এক সাংবাদিকের মায়ের কান্না by কাজী সুমন
জীবিকার
তাগিদে পিরোজপুর ছেড়েছিলেন মাসুদুন্নবী খান মাসুদ। উঠেছিলেন নারায়ণগঞ্জের
নানাবাড়িতে। স্থানীয় একটি পত্রিকায় চাকরি জুটিয়েছিলেন এই তরুণ। সাংবাদিক
ভগ্নিপতির সৌজন্য জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রতিনিধিও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু
হঠাৎ করেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। স্থানীয় মহল্লায় সংঘটিত একটি ঝগড়ার
প্রতিবাদ করাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ডাকাতির মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার
করা হয়। এরপর একের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে দফায় দফায় নেয়া হয়
রিমান্ডে। এদিকে একমাত্র পুত্রের এমন করুণ পরিণতি থেকে মুক্ত করতে বৃদ্ধা
মা হাফিজা খাতুন দৌড়ঝাঁপ করছেন কারাফটক থেকে আদালতের বারান্দায়। ধরনা
দিচ্ছেন আইনজীবীদের দরজায়। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোন আশার বাণী পাননি।
বাধ্য হয়ে আসেন জাতীয় প্রেস ক্লাবে। উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে অসহায়ত্ব
বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা
ছিলেন। গত বছর বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর
একমাত্র ছেলে মাসুদই পরিবারের হাল ধরে। আমি স্বামীর ভিটা পিরোজপুর থাকলেও
মাসুদ আমার বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে চলে যায়। সেখানে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে
পড়ে সে। নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানীয় পত্রিকাসহ একটি জাতীয় পত্রিকার উপজেলা
প্রতিনিধি হিসেবে মাসুদ কাজ শুরু করে। কিন্তু কয়েক মাস আগে এলাকার একটি
ঝগড়ার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।
সোনারগাঁও থানায় ডাকাতির মিথ্যা মামলা দায়ের করে তারা। পরে ওই মামলায়
মাসুদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে মাসুদের সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র ও কিডনি
রোগে আক্রান্তের মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখে আদালত তাকে জামিন দেন। কিন্তু
এরপরও থেমে থাকেনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানা
পুলিশের সহযোগিতায় তাকে একের পর এক পেন্ডিং মামলায় জড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে
তাকে তিনটি মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে দুই দফায় পুলিশি রিমান্ডও নিয়েছে
গজারিয়া থানা পুলিশ। এর মধ্যে গত বছরের ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের একটি
মামলা। অপরটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের অজ্ঞাত আসামির মামলা। আরেকটি
মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। যার শুনানি গত
রোববার হয়েছে। এদিন আবারও তৃতীয় দফায় মাসুদকে দু’দিনের রিমান্ড নেয়া হয়েছে
বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে অসহায় এই বৃদ্ধা বলেন,
মাসুদকে গ্রেপ্তারের আগে তার বিরুদ্ধে একটি জিডিও ছিল না। কিন্তু
গ্রেপ্তারের পর একের পর এক পেন্ডিং মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আমি গরিব মানুষ।
মামলা চালানোর জন্য আইনজীবীদের টাকা জোগাড় করতে পারছি না। টাকার অভাবে
একমাত্র ছেলেকে কারাগারে দেখতে যেতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, বড় দুই
মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়েই আমার সংসার। এ বিষয়ে পিরোজপুর
জেলা সদর পৌরসভার মেয়র আবদুল মালেক জানান, এই পরিবারটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে
চিনি। খুবই নিরীহ ও ভদ্র পরিবার বলে এলাকায় সুনাম রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে
তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো সেটা বুঝতে পারছি না।
No comments