প্রণব মুখার্জির সঙ্গে এরশাদের বৈঠক- বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় ভারত

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় ভারত। সেই সঙ্গে ভারত আশা করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী দিনে আরও শক্তিশালী হবে। গতকাল শুক্রবার ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।


দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ৩০ মিনিটের এই আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা কথা বলেন।
এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’ তিনি বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চান।
এরশাদ গতকাল সাংবাদিকদের জানান, টিপাইমুখ বাঁধ ও চুয়াত্তরের সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নের বিষয় নিয়ে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতিকে এরশাদ জানান, বাংলাদেশ তিস্তা থেকে পানি পাচ্ছে। তবে চুক্তি সই হলে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। এতে করে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের আস্থা বাড়বে।
ভারতে পাঁচ দিনের সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও সন্তোষজনক আখ্যায়িত করেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ সফরের সময় তাঁর প্রতি আন্তরিকতা ও আতিথেয়তার জন্য ভারতের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
এরশাদ ভারত সফরে যান ১৩ আগস্ট। এ সফরের সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন ও পররাষ্ট্রসচিব রঞ্জন মাথাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এরশাদ ভারতে পৌঁছানোর পর সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দীন দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও বহুদলীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে চলমান সম্পর্কের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ভারত সফর করছেন।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, এরশাদের ভারত সফর রাষ্ট্রীয় সফরের বাইরেও রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এরশাদের ওপর ভারতের বিশেষ প্রভাব রয়েছে।
নিরাপত্তা ও কৌশলগত সহযোগিতার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে ভারত। আর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বড় সহযোগিতা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ জন্য সব সময় এ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করছে ভারত। নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এ সহযোগিতা ভারতের জন্য অপরিহার্য।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, বিএনপির বিগত শাসনামলের পাঁচ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে ভারতের নীতিনির্ধারকদের মনে বিশেষ উদ্বেগ রয়েছে। তা ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান হতে পারে—এমন আশঙ্কাও তাঁদের রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের আগামী নির্বাচনে এরশাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন প্রেক্ষাপটে এরশাদের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তথা ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা অব্যাহত রাখতেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
অবশ্য একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এরশাদের পর অদূর ভবিষ্যতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
তবে এরশাদের এ সফরকে ভারত সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে আলোচনা শোনা যাচ্ছে না।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোটের শরিক হলেও তাঁর একটি দল আছে। তাঁর দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনি ভারত সফর করতেই পারেন। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

No comments

Powered by Blogger.