আমেরিকায় বন্দুকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না কেন
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সে দেশে আগ্নেয়াস্ত্র আইন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য
বহুবার কথা বলেছেন। কিন্তু আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ
আনা যাচ্ছে না। ২০১৫ সালে আমেরিকায় বন্দুক হামলায় ১২ হাজারের বেশি মানুষ
মারা গেছে এবং আহত হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। বড় ধরনের যেসব ঘটনা ঘটে –
অর্থাৎ কোনো স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, অথবা কোনো বড় জমায়েতে
হামলার মতো ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে খবর হয়। কিন্তু প্রতিদিন আগ্নেয়াস্ত্রের
গুলিতে এমন অনেকে মারা যায়, যেটি কোনো খবর হয় না। পলিটিফ্যাক্ট-এর
পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ১৯৬৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বন্দুক বা
পিস্তলের গুলিতে আমেরিকায় ১৪ লাখ মানুষ মারা গেছে। ন্দুকের যথেচ্ছ ব্যবহার
নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার ক্ষোভ এবং হতাশা বেড়েই চলেছে। প্রেসিডেন্ট
নির্বাচিত হবার পর থেকে ওবামা এনিয়ে ১৫বার বন্দুকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ
করার পক্ষে কথা বলেছেন।কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে
আমেরিকায় বন্দুকধারীদের হামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনি বরাবরই উদ্বেগ
জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। আমেরিকায় এখন কতগুলো পিস্তল
বা বন্দুক ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করা
হয়, এই সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। এই সংখ্যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার সমান।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বন্দুকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও সেটি
সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আইনপ্রণয়ন করেতে
মার্কিন কংগ্রেসে যথেষ্ট সমর্থন নেই। এমন প্রেক্ষাপটে হতাশ প্রেসিডেন্ট
ওবামা সংবাদমাধ্যমকে একটি বিষয় তুলনা করার আহবান জানিয়েছেন। সেটি হচ্ছে-
সন্ত্রাসী হামলায় আমেরিকার কতজন নাগরিক মারা গেছে আর অন্যদিকে নিজ দেশে
আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে কতজন মারা গেছে? তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
প্রতিবছর সন্ত্রাসী হামলা থেকে নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা করতে এক ট্রিলিয়ন
ডলার ব্যয় করে। অথচ সন্ত্রাসী হামলায় যে পরিমাণ লোক মারা যায়, তার চেয়ে
বেশি মানুষ মারা যায় আমেরিকার অভ্যন্তরে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে। বিভিন্ন
জরিপের কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, আমেরিকার অধিকাংশ মানুষ
আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। যেখানে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট
এবং দেশের অধিকাংশ জনগণ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণের পক্ষে,
তারপরে সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন করা যাচ্ছেনা। সমস্যাটা কোথায়? পিউ
রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে বলা হচ্ছে, আমেরিকার ৮০ শতাংশ জনগণ মনে করে যে
মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করা উচিত নয়।
কিন্তু সাধারণ মানুষের মতামত এখানে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মার্কিন
কংগ্রেসের সদস্যদের মতামত এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন কংগ্রেস
আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে। অধিকাংশ মার্কিন নাগরিকের
চিন্তাভাবনাকে কংগ্রেস গুরুত্ব না দিলেও চলে। সেজন্য জরিপের ফলাফলের তেমন
গুরুত্ব নেই। নির্বাচনের দিন যেসব আমেরিকান ভোট দিতে যায় তাদের মতামতকে
গুরুত্ব দিলেই চলে। মার্কিন সিনেটে বর্তমানে পিাবলিকান সদস্য ৫৪জন এবং
ডেমোক্রেটস সদস্য ৪৬জন। এখানে প্রতিটি রাজ্যের জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ।
আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ওআয়ামিং জনসংখ্যা ছয় লাখের মতো । সেখানকার
মানুষ বন্দুক ব্যবহারের পক্ষে। অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের জনসংখ্যা
তিন কোটি ৮০ লাখ। সেখানকার মানুষ চায় বন্দুকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা
হোক। কিন্তু জনসংখ্যা কম হলেও ওআয়ামিং –এর দুজন সেনেটরের কংগ্রেসে যে
অধিকার আছে, অন্যদিকে জনসংখ্যা অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও ক্যালিফোর্নিয়ার
দুজন সিনেটরের একই অধিকার আছে। মার্কিন কংগ্রেসের ‘জটিল হিসেব- নিকেশের’
কারণে অনেক সময় কংগ্রেসম্যানদের চিন্তাধারায় সার্বিকভাবে আমেরিকার
অধিকাংশ জনগণের মনোভাবের প্রতিফলন হয় না। সেজন্যই বন্দুকের যথেচ্ছ ব্যবহার
বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্টর আগ্রহ থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। -বিবিসি
No comments