রোহিঙ্গাদের জন্য এক বিষাদময় ‘ঈদ’ by ফয়সাল আতিক
দীর্ঘ একমাসের সিয়াম সাধনা শেষে মুসলিম বিশ্বজুড়ে যখন উকি দিচ্ছে ঈদের আনন্দ; তখন স্বীয় অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা আর জাতিগত ভাবে নির্মূল হওয়ার ভয় তাড়া করছে মিয়ানমারের অধিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের। গত জুন মাসে শুরু হওয়া দাঙ্গায় স্বজন, ভিটেমাটি আর স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি হারিয়েছেন পশ্চিম মিয়ানমারের আরাকান (রাখানই) রাজ্যের সংখ্যালঘু এসব মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে সংগঠিত দাঙ্গায় শুধু প্রতিপক্ষ রাখাইন বৌদ্ধরা নয়; বরং সেনাবাহিনী, নাসাকা ও পুলিশের মত নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠদের রোষানলে পড়ে তারা যখন একটু নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে; তখন সরকার ঘোষণা করেছে যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক নয়। ফলে বিপদ আরো ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের সংগঠন আমব্লেলা গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. আজমি আব্দুল হামিদ মালয়েশিয়ান কনসালটেটিভ কাউন্সিল অব ইসলামিক অরগানাইজেশনস এর কাছে বলেন, বর্তমানে আমরা মিয়ানমারে একটি কঠিন সময় পার করছি। মসজিদগুলোতে নামায আদায় করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে শহর এলাকায় সমস্যাটি প্রকট।
তিনি বলেন, গ্রামের মসজিদ গুলোতে শুধু মাত্র জোহর ও আসরের নামায পড়তে দেয়া হয়। শুক্রবারের জুমার নামায খুব কম স্থানেই আদায় করা সম্ভব হয়।
আজমি আরো জানান, কিছু কিছু এলাকায় জুমার নামায উপলক্ষ্যে ১০ জনের বেশি মুসলিমকে একত্রিত হতে দেয়া হয় না।
মিয়ানমারের মংগুদু জেলায় ১৭৮টি মসজিদ ও নামায কক্ষ রয়েছে। কিন্তু জেলার গ্রামাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ২০টি মসজিদ।
আজমি বলেন, মংগুদু জেলার দক্ষিণাঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমরা মারাত্মকভাবে হামলার শিকার হয়েছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও খাদ্যের অভাবের কারণে এ অঞ্চলের অনেক মুসলিম রোযা রাখতে পারেননি। এবারের ঈদে রোহিঙ্গাদের দুর্গতি ও ভোগান্তির কারণে আসলেই তাদের মাঝে কোনো প্রকার ঈদের আনন্দ নেই।
দাঙ্গা চলাকালে মংগুদু জেলার শিউ জার গ্রামের বাসিন্দা কাদের হাসানের ছেলে মাহমুদুল হাসান (৫৫) কে ধরে নিয়ে যায় নাসাকা বাহিনী। তিনি বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয় তার বিরুদ্ধে। নাসাকা ক্যাম্পে তার ওপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। আইন শৃংখলা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ১২ আগস্ট মৃত্যু হয় তার।
গ্রামের কর্মচঞ্চল এই মানুষটিকে হারিয়ে এবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়েছে শিউ জার গ্রামের রোহিঙ্গা মুসলিমদের।
নিহতের একমাত্র ছেলে জানায়, “এবছর আমাদের জন্য কোনো ঈদ নেই। অর্থপাচরের মিথ্যা অভিযোগ আমার পিতাকে ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে হত্যা করা হলো। অথচ তিনি একাজে কখনই জড়িত ছিলেন না।”
শিউ জার গ্রামে পাশ্ববর্তী গ্রাম জাইদিপিন। এই গ্রামের কিশোর মুহাম্মাদ নাসেরকেও মাহমুদুল হাসানের ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে। গত বছর ১ সেপ্টেম্বর নাসাকা তাকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ খবর জানান গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ।
দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলে ঈদ আসতে এখনও দুই দিন বাকি। কিন্তু মিয়ানমারে দাঙ্গা থামা অথবা তাদের প্রতি রাষ্ট্রের সহানুভূতির কোনো আভাস পাচ্ছেন না নির্যাতিতরা। দাঙ্গায় সর্বস্ব খোয়ানো মানুষজন এখনও তাদের ঘরবাড়িতে ফিরে যেতে সাহস করছেন। অনেকেই স্থায়ী ভাবে দেশ ত্যাগ করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে কারাবাস করছেন। সূত্র: বার্মানিউজ, মালয়েশিয়া হরনিক্যাল।
No comments