ইউনুসের গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক by তোফায়েল আহমদ

পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুসের (৪৮) জড়িত থাকার খবরে কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, মাওলানা ইউনুস কি সত্যিই পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত? তিনি কি সত্যিই অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের


জঙ্গি সংগঠনে ভেড়ানোর মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন? এসব বিষয় নিয়ে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের ভাষ্য, মাওলানা ইউনুস একবার ওলামা লীগেও যোগ দিয়েছিলেন।
রাজধানী ঢাকার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত বৃহস্পতিবার ফকিরাপুল থেকে মাওলানা ইউনুসকে গ্রেপ্তার করে। ডিবি জানায়, ইউনুস পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের বাংলাদেশ শাখার সংগঠক। এ সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাই স্কুল পাড়া গ্রামে গিয়ে পাওয়া যায় নানা তথ্য।
ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কোম্পানী এ প্রসঙ্গে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার এলাকার বাসিন্দা মাওলানা ইউনুসের গতিবিধি ছিল বেশ কিছুকাল ধরে সন্দেহজনক। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তিনি কয়েক বছর আগে আওয়ামী ওলামা লীগেও যোগ দিয়েছিলেন।' অন্যদিকে সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা মোকতার আহমদ বলেন, 'মাওলানা ইউনুস একদম সহজ-সরল একজন মানুষ। মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, মসজিদে ইমামতি এবং ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় বক্তব্য দেওয়া ছাড়া তিনি আর কোনো কাজেই জড়িত নন।'
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কোম্পানী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্থানীয় মৌলভীরকাটা গ্রামের মৃত সিদ্দিক আহমদের ছেলে মাওলানা সাবের আহমদ গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থান করছেন। সেখানে (পাকিস্তান) জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর (সাবের) সম্পৃক্ততার কথা নানা মাধ্যমে আমাদের কানে এসেছে। গ্রেপ্তারকৃত মাওলানা ইউনুস হচ্ছেন মাওলানা সাবেরের ভায়রা ভাই।'
নুরুল আমিন বলেন, 'মাওলানা সাবের ও মাওলানা ইউনুসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সম্পর্কে এই দুজনের একজন সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা মোকতার আহমদের ভাগ্নি জামাই, আরেকজন ভাইঝি জামাই।' নুরুল আমিন দাবি করেন, মাওলানা ইউনুস জামায়াতে ইসলামী ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগে যোগ দিয়ে কিছুদিন পর ফের জামায়াতে ফিরে যান।
অন্যদিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা মোকতার আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় পাকিস্তানে অবস্থানরত আমার ভাইঝি জামাই মাওলানা সাবের আহমদ ও গ্রেপ্তারকৃত আমার ভাগ্নি জামাই মাওলানা ইউনুস আমার পক্ষে সমর্থন দেওয়ার কারণেই আমার প্রতিপক্ষ বর্তমান চেয়ারম্যান তাঁদের (দুই মাওলানা) বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা জঙ্গি কানেকশনে জড়িত নেই।' তবে পাকিস্তানে অবস্থানরত মাওলানা সাবের তাঁর পরিবারের জন্য টাকাপয়সা মাওলানা ইউনুসের কাছে পাঠিয়ে থাকতে পারেন বলে তিনি জানান।
মওলানা ইউনুসের রাজনীতি প্রসঙ্গে মাওলানা মোকতার বলেন, 'মাওলানারা ইসলামী রাজনৈতিক দল করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনিও তাই করতেন। তবে এটা সত্যি যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাওলানা ইউনুস আওয়ামী ওলামা লীগে যোগ দিয়েছিলেন। হয়তো বা কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য তিনি এমনটি করেন।'
তবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা নুরুল হক সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি মাওলানা ইউনুস নামের কাউকে চিনি না এবং এ নামের কেউ আমার সংগঠনে নেই।'
মাওলানা ইউনুসের স্ত্রী জুলেখা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত ৩ আগস্ট গভীর রাতে আমার স্বামীকে পুলিশ আমাদের ঘর থেকে নিয়ে যায়। এত দিন আমি কোনো সংবাদই পাইনি। বৃহস্পতিবার রাতে টেলিভিশন সংবাদ দেখে লোকজন আমাকে এসে বলে, তিনি নাকি জঙ্গিদের সঙ্গে কাজ-কারবারে জড়িত হয়ে ধরা পড়েছেন।' জুলেখা বেগম আরো বলেন, 'আমার স্বামী স্থানীয় আল গিফারি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা এবং সিকদারপাড়া জামে মসজিদে ইমামতি ছাড়া আর কোনো কাজে জড়িত নন।' পাকিস্তানে অবস্থানরত মাওলানা সাবেরের সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে জুলেখা বলেন, 'তিনি আমার দুলাভাই। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ তো থাকতেই পারে।' এদিকে এলাকার লোকজন মাওলানা ইউনুসের জঙ্গি ও রোহিঙ্গা কানেকশন প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি নয়। তবে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী বসবাস করছে বলে এলাকার লোকজন স্বীকার করে। এমনকি তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের সহযোগিতায় ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ারও তথ্য দেয় এলাকাবাসী।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চৌকিদার আমির হামজা কালের কণ্ঠকে জানান, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এই জনপদে যতগুলো মসজিদ আছে তার প্রায় সব কয়টিতেই ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসেবে রয়েছেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরা। এমনকি পার্শ্ববর্তী খোদ নাইক্ষ্যংছড়ি থানা (পুলিশ স্টেশন) মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন হচ্ছেন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। তাই রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা অপতৎপরতায় কারোর জড়িত থাকা অসম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.