টেলিভিশন সংলাপ- শিশুদের জন্য বাংলায় বিনোদন চাই

প্রথম আলো ও দেশ টিভির যৌথ টেলিভিশন সংলাপ অনুষ্ঠান ৪ জুলাই ২০১২ দেশ টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছে। এই সংলাপে সহযোগিতা করেছে বিএসআরএম। ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এর উদ্যোগে ‘শিশুদের জন্য বাংলায় বিনোদন চাই’ নিয়েনির্মিত অনুষ্ঠানটির আলোচকদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত, সুপারিশ ও প্রতিশ্রুতিগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে আজ ছাপা হলো।


মিথিলা ফারজানা: আপনারা জানেন, এটি একটি ইস্যুভিত্তিক সমস্যার সমাধান খোঁজার অনুষ্ঠান। আমাদের আজকের বিষয় ‘শিশুদের জন্য বাংলায় বিনোদন চাই’। কেন এ ধরনের একটি বিষয় আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করলাম—চলুন, দেখে আসি প্রথমেই একটি তথ্যচিত্র।...
ভিডিও সংগ্রহ: কেব্ল টিভির দ্রুত প্রসারে শিশু বিনোদননির্ভরতা তীব্র আঘাত হেনেছে আমাদের ভাষাগত মূল্যবোধে। শিশুদের ভাষার পরিবর্তন ঘটছে, তারা মাতৃভাষা রপ্ত করার আগেই অনায়াসে শিখে ফেলছে হিন্দি ভাষা। তারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে চাইছে না অথবা পারছে না। সমস্যার উৎস হিসেবে সবাই চিহ্নিত করেছেন ডিজনি নামের একটি চ্যানেলকে, যেখানে ডোরেমন নামের একটি জাপানি কার্টুন হিন্দি ভাষায় ডাব করে সারা দিন দেখানো হয়।
মিথিলা ফারজানা: এটা হিন্দি চ্যানেলের শিশু দর্শকদের একটি চিত্র। কিন্তু বাংলাদেশে যে টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে, সেগুলো এ দেশের শিশুদের জন্য কতটা বিনোদন দিতে পারছে, দেখুন একটি পরিসংখ্যান:
প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত শিশুদের অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি।
গবেষণা সংগ্রহ: বিটিভি: ৬৬ মি.। এটিএন বাংলা: ৮৮ মি.। একুশে টিভি: ২২ মি.। এনটিভি: ২২ মি.। দেশ টিভি: ২০৬ মি.। আরটিভি: ৩০ মি.। বাংলাভিশন: ২২ মি.। বৈশাখী: ৭৪ মি.। মাছরাঙা: ১০৫ মি.। চ্যানেল নাইন: ৩৬০ মি.।
মিথিলা ফারজানা: আমাদের স্টুডিওতে উপস্থিত আছে বেশ কয়েকজন শিশু। তাদের কাছে সরাসরি চলে যাচ্ছি। ছোট্ট বন্ধুরা, আমি যে প্রশ্নটা তোমাদের বাংলায় জিজ্ঞেস করব, সেটার উত্তর হিন্দিতে দিতে পারবে?
আবিদ হোসেন (শিশু দর্শক): জি, পারব।
মিথিলা ফারজানা: আচ্ছা, তুমি কোন স্কুলে পড়ো?
আবিদ হোসেন: মে বিসিএসআর হাইস্কুল ম্যায় পড়তাহু।
মিথিলা ফারজানা: ডোরেমন দেখো? ডোরেমন কেন ভালো লাগে, সেটা বলো।
আবিদ হোসেন: কিউ কি উসকে পাস বহোত সারা গেজেট হ্যায়।
মিথিলা ফারজানা: ডা. নায়লা খান, আসলে শিশুরা কীভাবে বিনোদনের এই বার্তাগুলো গ্রহণ করে?
নায়লা খান: শিশুদের স্পিচ ল্যাংগুয়েজ কমিউনিকেশন বিকাশের ব্যাপারটা একদম জন্ম থেকেই ধরতে হবে। আজকাল মোবাইল রিংটোনেও তো হিন্দি গান হয় কিংবা ছোট ছোট বাচ্চাও আজকাল দেখি বিভিন্ন আইপ্যাডে গেমস খেলছে, তারপর বাসায় টিভি চলছে সারা দিন। শিশু তার চারপাশ থেকেই সবকিছু গ্রহণ করে।
মিথিলা ফারজানা: বর্তমানে অন্য কোনো বিকল্প বিনোদন নেই, তাই হিন্দি কার্টুনগুলো অনেক বেশি সময় ধরে শিশুদের সামনে চলে। সে কারণে বাংলার আগে হিন্দি ভাষায় শিশুরা পারদর্শী হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নায়লা খান: না, আমি বলব, কার্টুনটা বাচ্চাকে ভাষা শেখাচ্ছে তা কিন্তু না। আমি বলতে চাচ্ছি, মা-বাবার কিন্তু একটা মূল দায়িত্ব রয়ে গেছে সেই বাচ্চাকে তার মাতৃভাষাটা শোনানো।
মিথিলা ফারজানা: আমরা শিশু-কিশোরদের প্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে গিয়েছিলাম। তাঁর কথা শুনি।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: একটা ছোট বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি কি ভাত খাবে, না চকলেট খাবে? সে অবশ্যই বলবে যে চকলেট খাবে। তার মানে কি আমরা তাকে ব্রেকফাস্টে, লাঞ্চে, ডিনারে চকলেট খেতে দেব? অবশ্যই দেব না। তার শরীরটা গঠন হওয়ার জন্য কিন্তু চকলেট দিয়ে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার দিয়ে হয় না। তাকে ফল খেতে হবে, প্রোটিন খেতে হবে, ভেজিটেবল খেতে হবে, ভিটামিন খেতে হবে। ঠিক একই ব্যাপার, একটা ছোট বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, তুমি কী দেখবে? সে অবশ্যই বলবে কার্টুন দেখবে এবং কার্টুন কোন ভাষায় দেখবে তার কোনো বাছবিচার নেই। ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি যেকোনো ভাষায় দেখতে রাজি আছে। কারণ, সে ছোট বাচ্চা। সে একটা ভাষা যদি নাও জানে, সে চট করে ভাষাটা শিখে যাবে, বুঝতে পারবে।
এখন প্রশ্ন, আমরা বাচ্চাদের সেটা করতে দেব কি না। সে যদি নিজের ভাষাটা না শিখে হিন্দি ভাষা দিয়ে তার জীবনটা শুরু করে, আমি অবশ্যই দুঃখ পাব। আমাদের এত সুন্দর একটা ভাষা, আমাদের লেখাপড়াটা হবে এই ভাষায়, ভাষাটাকে চিনতে হবে, নিজের ভাষাকে প্রকাশ করতে হবে। সেই ভাষা দিয়ে শুরু না করে একটা বিদেশি ভাষা দিয়ে শুরু করছে, সেটা অবশ্যই আমাদের জন্য অপমানজনক। আমরা যাদের শিশু বলি, তাদের মস্তিষ্ক যেন বিকাশ হয়। মস্তিষ্কে অনেক কিছু সেখান থেকে ঢোকে। ওই সময়টায় আমরা যদি তাদের ঠিকমতো গড়ে না তুলি, তাহলে কিন্তু সারা জীবনের জন্য একটা ক্ষতি হয়ে যায়। হিন্দিতে ডাব করে কার্টুন দেখাচ্ছে, কেন দেখাচ্ছে? আমরা কেন দেখাচ্ছি? কিংবা আমরা উল্টো প্রশ্ন করতে পারি, ছোট বাচ্চারা তো কার্টুন দেখবেই, তাহলে আমরা বাংলায় কেন ডাব করি না?
আমাদের দেশে তিন কোটি ছেলেমেয়ে শুধু স্কুলেই পড়ে। এই তিন কোটি ছেলেমেয়ে বড় হবে, এরা দেশের দায়িত্ব নেবে। এদের ঠিক করে গড়ে তুলতে হবে। দায়িত্বটা আমাদের। কাজেই টেলিভিশনকে বাদ দিয়ে ছোট বাচ্চারা বড় হবে না। আমরা যতই বলি যে বই পড়ো, টেলিভিশন কম দেখো কিন্তু বাচ্চারা টেলিভিশন দেখবে। কাজেই টেলিভিশনে তাদের জন্য সুন্দর অনুষ্ঠান করতে হবে। আমাদের সেটা বিশ্বাস করতে হবে। চ্যানেলে যাঁরা আছেন তাঁদের সবাইকে বাচ্চাদের জন্য নিয়ম করে, হিসাব করে অনুষ্ঠান তৈরি করতে হবে। তাতে তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হবে কি না আমি জানি না, স্পনসর পাবেন কি না সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এঁদের এটা করতে হবে, কারণ, এটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।
মিথিলা ফারজানা: শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, আপনি বহুদিন ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, শিশু বিনোদন নিয়ে বহু কাজ করেছেন। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সব সময় কি শিশু বিনোদন অবহেলিত?
মুস্তাফা মনোয়ার: প্রথমে ছিল না, যখন ঢাকা টেলিভিশন ছিল তখন ছিল না। নানাভাবে শিশুদের অনুষ্ঠান হয়েছে। ছোট্ট খবর বলে আমরা একটা খবর পড়েছি বাচ্চাদের জন্য। এ ছাড়া বিভিন্ন কম্পিটিশন, নতুন কুঁড়ি, তারপর করেছিলাম এসো গান শিখি। ধারাবাহিক নাটকও ছিল বাচ্চাদের জন্য।
মিথিলা ফারজানা: গণমাধ্যমে ক্রমেই শিশু বিনোদনটা অবহেলিত হয়ে গেল, এটার কারণ কী বলে মনে করেন?
মুস্তাফা মনোয়ার: প্রধান কারণ হলো, কমার্শিয়াল পাওয়া যায় না ছোটদের অনুষ্ঠানে। কিন্তু কমার্শিয়াল পাওয়া যাক আর না যাক, ছোটদের জন্য অনুষ্ঠান করতেই হবে। তা না হলে তারা হয়তো অনেক পয়সা উপার্জন করতে পারবে কিন্তু এটা জাতিগতভাবে অত্যন্ত দুঃখের কারণ
হয়ে যাবে, আমরা যদি শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে না পারি।
মিথিলা ফারজানা: একটি বিরাট দর্শকের দল, যারা ডোরেমন দেখছে রাত-দিন। সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, আপনি তো একটি টেলিভিশনের কর্ণধার, বিদেশি টিভি চ্যানেলে শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান করলে বাংলাদেশের কোনো টেলিভিশন স্পনসর পাবে না, এই যুক্তি কি আপনি বিশ্বাস করেন?
সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী: একেবারেই বিশ্বাস করি না। মুস্তাফা মনোয়ার স্যাররা যে অনুষ্ঠানগুলো শুরু করেছিলেন, তখন ছেলে-বুড়ো সব দর্শক কিন্তু এই অনুষ্ঠানগুলো দেখত। নতুন কুঁড়ির ফসল আজকে বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। আজকে ডোরেমন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, আসলে ডোরেমন নিয়ে প্রশ্ন নয়। ডোরেমন হতে পারে ক্যারেক্টার, কিন্তু আমি বিস্মিত হচ্ছি এই শিশুরা এত স্পষ্ট হিন্দি বলছে দেখে। আমি ব্রিটিশ আমলে জন্মেছি, পাকিস্তান আমল পার করেছি কিন্তু আমি এত সুন্দর করে উর্দু বলতে পারব না। ভাষা নিয়ে আমাদের এ ধরনের কোনো বিরোধ নেই। বিরোধটা হলো কনটেন্টটা নিয়ে, কী দিচ্ছি তাদের?
মিথিলা ফারজানা: ভাষা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই—এটি নিয়ে গণমাধ্যমে বহুবার বহু ধরনের অভিযোগ উঠেছে যে, একটি ভাষার অনুপ্রবেশ শুধু আসলে ভাষার অনুপ্রবেশ নয়; তার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, সেটি অর্থনীতির অনুপ্রবেশও।
সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী: আমার এই হাতটা খালি থাকলে এখানে কিন্তু আবর্জনা ঢুকে যাবে, এটাই হচ্ছে। আমরা কিন্তু পুরো হাতটাই খালি রাখছি কনটেন্টের অভাবে। অবশ্যই আমাদের একধরনের ব্যর্থতা এখন পর্যন্ত রয়েছে।
মিথিলা ফারজানা: শিশুদের কয়েকজন অভিভাবক আছেন এখানে। আপনাদের ভাই-বোন, স্বজনদের মধ্যে হিন্দি ভাষার প্রভাব কতটা দেখতে পান?
শোভন সাহা: আমার মামাতো বোন আছে দুজন, একজন ক্লাস ফোরে, আরেকজন নার্সারিতে পড়ে। দুজনই হিন্দি বলতে পারে এবং খুব ভালো বোঝে। আমি আসলে এটা বুঝতে পারি না।
মো. এনামুলকবীর: আমি কখনো হিন্দি শিখিনি, তবে অনর্গল বলতে পারি এবং বুঝিও, কারণ আমি প্রতিদিন হিন্দি অনুষ্ঠান দেখি। এর থেকে আমাদের আসলে পরিত্রাণের উপায় কী?
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী আছেন আমাদের সঙ্গে, আজ মন্ত্রী হিসেবে নয়, সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, একজন অভিভাবক হিসেবে, একজন বাবা হিসেবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনি কি অনুভব করেন এর থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন?
আবুল কালাম আজাদ: এটা একটা জাতীয় সমস্যা বলে আমি মনে করি। প্রথম ভূমিকাটা হলো মা-বাবার। শিশুরা জন্মগ্রহণ করেই মা আর বাবার কাছে থাকে। তাদের এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কারণ, শিশু যখন কথা বলা শেখে তখন মা-বাবার কাছে, আত্মীয়স্বজন, যারা কাছে থাকে তাদের কাছ থেকেই শেখে, তাদের কাছেই ঘুমপাড়ানির গান শোনে। মা-বাবা যদি দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করে...তার পরেই আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারপর আসছে সমাজ, তারপর রাষ্ট্র। প্রত্যেকেরই কিন্তু একটা পার্ট আছে।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, ছেলেমেয়েদের এখন খেলার মাঠ নেই, যথেষ্ট সংগঠন নেই। ফলে বাচ্চাদের এখন অনেক বেশি টেলিভিশন বিনোদনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
আবুল কালাম আজাদ: আপনি প্রথমে দেখালেন যে কোন চ্যানেল কত সময় শিশুদের বিনোদনের জন্য দিচ্ছে, এটা দুঃখজনক চিত্র। আমাদের যে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো বেসরকারিভাবে চলছে বা সরকারের আছে মাত্র দুটি—বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড। বিটিভিতে বাচ্চাদের জন্য আরও অনুষ্ঠান করা দরকার, যেটা আমি আলাপ করছিলাম। কিন্তু বিটিভি সরকারি চ্যানেল, তার অনেক সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। তার ভেতর কৃষির কথা বলতে হয়, স্বাস্থ্যের কথা বলতে হয়, শিক্ষার কথা বলতে হয়। তার ভেতর বাচ্চাদেরও অনুষ্ঠান আছে, তা বেশি হওয়া দরকার।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, যখন মাত্র একটি টেলিভিশন ছিল তখন বাচ্চাদের জন্য অনুষ্ঠানের সংখ্যা বা সময় অনেক বেশি বরাদ্দ ছিল। এ ব্যাপারে কি কোনো ধরনের নীতি-নৈতিকতা বা নীতিমালার দরকার নেই?
আবুল কালাম আজাদ: না, সরকারি টেলিভিশনের শুধু একটা বিষয় নয়। প্রথমে হলো জনগণ, সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দিতে হয়। এই তথ্য শুধু সরকার বা জনগণ বা বিভিন্ন যেসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা নয়।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, যে টেলিভিশনগুলো এখন বেসরকারি মালিকানাধীন, তাদের জন্য সেই নীতিমালার প্রয়োজন আছে কি না?
আবুল কালাম আজাদ: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি নীতিমালার কথা প্রথমেই বলা হলো, তখন যারা প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের মালিক, তারা ওই নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা শুরু করল। যার জন্য আমরা এটা করে একটু পিছিয়ে গেছি। ইতিমধ্যে আমরা একটি সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছি। যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, সুশীল সমাজ, এনজিও; আপনারা যাঁরা এই লাইনে কাজ করছেন এবং অন্য যারা সম্পৃক্ত তাদের নিয়ে আমরা এই নীতিমালা নিয়ে কাজ করব।
সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী: একটি বিজ্ঞাপন নীতিমালা ভীষণভাবে প্রয়োজন। একটি ম্যাংগো জুসের বিজ্ঞাপনে শিশু কেঁদে কেঁদে দৌড়াচ্ছে। তার গাছের আম ছিনতাই করে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং বলছে, কেঁদো না, এটা জুস হিসেবে আবার ফেরত আসবে তোমার কাছে। এটা তো খুব বেদনাদায়ক।
নায়লা খান: অ্যাড কিন্তু আস্তে আস্তে ছোট থেকে ছোটতর বাচ্চাদের আকৃষ্ট করছে। যেখানে শিশুদের চ্যানেল বা শিশুদের প্রোগ্রামে কোম্পানিগুলো পৃষ্ঠপোষকতা করবে না, সেখানে আবার মুনাফার জন্য শিশুদের নিয়ে অ্যাড করছে।
মিথিলা ফারজানা: মুস্তাফা মনোয়ার, আজকের ২০১২ সালের যে শিশুটি ডোরেমন, কার্টুন নেটওয়ার্ক, অ্যানিম্যাক্স ধরনের বিভিন্ন চ্যানেলের দর্শক, তার সঙ্গে কিন্তু আমাদের ওই ২৫ বছর আগের অনুষ্ঠানটাই দেওয়া হচ্ছে। আসলে এগুলো ২০১২ সালের শিশুটির জন্য উপযুক্ত কি না।
মুস্তাফা মনোয়ার: শিশুদের জন্য আমাদের প্রাত্যহিক সময় বদলে যাচ্ছে ঠিক, শিশুদের সময় কিন্তু বদলায় না। শিশুদের আজও ঠাকুরমার ঝুলি ভালো লাগে, আজও পুরোনো ছড়া ভালো লাগে।
মিথিলা ফারজানা: কিন্তু সেটির যে পরিবেশনা, তার মধ্যেও কিন্তু নতুনত্ব ও আধুনিকতা আসেনি।
মুস্তাফা মনোয়ার: নতুনত্ব আমরা চাই, শিশুরা কেন? শিশুর মায়েরা যখন নতুন করে সাজে, তারা এতে বিরক্ত হয়। মাকে মায়ের মতো শাড়ি পরে ভালো লাগে।
মিথিলা ফারজানা: সে ক্ষেত্রে আপনি কি মনে করছেন না যে নতুন কিছু করার একটি সৃজনশীলতার অভাব আছে।
মুস্তাফা মনোয়ার: সৃজনশীলতা, সেটাকে আমাদের নতুন করে প্রেজেন্ট করতে হবে। নতুনভাবে প্রেজেন্ট করা মানেই আধুনিকতা নয়। নতুনভাবে, আমাদের সংস্কৃতির ভেতরে থেকেই, আমরা নানাভাবে নতুনত্ব আনতে পারি। এই অনুষ্ঠানগুলো কিন্তু চিন্তাশীল অনুষ্ঠান। চিন্তার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমাদের সাধনা করতে হবে।
মাহমুদুজ্জামান বাবু: মা-বাবা তার সন্তানকে সুস্থ সংস্কৃতির পক্ষে রাখতে চাইছে বলেই এই আকুলতাটা ফুটে উঠেছে আমাদের চারপাশে যে, আমরা আসলে বাংলা ভাষায় শিশুদের জন্য সুস্থ বিনোদন চাই। আমাদের এখানে টেলিভিশন মিডিয়াটা তেমনভাবেই সম্প্রসারিত হয়েছে যে তার মধ্য দিয়ে আমরা আগ্রাসন বোধ করছি। ডোরেমন কার্টুন সিরিয়ালটি এমন বয়সী বাচ্চাদের জন্য করছে, যে বয়সে বাচ্চারা ভাষা, ছন্দ, ধ্বনি—এসব শিখে ফেলে। এখন ভারত সরকার বাচ্চাদের হিন্দি ভাষা শেখাবে, কারণ সেটি তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা।
মিথিলা ফারজানা: এই ডোরেমন কার্টুন ভারত সরকার আরও কয়েকটি ভাষায় ডাব করছে। তামিল, মারাঠি, তেলেগু অর্থাৎ যে অঞ্চলে যে ভাষাটি জরুরি, সেই ভাষায় এই কার্টুনগুলা প্রচারিত হয়।
মাহমুদুজ্জামান বাবু: আমাদের দেশে অ্যানিমেটেড ফিল্মগুলো করা হয় না, কারণ যাঁরা করতে গিয়েছেন তাঁরা কোনো রকম পৃষ্ঠপোষকতা পাননি। এসব বিদেশি কার্টুন আমরা বাংলা ভাষায় ডাব করতে পারি কি না।
আবুল কালাম আজাদ: সরকার ইতিমধ্যেই শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র করার অনুদান দেওয়া শুরু করছে। একটি চলচ্চিত্র নীতিমালা, আরেকটি বিজ্ঞাপন নীতিমালা। কারণ, অনেক চ্যানেল এখন কীভাবে লাভবান হবে, এটা চিন্তা করে এমন এমন অ্যাডভারটাইজমেন্ট তৈরি করছে, সেগুলো আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য ক্ষতিকর, সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
মিথিলা ফারজানা: যে শিশুরা এ ধরনের কার্টুন দেখছে, তার বিকল্প কোথায়? দেশে ১৪-১৫টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, একটি শিশুদের জন্য চ্যানেল থাকতে পারে না?
মুস্তাফা মনোয়ার: নিশ্চয় থাকতে পারে, তবে শিশুদের জন্য চ্যানেল করতে গেলে যে ক্রিয়েটিভিটি লাগে, সেটার জন্য বেশ যত্ন করে শুরু করতে হবে। চ্যানেল হলেই যে সমাধান হলো তা নয়। আমাদের দেশে বাংলা ভাষার প্রতি হীনম্মন্যতা জন্মেছে। এমনকি গ্রামেও শিক্ষিত হয় অন্য ভাষায়, বাংলা ভাষায় নয়। এখন বাচ্চাদের পছন্দের অনুষ্ঠান তৈরি করার যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সেটা যদি চ্যানেলে না থাকে, একটা প্রোগ্রাম তৈরি করে বেচে দিলেই হবে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা লাগবে।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, আমি আপনার কাছ থেকে নীতিমালা জানতে চাইছি।
আবুল কালাম আজাদ: মুস্তাফা মনোয়ার বিটিভিতে ছিলেন, আমরা এটা বসে আলাপ করে দেখব।
মিথিলা ফারজানা: আমি একটু দর্শকদের কাছে যেতে চাই। একটি প্রশ্ন, ডোরেমন বা এ ধরনের কার্টুনগুলো রয়েছে, যেগুলো খুবই জনপ্রিয় শিশুদের মাঝে। সেই কার্টুনগুলো যদি বাংলায় ডাব করা হয়, তাহলে দর্শকপ্রিয়তা পাবে কি না?
জনৈক দর্শক: অবশ্যই বাংলা তারা আগে দেখবে। তারপর হিন্দি দেখবে।
শাহানারা আক্তার: আমাদের মাঝখান থেকে মীনা-রাজু, সিসিমপুর সিরিজগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো শুধু সরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। যেসব বাচ্চা সরকারি চ্যানেলে অভ্যস্ত না, যারা বেসরকারি অন্যান্য টেলিভিশন দেখছে, ওরা কিন্তু এটা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী: আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে একটা দাবি করব। এই যে নীতিমালা হচ্ছে, এর মধ্যে কিছু জিনিস বাধ্যতামূলক করে দেওয়া প্রয়োজন। আমি যখন চ্যানেলের মালিক হয়ে যাচ্ছি, তখন আমার মোটিভটা থাকছে বাণিজ্য। শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করার সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে যে বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এত পারসেন্ট দেখাতে হবে। দ্বিতীয়ত, দক্ষ কারিগর তৈরি করতে হবে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
আবুল কালাম আজাদ: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশকে ভালোবাসা, দেশকে যদি আপনি ভালোবাসেন, দেশের প্রতি যদি দায়বদ্ধতা থাকে, তাহলে এই সমস্যাগুলো কমে যাবে। আমি বিদেশ থেকে কোনো পণ্য কিনি না। কারণ, আমার দেশে সব পণ্য পাওয়া যায়। আপনি যদি দেশকে ভালোবাসেন, তাহলে ওই ধরনের চিন্তা আসবে না।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, খুব ভালো লাগছে, আপনি অন্য কোনো দেশের জিনিস কেনেন না। সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীও দেশপ্রেমিক হিসেবে যে দাবিটি আপনার কাছে করেছেন যে নির্দিষ্ট একটি সময় বা পারসেন্টেজ দেওয়া থাকবে, যেহেতু একটি নীতিমালার কাজ চলছে, সেই নীতিমালায় দাবিটি কতটা গুরুত্ব পাবে?
আবুল কালাম আজাদ: আমি তো প্রথমেই বললাম যে দেশকে যারা ভালোবাসবে, আমার কাছে তো আমার দেশ বড়, তারপর জনগণ, তারপর সরকার ও আমার দল।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, আপনি কি দাবিটি যৌক্তিক বলে মনে করেন?
আবুল কালাম আজাদ: অবশ্যই যৌক্তিক বলে মনে করি।
মাহমুদুজ্জামান বাবু: আমাদের এখানে যে শিশু-কিশোরেরা বসে আছে, এদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন ভারত কিংবা অন্য কোনো দলকে হারায় অথবা হেরে যায়, তারা বিজয়ে আনন্দিত হয় এবং পরাজয়ে ব্যথিত হয়। এরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের পতাকা কাঁধে নেয়। এদের দেশপ্রেমও কিন্তু কম না।
আবুল কালাম আজাদ: আমি যখন বিভিন্ন জায়গায় ছেলেমেয়েদের বলি, বাংলায় একটা কবিতা বলো, একটা ছড়া বলো, তারা বলতে পারে না।
মাহমুদুজ্জামান বাবু: মাননীয় মন্ত্রী আমাদের অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আমরা আশা করব, এগুলো বাস্তবায়িত হবে। এই দর্শকসারি থেকে একটি দাবি আমি করতে চাই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষায় কার্টুন নির্মাণ করে সব বেসরকারি টেলিভিশনে দিয়ে দেওয়া। তারা যেন প্রাইম টাইমে বাচ্চাদের জন্য এগুলো প্রচার করে। বাচ্চারা এগুলো দেখার মধ্য দিয়ে যেন দেশপ্রেমের কাহিনি শিখতে পারে, দেশকে ভালোবাসার জায়গা বুঝতে পারে, মানুষকে ভালোবাসার জায়গা বুঝতে পারে। রাষ্ট্রের উদ্যোগ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
মুস্তাফা মনোয়ার: আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে একটা কথা ডেভেলপ করেছি বহুদিন ধরে, সেটা হলো পাপেট। পাপেট অ্যানিমেশন একটু সস্তা হয়। আমেরিকার মতো দেশে পাপেট দিয়ে দারুণভাবে শিক্ষিত করতে পেরেছে শিশুদের। সে জন্য আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের বেশ সাহায্যের প্রয়োজন হবে। পাপেট যদি ওরা সিডি আকারে তৈরি করে, তাহলে বহু জায়গায় দেখাতে পারবে।
মিথিলা ফারজানা: আমি একটু দর্শকদের কাছ থেকে প্রথমেই জেনে নিতে চাই যে আপনারা কী মনে করেন? কী হতে পারে এর সমাধান?
লিমন ইসলাম: মাননীয় মন্ত্রী, আমাদের চাওয়া যে সময়ে শিশুরা টেলিভিশন দেখে, ঠিক সেই সময়টাতে, যাতে ভালো কিছু অনুষ্ঠান ওই সময়ের মধ্যেই দেখায়, এটা যেন প্রতিটি চ্যানেলে বাধ্যতামূলক এবং নিশ্চিত করেন শিশুদের জন্য।
আসিক আহমেদ: আমরা জানি, বর্তমান সরকার আরও কিছু নতুন টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন দিতে যাচ্ছে। আমরা কি আশা করতে পারি না সেসব চ্যানেল থেকে এমন একটি চ্যানেল খুঁজে বের করা হোক, যেখানে শুধু শিশুতোষ অনুষ্ঠান থাকবে।
রিফাত হোসেন: ডিসকভারি একটি চ্যানেল আছে, যেখানে বিদেশি অনুষ্ঠান বঙ্গানুবাদ করে প্রচারিত হচ্ছে, যেটা আমরা পছন্দ করি দেখতে। আমরা মনে করি, বিদেশি চ্যানেলগুলো যদি বাংলায় ডাব করা হয়, তাহলে মনে হয় খুব জনপ্রিয়তা পাবে।
মিথিলা ফারজানা: আমি সালাউদ্দিন জাকীর কাছে জানতে চাই, বাংলায় ডাব করা সম্ভব কি না?
সালাউদ্দিন জাকী: সম্ভব। আমাদের বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত।
আবুল কালাম আজাদ: আমরা যখন চ্যানেল দিই, তারা ব্যক্তিমালিকানা দায়িত্ব নিয়ে করে। আমরা সুশীল সমাজকে অনুরোধ করব, তারা যাতে শিশুদের জন্য কিছু সময় বের করে অনুষ্ঠান করে। আমরা তো একদম বন্ধ করতে পারব না। তবে নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের জিনিস যাতে করা হয় এবং এমন অ্যাডভারটাইজমেন্ট করা উচিত নয়, যেগুলোতে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, সেগুলো আমরা অবশ্যই দেখব।
মিথিলা ফারজানা: হিস্ট্রি চ্যানেল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ডিসকভারি—এই চ্যানেলগুলো এখন বাংলায় ডাব দেখানো হচ্ছে পুরোটা সময় ধরে। সেভাবেই পুরো চ্যানেলটাকে বাংলায় করা যায় কি না?
মুস্তাফা মনোয়ার: বাংলা করা যেতে পারে। টেকনিক্যালি কোনো অসুবিধা নেই। শুধু ভয়েজ তৈরি করতে হবে আমাদের। সেটার ট্রেনিং দরকার।
মিথিলা ফারজানা: মাননীয় মন্ত্রী, আপনি কি মনে করেন যে কী হতে পারে এর সমাধান?
আবুল কালাম আজাদ: সুনাগরিক দরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুই তো সুনাগরিক হবে। তাদের একদিকে স্কুল, অন্যদিকে খেলাধুলা, পড়াশোনা, পরিশ্রম করা ও সংস্কৃতি—সবকিছু। সে জন্য আমাদের প্রতিটা কর্মসূচি এমনভাবে করতে হবে যাতে শিশুরা ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য—সব বিষয় জানতে পারে শুদ্ধভাবে।
মিথিলা ফারজানা: মুস্তাফা মনোয়ার কী হতে পারে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়?
মুস্তাফা মনোয়ার: এখন আমাদের বাচ্চাদের আমাদের দেশের গল্প নিয়ে, ভাবনা নিয়ে, দেশের গান নিয়ে আমি অনেক এক্সপেরিমেন্ট করেছি। ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ এই গান নিয়ে আমি পাপেট করেছিলাম, আশ্চর্যভাবে তারা অনুপ্রাণিত হয়। কেঁদে ফেলে বাঁচাও বাঁচাও, বককে বাঁচাও বক ফাঁদে পড়েছে। সেভাবে যদি প্রেজেন্ট করা হয় আধুনিকভাবে। কিন্তু আধুনিক মানে এই নয় যে যান্ত্রিক সভ্যতার মধ্যে দৌড়ানো, সেটা না। আধুনিক হলো আমাদের মুক্তচিন্তার ব্যাপারটি। সৃজনশীলভাবে, মুক্ত চিন্তায় এবং কিছুতেই গোঁড়ামি নেই। বাচ্চারা যেন উদার মনের হয়, সকল জাতির হয়, সকল দেশের হয়, এ রকম একটা শিক্ষার ভাব নিতে হবে।
নায়লা খান: আমি শিশু হাসপাতালে চাকরি করি, গরিব শিশুদের চিনি। ওরা কিন্তু প্রত্যেকেই বিটিভি দেখে এবং প্রত্যেকেই সিসিমপুর জানে, মীনাকে জানে। খুব মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি শিশু দেখে। কাজেই শিশুদের জন্য ১০০% নিবেদিত একটি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা এ অনুষ্ঠান থেকেই আমাদের দাবি ওঠা উচিত।
মিথিলা ফারজানা: দর্শকমণ্ডলী, এই দাবি আমাদের প্রত্যেকের ঘর থেকে শুরু হয়েছে। আজকে আমরা যদি সবাই মিলে দাবি করি যে আমাদের শিশুরা আমার ভাষায় বিনোদিত হবে, তার বিনোদনের মাধ্যম হবে বাংলা ভাষা। তবেই বড় হবে, আরও পরিপূর্ণ হবে বদলে যাও বদলে দাও মিছিল।
মুস্তাফা মনোয়ার: আজকে যে বলতে হচ্ছে এই কথাটা, সেটার জন্য আমি ভীষণ দুঃখবোধ করছি যে, বাংলা ভাষায় হতে হবে এটা বলে দিতে হচ্ছে দর্শকদের, বাঙালি দর্শকদের। এর চেয়ে দুঃখের কথা আর নেই।
মিথিলা ফারজানা: দর্শকমণ্ডলী, শিশুদের জন্য এই দাবি নিয়ে আমাদের যেন এমন অনুষ্ঠান আর করতে না হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও দেশের সব স্যাটেলাইট চ্যানেলের কাছে আমাদের আহ্বান, তারা যেন শিশুদের বিনোদনে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হয়। সবাইকে ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন
আবুল কালাম আজাদ
মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়
মুস্তাফা মনোয়ার
পাপেট শিল্পী ও শিশু বিনোদন বিশেষজ্ঞ
সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী
শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতা
নায়লা খান
শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ
মাহমুদুজ্জামান বাবু
কণ্ঠশিল্পী ও সমাজকর্মী
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
লেখক ও অধ্যাপক, শাবিপ্রবি
(ভিডিও সাক্ষাৎকার)
সঞ্চালক
মিথিলা ফারজানা
আয়োজনে প্রথম আলো

No comments

Powered by Blogger.