অশ্রুতে ভাসবে নুহাশপল্লী by শরীফ আহ্মেদ শামীম
'প্রত্যেক ঈদে স্যার আমাদের শার্ট, পাঞ্জাবি ও শাড়ি দিতেন। এবার পেয়েছি দুটি করে। স্যারের তরফ থেকে ম্যানেজার এক সেট দিয়েছেন, আরেক সেট শাওন ম্যাডাম। তবে দ্বিগুণ উপহার পেয়েও এবার ঈদ আমার জন্য হবে বড় দুঃখের। কারণ, স্যার আর কোনো দিন ঈদের পর নুহাশপল্লীতে আসবেন না।'
অশ্রুসিক্ত চোখে বলছিলেন নুহাশপল্লীর ঔষধি বাগানের কর্মচারী মোশাররফ হোসেন। গামছায় চোখের কোণ মুছে মোশাররফ বলেন, 'অন্য বছর ঈদের দু-তিন দিন পর স্যার নুহাশপল্লীতে আসতেন। এবার প্রথম রোজাতেই চলে এসেছেন লাশ হয়ে। আমরা ঈদ করব স্যারের স্মৃতি ও কবর দেখে।'
পিরুজালী গ্রামের নলুয়ারটেকপাড়ার মোশাররফ হোসেন (৩৫) নুহাশপল্লীর শুরু থেকেই আছেন। ৯ কর্মচারীর অন্যদের মতো তিনিও হুুমায়ূন আহমেদের প্রিয়ভাজন ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তাঁর রয়েছে হাজারো স্মৃতি। মোশাররফ বলেন, 'প্রতি ঈদে বিভিন্ন টেলিভিশনের জন্য নাটক বানাতেন স্যার। রোজা এলে শুটিং ইউনিট নিয়ে চলে আসতেন নুহাশপল্লীতে। দিনরাত কাজ হতো। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন আইটেমের ইফতার হতো। নুহাশপল্লীর বাবুর্চি মো. বাশার ইফতার বানাতেন। স্যার শুটিং ইউনিটের সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে বসে ইফতার করতেন। জমজমাট থাকত নুহাশপল্লী। এ বছর স্যার নেই। শুটিং নেই, ইফতার নেই, কোনো চ্যানেলে স্যারের নতুন নাটকও নেই। আছে শুধুই কান্না, শুধুই হাহাকার।'
গত ঈদের স্মৃতিচারণা করে মোশাররফ বলেন, 'ঈদের তিন দিন পর স্যার শাওন ম্যাডাম, নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন। রাতে আসেন আমেরিকা থেকে আসা স্যারের বিদেশি তিন বন্ধু। আসেন দেশের অনেক বড় বড় কবি-সাহিত্যিকরা। তাঁদের সম্মানে নুহাশপল্লীতে আয়োজন করা হয় বাউল গানের। কুদ্দুস বয়াতিসহ বড় বড় বয়াতিরা মেহমানদের গান গেয়ে শোনান। স্যার দুদিন ছিলেন নুহাশপল্লীতে। এই দুদিন স্যারের পছন্দের অনেক গান গেয়ে শুনিয়ে ছিলেন পিরুজালী গ্রামের বাউল শিল্পী হালিম সরকার। হালিম সরকার স্যারের অনেক নাটক ও সিনেমায় গান গেয়েছেন। স্যারের ইচ্ছা ছিল এবার ঈদে বড় বাউল গানের আসর বসাবেন। কিন্তু ইচ্ছা পূরণের আগেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।'
মোশাররফ বলেন, স্যার অন্য জগতে চলে গেলেও এবারের ঈদে তাঁর পছন্দের প্রিয় গান গেয়ে শোনাবেন বাউল শিল্পী হালিম সরকার। এ জন্য নুহাশপল্লীর গেটের বাইরে মঞ্চ তৈরি করা হবে। ঈদের দিন নামাজের পর দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলবে গভীর রাত পর্যন্ত।
'স্যার বেঁচে নেই- এ তো কষ্টেরই। তবে সান্ত্বনা এই যে এবারই প্রথম স্যার আমাদের সঙ্গে নুহাশপল্লীতে আছেন।' বলেন নুহাশপল্লীর আরেক কর্মচারী বাশার। বাশারের চোখে জীবিতের চেয়ে মৃত হুমায়ূন স্যার আরো বেশি সক্রিয়। তাঁর ভাষায়, স্যারকে তাঁর প্রিয় লিচুতলায় কবর দেওয়ার পর থেকে নুহাশপল্লীতে ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের ভিড় লেগেই আছে। প্রতিদিন দেশের দূরদূরান্ত থেকে শিশু, যুবক ও বৃদ্ধসহ হাজার হাজার মানুষ স্যারের কবর দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে আসছে।' ঈদের দিন এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢল নামবে বলেও ধারণা করছেন তিনি। নুহাশপল্লীর বাবুর্চি বাশারেরও হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। গত ঈদের পর স্যারকে তাঁর প্রিয় দেশি মুরগি, গরুর মাংস ভুনা, চিংড়ি আর পোলাও রান্না করে খাইয়ে ছিলেন বাশার। তিনি ধরা গলায় বলেন, "এবারও হয়তো রান্না করব। কিন্তু স্যার তো আর কখনো খেয়ে বলবেন না 'বাশার কম তেল দিয়ে রান্না কর বলেই তোমার রান্না খেয়ে মজা পাই'।"
বাশার বলেন, 'বৃহস্পতিবার স্যারের স্মরণে গাজীপুরের লোকজন নুহাশপল্লীতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিল। শাওন ম্যাডাম, তাঁর মা এবং তাঁদের কয়েকজন নিকট আত্মীয় ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা দুপুরে নুহাশপল্লীতে এসে রাত ৮টার দিকে ঢাকায় ফিরে গেছেন। যাওয়ার সময় শাওন ম্যাডাম আমাদের বলে গেছেন 'মন খারাপ কর না। আমি দুই ছেলেকে নিয়ে তোমাদের সঙ্গে নুহাশপল্লীতে ঈদ করব। শনিবার বিকেলেই নুহাশপল্লীতে চলে আসব।' বাশার বলেন, 'স্যার নেই। ম্যাডাম ও স্যারের ছেলেরা কাছে থাকলে আমাদের কষ্ট কিছু হলেও কমবে।'
নুহাশপল্লীর পাশের নলুয়ারটেক গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নূরে আলম জিকু বলেন, 'ঈদ এলে প্রতিবছর স্যার নুহাশপল্লীর আশপাশের দরিদ্র মানুষকে জামা-কাপড় ও শাড়ি দিতেন। তিনি সব সময় এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিতেন। আমাদের প্রতি তাঁর ছিল অসম্ভব ভালোবাসা। এবার তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তারপরও তিনি প্রতি মুহূর্তেই আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। আমরা তাঁর উপস্থিতি অন্তরে অনুভব করি। তাই ঈদের নামাজের পর আমরা পিরুজালীর মানুষ ঈদের দিনের বেশিরভাগ সময় স্যারের প্রিয় নুহাশপল্লীতে কাটাব। আশা করছি ওই দিন ভালোবাসার মিলন মেলায় পরিণত হবে নুহাশপল্লী।'
নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, 'স্যার নেই, আমাদের ঈদও নেই। তাই আমাদের কষ্ট ভাগ করে নিতে এবং প্রিয় দুই শিশুপুত্র নিষাদ ও নিনিতকে বাবার স্মৃতির পরশ বুলাতে নুহাশপল্লীতে ঈদ উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্যারের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।'
পিরুজালী গ্রামের নলুয়ারটেকপাড়ার মোশাররফ হোসেন (৩৫) নুহাশপল্লীর শুরু থেকেই আছেন। ৯ কর্মচারীর অন্যদের মতো তিনিও হুুমায়ূন আহমেদের প্রিয়ভাজন ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তাঁর রয়েছে হাজারো স্মৃতি। মোশাররফ বলেন, 'প্রতি ঈদে বিভিন্ন টেলিভিশনের জন্য নাটক বানাতেন স্যার। রোজা এলে শুটিং ইউনিট নিয়ে চলে আসতেন নুহাশপল্লীতে। দিনরাত কাজ হতো। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন আইটেমের ইফতার হতো। নুহাশপল্লীর বাবুর্চি মো. বাশার ইফতার বানাতেন। স্যার শুটিং ইউনিটের সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে বসে ইফতার করতেন। জমজমাট থাকত নুহাশপল্লী। এ বছর স্যার নেই। শুটিং নেই, ইফতার নেই, কোনো চ্যানেলে স্যারের নতুন নাটকও নেই। আছে শুধুই কান্না, শুধুই হাহাকার।'
গত ঈদের স্মৃতিচারণা করে মোশাররফ বলেন, 'ঈদের তিন দিন পর স্যার শাওন ম্যাডাম, নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন। রাতে আসেন আমেরিকা থেকে আসা স্যারের বিদেশি তিন বন্ধু। আসেন দেশের অনেক বড় বড় কবি-সাহিত্যিকরা। তাঁদের সম্মানে নুহাশপল্লীতে আয়োজন করা হয় বাউল গানের। কুদ্দুস বয়াতিসহ বড় বড় বয়াতিরা মেহমানদের গান গেয়ে শোনান। স্যার দুদিন ছিলেন নুহাশপল্লীতে। এই দুদিন স্যারের পছন্দের অনেক গান গেয়ে শুনিয়ে ছিলেন পিরুজালী গ্রামের বাউল শিল্পী হালিম সরকার। হালিম সরকার স্যারের অনেক নাটক ও সিনেমায় গান গেয়েছেন। স্যারের ইচ্ছা ছিল এবার ঈদে বড় বাউল গানের আসর বসাবেন। কিন্তু ইচ্ছা পূরণের আগেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।'
মোশাররফ বলেন, স্যার অন্য জগতে চলে গেলেও এবারের ঈদে তাঁর পছন্দের প্রিয় গান গেয়ে শোনাবেন বাউল শিল্পী হালিম সরকার। এ জন্য নুহাশপল্লীর গেটের বাইরে মঞ্চ তৈরি করা হবে। ঈদের দিন নামাজের পর দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলবে গভীর রাত পর্যন্ত।
'স্যার বেঁচে নেই- এ তো কষ্টেরই। তবে সান্ত্বনা এই যে এবারই প্রথম স্যার আমাদের সঙ্গে নুহাশপল্লীতে আছেন।' বলেন নুহাশপল্লীর আরেক কর্মচারী বাশার। বাশারের চোখে জীবিতের চেয়ে মৃত হুমায়ূন স্যার আরো বেশি সক্রিয়। তাঁর ভাষায়, স্যারকে তাঁর প্রিয় লিচুতলায় কবর দেওয়ার পর থেকে নুহাশপল্লীতে ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের ভিড় লেগেই আছে। প্রতিদিন দেশের দূরদূরান্ত থেকে শিশু, যুবক ও বৃদ্ধসহ হাজার হাজার মানুষ স্যারের কবর দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে আসছে।' ঈদের দিন এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢল নামবে বলেও ধারণা করছেন তিনি। নুহাশপল্লীর বাবুর্চি বাশারেরও হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। গত ঈদের পর স্যারকে তাঁর প্রিয় দেশি মুরগি, গরুর মাংস ভুনা, চিংড়ি আর পোলাও রান্না করে খাইয়ে ছিলেন বাশার। তিনি ধরা গলায় বলেন, "এবারও হয়তো রান্না করব। কিন্তু স্যার তো আর কখনো খেয়ে বলবেন না 'বাশার কম তেল দিয়ে রান্না কর বলেই তোমার রান্না খেয়ে মজা পাই'।"
বাশার বলেন, 'বৃহস্পতিবার স্যারের স্মরণে গাজীপুরের লোকজন নুহাশপল্লীতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিল। শাওন ম্যাডাম, তাঁর মা এবং তাঁদের কয়েকজন নিকট আত্মীয় ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা দুপুরে নুহাশপল্লীতে এসে রাত ৮টার দিকে ঢাকায় ফিরে গেছেন। যাওয়ার সময় শাওন ম্যাডাম আমাদের বলে গেছেন 'মন খারাপ কর না। আমি দুই ছেলেকে নিয়ে তোমাদের সঙ্গে নুহাশপল্লীতে ঈদ করব। শনিবার বিকেলেই নুহাশপল্লীতে চলে আসব।' বাশার বলেন, 'স্যার নেই। ম্যাডাম ও স্যারের ছেলেরা কাছে থাকলে আমাদের কষ্ট কিছু হলেও কমবে।'
নুহাশপল্লীর পাশের নলুয়ারটেক গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নূরে আলম জিকু বলেন, 'ঈদ এলে প্রতিবছর স্যার নুহাশপল্লীর আশপাশের দরিদ্র মানুষকে জামা-কাপড় ও শাড়ি দিতেন। তিনি সব সময় এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিতেন। আমাদের প্রতি তাঁর ছিল অসম্ভব ভালোবাসা। এবার তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তারপরও তিনি প্রতি মুহূর্তেই আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। আমরা তাঁর উপস্থিতি অন্তরে অনুভব করি। তাই ঈদের নামাজের পর আমরা পিরুজালীর মানুষ ঈদের দিনের বেশিরভাগ সময় স্যারের প্রিয় নুহাশপল্লীতে কাটাব। আশা করছি ওই দিন ভালোবাসার মিলন মেলায় পরিণত হবে নুহাশপল্লী।'
নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, 'স্যার নেই, আমাদের ঈদও নেই। তাই আমাদের কষ্ট ভাগ করে নিতে এবং প্রিয় দুই শিশুপুত্র নিষাদ ও নিনিতকে বাবার স্মৃতির পরশ বুলাতে নুহাশপল্লীতে ঈদ উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্যারের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।'
No comments