১৪ ঘণ্টার অভিযান ‘জঙ্গি’ আস্তানায় সুইসাইড ভেস্ট- ১৬ গ্রেনেড উদ্ধার, আটক ৭
রাজধানীর
মিরপুরে একটি ছয়তলা ভবনের ‘জঙ্গি’ আস্তানায় দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে
১৬টি গ্রেনেড ও বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আটক করা হয়েছে ৭ জনকে। উদ্ধার করা হয়েছে সুইসাইড ভেস্ট। দেশে এ ধরনের
সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধারের ঘটনা এটিই প্রথম বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশে
উগ্রপন্থিদের কার্যক্রমে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বুধবার মধ্যরাত থেকে
শুরু হওয়া এই অভিযান
গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি অভিযানে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের একটি টিমও অংশ নেয়। অভিযানে ছিল পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াত। অভিযানের সময় ‘জঙ্গিরা’ ঘরের ভেতর গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় পুলিশও বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি, টিয়াল শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আটককৃত ‘জঙ্গি’ ও সন্দেহভাজনদের মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, আটককৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি’র সদস্য। তাদের বয়স ২২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। জঙ্গিদের এই আস্তানাটি হ্যান্ড মেইড গ্রেনেড তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে পুলিশ ধারণা করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্য মতে ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ভেতরে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এতে পুলিশও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে বাড়িটি ঘেরাও করে রেখে ডিবির আরও টিম নিয়ে একযোগে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে তিন জন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি সদস্য বলে জানান তিনি। বাকি চারজনের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অভিযানে অংশ নেয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর শাহআলী থানাধীন এ ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। রাত তিনটার দিকে পুলিশ ওই ভবনের ছয় তলার ফ্ল্যাটে যায়। এ সময় বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে দরজা খোলা হচ্ছিল না। পরে অভিযানকারী গোয়েন্দা পুলিশের দলটি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে ডিবির আরও কয়েকটি টিমকে ডেকে আনে। একই সঙ্গে থানা পুলিশের পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরাও ওই বাসার চারপাশে অবস্থান নেয়। ফজরের আজানের পর পুলিশ ওই ভবনের প্রত্যেক তলার লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়। এ সময় বেশ কয়েক বার হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে তাদের দরজা খোলে বাইরে এসে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এতে তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
সকাল সাতটার দিকে ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে পুলিশ ভেতরে ঢোকে। এ সময় ফ্ল্যাটের ভেতরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এমনকি দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়ে মারে বলে ডিবি কর্মকর্তারা জানান। এ সময় ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও দুটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরে গোয়েন্দা পুলিশের দলটি ওই ফ্ল্যাটটি থেকে জেএমবির তিন সদস্যকে ও পাশের ফ্ল্যাট থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করে নিয়ে যায়। অভিযানে অংশ নেয়া ডিবির কর্মকর্তারা জানান, প্রথমেই রান্নাঘরে ও বেডরুমে দুটি গ্রেনেড পাওয়া যায়। বাসার ভেতর থেকে সুইসাইড ভেস্টও জব্দ করা হয়।
ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে হাতে তৈরি ১৬টি গ্রেনেড, দুটি বোমা ও প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। দিনভর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, ফ্ল্যাটের ভেতরে একটি ট্রাঙ্কে অনেকগুলো হ্যান্ড মেইড গ্রেনেড ছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছিলেন। ওই ট্রাঙ্ক থেকে গ্রেনেডগুলি উদ্ধার করতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে। এ ছাড়া ঘরের ভেতরে কাপড় দিয়ে লুকানো অবস্থায়ও একাধিক গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, হোসেনি দালান, কামরাঙ্গীর চরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এর আগে যে ধরনের হাতে তৈরি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছিল, এই ভবনের বিস্ফোরকগুলোও সেরকম। ধারণা করা হচ্ছে, সেই গ্রেনেডগুলো এখানেই তৈরি করা হয়েছে। তিনি বাড়ির মালিকের সহায়তায় অন্যদের সরিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তাদের না সরালে জঙ্গিরা তাদের জিম্মি করতে পারতো। তবু তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালাতে চেষ্টা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন গুলি করেছে বলে জানান তিনি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, ছয়তলার পাশাপাশি দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। একটি ফ্ল্যাট থেকে বিস্ফোরকসহ দুইজনকে আটক করা হয়। সেখানেই রান্না ঘরে, লোহার ট্রাঙ্ক এবং কাপড়ে প্যাঁচানো অবস্থায়ও বিস্ফোরকগুলো পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাশের ফ্ল্যাট থেকে আটক বাকি চারজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। বাড়ির মালিকের বরাত দিয়ে ছানোয়ার হোসেন বলেন, আটককৃতরা চার মাস আগে ছয়তলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। ভাড়া নেয়ার সময় তারা নিজেদের স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। ছাত্র পরিচয়ের আড়ালে তারা ওই বাসায় হাতে তৈরি গ্রেনেড বানানোর কাজ করত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাড়ির মালিক আবুল হোসেন ভূঁইয়ার নাতি হাসান জানান, প্রায় তিন মাস আগে ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাট মাসে নয় হাজার টাকায় ভাড়া নেয় চার জন। তাদের মধ্যে দুজন ছাত্র ও দুজন চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেয়। তাদের বাড়ি ফরিদপুরে বলে জানায়। তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও রাখা হয়। কিন্তু ওই পরিচয়পত্র সঠিক না বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের জানিয়েছেন। অর্থাৎ ভুয়া পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তারা। এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল বিকালে বলেন, এখনও তাদের সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জানা গেছে, ওই বাড়ির মালিক আবুল হোসেন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের একজন স্থানীয় নেতা। ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিনি। মিরপুর-১ কো-অপারেটিভ মার্কেটে ইশরাত ফোম সার্ভিস নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় আবুল হোসেন ভুঁইয়ার ছেলে অপু, নাতি হাসানসহ পরিবারের সদস্যরা থাকেন। প্রায় এক মাস ধরে আবুল হোসেন ভূঁইয়া অসুস্থ। অভিযান কালে দ্বিতীয় তলার বারান্দায় ছিলেন তিনি। আবুল হোসেন ভূঁইয়া জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাত ২টায় তার বাড়িতে গেলে তিনি তাদের সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেশী হাসিনা বেগম, ক্ষুদে ব্যবসায়ী মাহবুব ও খোরশেদ আলী জানান, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের চলাফেরা ছিল সীমিত। আশপাশের তাদের আড্ডা দিতে দেখেননি কখনও। এমনকি পাশের মসজিদে যেতে দেখেননি। ওই বাড়ির বাসিন্দা হাসান বলেন, আমরা ব্যবসায়ী মানুষ, ভোরে বাসা থেকে বের হলে রাতে ফিরি যে কারণে তাদের সঙ্গে দেখা হতো না। তারা সকালে বের হতো এবং সন্ধ্যার পর ফিরতো বলে ধারণা তার। ওই বাড়ির কারও সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ওই বাসার বাইরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা ওই বাড়ির সামনে ভিড় করে। উদ্ধারকৃত গ্রেনেডগুলো পার্শ্ববর্তী সারেং বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন ফাঁকা স্থানে নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিকাল ৪টায় অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করেন ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দিয়ে অন্তত ২শ গ্রেনেড তৈরি করা যেতে পারে। গ্রেনেড তৈরির জন্য লেদ মেশিন থেকে শুরু করে যাবতীয় উপকরণ সেখানে পাওয়া গেছে। বড় কোনো নাশকতা করার জন্যই এই গ্রেনেডগুলো তৈরি করা হচ্ছিলো বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি অভিযানে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের একটি টিমও অংশ নেয়। অভিযানে ছিল পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াত। অভিযানের সময় ‘জঙ্গিরা’ ঘরের ভেতর গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় পুলিশও বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি, টিয়াল শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আটককৃত ‘জঙ্গি’ ও সন্দেহভাজনদের মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, আটককৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি’র সদস্য। তাদের বয়স ২২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। জঙ্গিদের এই আস্তানাটি হ্যান্ড মেইড গ্রেনেড তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে পুলিশ ধারণা করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্য মতে ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ভেতরে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এতে পুলিশও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে বাড়িটি ঘেরাও করে রেখে ডিবির আরও টিম নিয়ে একযোগে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে তিন জন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি সদস্য বলে জানান তিনি। বাকি চারজনের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অভিযানে অংশ নেয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর শাহআলী থানাধীন এ ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। রাত তিনটার দিকে পুলিশ ওই ভবনের ছয় তলার ফ্ল্যাটে যায়। এ সময় বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে দরজা খোলা হচ্ছিল না। পরে অভিযানকারী গোয়েন্দা পুলিশের দলটি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে ডিবির আরও কয়েকটি টিমকে ডেকে আনে। একই সঙ্গে থানা পুলিশের পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরাও ওই বাসার চারপাশে অবস্থান নেয়। ফজরের আজানের পর পুলিশ ওই ভবনের প্রত্যেক তলার লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়। এ সময় বেশ কয়েক বার হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে তাদের দরজা খোলে বাইরে এসে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এতে তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
সকাল সাতটার দিকে ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে পুলিশ ভেতরে ঢোকে। এ সময় ফ্ল্যাটের ভেতরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এমনকি দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়ে মারে বলে ডিবি কর্মকর্তারা জানান। এ সময় ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও দুটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরে গোয়েন্দা পুলিশের দলটি ওই ফ্ল্যাটটি থেকে জেএমবির তিন সদস্যকে ও পাশের ফ্ল্যাট থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করে নিয়ে যায়। অভিযানে অংশ নেয়া ডিবির কর্মকর্তারা জানান, প্রথমেই রান্নাঘরে ও বেডরুমে দুটি গ্রেনেড পাওয়া যায়। বাসার ভেতর থেকে সুইসাইড ভেস্টও জব্দ করা হয়।
ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে হাতে তৈরি ১৬টি গ্রেনেড, দুটি বোমা ও প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। দিনভর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, ফ্ল্যাটের ভেতরে একটি ট্রাঙ্কে অনেকগুলো হ্যান্ড মেইড গ্রেনেড ছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছিলেন। ওই ট্রাঙ্ক থেকে গ্রেনেডগুলি উদ্ধার করতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে। এ ছাড়া ঘরের ভেতরে কাপড় দিয়ে লুকানো অবস্থায়ও একাধিক গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, হোসেনি দালান, কামরাঙ্গীর চরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এর আগে যে ধরনের হাতে তৈরি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছিল, এই ভবনের বিস্ফোরকগুলোও সেরকম। ধারণা করা হচ্ছে, সেই গ্রেনেডগুলো এখানেই তৈরি করা হয়েছে। তিনি বাড়ির মালিকের সহায়তায় অন্যদের সরিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তাদের না সরালে জঙ্গিরা তাদের জিম্মি করতে পারতো। তবু তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালাতে চেষ্টা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন গুলি করেছে বলে জানান তিনি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, ছয়তলার পাশাপাশি দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। একটি ফ্ল্যাট থেকে বিস্ফোরকসহ দুইজনকে আটক করা হয়। সেখানেই রান্না ঘরে, লোহার ট্রাঙ্ক এবং কাপড়ে প্যাঁচানো অবস্থায়ও বিস্ফোরকগুলো পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাশের ফ্ল্যাট থেকে আটক বাকি চারজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। বাড়ির মালিকের বরাত দিয়ে ছানোয়ার হোসেন বলেন, আটককৃতরা চার মাস আগে ছয়তলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। ভাড়া নেয়ার সময় তারা নিজেদের স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। ছাত্র পরিচয়ের আড়ালে তারা ওই বাসায় হাতে তৈরি গ্রেনেড বানানোর কাজ করত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাড়ির মালিক আবুল হোসেন ভূঁইয়ার নাতি হাসান জানান, প্রায় তিন মাস আগে ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাট মাসে নয় হাজার টাকায় ভাড়া নেয় চার জন। তাদের মধ্যে দুজন ছাত্র ও দুজন চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেয়। তাদের বাড়ি ফরিদপুরে বলে জানায়। তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও রাখা হয়। কিন্তু ওই পরিচয়পত্র সঠিক না বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের জানিয়েছেন। অর্থাৎ ভুয়া পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তারা। এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল বিকালে বলেন, এখনও তাদের সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জানা গেছে, ওই বাড়ির মালিক আবুল হোসেন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের একজন স্থানীয় নেতা। ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিনি। মিরপুর-১ কো-অপারেটিভ মার্কেটে ইশরাত ফোম সার্ভিস নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় আবুল হোসেন ভুঁইয়ার ছেলে অপু, নাতি হাসানসহ পরিবারের সদস্যরা থাকেন। প্রায় এক মাস ধরে আবুল হোসেন ভূঁইয়া অসুস্থ। অভিযান কালে দ্বিতীয় তলার বারান্দায় ছিলেন তিনি। আবুল হোসেন ভূঁইয়া জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাত ২টায় তার বাড়িতে গেলে তিনি তাদের সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেশী হাসিনা বেগম, ক্ষুদে ব্যবসায়ী মাহবুব ও খোরশেদ আলী জানান, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের চলাফেরা ছিল সীমিত। আশপাশের তাদের আড্ডা দিতে দেখেননি কখনও। এমনকি পাশের মসজিদে যেতে দেখেননি। ওই বাড়ির বাসিন্দা হাসান বলেন, আমরা ব্যবসায়ী মানুষ, ভোরে বাসা থেকে বের হলে রাতে ফিরি যে কারণে তাদের সঙ্গে দেখা হতো না। তারা সকালে বের হতো এবং সন্ধ্যার পর ফিরতো বলে ধারণা তার। ওই বাড়ির কারও সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ওই বাসার বাইরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা ওই বাড়ির সামনে ভিড় করে। উদ্ধারকৃত গ্রেনেডগুলো পার্শ্ববর্তী সারেং বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন ফাঁকা স্থানে নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিকাল ৪টায় অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করেন ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দিয়ে অন্তত ২শ গ্রেনেড তৈরি করা যেতে পারে। গ্রেনেড তৈরির জন্য লেদ মেশিন থেকে শুরু করে যাবতীয় উপকরণ সেখানে পাওয়া গেছে। বড় কোনো নাশকতা করার জন্যই এই গ্রেনেডগুলো তৈরি করা হচ্ছিলো বলে মনে করেন তিনি।
No comments