ঈদুল ফিতর সিয়াম সাধনার সাফল্য by মুহম্মদ ফরহাদ হোসেন
মাহে রমজানুল মোবারকে সিয়াম সাধনা শেষে প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের কাছে আনন্দের সওগাত নিয়ে সমাগত পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধনী-গরিব, সাদা-কালো, ছোট-বড় সবাইকে প্রীতির পুণ্যময় বন্ধনে আবদ্ধ করতে এ দিনের বিকল্প নেই। এ জন্য ঈদের দিনকে মুসলিম বিশ্বের জাতীয় উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক জাতির জন্য আনন্দ-উৎসবের দিন রয়েছে। আমাদের আনন্দ-উৎসবের দিন হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা (বুখারি, মুসলিম)। ঈদ অর্থ আনন্দ বা উৎসব আর ফিতর অর্থ ভঙ্গ করা। রমজান মাসের সিয়াম সাধনা শেষে রোজা ভঙ্গ করার যে উৎসব পালন করা হয়, তাকে ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ বলা হয়। শতধাবিভক্ত মুসলিম বিশ্বের ভ্রাতৃত্ববোধ সুরক্ষায় এবারের ঈদুল ফিতর বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত।
ঈদ মুসলমানদের অন্তরে খুশির ঝলক ছড়িয়ে দেয়। প্রিয়জনের সঙ্গে সে আনন্দ বা খুশি ভাগাভাগি করতে দেশের শহরাঞ্চল থেকে জনস্রোত বয়ে যায় নিভৃত পল্লীর দিকে। ঈদের মূল অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো নিজে আনন্দ উপভোগ করা এবং অন্যদের মধ্যে সে আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া। রাসুল (সা.) দুই ঈদের দিনই ঈদগাহের দিকে বের হতেন। ঈদগাহে প্রথমে তিনি নামাজ আদায় করতেন, এরপর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তিনি তাঁদের ওয়াজ নসিহত করতেন, সৎ কাজের আদেশ দিতেন আর অসৎ কাজে নিষেধ করতেন। সাহাবি মুসল্লিরা রাসুলের সে বয়ানগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিপালন করতেন। অতঃপর মুসল্লি-সাহাবিদের সঙ্গে কোলাকুলি করতেন ও ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
মানুষের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন রচনায় ঈদুল ফিতর গুরুত্ববহ। এটি মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয় কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক পরিবেশের দোরগোড়ায়। এ কারণে ইসলাম সাদকাতুল ফিতরের নির্দেশ দিয়েছে। এটি আদায় করা ওয়াজিব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) সাদকাতুল ফিতরকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। এক সা খেজুর অথবা যব, গোলাম আজাদ, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সব মুসলমানের ওপর এবং ঈদগাহে যাওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন- (বুখারি মুসলিম)।
ইসলাম নির্দেশিত এ ফিতরাব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে সুষম অর্থনীতি গড়ে তোলার বহিঃপ্রকাশ। প্রতিটি মুসলমান যাতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সে জন্য পরিপূর্ণভাবে ইসলামের জাকাত ও ফিতরানীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি। মুদ্রাস্ফীতি, নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যব্যবস্থা এবং বাজার অর্থনীতির দৌরাত্ম্যে এমনিতেই নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থা করুণ। মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলগুলোতে এ অবস্থা অবর্ণনীয়। প্রতিবছরই তাদের কাছে ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু এ ঈদ তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে না। না পারার ব্যর্থতা ও দায়ভার বিত্তবানদের ওপরই পড়ে। দারিদ্র্যক্লিষ্ট, মঙ্গাপীড়িত, নদীভাঙা গৃহহীন-অন্নহীন মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও বিত্তশালীরা ঈদের নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা ও ঈদের জৌলুস সীমিত করা উচিত। নিয়ন্ত্রিত অর্থ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। আল কোরআনে রাব্বুল আলামিন বিত্তবানদের সে রকম নির্দেশনাই দিয়েছেন- 'যতক্ষণ না তোমরা দরিদ্রদের চোখের পানি মুছে দেবে, যতক্ষণ না তোমরা তাদের ভালো পোশাকে আবৃত করবে এবং তাদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈদ পালন করবে না।'
ঈদুল ফিতর হলো আত্মবিশ্লেষণের দিন। এ দিনে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি, দয়া-দাক্ষিণ্য, ক্ষমা ও মুক্তি লাভের বাসনায় দান-খয়রাতের মাধ্যমে সফলতা ও ব্যর্থতার বিশ্লেষণ করে থাকে। দান-খয়রাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যদি নিষ্কলুষ-হালাল পথে উপার্জিত না হয় তবে ক্ষমা-সন্তুষ্টি ও মুক্তি লাভের আশা করাই বৃথা। আমি অনেক মানুষকেই জানি, যাঁরা রীতিমতো নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, জাকাত দেন, ধর্ম-কর্ম করেন; কিন্তু অফিসে বসে ঘুষ গ্রহণ করেন, অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন, সরকারি কর ফাঁকি দেন, ছেলেমেয়েদের অনৈতিক উপার্জন পকেটে তোলেন এবং ওই অর্থ দিয়েই ফিতরা ও জাকাত ফান্ড গঠন করেন এবং কিয়দংশ গরিবদের মধ্যে বণ্টন করেন। ঈদগাহে চাঁদা দেওয়ার তালিকায়ও তাঁদের নাম সর্বাগ্রে। মারহাবা-মারহাবা ধ্বনিতে সবাই ওই চাঁদাদাতাকে উৎসাহ জোগান। একবার তো তারাবির হাফেজদের সম্মানী দেওয়ার ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি সবার কাছে আর্থিক সহায়তা চাইলেন। পরদিন দেখা গেল, কাস্টমে চাকরি করেন এমন একজন পুরো অর্থই দিয়ে দিয়েছেন। এত বড় অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার সঙ্গে তাঁর আয়ের সংগতি আছে কি না- এ কথাটি তিনি একবারও ভাবেননি। তাঁর তারাবির চাঁদা ও জাকাত বণ্টন দেখে আমি অবাক হয়ে ভাবি তাঁর উপার্জন কত। আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে আমরা কেবল সামাজিকভাবেই নই বরং ধর্মীয় দিক থেকেও দুর্নীতির চক্রে আটকা পড়ে আছি। এসব দুর্নীতি ও দুর্নীতির কবল থেকে বের হওয়ার কথাও কোনো আলেম-ওলামা জোরালোভাবে বলেন না। বরং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এসব অর্থ অনুদান হিসেবে মসজিদ-মাদ্রাসায় সানন্দে গ্রহণ করা হয়।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.) এক ঈদের দিনে ক্রন্দন করছিলেন। সঙ্গীরা তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন, রমজান মাস আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমা ও দয়া লাভের অপূর্ব সুযোগ। কিন্তু আমি এ ভয়ে চিন্তান্বিত, আমি কি এ সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি? হজরত ওমর (রা.), যিনি অর্ধপৃথিবীর ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন, যিনি রাসুলের জীবদ্দশায় এ জগতেই পেয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ, তিনি নিজেই যখন দরিদ্রদের প্রতি ঈদের আনন্দ বণ্টনে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন, সেখানে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে নিরানন্দে রেখে আমরা কিভাবে নিশ্চিন্তে ঈদ উদ্যাপন করতে পারি?
ঈদুল ফিতরকে পুরস্কার প্রদানের দিনও বলা হয়। এ পুরস্কার তাঁরাই পেতে পারেন, যাঁরা এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রিপুকে দমন করতে পেরেছেন। আর যারা অসৎ চিন্তা, অসৎ কার্যাবলি থেকে বিরত থাকতে পারেনি, রমজানের পবিত্রতাকে কলুষিত করেছে, তাদের জন্য ঈদুল ফিতর হলো দুঃসংবাদ। সিয়াম সাধনা না করে যে নতুন পোশাক পরিধান করেছে, তার জন্য ঈদুল ফিতর নয়। প্রকৃত অর্থে ঈদ তার জন্য, যে তাওবা ও এস্তেগফারের মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে। এ জন্য বলা হয়, ঈদুল ফিতর হলো, সিয়াম সাধনায় সাফল্যের প্রতীক।
লেখক : সিনিয়র অফিসার, এনসিসি ব্যাংক, ঢাকা।
ঈদ মুসলমানদের অন্তরে খুশির ঝলক ছড়িয়ে দেয়। প্রিয়জনের সঙ্গে সে আনন্দ বা খুশি ভাগাভাগি করতে দেশের শহরাঞ্চল থেকে জনস্রোত বয়ে যায় নিভৃত পল্লীর দিকে। ঈদের মূল অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো নিজে আনন্দ উপভোগ করা এবং অন্যদের মধ্যে সে আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া। রাসুল (সা.) দুই ঈদের দিনই ঈদগাহের দিকে বের হতেন। ঈদগাহে প্রথমে তিনি নামাজ আদায় করতেন, এরপর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তিনি তাঁদের ওয়াজ নসিহত করতেন, সৎ কাজের আদেশ দিতেন আর অসৎ কাজে নিষেধ করতেন। সাহাবি মুসল্লিরা রাসুলের সে বয়ানগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিপালন করতেন। অতঃপর মুসল্লি-সাহাবিদের সঙ্গে কোলাকুলি করতেন ও ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
মানুষের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন রচনায় ঈদুল ফিতর গুরুত্ববহ। এটি মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয় কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক পরিবেশের দোরগোড়ায়। এ কারণে ইসলাম সাদকাতুল ফিতরের নির্দেশ দিয়েছে। এটি আদায় করা ওয়াজিব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) সাদকাতুল ফিতরকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। এক সা খেজুর অথবা যব, গোলাম আজাদ, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সব মুসলমানের ওপর এবং ঈদগাহে যাওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন- (বুখারি মুসলিম)।
ইসলাম নির্দেশিত এ ফিতরাব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে সুষম অর্থনীতি গড়ে তোলার বহিঃপ্রকাশ। প্রতিটি মুসলমান যাতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সে জন্য পরিপূর্ণভাবে ইসলামের জাকাত ও ফিতরানীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি। মুদ্রাস্ফীতি, নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যব্যবস্থা এবং বাজার অর্থনীতির দৌরাত্ম্যে এমনিতেই নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থা করুণ। মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলগুলোতে এ অবস্থা অবর্ণনীয়। প্রতিবছরই তাদের কাছে ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু এ ঈদ তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে না। না পারার ব্যর্থতা ও দায়ভার বিত্তবানদের ওপরই পড়ে। দারিদ্র্যক্লিষ্ট, মঙ্গাপীড়িত, নদীভাঙা গৃহহীন-অন্নহীন মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও বিত্তশালীরা ঈদের নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা ও ঈদের জৌলুস সীমিত করা উচিত। নিয়ন্ত্রিত অর্থ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। আল কোরআনে রাব্বুল আলামিন বিত্তবানদের সে রকম নির্দেশনাই দিয়েছেন- 'যতক্ষণ না তোমরা দরিদ্রদের চোখের পানি মুছে দেবে, যতক্ষণ না তোমরা তাদের ভালো পোশাকে আবৃত করবে এবং তাদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈদ পালন করবে না।'
ঈদুল ফিতর হলো আত্মবিশ্লেষণের দিন। এ দিনে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি, দয়া-দাক্ষিণ্য, ক্ষমা ও মুক্তি লাভের বাসনায় দান-খয়রাতের মাধ্যমে সফলতা ও ব্যর্থতার বিশ্লেষণ করে থাকে। দান-খয়রাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যদি নিষ্কলুষ-হালাল পথে উপার্জিত না হয় তবে ক্ষমা-সন্তুষ্টি ও মুক্তি লাভের আশা করাই বৃথা। আমি অনেক মানুষকেই জানি, যাঁরা রীতিমতো নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, জাকাত দেন, ধর্ম-কর্ম করেন; কিন্তু অফিসে বসে ঘুষ গ্রহণ করেন, অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন, সরকারি কর ফাঁকি দেন, ছেলেমেয়েদের অনৈতিক উপার্জন পকেটে তোলেন এবং ওই অর্থ দিয়েই ফিতরা ও জাকাত ফান্ড গঠন করেন এবং কিয়দংশ গরিবদের মধ্যে বণ্টন করেন। ঈদগাহে চাঁদা দেওয়ার তালিকায়ও তাঁদের নাম সর্বাগ্রে। মারহাবা-মারহাবা ধ্বনিতে সবাই ওই চাঁদাদাতাকে উৎসাহ জোগান। একবার তো তারাবির হাফেজদের সম্মানী দেওয়ার ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি সবার কাছে আর্থিক সহায়তা চাইলেন। পরদিন দেখা গেল, কাস্টমে চাকরি করেন এমন একজন পুরো অর্থই দিয়ে দিয়েছেন। এত বড় অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার সঙ্গে তাঁর আয়ের সংগতি আছে কি না- এ কথাটি তিনি একবারও ভাবেননি। তাঁর তারাবির চাঁদা ও জাকাত বণ্টন দেখে আমি অবাক হয়ে ভাবি তাঁর উপার্জন কত। আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে আমরা কেবল সামাজিকভাবেই নই বরং ধর্মীয় দিক থেকেও দুর্নীতির চক্রে আটকা পড়ে আছি। এসব দুর্নীতি ও দুর্নীতির কবল থেকে বের হওয়ার কথাও কোনো আলেম-ওলামা জোরালোভাবে বলেন না। বরং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এসব অর্থ অনুদান হিসেবে মসজিদ-মাদ্রাসায় সানন্দে গ্রহণ করা হয়।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.) এক ঈদের দিনে ক্রন্দন করছিলেন। সঙ্গীরা তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন, রমজান মাস আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমা ও দয়া লাভের অপূর্ব সুযোগ। কিন্তু আমি এ ভয়ে চিন্তান্বিত, আমি কি এ সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি? হজরত ওমর (রা.), যিনি অর্ধপৃথিবীর ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন, যিনি রাসুলের জীবদ্দশায় এ জগতেই পেয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ, তিনি নিজেই যখন দরিদ্রদের প্রতি ঈদের আনন্দ বণ্টনে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন, সেখানে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে নিরানন্দে রেখে আমরা কিভাবে নিশ্চিন্তে ঈদ উদ্যাপন করতে পারি?
ঈদুল ফিতরকে পুরস্কার প্রদানের দিনও বলা হয়। এ পুরস্কার তাঁরাই পেতে পারেন, যাঁরা এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রিপুকে দমন করতে পেরেছেন। আর যারা অসৎ চিন্তা, অসৎ কার্যাবলি থেকে বিরত থাকতে পারেনি, রমজানের পবিত্রতাকে কলুষিত করেছে, তাদের জন্য ঈদুল ফিতর হলো দুঃসংবাদ। সিয়াম সাধনা না করে যে নতুন পোশাক পরিধান করেছে, তার জন্য ঈদুল ফিতর নয়। প্রকৃত অর্থে ঈদ তার জন্য, যে তাওবা ও এস্তেগফারের মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে। এ জন্য বলা হয়, ঈদুল ফিতর হলো, সিয়াম সাধনায় সাফল্যের প্রতীক।
লেখক : সিনিয়র অফিসার, এনসিসি ব্যাংক, ঢাকা।
No comments