ইনটেনসিভ কেয়ারে মুমূর্ষু গণতন্ত্র বাঁচবে তো? by নূরে আলম সিদ্দিকী
কিছুদিন
আগে রাষ্ট্রের একক ক্ষমতার অধিকারী শেখ হাসিনা বলেছেন, “গণতন্ত্র নয়,
উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য”। তার এই উক্তি গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। আসন্ন
পৌরসভা নির্বাচনের আঙ্গিকে উক্তিটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। এমনিতেই
ক্ষমতার নির্লজ্জ প্রলোভন দেশ, জাতি, স্বাধীনতার প্রশ্নে মানুষের হৃদয়ের
স্পন্দনকে আদৌ উপলব্ধি না করে প্রতিহিংসাপরায়ণতা এতটাই তীব্র হয়েছে যে,
মানুষ আজ রাজনীতি ও রাজনীতিকদের প্রতি নিরাশ, হতাশ ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে।
রাজনীতি ও রাজনীতিকদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ শুধু মুখ ফিরিয়েই নেননি
(দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে); তারাই একদিকে গণতন্ত্রকামী দেশটিকে মূল্যবোধের
অবক্ষয়ের গভীর অতলান্তে নিক্ষেপ করেছেন, অন্যদিকে মানুষ ও সমাজের স্বস্তি ও
নিরাপত্তার বিষয়টিকে ব্যারোমিটারের তলানিতে এনে ঠেকিয়েছেন। একটি প্রশ্নে
সাধারণ মানুষের মনে কোনো দ্বিধা-সংকোচ নাই, দুই জোটের ক্ষমতার প্রতি উদগ্র
লালসা, দুর্নীতি, দুর্বিচার; বিশেষ করে দুর্নীতির প্রতি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ
না করায় সমাজের দুর্ধর্ষ দুর্নীতিবাজরা অমিত বিক্রমে, দাম্ভিকতার চূড়ান্ত
বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সমাজে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। এ কথাটি আমি
বহুবার বলেছি; কিন্তু এর প্রতিকার তো দূরে থাক, রাজনীতিকদের কর্ণকুহরে
কখনোই আমার সেই ফরিয়াদ পৌঁছে নাই। রাষ্ট্রের নাগরিকদের হৃদস্পন্দন বোঝার
আগ্রহ ও মানসিকতা আজ রাজনীতিকদের মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিত।
আসন্ন পৌর নির্বাচনটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস এই চিরসত্যটি প্রতিভাত করেছে যে, মানুষ গণতন্ত্র-পিয়াসী। অন্যদিকে রাজনীতিকদের অন্তরের পুরো ক্যানভাস জুড়ে শীর্ষ-নেতৃত্বের স্তাবকতা, অর্চনা, বন্দনা ছাড়া অন্যকিছুর বালাই নেই। উভয় জোটেই আজ এটি নির্মম বাস্তবতা।
দেশের মোট ২৩৬টি পৌরসভায় প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দুই জোটে আতি, পাতি, মহারথীদের আমি বিদগ্ধ চিত্তে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, রাজনীতিতে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার একমাত্র নিয়ামক শক্তি হলো সহনশীলতা; সহনশীলতা ছাড়া কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল যার যার আঙ্গিকে দেশের কল্যাণে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রস্তুত করে, আবার জাতীয় স্বার্থে দলীয় আবর্ত থেকে বেরিয়ে এসে একাট্টা হয় এবং জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা করে।
এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের নিয়ামক শক্তি সহনশীলতা প্রদর্শন করতে পারলে দেশ এক মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে অনেকখানি রক্ষা পাবে। শেখ হাসিনাকে প্রমাণ করতে হবে, তার সরকার তার একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যেও নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে জাতিকে একটি গ্রহণযোগ্য(!) নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়েছে। তার চারপাশে যারা সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে তাদের অনেকেই বিধ্বস্ত বামের অপভ্রংশ। এই স্তাবক, তোষামোদকারী এবং আদর্শ-বিবর্জিত বামেরা শেখ হাসিনাকে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে যে, কোনভাবেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়র পদ বিরোধী জোটকে দেয়া যাবে না। তাহলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি সোচ্চার ও শক্তিশালী হবে। তবে দেশবাসী মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গণতন্ত্র প্রাথমিক ভিত্তি পাবে। তাতে তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি খুঁজে পাবে।
নির্বাচন কমিশনের অবস্থা এতটাই করুণ যে, তারা শক্ত ও নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন- এটা কেউই বিশ্বাস করেন না। তিনি ইতিমধ্যেই তার পক্ষপাতিত্বের অসংখ্য দৃষ্টান্ত প্রতিস্থাপন করেছেন। সরকারি জোটের অনেকেই তাকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন জোটের এরশাদ তাকে “ভাঁড়” বলেছেন। একটা উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক, বিরোধী জোট পৌর নির্বাচনের আগে ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনী প্রদানের দাবি তুলেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটাকে তো আমলে নেয়ই নি বরং জ্যোতিষীর মতো ভবিষ্যৎকে নির্বিঘ্নে অবলোকন করে বলেছেন, সেনা নিয়োগের প্রয়োজন নাই। ভাবখানা, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করার অলৌকিক শক্তির অধিকারী। এটা পৌর নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সফল করার সমস্ত দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার মানদণ্ড। একটু জটিল সিদ্ধান্ত আসলেই তিনি অপ্রতিরোধ্য শক্তির অধিকারী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে। এতে বিরোধী জোটের জন্য প্রমাণ করতে সহজ হয় যে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও শক্তিধর তো নয়ই, বরং ক্ষমতাসীন জোটের কাছে একান্তভাবে নতজানু।
আমাকে ভুল বোঝার অবকাশ না রাখার লক্ষ্যে আমি জনান্তিকে জানিয়ে রাখি, একমাত্র সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং দলমতের ঊর্ধ্বে। দেশের মানুষেরও তাদের নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বিশ্বাস ও আস্থা প্রগাঢ়। আমি তাদের সঙ্গে একমত, যারা বলছেন, পুলিশসহ প্রশাসনের অংশ সবসময়ই সরকারের কাছে অনুগত থাকতে বাধ্য। অভিশংসন আইনের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও বিরোধী রাজনৈতিক জোটের কাছে আমার বক্তব্য কোনো অজুহাতেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না (৫ জানুয়ারির নির্বাচনটিকে আমি অদ্যাবধি সমর্থন করি না)। বিস্মৃত হবেন না, আজকে যে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও দুর্বিচার- সেটির প্রসূতিকাগার “হাওয়া ভবন”। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের নৃশংসতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। যদিও এটি বাস্তব, দলছুট ও সুবিধাবাদীদের দ্বারা গড়ে ওঠা বিএনপির পক্ষে তাদের কোনো আন্দোলনের সঙ্গেই তারা জনসম্পৃক্ততা তৈরী করতে পারেন নি। তবুও পৌর নির্বাচনে তাদের কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে হলে সেটাকে তাদের ধরে রাখতে হবে। আমি পূর্বেও বলেছি যে, খালেদা জিয়াকে নিঃসংশয় চিত্তে ঘোষণা দিতে হবে যে, তিনি এবং তার পরিবার কোনভাবেই ক্ষমতায় আসীন হবেন না। নইলে তোতাপাখির মতো তিনি এবং তার স্তাবক, মোসাহেবরা গণতন্ত্র উদ্ধারে যে বক্তব্যটির চর্বিতচর্বণ করছেন, তা মানুষ শুনছে কিন্তু বিশ্বাস করছে না। অধিকার কখনো অনুনয়, বিনয় বা ভিক্ষা চেয়ে পাওয়া যায় না। বোমা বিস্ফোরণ বা মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে তো প্রশ্নই আসে না। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেগম খালেদা জিয়ার লক্ষ্য হওয়া উচিত, প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে স্বেচ্ছাকারাবরণ ও নির্যাতন-নিগ্রহ মোকাবিলা করার মতো মৃত্যুভয়কে পরোয়া না করা অকুতোভয় অন্তত ৫০০ কর্মী খুঁজে বের করা। সেটি করতে না পারলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিস্তৃত পথপরিক্রমণে- বিশেষ করে ৬ দফা প্রদানের পর বাঙালি জাতীয় চেতনার উৎস ছাত্রলীগকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে যে চেতনার গৌরবগাঁথায় বঙ্গবন্ধু তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে সমগ্র জাতিকে একটি মিলনের মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছিলেন, সেখান থেকে রাজনীতিকদের অন্তত কিছু শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত।
এই পৌর নির্বাচনটি সষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে দেশের মুমূর্ষু গণতন্ত্র কিছুটা অক্সিজেন পাবে। গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারবিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজে দুর্বিচার ও দুর্নীতিপরায়ণদের দৌরাত্ম্য বাড়ায় এবং সামাজিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। দুই নেত্রী বিষয়টি যত দ্রুত অনুধাবন করবেন, জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
আসন্ন পৌর নির্বাচনটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস এই চিরসত্যটি প্রতিভাত করেছে যে, মানুষ গণতন্ত্র-পিয়াসী। অন্যদিকে রাজনীতিকদের অন্তরের পুরো ক্যানভাস জুড়ে শীর্ষ-নেতৃত্বের স্তাবকতা, অর্চনা, বন্দনা ছাড়া অন্যকিছুর বালাই নেই। উভয় জোটেই আজ এটি নির্মম বাস্তবতা।
দেশের মোট ২৩৬টি পৌরসভায় প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দুই জোটে আতি, পাতি, মহারথীদের আমি বিদগ্ধ চিত্তে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, রাজনীতিতে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার একমাত্র নিয়ামক শক্তি হলো সহনশীলতা; সহনশীলতা ছাড়া কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল যার যার আঙ্গিকে দেশের কল্যাণে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রস্তুত করে, আবার জাতীয় স্বার্থে দলীয় আবর্ত থেকে বেরিয়ে এসে একাট্টা হয় এবং জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা করে।
এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের নিয়ামক শক্তি সহনশীলতা প্রদর্শন করতে পারলে দেশ এক মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে অনেকখানি রক্ষা পাবে। শেখ হাসিনাকে প্রমাণ করতে হবে, তার সরকার তার একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যেও নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে জাতিকে একটি গ্রহণযোগ্য(!) নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়েছে। তার চারপাশে যারা সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে তাদের অনেকেই বিধ্বস্ত বামের অপভ্রংশ। এই স্তাবক, তোষামোদকারী এবং আদর্শ-বিবর্জিত বামেরা শেখ হাসিনাকে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে যে, কোনভাবেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়র পদ বিরোধী জোটকে দেয়া যাবে না। তাহলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি সোচ্চার ও শক্তিশালী হবে। তবে দেশবাসী মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গণতন্ত্র প্রাথমিক ভিত্তি পাবে। তাতে তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি খুঁজে পাবে।
নির্বাচন কমিশনের অবস্থা এতটাই করুণ যে, তারা শক্ত ও নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন- এটা কেউই বিশ্বাস করেন না। তিনি ইতিমধ্যেই তার পক্ষপাতিত্বের অসংখ্য দৃষ্টান্ত প্রতিস্থাপন করেছেন। সরকারি জোটের অনেকেই তাকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন জোটের এরশাদ তাকে “ভাঁড়” বলেছেন। একটা উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক, বিরোধী জোট পৌর নির্বাচনের আগে ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনী প্রদানের দাবি তুলেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটাকে তো আমলে নেয়ই নি বরং জ্যোতিষীর মতো ভবিষ্যৎকে নির্বিঘ্নে অবলোকন করে বলেছেন, সেনা নিয়োগের প্রয়োজন নাই। ভাবখানা, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করার অলৌকিক শক্তির অধিকারী। এটা পৌর নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সফল করার সমস্ত দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার মানদণ্ড। একটু জটিল সিদ্ধান্ত আসলেই তিনি অপ্রতিরোধ্য শক্তির অধিকারী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে। এতে বিরোধী জোটের জন্য প্রমাণ করতে সহজ হয় যে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও শক্তিধর তো নয়ই, বরং ক্ষমতাসীন জোটের কাছে একান্তভাবে নতজানু।
আমাকে ভুল বোঝার অবকাশ না রাখার লক্ষ্যে আমি জনান্তিকে জানিয়ে রাখি, একমাত্র সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং দলমতের ঊর্ধ্বে। দেশের মানুষেরও তাদের নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বিশ্বাস ও আস্থা প্রগাঢ়। আমি তাদের সঙ্গে একমত, যারা বলছেন, পুলিশসহ প্রশাসনের অংশ সবসময়ই সরকারের কাছে অনুগত থাকতে বাধ্য। অভিশংসন আইনের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও বিরোধী রাজনৈতিক জোটের কাছে আমার বক্তব্য কোনো অজুহাতেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না (৫ জানুয়ারির নির্বাচনটিকে আমি অদ্যাবধি সমর্থন করি না)। বিস্মৃত হবেন না, আজকে যে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও দুর্বিচার- সেটির প্রসূতিকাগার “হাওয়া ভবন”। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের নৃশংসতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। যদিও এটি বাস্তব, দলছুট ও সুবিধাবাদীদের দ্বারা গড়ে ওঠা বিএনপির পক্ষে তাদের কোনো আন্দোলনের সঙ্গেই তারা জনসম্পৃক্ততা তৈরী করতে পারেন নি। তবুও পৌর নির্বাচনে তাদের কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে হলে সেটাকে তাদের ধরে রাখতে হবে। আমি পূর্বেও বলেছি যে, খালেদা জিয়াকে নিঃসংশয় চিত্তে ঘোষণা দিতে হবে যে, তিনি এবং তার পরিবার কোনভাবেই ক্ষমতায় আসীন হবেন না। নইলে তোতাপাখির মতো তিনি এবং তার স্তাবক, মোসাহেবরা গণতন্ত্র উদ্ধারে যে বক্তব্যটির চর্বিতচর্বণ করছেন, তা মানুষ শুনছে কিন্তু বিশ্বাস করছে না। অধিকার কখনো অনুনয়, বিনয় বা ভিক্ষা চেয়ে পাওয়া যায় না। বোমা বিস্ফোরণ বা মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে তো প্রশ্নই আসে না। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেগম খালেদা জিয়ার লক্ষ্য হওয়া উচিত, প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে স্বেচ্ছাকারাবরণ ও নির্যাতন-নিগ্রহ মোকাবিলা করার মতো মৃত্যুভয়কে পরোয়া না করা অকুতোভয় অন্তত ৫০০ কর্মী খুঁজে বের করা। সেটি করতে না পারলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিস্তৃত পথপরিক্রমণে- বিশেষ করে ৬ দফা প্রদানের পর বাঙালি জাতীয় চেতনার উৎস ছাত্রলীগকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে যে চেতনার গৌরবগাঁথায় বঙ্গবন্ধু তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে সমগ্র জাতিকে একটি মিলনের মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছিলেন, সেখান থেকে রাজনীতিকদের অন্তত কিছু শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত।
এই পৌর নির্বাচনটি সষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে দেশের মুমূর্ষু গণতন্ত্র কিছুটা অক্সিজেন পাবে। গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারবিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজে দুর্বিচার ও দুর্নীতিপরায়ণদের দৌরাত্ম্য বাড়ায় এবং সামাজিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। দুই নেত্রী বিষয়টি যত দ্রুত অনুধাবন করবেন, জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
No comments