বাংলাদেশে বৈপরীত্য
দক্ষিণ
এশিয়ায় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস, পাকিস্তান পিপলস পার্টি, শ্রীলঙ্কা
ফ্রিডম পার্টি- সবাই একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কেউই
কয়েক বছরের বেশি টিকতে পারে নি। এর অর্থ হলো একদলীয় রাষ্ট্রের ভাগ্য
ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু যখন তারা ক্ষমতায় থাকে তখন তারা ব্যাপক
প্রতিহিংসা নিতে পারে। গতকাল কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার
অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ‘টু কোয়াইট ফর কমফোর্ট- দ্য লুমিং পলিটিক্যাল
ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মন্তব্য প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন
রমাচন্দ্র গুহ। এতে বলা হয়, ইন্দিরা গান্ধী ও কংগ্রেস ব্যুরোক্রেসি বিচার
বিভাগের এতটাই ক্ষতি করেছিলেন যে, তার পর থেকে তা আর যথাযথভাবে তাদের
স্বায়ত্তশাসন (বা কার্যকারিতা) ফিরে পায় নি। ভুট্টো ও পিপিপির বাড়াবাড়ির
কারণে রাজনীতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রবেশের পথ তৈরি হয়। ইসলামপন্থি
কট্টরবাদীদের উত্থান সহজ হয়। শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ
রাজাপাকসে ও শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি সিংহলীদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়েছিলেন।
খর্ব করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক কার্যকারিতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিষয়ই
সুনির্দিষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের প্রাধান্য শেষ হবে, তবে
তারা তা যতটা দেরিতে ভাবেন তার চেয়ে অনেক আগেই ঘটবে তা। যদি ভিন্নমত
প্রকাশকে বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে সমাজের একটি অংশ পথ না পেয়ে ইসলামপন্থিদের
দিকে সমর্থন দিতে পারে। অথবা ক্ষমতার দিকে ঝুঁকতে পারে ভিন্ন কেউ। এর
যেকোন একটি পথে গেলে কার্যকর বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরা অনেক বিলম্ব হবে। শেখ
হাসিনা ও তার উপদেষ্টারা যদি নিজেরা একদলীয় শাসনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা
নিতেন, যারা প্রকৃতই ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন, তাহলে
তা অনেকটা ভালো হতো। এতে রমাচন্দ্র গুহ আরও লিখেছেন, ১৯৭০ এর দশক ও ১৯৮০ এর
দশকে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত জন্মহারের সরাসরি প্রভাবে একটি দরিদ্র দেশ
হিসেবে দেখা হতো বিভিন্ন দেশে। এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো ‘তলাবিহীন
ঝুড়ি’ হিসেবে। এর ফলে পশ্চিম থেকে গমের শিপমেন্ট আসতে থাকে এদেশে।
প্রভাবশালী জীববিজ্ঞানী গ্যারেট হার্ডিন তখন আহ্বান জানান সব সহায়তা বন্ধ
করে দিতে, যাতে বাংলাদেশিরা মারা যায়, যেমনটি তারা চায়।
বাংলাদেশিরা দশকের পর দশক ধরে দেশে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করে গেছেন বিস্ময়করভাবে। তারা অপুষ্টির বিরুদ্ধে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য ও নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে তারা ভারতের চেয়ে অনেক ভাল করেছে। একই সঙ্গে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ধারায় এসেছে নতুনত্ব। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিষয়গুলোর মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি করেছে তা লক্ষণীয়। তবে ঘাটতি রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পশ্চিম পাকিস্তান যথেষ্ট সুবিধা দেয় নি। শুধু এ জন্যই সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সব সময়ই প্রস্তরাকীর্ণ। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭১ থেকে তিনি নব সৃষ্ট জাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে তিনি দেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বড় ধরনের একটি উদ্যোগ নিলেন। তখন বিরোধী অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জন অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এর ফলে সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে। জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা মুজিবকে হত্যা করে। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন শাসন যন্ত্র টিকে ছিল ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। ওই সময় তাকেও হত্যা করা হয়। ইসলামপন্থি জেনারেল এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা নিয়ে নেন। প্রায় এক দশক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন এরশাদ। দীর্ঘ দিনের অসন্তোষ ও প্রতিবাদের মুখে ১৯৯১ সালে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি। ৫ বছর পরে ব্যালট বাক্সে ভোটের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা হারান শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার কাছে। বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় ফেরে। তারা ক্ষমতায় থাকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। রমাচন্দ্র গুহ লিখেছেন, ২০১৩ সালে যখন পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তখন বিএনপি দাবি তোলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের। আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচন হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এভাবে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকার, পার্লামেন্ট ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। সর্বশেষ ক্ষমতার এই মেয়াদে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করে যুদ্ধাপরাধ করেছিল তাদের বিচারের জোর পদক্ষেপ নেন। রমাচন্দ্র গুহ লিখেছেন, নভেম্বরে আমি যখন ঢাকায় ছিলাম তখন দুজন সিনিয়র নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর একজন জামায়াতে ইসলামীর। এ দলটি বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। অন্যজন হলেন ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানপন্থি প্রখ্যাত একজন রাজনীতিকের ছেলে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। তাদেরকে যখন ফাঁসি দেয়া হলো তখন আমি ঢাকায় ছিলাম। এর আগে দীর্ঘ বিদেশ সফর শেষে বেগম জিয়া দেশে ফেরেন। ফাঁসি কার্যকরের পরে দেশজুড়ে হরতাল আহ্বান করে জামায়াত। এর আগে যখন জামায়াত হরতাল আহ্বান করতো তখন বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে সংহতি প্রকাশ করতে দেখা যেত। তাতে রাজপথ থাকতো ফাঁকা। দোকানপাট থাকতো বন্ধ। কিন্তু ফাঁসির পর ঢাকার নিত্য জীবনচিত্রের ওপর যেন বড় কোন প্রভাব পড়ে নি। আমি ঢাকা শহরে বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছি। রেস্তরাঁয় খাবার খেয়েছি। পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় দৃশ্যত সরকারে পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আওয়ামী লীগের। ভিন্ন মতাবলম্বীদের অনুমোদন দেয়া হয় নি। ১৯৭১ সালে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। এতে সহযোগিতা করেছিল স্থানীয় দোসররা। তা সত্ত্বেও কিভাবে বিচার হয়েছে তা নিয়ে গুরুতর সংশয় রয়েছে, বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধ আদালতকে রাষ্ট্র ও সমাজের ওপর রাজনৈতিক ও আদর্শগত নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে অনেক বড় উদ্বেগ আছে। পার্লামেন্টে কোন বিরোধী দল নেই। এটা তাদেরকে সহায়তা করেছে। এমনকি যেসব সাংবাদিক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা বলে বৈধতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন তাদেরকে হয়রান করা হয়েছে। যেসব শিক্ষাবিদ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদেরকে নির্যাতিত হতে হয়েছে।
এতে রমাচন্দ্র গুহ আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে সম্মান করার মতো অনেক কিছুই আছে এখন। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের উন্নয়ন, উদ্যোক্তা পর্যায়ে সৃষ্টিশীলতা, চমৎকার সুশীল সমাজ, আর্টিস্ট ও লেখক। কিন্তু সরকারের খেয়ালখুশি ও কিছু প্রতিশোধপরায়ণতার জন্য অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মতো খাতে অগ্রগতি বিনষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশিরা দশকের পর দশক ধরে দেশে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করে গেছেন বিস্ময়করভাবে। তারা অপুষ্টির বিরুদ্ধে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য ও নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে তারা ভারতের চেয়ে অনেক ভাল করেছে। একই সঙ্গে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ধারায় এসেছে নতুনত্ব। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিষয়গুলোর মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি করেছে তা লক্ষণীয়। তবে ঘাটতি রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পশ্চিম পাকিস্তান যথেষ্ট সুবিধা দেয় নি। শুধু এ জন্যই সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সব সময়ই প্রস্তরাকীর্ণ। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭১ থেকে তিনি নব সৃষ্ট জাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে তিনি দেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বড় ধরনের একটি উদ্যোগ নিলেন। তখন বিরোধী অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জন অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এর ফলে সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে। জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা মুজিবকে হত্যা করে। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন শাসন যন্ত্র টিকে ছিল ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। ওই সময় তাকেও হত্যা করা হয়। ইসলামপন্থি জেনারেল এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা নিয়ে নেন। প্রায় এক দশক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন এরশাদ। দীর্ঘ দিনের অসন্তোষ ও প্রতিবাদের মুখে ১৯৯১ সালে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি। ৫ বছর পরে ব্যালট বাক্সে ভোটের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা হারান শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার কাছে। বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় ফেরে। তারা ক্ষমতায় থাকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। রমাচন্দ্র গুহ লিখেছেন, ২০১৩ সালে যখন পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তখন বিএনপি দাবি তোলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের। আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচন হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এভাবে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকার, পার্লামেন্ট ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। সর্বশেষ ক্ষমতার এই মেয়াদে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করে যুদ্ধাপরাধ করেছিল তাদের বিচারের জোর পদক্ষেপ নেন। রমাচন্দ্র গুহ লিখেছেন, নভেম্বরে আমি যখন ঢাকায় ছিলাম তখন দুজন সিনিয়র নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর একজন জামায়াতে ইসলামীর। এ দলটি বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। অন্যজন হলেন ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানপন্থি প্রখ্যাত একজন রাজনীতিকের ছেলে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। তাদেরকে যখন ফাঁসি দেয়া হলো তখন আমি ঢাকায় ছিলাম। এর আগে দীর্ঘ বিদেশ সফর শেষে বেগম জিয়া দেশে ফেরেন। ফাঁসি কার্যকরের পরে দেশজুড়ে হরতাল আহ্বান করে জামায়াত। এর আগে যখন জামায়াত হরতাল আহ্বান করতো তখন বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে সংহতি প্রকাশ করতে দেখা যেত। তাতে রাজপথ থাকতো ফাঁকা। দোকানপাট থাকতো বন্ধ। কিন্তু ফাঁসির পর ঢাকার নিত্য জীবনচিত্রের ওপর যেন বড় কোন প্রভাব পড়ে নি। আমি ঢাকা শহরে বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছি। রেস্তরাঁয় খাবার খেয়েছি। পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় দৃশ্যত সরকারে পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আওয়ামী লীগের। ভিন্ন মতাবলম্বীদের অনুমোদন দেয়া হয় নি। ১৯৭১ সালে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। এতে সহযোগিতা করেছিল স্থানীয় দোসররা। তা সত্ত্বেও কিভাবে বিচার হয়েছে তা নিয়ে গুরুতর সংশয় রয়েছে, বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধ আদালতকে রাষ্ট্র ও সমাজের ওপর রাজনৈতিক ও আদর্শগত নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে অনেক বড় উদ্বেগ আছে। পার্লামেন্টে কোন বিরোধী দল নেই। এটা তাদেরকে সহায়তা করেছে। এমনকি যেসব সাংবাদিক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা বলে বৈধতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন তাদেরকে হয়রান করা হয়েছে। যেসব শিক্ষাবিদ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদেরকে নির্যাতিত হতে হয়েছে।
এতে রমাচন্দ্র গুহ আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে সম্মান করার মতো অনেক কিছুই আছে এখন। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের উন্নয়ন, উদ্যোক্তা পর্যায়ে সৃষ্টিশীলতা, চমৎকার সুশীল সমাজ, আর্টিস্ট ও লেখক। কিন্তু সরকারের খেয়ালখুশি ও কিছু প্রতিশোধপরায়ণতার জন্য অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মতো খাতে অগ্রগতি বিনষ্ট হচ্ছে।
No comments