শক্ত-সোজা মেরুদণ্ড! আছে? নাকি নেই? by গোলাম মাওলা রনি
মেরুদণ্ডী
প্রাণীর কথা বলতে গেলে প্রসঙ্গক্রমে অমেরুদণ্ডী প্রাণীর নাম চলে আসবেই।
মানুষ ছাড়াও আরো অনেক জন্তু-জানোয়ারের মেরুদণ্ড রয়েছে। বাঘ, হাতি, গরিলা,
বান্দর, হায়না-ময়না থেকে শুরু করে হাজার হাজার প্রাণীর নাম বলা যাবে। অন্য
দিকে সাপ, কেঁচো, চ্যাল্লা, বিছা, কুইচ্যা, কৃমি, ভাইরাস প্রভৃতি নামে
অসংখ্য মেরুদণ্ডহীন প্রাণী রয়েছে। আমাদের সমাজে মেরুদণ্ড নামক শব্দটি
প্রায়ই রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। মানুষের ব্যক্তিত্ব, রুচি, স্বাধীনভাবে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কাজ করার ক্ষমতার মাত্রার ওপর লোকটির মেরুদণ্ডের
বিশেষণ নির্ভর করে। সৎ, সাহসী, উদ্যমী, পরিশ্রমী ও স্বাধীনচেতা মানুষের
প্রশংসা করতে গিয়ে প্রায়ই বলা হয়- মিয়ার ব্যাটার মেরুদণ্ড আছে বটে। অন্য
দিকে মিনমিনে স্বভাবের ব্যক্তিত্বহীন, লোভী, স্বার্থপর, অসৎ, অলস ও পরগাছা
প্রকৃতির লোকজনকে ঠাট্টা করে বলা হয়, লোকটার মেরুদণ্ড বলতে কিছু নেই।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এসে হঠাৎ করেই মেরুদণ্ডের কথা মনে হলো ভিন্ন একটি কারণে। দেশে এখন পৌর নির্বাচনের মওসুম চলছে। প্রায় পৌনে তিন শ’ পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কয়েকটি পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত গিনেস বুকে রেকর্ড লাভের জন্য বিরাট কিছু করে ফেলার হম্বিতম্বি এবং তাদের অতীত ইতিহাসের জ্বালাময়ী দৃষ্টান্ত বিবেচনায় মনে হচ্ছে আমরা হয়তো নির্বাচন নামক যত রঙ, ঢঙ ও সঙ সৃষ্টি হয়েছে তা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, দেশের প্রথিতযশা নাট্যকার, অভিনেতা ও কলাকুশলীরাও করতে পারেননি। দেশের সবচেয়ে বড় কমতি, সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি, সবচেয়ে বড় প্রহসন, সবচেয়ে বড় উত্তেজনাকর দৃশ্য, সবচেয়ে সাঙ্ঘাতিক আপত্তিকর দৃশ্য এবং সবচেয়ে বড় কলিজা কাঁপানো ভয়ঙ্কর দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে লাল ইটের তৈরি ওই নির্বাচন কমিশন ভবন থেকেই।
বিগত ৩৫ বছরে বাংলাদেশে বহু অঘটন ঘটেছে। বহু অঘটনের নায়ক-নায়িকার কথা আমরা জানি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের লোকজনকে কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। আজো সাদেক আলী মার্কা নির্বাচন, মাগুরা এবং ঢাকার তেজগাঁও মার্কা নির্বাচন, আজিজ মার্কা ব্যক্তিত্ব, মাহফুজ মার্কা নির্বাচন ও সাইদ মার্কা দুষ্টের দলের পালিয়ে যাওয়ার কীর্তি কাহিনী ও উপাখ্যানকে কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। অতীতের সেসব সফলতার ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিশন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে মেরুদণ্ডের শক্ত-সোজা এবং বাঁকা থেরাপির তত্ত্ব বাস্তবায়নের জন্য। আজ যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়- এই কাজ করার জন্য আপনার মেরুদণ্ড আছে কি? তবে লোকটি একটুও বিব্রত না হয়ে জনৈক বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের মতো দাঁড়িয়ে যাবেন। তারপর বলবে- এই দেখুন! আমি দাঁড়িয়েছি- আমার মেরুদণ্ড আছে। ‘লোকটির কথা শুনিয়া যদি আপনার হাস্য করিবার হাজত চাপিয়া বসে তাহা হইলে মহাত্মন হয়তো মনে করিবেন- আপনি তাহার মেরুদণ্ড সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন। এ অবস্থায় আপনার বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করিবার জন্য তিনি হয়তো আপনার হাতখানা টানিয়া লইয়া নিজের শিরদাঁড়ার ওপর রাখিবেন এবং আপনার হুকুম মোতাবেক মাথা সামনে-পেছনে, ডানে ও বামে নোয়াইয়া প্রমাণের চেষ্টা করিবেন- ওগুলো হুকুম মোতাবেক বাঁকা করা যায় এবং বাঁকা করিতে গিয়া মহাত্মনের শরীরে একটুও বেদনা অনুভব হয় না।’
আজকের শিরোনামটি মূলত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি পর্যালোচনার জন্যই নির্বাচন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এযাবৎকালে যতবার নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে তার মধ্যে বর্তমান কমিশন সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে একটি অসহনীয় নাজুক ও বিব্রতকর সময় পার করছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, পরবর্তীকালের উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যে মন্দ নজির স্থাপন করেছে, তা হয়তো সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনের ফলাফল দ্বারা ষোলকলা পূর্ণ করবে। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ এবং কর্মের জন্যই দিনকে দিন নির্বাচন নিয়ে মানুষের অস্থিরতা, হতাশা ও আশঙ্কার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কতটুকু নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা নিয়ে সর্বমহলেই কানাঘুষা শুরু হয়েছে। সবারই এক কথা- বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডের শক্তির রিমোট কন্ট্রোলটি তাদের হাতে নেই। সাম্প্রতিককালে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়ার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো বিরাট এক সিল-ছাপ্পর মেরে প্রমাণ করে দিলেন- ‘ইহা সত্য বটে। ইহাতে মিথ্যার লেশমাত্র নাই।’
বিরোধী দল জোরগলায় অভিযোগ তুলে বলেছে- বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান। সরকারি দলের প্রার্থীদের বিনা ভোটে জয় লাভ করিয়ে আনার জন্য যত ফন্দিফিকির ও ছলাকলার আয়োজন, সেগুলো ছাড়া কমিশন কর্তাদের অন্য কোনো যোগ্যতা নেই। তারা যে মেরুদণ্ডহীন এবং তাদের যে কোনোই ক্ষমতা নেই, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো কমিশন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে। জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যাবে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে দুপুর পর্যন্ত ভোট চললেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে সকাল ১০টার মধ্যেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছিল। অভিযোগ ছিল- ভোটের ফলাফল তৈরি করে আগের রাতেই রাখা হয়েছিল। ভোটের দিন বিকেলে সেই ফলাফলপত্রে স্বাক্ষর করা হয় এবং সে মতে ব্যালট বাক্স ভরা হয়।
বিরোধী দল যেমন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উত্থাপন করে চলেছে, তেমনি সরকারি দলও কিন্তু বসে নেই। তারাও এবার বিভিন্ন কারণে নির্বাচন কমিশনের ওপর নাখোশ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাওয়াকে এক ধরনের নির্বুদ্ধিতা এবং সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। একান্ত আলাপচারিতায় অনেকেই আক্ষেপ করে বলেছেন, পর্যাপ্ত মেধা, দক্ষতা, সাহস ও কৌশল জানা না থাকলে দালালিও করা যায় না। অথর্ব লোক যদি সরকারের দালালি শুরু করে তবে পতন হতে কোনো সরকারেরই খুব বেশি সময় লাগে না। বর্তমান কমিশন কর্তাদের অতি ভক্তি, খোলাখুলিভাবে সরকারের পক্ষাবলম্বন, বিদঘুটে ও কদর্য প্রক্রিয়ায় সরকারি ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টার কারণে বর্তমানে সরকার দেশ-বিদেশে মারাত্মক ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে। অথচ পরিকল্পনা সহকারে বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে কৌশলে কাজ করলে অনেক বদনাম এড়ানো যেত।
বাংলাদেশের নির্বাচন, রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে কাজ করেন, এমন লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান কমিশনের পক্ষে ভালো কিছু করার আশা প্রকারান্তে দুঃস্বপ্ন বই অন্য কিছু নয়। তারা কোন আক্কেল বা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইলেন, তাও বোঝা যাচ্ছে না। যদি বলা হয়, একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে রাজনৈতিক সহযোগিতা আশা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মতো অন্যান্য দলীয় প্রধানের কাছ থেকেও অনুরূপ সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং এটি কমিশনের একটি রুটিন ওয়ার্ক। কমিশন যদি এমন যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করে, তাও শেষাবধি ধোপে টিকবে না। কমিশনের বোঝা উচিত, নির্বাচনকালীন সময়ে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলকে কতগুলো সাধারণ সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়। পৌর নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশের বড় দু’টি দলই মারাত্মক বেকায়দায় পড়েছে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে। দলীয় সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশ অমান্য করে যেসব লোকজন পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য শত চেষ্টা-তদবির, হুমকি-ধমকি এবং বল প্রয়োগ করেও দলগুলো কোনো সফলতা অর্জন করতে পারেনি। যেখানে দলীয় প্রধান নিজ দলের গুটিকয়েক স্থানীয় নেতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, সেখানে তিনি বা তারা কী করে কমিশনকে সাহায্য করবেন, তা কারো বোধগম্য না হলেও শক্ত মেরুদণ্ডওয়ালারা ঠিক একের পর এক লোক হাসানো কাজকর্ম করেই যাচ্ছেন।
অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধির সূত্র রয়েছে। অন্য দিকে হ্রাস-বৃদ্ধির দু’টি নিয়মও আছে। একটিকে বলা হয় গাণিতিক এবং অন্যটির নাম জ্যামিতিক। কোনো কিছুর বৃদ্ধি, উত্থান ও প্রবৃদ্ধি যেমন গাণিতিক হারে হতে পারে, তেমনি অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে বিস্ময়করভাবে অর্থাৎ জ্যামিতিক হারেও হতে পারে। অন্য দিকে পতন, ক্ষয়, ধ্বংস, নিঃশেষ ও রোগাক্রান্ত হওয়ার বেলায়ও গাণিতিক ও জ্যামিতিক নীতি প্রয়োজন। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন- সমাজ ও সংসারের নৈতিক অধঃপতন এবং মন্দকাজের প্রবৃদ্ধি ঘটে জ্যামিতিক হারে। কোনো একটি মন্দকাজ, মন্দ তৎপরতা কিংবা নিকৃষ্ট উদাহরণ একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে এবং সম্পূর্ণ শেষ পরিণতি ছাড়া ওই প্রবৃদ্ধি ঠেকানো যায় না।
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য কয়েক লাখ ক্ষমতার বলয় রয়েছে। হাট, মাঠ, ঘাট, পথপ্রান্তর, গ্রাম-গ্রামান্তর, শহর জনপদ কিংবা মহানগরী- সব স্থানেই রয়েছে একাধিক ও বহুমুখী ক্ষমতার বলয়। এসব ক্ষমতার বলয়ের রয়েছে প্রধানত তিনটি বিভাগ। যথা- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, সরকারদলীয় ক্ষমতা এবং স্থানীয় পরিবারকেন্দ্রিক ক্ষমতা। এ তিন শ্রেণীর ক্ষমতার আবার দু’টি প্রকারভেদ রয়েছে। যথা- বৈধ ক্ষমতা ও অবৈধ ক্ষমতা। যারা ক্ষমতাবান, তারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চান। অন্য দিকে ক্ষমতা প্রত্যাশীরাও যেকোনো মূল্যে তা ছিনিয়ে নিতে চান। রাষ্ট্রীয় আইনকানুন, নিয়মনীতি এবং মানুষের সততা, দক্ষতা ও নীতিবোধ- কেবল ক্ষমতাবান ও ক্ষমতা প্রত্যাশীদের অবৈধ আকাক্সক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই নির্মূল করতে পারে না।
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ক্ষমতার বলয়গুলোতে কেবলই মন্দ প্রকৃতির উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে অনেকটা জ্যামিতিক হারে। নিয়মনীতি মেনে যথাযথ পরিশ্রম করে ও মেধা খাটিয়ে কেউ আর ক্ষমতায় যেতে চায় না। অন্যের দয়া, মায়া, করুণা কিংবা প্রতিপক্ষকে হুমকি, ধমকি, হত্যা-গুম অথবা মিথ্যাচার, অনাচার, প্রতারণা, মুনাফেকি, অধর্ম ইত্যাদি নরাধম মার্কা কর্ম দ্বারা ক্ষমতায় টিকে থাকা অথবা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়াকে লোকজন জীবনের পরম পাওনা হিসেবে বিবেচনা করছে। এসব নোংরা কাজ করতে গিয়ে তারা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজনের রক্তের সম্পর্ক, ধর্মীয় অমিয় বাণী এবং মানবিক গুণাবলি বিসর্জন দিচ্ছে। মানবিকতাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে পাশবিকতাকে হাতিয়ার বানিয়ে নিচ্ছে। শালীনতা, নম্রতা ও ভদ্রতাকে বাদ দিয়ে অশ্লীলতা, উগ্রতা ও ইতরজাত আচরণগুলোকে অলঙ্কার বানিয়ে সদর্পে দম্ভ করে বেড়াচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে যদি এসব বাধা অতিক্রম করতে হয় তবে অবশ্যই কোমর, মেরুদণ্ড ও হাড়ে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।
একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রত্যেক প্রার্থীকে তৃণমূলে ঘাম ঝরানো অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। শুধু নির্বাচনকালীন সময় নয়, যুগ যুগ ধরে জনকল্যাণ করে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হয়। মানুষের সমর্থন লাভ এবং ভোটের দিন ভোটপ্রাপ্তির মতো কঠিন কর্ম জগৎ সংসারে খুব কমই আছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য একজন প্রার্থীকে যে কারাভোগ করতে হয়, বলতে গেলে সে সবের কিছুই করতে হয় না সাদেক আলী বা মাগুরা মার্কা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর অবস্থা হয় ভিনি-ভিডি-ভিসির মতো অর্থাৎ আসলাম দেখলাম ও জয় করলাম। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিকে ভিনি-ভিডি-ভিসির পর্যায়ে নিয়ে গেছে। যেখান থেকে পুনরায় নির্বাচনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কমিশনকে মহাবীর আলেকজান্ডার অথবা জুলিয়াস সিজারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। বর্তমান কর্তাব্যক্তিরা সে কাজটি করতে পারবেন কি না তা বোঝার জন্য যে কেউ আলেকজান্ডার ও জুলিয়াস সিজারের চেহারা-সুরোতের দিকে তাকাতে পারেন এবং পরক্ষণেই কমিশনের গুণধর কর্তাদের বদনে দৃষ্টিপাত করতে পারেন!!!
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এসে হঠাৎ করেই মেরুদণ্ডের কথা মনে হলো ভিন্ন একটি কারণে। দেশে এখন পৌর নির্বাচনের মওসুম চলছে। প্রায় পৌনে তিন শ’ পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কয়েকটি পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত গিনেস বুকে রেকর্ড লাভের জন্য বিরাট কিছু করে ফেলার হম্বিতম্বি এবং তাদের অতীত ইতিহাসের জ্বালাময়ী দৃষ্টান্ত বিবেচনায় মনে হচ্ছে আমরা হয়তো নির্বাচন নামক যত রঙ, ঢঙ ও সঙ সৃষ্টি হয়েছে তা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, দেশের প্রথিতযশা নাট্যকার, অভিনেতা ও কলাকুশলীরাও করতে পারেননি। দেশের সবচেয়ে বড় কমতি, সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি, সবচেয়ে বড় প্রহসন, সবচেয়ে বড় উত্তেজনাকর দৃশ্য, সবচেয়ে সাঙ্ঘাতিক আপত্তিকর দৃশ্য এবং সবচেয়ে বড় কলিজা কাঁপানো ভয়ঙ্কর দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে লাল ইটের তৈরি ওই নির্বাচন কমিশন ভবন থেকেই।
বিগত ৩৫ বছরে বাংলাদেশে বহু অঘটন ঘটেছে। বহু অঘটনের নায়ক-নায়িকার কথা আমরা জানি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের লোকজনকে কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। আজো সাদেক আলী মার্কা নির্বাচন, মাগুরা এবং ঢাকার তেজগাঁও মার্কা নির্বাচন, আজিজ মার্কা ব্যক্তিত্ব, মাহফুজ মার্কা নির্বাচন ও সাইদ মার্কা দুষ্টের দলের পালিয়ে যাওয়ার কীর্তি কাহিনী ও উপাখ্যানকে কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। অতীতের সেসব সফলতার ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিশন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে মেরুদণ্ডের শক্ত-সোজা এবং বাঁকা থেরাপির তত্ত্ব বাস্তবায়নের জন্য। আজ যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়- এই কাজ করার জন্য আপনার মেরুদণ্ড আছে কি? তবে লোকটি একটুও বিব্রত না হয়ে জনৈক বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের মতো দাঁড়িয়ে যাবেন। তারপর বলবে- এই দেখুন! আমি দাঁড়িয়েছি- আমার মেরুদণ্ড আছে। ‘লোকটির কথা শুনিয়া যদি আপনার হাস্য করিবার হাজত চাপিয়া বসে তাহা হইলে মহাত্মন হয়তো মনে করিবেন- আপনি তাহার মেরুদণ্ড সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন। এ অবস্থায় আপনার বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করিবার জন্য তিনি হয়তো আপনার হাতখানা টানিয়া লইয়া নিজের শিরদাঁড়ার ওপর রাখিবেন এবং আপনার হুকুম মোতাবেক মাথা সামনে-পেছনে, ডানে ও বামে নোয়াইয়া প্রমাণের চেষ্টা করিবেন- ওগুলো হুকুম মোতাবেক বাঁকা করা যায় এবং বাঁকা করিতে গিয়া মহাত্মনের শরীরে একটুও বেদনা অনুভব হয় না।’
আজকের শিরোনামটি মূলত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি পর্যালোচনার জন্যই নির্বাচন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এযাবৎকালে যতবার নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে তার মধ্যে বর্তমান কমিশন সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে একটি অসহনীয় নাজুক ও বিব্রতকর সময় পার করছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, পরবর্তীকালের উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যে মন্দ নজির স্থাপন করেছে, তা হয়তো সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনের ফলাফল দ্বারা ষোলকলা পূর্ণ করবে। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ এবং কর্মের জন্যই দিনকে দিন নির্বাচন নিয়ে মানুষের অস্থিরতা, হতাশা ও আশঙ্কার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কতটুকু নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা নিয়ে সর্বমহলেই কানাঘুষা শুরু হয়েছে। সবারই এক কথা- বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডের শক্তির রিমোট কন্ট্রোলটি তাদের হাতে নেই। সাম্প্রতিককালে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়ার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো বিরাট এক সিল-ছাপ্পর মেরে প্রমাণ করে দিলেন- ‘ইহা সত্য বটে। ইহাতে মিথ্যার লেশমাত্র নাই।’
বিরোধী দল জোরগলায় অভিযোগ তুলে বলেছে- বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান। সরকারি দলের প্রার্থীদের বিনা ভোটে জয় লাভ করিয়ে আনার জন্য যত ফন্দিফিকির ও ছলাকলার আয়োজন, সেগুলো ছাড়া কমিশন কর্তাদের অন্য কোনো যোগ্যতা নেই। তারা যে মেরুদণ্ডহীন এবং তাদের যে কোনোই ক্ষমতা নেই, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো কমিশন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে। জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যাবে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে দুপুর পর্যন্ত ভোট চললেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে সকাল ১০টার মধ্যেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছিল। অভিযোগ ছিল- ভোটের ফলাফল তৈরি করে আগের রাতেই রাখা হয়েছিল। ভোটের দিন বিকেলে সেই ফলাফলপত্রে স্বাক্ষর করা হয় এবং সে মতে ব্যালট বাক্স ভরা হয়।
বিরোধী দল যেমন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উত্থাপন করে চলেছে, তেমনি সরকারি দলও কিন্তু বসে নেই। তারাও এবার বিভিন্ন কারণে নির্বাচন কমিশনের ওপর নাখোশ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাওয়াকে এক ধরনের নির্বুদ্ধিতা এবং সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। একান্ত আলাপচারিতায় অনেকেই আক্ষেপ করে বলেছেন, পর্যাপ্ত মেধা, দক্ষতা, সাহস ও কৌশল জানা না থাকলে দালালিও করা যায় না। অথর্ব লোক যদি সরকারের দালালি শুরু করে তবে পতন হতে কোনো সরকারেরই খুব বেশি সময় লাগে না। বর্তমান কমিশন কর্তাদের অতি ভক্তি, খোলাখুলিভাবে সরকারের পক্ষাবলম্বন, বিদঘুটে ও কদর্য প্রক্রিয়ায় সরকারি ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টার কারণে বর্তমানে সরকার দেশ-বিদেশে মারাত্মক ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে। অথচ পরিকল্পনা সহকারে বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে কৌশলে কাজ করলে অনেক বদনাম এড়ানো যেত।
বাংলাদেশের নির্বাচন, রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে কাজ করেন, এমন লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান কমিশনের পক্ষে ভালো কিছু করার আশা প্রকারান্তে দুঃস্বপ্ন বই অন্য কিছু নয়। তারা কোন আক্কেল বা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইলেন, তাও বোঝা যাচ্ছে না। যদি বলা হয়, একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে রাজনৈতিক সহযোগিতা আশা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মতো অন্যান্য দলীয় প্রধানের কাছ থেকেও অনুরূপ সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং এটি কমিশনের একটি রুটিন ওয়ার্ক। কমিশন যদি এমন যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করে, তাও শেষাবধি ধোপে টিকবে না। কমিশনের বোঝা উচিত, নির্বাচনকালীন সময়ে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলকে কতগুলো সাধারণ সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়। পৌর নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশের বড় দু’টি দলই মারাত্মক বেকায়দায় পড়েছে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে। দলীয় সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশ অমান্য করে যেসব লোকজন পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য শত চেষ্টা-তদবির, হুমকি-ধমকি এবং বল প্রয়োগ করেও দলগুলো কোনো সফলতা অর্জন করতে পারেনি। যেখানে দলীয় প্রধান নিজ দলের গুটিকয়েক স্থানীয় নেতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, সেখানে তিনি বা তারা কী করে কমিশনকে সাহায্য করবেন, তা কারো বোধগম্য না হলেও শক্ত মেরুদণ্ডওয়ালারা ঠিক একের পর এক লোক হাসানো কাজকর্ম করেই যাচ্ছেন।
অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধির সূত্র রয়েছে। অন্য দিকে হ্রাস-বৃদ্ধির দু’টি নিয়মও আছে। একটিকে বলা হয় গাণিতিক এবং অন্যটির নাম জ্যামিতিক। কোনো কিছুর বৃদ্ধি, উত্থান ও প্রবৃদ্ধি যেমন গাণিতিক হারে হতে পারে, তেমনি অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে বিস্ময়করভাবে অর্থাৎ জ্যামিতিক হারেও হতে পারে। অন্য দিকে পতন, ক্ষয়, ধ্বংস, নিঃশেষ ও রোগাক্রান্ত হওয়ার বেলায়ও গাণিতিক ও জ্যামিতিক নীতি প্রয়োজন। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন- সমাজ ও সংসারের নৈতিক অধঃপতন এবং মন্দকাজের প্রবৃদ্ধি ঘটে জ্যামিতিক হারে। কোনো একটি মন্দকাজ, মন্দ তৎপরতা কিংবা নিকৃষ্ট উদাহরণ একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে এবং সম্পূর্ণ শেষ পরিণতি ছাড়া ওই প্রবৃদ্ধি ঠেকানো যায় না।
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য কয়েক লাখ ক্ষমতার বলয় রয়েছে। হাট, মাঠ, ঘাট, পথপ্রান্তর, গ্রাম-গ্রামান্তর, শহর জনপদ কিংবা মহানগরী- সব স্থানেই রয়েছে একাধিক ও বহুমুখী ক্ষমতার বলয়। এসব ক্ষমতার বলয়ের রয়েছে প্রধানত তিনটি বিভাগ। যথা- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, সরকারদলীয় ক্ষমতা এবং স্থানীয় পরিবারকেন্দ্রিক ক্ষমতা। এ তিন শ্রেণীর ক্ষমতার আবার দু’টি প্রকারভেদ রয়েছে। যথা- বৈধ ক্ষমতা ও অবৈধ ক্ষমতা। যারা ক্ষমতাবান, তারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চান। অন্য দিকে ক্ষমতা প্রত্যাশীরাও যেকোনো মূল্যে তা ছিনিয়ে নিতে চান। রাষ্ট্রীয় আইনকানুন, নিয়মনীতি এবং মানুষের সততা, দক্ষতা ও নীতিবোধ- কেবল ক্ষমতাবান ও ক্ষমতা প্রত্যাশীদের অবৈধ আকাক্সক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই নির্মূল করতে পারে না।
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ক্ষমতার বলয়গুলোতে কেবলই মন্দ প্রকৃতির উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে অনেকটা জ্যামিতিক হারে। নিয়মনীতি মেনে যথাযথ পরিশ্রম করে ও মেধা খাটিয়ে কেউ আর ক্ষমতায় যেতে চায় না। অন্যের দয়া, মায়া, করুণা কিংবা প্রতিপক্ষকে হুমকি, ধমকি, হত্যা-গুম অথবা মিথ্যাচার, অনাচার, প্রতারণা, মুনাফেকি, অধর্ম ইত্যাদি নরাধম মার্কা কর্ম দ্বারা ক্ষমতায় টিকে থাকা অথবা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়াকে লোকজন জীবনের পরম পাওনা হিসেবে বিবেচনা করছে। এসব নোংরা কাজ করতে গিয়ে তারা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজনের রক্তের সম্পর্ক, ধর্মীয় অমিয় বাণী এবং মানবিক গুণাবলি বিসর্জন দিচ্ছে। মানবিকতাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে পাশবিকতাকে হাতিয়ার বানিয়ে নিচ্ছে। শালীনতা, নম্রতা ও ভদ্রতাকে বাদ দিয়ে অশ্লীলতা, উগ্রতা ও ইতরজাত আচরণগুলোকে অলঙ্কার বানিয়ে সদর্পে দম্ভ করে বেড়াচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে যদি এসব বাধা অতিক্রম করতে হয় তবে অবশ্যই কোমর, মেরুদণ্ড ও হাড়ে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।
একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রত্যেক প্রার্থীকে তৃণমূলে ঘাম ঝরানো অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। শুধু নির্বাচনকালীন সময় নয়, যুগ যুগ ধরে জনকল্যাণ করে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হয়। মানুষের সমর্থন লাভ এবং ভোটের দিন ভোটপ্রাপ্তির মতো কঠিন কর্ম জগৎ সংসারে খুব কমই আছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য একজন প্রার্থীকে যে কারাভোগ করতে হয়, বলতে গেলে সে সবের কিছুই করতে হয় না সাদেক আলী বা মাগুরা মার্কা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর অবস্থা হয় ভিনি-ভিডি-ভিসির মতো অর্থাৎ আসলাম দেখলাম ও জয় করলাম। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিকে ভিনি-ভিডি-ভিসির পর্যায়ে নিয়ে গেছে। যেখান থেকে পুনরায় নির্বাচনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কমিশনকে মহাবীর আলেকজান্ডার অথবা জুলিয়াস সিজারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। বর্তমান কর্তাব্যক্তিরা সে কাজটি করতে পারবেন কি না তা বোঝার জন্য যে কেউ আলেকজান্ডার ও জুলিয়াস সিজারের চেহারা-সুরোতের দিকে তাকাতে পারেন এবং পরক্ষণেই কমিশনের গুণধর কর্তাদের বদনে দৃষ্টিপাত করতে পারেন!!!
No comments