভিনয় করে রাতারাতি পেয়েছে ‘নায়িকা’র খ্যাতি। শেষ মুহূর্তে জুমাকে
নিয়ে সিলেটী নাটকপাড়ায় শুরু হয়েছিল কাড়াকাড়ি। কিন্তু জুমার মুখোশ খুলতে খুব
বেশি দেরি হয়নি। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা ভাইয়ের স্ত্রীর মামলায় অবশেষে
কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে সে। সঙ্গে তার মা ছমিরুন নেছাও। আর
তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে সেই মামলার সাক্ষী তার ছোটবোন মাহমুদাও।
জুমার পুরো নাম জুমা আক্তার জুমি। জুমা নামেই সিলেটের পুরুষদের কাছে
পরিচিতি তার। গ্রেপ্তারের পর পর জুমা পুলিশের কাছে নিজেই স্বীকার করেছে সে
ইতিমধ্যে ৪টি বিয়ে করেছে। সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সে প্রেম শুরু করে।
এরপর বিয়ে। এভাবে একে একে চারটি বিয়ে করেছে। আর তার ওইসব বিয়ে টিকেনি বেশি
দিন। স্বামীকে লুটপাট করে স্বল্প দিনের মধ্যে জুমা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। একজনের
সঙ্গ ছেড়ে ধরে আরেকজনকে। ডিভোর্সি স্বামীরা বিয়ে ভাঙ্গার প্রতিবাদ করলে
মামলাও দেয়া হয় তাদের উপর। জুমার বয়স এখন ২৫ বছর। সন্তানও আছে তার। কিন্তু
বেশ-ভুষায় জুমা এখন ষোড়শী। সিলেটের পার্টিপাড়ায় জুমার কদর বেশি। যেখানে
জুমা উপস্থিত সেখানে উঠতি যুবকদের ঢল নামতো। নাটক, শোবিজের ভিড়ে জুমার অন্য
পরিচিতি ছিল। পিতা আবদুল কাদির পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সিলেটের নতুন
বাজারে তার ব্যবসা। কিন্তু বাড়িতে আসেন কম। আর জুমার ভাইরাও বাসায় থাকেন
না। কাজের সন্ধানে ভাইরা সিলেটের বাইরে। এই সুযোগে সিলেটের শামীমবাদের
ভাড়াটে বাসাকে জুমা গড়ে তুলেছিলেন রঙ্গশালা হিসেবে। তার বাসায় পুরুষদের
যাতায়াত ছিল অবাধ। রাতে-বিরাতে পুরুষরা যেতেন সেখানে। সম্প্রতি জুমার
কুকীর্তি ফাঁস করলেন তার ভাবী তাসলিমা আক্তার। জুমার ভাই রুবেলের স্ত্রী
সে। তাসলিমার বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পরিবতনগর গ্রামে। প্রায়
এক বছর আগে পারিবারিকভাবে ৫ লাখ টাকা কাবিনের মাধ্যমে রুবেলের সঙ্গে বিয়ে
হয় তাসলিমার। নিতান্তই গরিব ঘরের মেয়ে তাসলিমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসা হয়
সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার বাসায়। সেই বাসায় রুবেলের স্ত্রী
তাসলিমার সঙ্গে কিছুদিন বসবাস করেন। এরপর মা ও বোনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের
ধরে রুবেল বাড়ি থেকে চলে যায় ঢাকায়। এরপর থেকে পুরুষ ছাড়া সংসারে তাসলিমা
বসবাস করে। মামলার এজাহারে তাসলিমা উল্লেখ করেছেন, অসৎ উদ্দেশ্যে তার
শাশুড়ি ছমিরুন ও দেবর সুমন আহমদ তার স্বামীকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে
দেয়। এরপর জুমা মোটা অঙ্কের টাকার লোভে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশের হাতে। এভাবে
সে তাকে পর পুরুষের সঙ্গে অসামাজিক কাজে লিপ্ত করে। সিলেট নগরীর বিভিন্ন
স্থানে তারা বাসা ভাড়া নিয়ে তাকে পর পুরুষের মুখে ঢেলে দেয়। এভাবে ইচ্ছার
বিরুদ্ধে গেল কয়েকমাস ধরে তাকে একাধিক পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করানো হয় বলে
দাবি করেন তাসলিমা। এসব বিষয়ে তাসলিমার অবাধ্য হলে তার ওপরও নির্যাতন
চালানো হতো বলে জানায় সে। কখনও কখনও এক সঙ্গে একাধিক পুরুষের সঙ্গে তাকে
মিলিত হতে হত বলে দাবি করে তাসলিমা। শনিবার রাতে এভাবে রাতের বেলা ৩-৪ জন
অজ্ঞাতনামা পুরুষকে বাসায় আনে জুমা। টাকা গ্রহণের পর তাকে পুরুষদের হাতে
ছেড়ে দিলে গোটা রাত ওই পুরুষরা তাকে একের পর এক ধর্ষণ করে। এজাহারে তিনি
উল্লেখ করেন, জুমা নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন পুরুষকে বিয়ের ফাঁদে
ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে। এবং একাধিক পুরুষের সঙ্গে অবৈধকাজে লিপ্ত হয়। রোববার
রাতে এ ব্যাপারে তাসলিমা থানায় অভিযোগ করে। পরবর্তীতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ
অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযান চালিয়ে জুমা আক্তার জুমি, তার মা ছমিরুন নেছা ও
ছোট বোন মাহমুদাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। মামলায় সাক্ষী হওয়ায়
পুলিশ মাহমুদাকে গতকাল থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে, মাহমুদা পিতা ও অন্য
কারও আশ্রয়ে গেছে সেটি পুলিশ জানাতে পারেনি। আর মঙ্গলবার দুপুরে জুমা ও তার
মা ছমিরুন নেছাকে নির্যাতিত তাসলিমার মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে পাঠানো
হয়। আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে, আটকের পর জুমা সাংবাদিকদের
জানিয়েছেন, তিনি নির্দোষ। তার বর্তমান স্বামীর ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
তাসলিমার মা সুমা বেগম গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, মামলা করার পর তার মেয়ে
তাসলিমা দোয়ারাবাজারে চলে এসেছে। সে অসুস্থ থাকায় বোনের বাড়ি সুনামগঞ্জে
রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, তার মেয়েকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর
প্রতিবাদ তারাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু জুমা ভয় দেখিয়ে এসব কাজ করায়। সিলেটের
কোতোয়ালী থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান গতকাল
জানিয়েছেন, বোনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে, সে সাক্ষী হওয়ার কারণে
ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর জুমা ও তার মাঠে মঙ্গলবারই আদালতে পাঠানো হয়। আদালত
তাদের জেলে পাঠিয়েছেন। আর জুমার পিতা আবদুল কাদির জানিয়েছেন, তার মেয়েকে
মিথ্যা ঘটনায় জড়িয়েছে বর্তমান স্বামী জয়নাল। জয়নালের প্ররোচনায় তার পুরো
পরিবারটি তছনছ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
No comments