দুর্ঘটনা-যানজটে দুর্ভাবনা তবু মুখে হাসি by পার্থ সারথি দাস
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল। তখন দুপুর দেড়টা। বিভিন্ন বাস কাউন্টারের সামনে খবরের কাগজ পেতে বসে আছেন যাত্রীরা। তাঁদের মধ্যে অশীতিপর আর ছোট শিশুদেরও দেখা গেল। এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। রোদ মাথায় নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনছেন যাত্রীরা।
তাঁরা যেতে চান ময়মনসিংহে। তবে আগে যাঁরা টিকিট কেটেছেন তাঁরাও বসে আছেন। তাঁদেরই একজন ষাটোর্ধ্ব ময়না মিয়া। জিজ্ঞেস করতেই জ্বলে ওঠেন তেলেবেগুনে। কপালের বিন্দু বিন্দু
ঘাম সরিয়ে বলেন, '১২টা থাইক্যা বইস্যা আছি।' পাশে বসা আমিনুল ইসলাম তাঁকে থামিয়ে নিজেই বললেন, '৪৯ নম্বর গাড়ির টিকিট কাটছি দুপুর ১টায়। একটু আগে গেছে ৪৬ নম্বর গাড়ি। আমাদের রওনা দিতে দিতে সইন্ধ্যা হইবো।' কিন্তু টাঙ্গাইলের কিশোর যাত্রী সোহাগ রহমান খুশিতে ডগমগ। টার্মিনালের এখানে-ওখানে দৌড়াচ্ছিল। এরই মধ্যে নির্দিষ্ট বাস আসায় মা-বাবার সঙ্গে তাকে উঠে বসতে হলো। মহাখালী বাস টার্মিনালে গতকাল শুক্রবারের দৃশ্য এটি।
ঈদ আসন্ন। কয়েক দিন ধরেই বাড়ি ফিরছে মানুষ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে ছিল যাত্রীদের ভিড়। ভোর থেকেই শুরু হয় কাছের ও দূরের যাত্রা। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে একাধিক মহাসড়কে সৃষ্ট যানজট আর ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ে দুর্ভোগ-দুর্ভাবনার ছায়া ছিল যাত্রায়। দুর্ঘটনা ঠেকাতে যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী মহাসড়কে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবহন মালিকরা প্রথমদিকে এতে সায় দেননি। মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের মূল স্রোত শুরু হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট যানজটে যাত্রী ও চালকদের আতঙ্ক নিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে পথ। মহাসড়ক পুলিশ ও পরিবহন চালকদের কাছ থেকে জানা গেছে, ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল কয়েক দিন বন্ধ রাখতে যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিবহন নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলীকে নিজে ফোন করে ঈদে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের জন্য কয়েকটি দিন ভারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিলেন গত বুধবার। তাঁর এই অনুরোধ উপেক্ষা করে মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সায় না পাওয়ায় প্রথম দিকে কিছু করতে পারিনি। তবে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অত্যাবশ্যকীয় ও রপ্তানি পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুক্রবার রাত থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে আশা করছি।'
বেহাল রাস্তা, বাসের বেপরোয়া চলাচল আর ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এবারের ঈদ মৌসুমে মহাসড়কে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। মহাসড়ক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দফায় দফায় যানজট সৃষ্টি হয় দুর্ঘটনার কারণে। মহাসড়কের শহীদনগর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে একটি লরি বিকল হলে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুর দেড়টায় মহাসড়কের গজারিয়া উপজেলার জমালদি এলাকায় দুই বাসের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়। দুর্ঘটনার পর ওই মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। এ ছাড়া গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের তিনটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। দুর্ঘটনার কারণে বিচ্ছিন্নভাবে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হওয়ায় পুরো মহাসড়কে যানবাহন চলে খুব ধীরে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে তৎপরতা চলছে- দাবি করেছেন মহাসড়ক পুলিশের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। মহাসড়ক পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মহাসড়কে যানজট ঠেকাতে আমরা সক্রিয় রয়েছি। বিভিন্ন মহাসড়কে বেপরোয়া যানবাহন চালানো রোধ করতে মহাসড়ক পুলিশ দল সক্রিয় রয়েছে। সুযোগ পেলেই চালকরা গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে ঈদে যাতে যাত্রীদের দুর্ভোগ না হয়, সেজন্য আমরা আপাতত চেকিং বন্ধ রেখেছি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিডগান ব্যবহার করছি।' গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন মহাসড়কে সকাল থেকেই যানবাহনের চাপ ছিল বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ঈদের আগের দিন রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এ কারণে ঈদের আগেও মহাসড়কে চাপ থাকবে। ঈদে যাত্রী পরিবহন নিরাপদ রাখতে আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।'
গতকাল দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে গেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের ঝটিকা পরিবহনের (ঢাকা মেটো ব-১১-১৫৬০) চালক রইছ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গাড়িতে আসা-যাওয়ায় এখন ১২ ঘণ্টা লাগছে। অথচ টাঙ্গাইল যেতে-আসতে চার ঘণ্টা লাগার কথা। দীর্ঘ ছুটির কারণে তিন দিন যাত্রী কম ছিল। আজ যাত্রী হবে। যাত্রীতে ভরে গেলেই রওনা দেব।' গতকাল টার্মিনালে ঢাকা-বগুড়া-নওগাঁ রুটের একতা পরিবহনে নওগাঁ যাওয়ার একটি টিকিটের জন্য কাউন্টারে দাঁড়িয়েছিলেন মেহেদী আজাদ। ফাস্ট সিকিউরিটিজ ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার মেহেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কাজে ব্যস্ততার জন্য আগে টিকিট কিনিনি। এখন বলছে আর মিলবে না।' একই রুটের শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে ছিল যাত্রীর ভিড়। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে আর টিকিট নেই। টার্মিনালে শ্যামলী বাংলা পরিবহনসহ বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের ছাদেও মাত্র ১০০ টাকায় যাত্রী নেয়া হয়েছে। অনেক বাসে আবার যাত্রী সংকট ছিল।
গতকাল সায়েদাবাদ আর গাবতলী টার্মিনালে সকালে যাত্রীদের ভিড় অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল। ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে গতকাল অনেক যাত্রী উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের পরিবহনের কাউন্টারে ছুটেছেন। কিন্তু অনেকে টিকিট না পেয়ে আবার ট্রেনেই চেপে বসতে ছুটেছেন রেলস্টেশনে।
গতকালও রাজধানী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। স্টেশন মাস্টার হরিগোপাল দেব কালের কণ্ঠকে জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলো গতকালও গড়ে চার ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় বিমানবন্দর স্টেশনে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসার কথা। ওই সময় জানা গেল, ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে আসবে না। অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ছিলেন উন্মুখ।
ফাঁকা ঢাকা : ফাঁকা হতে শুরু করেছে যানজটের শহর ঢাকা। গতকাল রাজধানীর ব্যস্ত ফার্মগেট, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তেমন কোনো যানজট ছিল না। বিকেলে উত্তরা থেকে বারিধারা যেতে যেতে সিএনজি অটোরিকশাচালক ফিরোজ মিয়া বললেন, 'যানজটে গাড়ি ১৫-২০ কিলোমিটার গতিতেও চালানো যেত না। আজ ৫০-৭০ কিলোমিটার গতিতে চালিয়েছি।' গতকাল মহাখালী রেলক্রসিংয়ে দুপুরে কর্তব্যরত গেটকিপার সাইদ মিয়া বলেন, ট্রেনের ছাদেও মানুষ যাচ্ছে। ঢাকা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
ঘাম সরিয়ে বলেন, '১২টা থাইক্যা বইস্যা আছি।' পাশে বসা আমিনুল ইসলাম তাঁকে থামিয়ে নিজেই বললেন, '৪৯ নম্বর গাড়ির টিকিট কাটছি দুপুর ১টায়। একটু আগে গেছে ৪৬ নম্বর গাড়ি। আমাদের রওনা দিতে দিতে সইন্ধ্যা হইবো।' কিন্তু টাঙ্গাইলের কিশোর যাত্রী সোহাগ রহমান খুশিতে ডগমগ। টার্মিনালের এখানে-ওখানে দৌড়াচ্ছিল। এরই মধ্যে নির্দিষ্ট বাস আসায় মা-বাবার সঙ্গে তাকে উঠে বসতে হলো। মহাখালী বাস টার্মিনালে গতকাল শুক্রবারের দৃশ্য এটি।
ঈদ আসন্ন। কয়েক দিন ধরেই বাড়ি ফিরছে মানুষ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে ছিল যাত্রীদের ভিড়। ভোর থেকেই শুরু হয় কাছের ও দূরের যাত্রা। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে একাধিক মহাসড়কে সৃষ্ট যানজট আর ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ে দুর্ভোগ-দুর্ভাবনার ছায়া ছিল যাত্রায়। দুর্ঘটনা ঠেকাতে যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী মহাসড়কে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবহন মালিকরা প্রথমদিকে এতে সায় দেননি। মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের মূল স্রোত শুরু হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট যানজটে যাত্রী ও চালকদের আতঙ্ক নিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে পথ। মহাসড়ক পুলিশ ও পরিবহন চালকদের কাছ থেকে জানা গেছে, ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল কয়েক দিন বন্ধ রাখতে যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিবহন নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলীকে নিজে ফোন করে ঈদে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের জন্য কয়েকটি দিন ভারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিলেন গত বুধবার। তাঁর এই অনুরোধ উপেক্ষা করে মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সায় না পাওয়ায় প্রথম দিকে কিছু করতে পারিনি। তবে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অত্যাবশ্যকীয় ও রপ্তানি পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুক্রবার রাত থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে আশা করছি।'
বেহাল রাস্তা, বাসের বেপরোয়া চলাচল আর ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এবারের ঈদ মৌসুমে মহাসড়কে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। মহাসড়ক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দফায় দফায় যানজট সৃষ্টি হয় দুর্ঘটনার কারণে। মহাসড়কের শহীদনগর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে একটি লরি বিকল হলে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুর দেড়টায় মহাসড়কের গজারিয়া উপজেলার জমালদি এলাকায় দুই বাসের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়। দুর্ঘটনার পর ওই মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। এ ছাড়া গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের তিনটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। দুর্ঘটনার কারণে বিচ্ছিন্নভাবে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হওয়ায় পুরো মহাসড়কে যানবাহন চলে খুব ধীরে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে তৎপরতা চলছে- দাবি করেছেন মহাসড়ক পুলিশের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। মহাসড়ক পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মহাসড়কে যানজট ঠেকাতে আমরা সক্রিয় রয়েছি। বিভিন্ন মহাসড়কে বেপরোয়া যানবাহন চালানো রোধ করতে মহাসড়ক পুলিশ দল সক্রিয় রয়েছে। সুযোগ পেলেই চালকরা গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে ঈদে যাতে যাত্রীদের দুর্ভোগ না হয়, সেজন্য আমরা আপাতত চেকিং বন্ধ রেখেছি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিডগান ব্যবহার করছি।' গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন মহাসড়কে সকাল থেকেই যানবাহনের চাপ ছিল বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ঈদের আগের দিন রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এ কারণে ঈদের আগেও মহাসড়কে চাপ থাকবে। ঈদে যাত্রী পরিবহন নিরাপদ রাখতে আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।'
গতকাল দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে গেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের ঝটিকা পরিবহনের (ঢাকা মেটো ব-১১-১৫৬০) চালক রইছ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গাড়িতে আসা-যাওয়ায় এখন ১২ ঘণ্টা লাগছে। অথচ টাঙ্গাইল যেতে-আসতে চার ঘণ্টা লাগার কথা। দীর্ঘ ছুটির কারণে তিন দিন যাত্রী কম ছিল। আজ যাত্রী হবে। যাত্রীতে ভরে গেলেই রওনা দেব।' গতকাল টার্মিনালে ঢাকা-বগুড়া-নওগাঁ রুটের একতা পরিবহনে নওগাঁ যাওয়ার একটি টিকিটের জন্য কাউন্টারে দাঁড়িয়েছিলেন মেহেদী আজাদ। ফাস্ট সিকিউরিটিজ ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার মেহেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কাজে ব্যস্ততার জন্য আগে টিকিট কিনিনি। এখন বলছে আর মিলবে না।' একই রুটের শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে ছিল যাত্রীর ভিড়। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে আর টিকিট নেই। টার্মিনালে শ্যামলী বাংলা পরিবহনসহ বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের ছাদেও মাত্র ১০০ টাকায় যাত্রী নেয়া হয়েছে। অনেক বাসে আবার যাত্রী সংকট ছিল।
গতকাল সায়েদাবাদ আর গাবতলী টার্মিনালে সকালে যাত্রীদের ভিড় অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল। ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে গতকাল অনেক যাত্রী উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের পরিবহনের কাউন্টারে ছুটেছেন। কিন্তু অনেকে টিকিট না পেয়ে আবার ট্রেনেই চেপে বসতে ছুটেছেন রেলস্টেশনে।
গতকালও রাজধানী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। স্টেশন মাস্টার হরিগোপাল দেব কালের কণ্ঠকে জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলো গতকালও গড়ে চার ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় বিমানবন্দর স্টেশনে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসার কথা। ওই সময় জানা গেল, ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে আসবে না। অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ছিলেন উন্মুখ।
ফাঁকা ঢাকা : ফাঁকা হতে শুরু করেছে যানজটের শহর ঢাকা। গতকাল রাজধানীর ব্যস্ত ফার্মগেট, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তেমন কোনো যানজট ছিল না। বিকেলে উত্তরা থেকে বারিধারা যেতে যেতে সিএনজি অটোরিকশাচালক ফিরোজ মিয়া বললেন, 'যানজটে গাড়ি ১৫-২০ কিলোমিটার গতিতেও চালানো যেত না। আজ ৫০-৭০ কিলোমিটার গতিতে চালিয়েছি।' গতকাল মহাখালী রেলক্রসিংয়ে দুপুরে কর্তব্যরত গেটকিপার সাইদ মিয়া বলেন, ট্রেনের ছাদেও মানুষ যাচ্ছে। ঢাকা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
No comments