নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত মিলবে এবার ঈদে by রশিদ মামুন

এবার ঈদে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পাবে গ্রাহক। কেন্দ্রগুলোতে বড় ধরনের কোন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা না দিলে লোডশেডিং হবে না। ঈদের ছুটিতে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সরবরাহ আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এতে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছে পিডিবি।


এ ছাড়া তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ঈদের ছুটিতে পূর্ণ মাত্রায় চালানো হবে। পিডিবি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব খান জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদনের চেষ্টা করা হবে। কোন বড় ধরনের যান্ত্রিক গোলযোগ না হলে সব বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো হবে। তিনি জানান, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত জ্বালানির অভাবে কখনও পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারেনি পিডিবি। এ ছাড়া ব্যয় কমাতে অনেক তেলভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র পুরোপুরি চালানো হয় না। গ্যাসের কম চাপের কারণে এখনও প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ আছে। আর সংস্কারের কারণে আরও হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এখন ঈদের আনন্দ বহুমাত্রিক করে তোলে টেলিভিশন অনুষ্ঠানমালা। দেশের সরকারী-বেসরকারী চ্যানেলগুলো ঈদ সামনে রেখে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। স্বাভাবিকভাবে ঈদের ছুটিতে দর্শক বিশেষ অনুষ্ঠান দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হবে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে ঈদ মাথায় রেখে ইতোমধ্যে পিডিবিকে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের সময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এবার রমজানে গ্রাহককে প্রত্যাশিত মাত্রায় বিদ্যুত সরবরাহ করতে পেরেছি। ঈদেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
রমজানের শেষের দিকে বিদ্যুতের উৎপাদন ছয় হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে কমে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদিত হয়েছে পাঁচ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট। রমজানে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বেশি সময় চালু রাখায় ও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ থাকায় দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ছয় হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। গত ৪ আগস্ট ছয় হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। ওই দিন দেশে লোডশেডিং ছিল না বলে পিডিবি দাবি করেছে। ঈদেও সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যুত উৎপাদন করলে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। তবে ঈদের সময় বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এ কারণে জিরো লোডশেডিংয়ের জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন হয় তাই উৎপাদন করা হবে।
বর্তমানে বিদ্যুতের জন্য প্রতিদিন ৯১ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। অন্য সময় গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয়। এখন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আসছে। আর তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন হয় এক হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত। আর কিছু বিদ্যুত আসে কয়লা ও জলবিদ্যুতকেন্দ্র থেকে।
রমজানের আগে থেকেই গ্যাসের ঘাটতির কারণে কর্ণফুলী সার কারখানা (কাফকো) ও আশুগঞ্জ সার কারখানাসহ দেশের ৫টি সার কারখানা বন্ধ রাখা হয়। সম্প্রতি সরকার বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে সারকারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। দেশে মোট ছয়টি সার কারখানায় দৈনিক সাড়ে ২১ কোটি ঘনফুট গ্যাস লাগে।
সূত্র বলছে ঈদে স্বাভাবিক রেখে ঈদের পর কিছুটা লোডশেডিং করা হবে। গত সপ্তাহে বিদ্যুত বিভাগের এক বৈঠকে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ঈদের পর সর্বোচ্চ চাহিদার (বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত) সময়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে পিডিবি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব খানসহ বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.