মহাসড়কে দুর্ঘটনা, তীব্র যানজট
ঈদে বাড়িমুখী যাত্রীদের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহনের চাপ বেড়েছে অনেক। সেই সঙ্গে ওই দুটি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি ব্যস্ত মহাসড়কে বিকল হয়ে পড়ছে বিভিন্ন যান। এ কারণে এই দুই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল।
যানজটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় বেশি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে চট্টগ্রামগামী একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আড়াআড়ি হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এতে মহাসড়কের চান্দিনার কুটুম্বপুর থেকে মেঘনা সেতু এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশ রেকার এনে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই লরিটি অন্যত্র সরায়। দীর্ঘক্ষণ চলাচল বন্ধ থাকায় মহাসড়কের দুই পাশে বাড়ে যানবাহনের চাপ। গতকাল দুপুরের দিকে যানজট কমে আসে।
কিন্তু মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি এলাকায় গতকাল বেলা পৌনে দুইটার দিকে দুটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চার যাত্রী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরেক যাত্রীর। ওই দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের দুই পাশে আবার যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশ রেকার এনে আধা ঘণ্টার মধ্যে ওই দুটি বাস মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের চালক মো. আবু সিদ্দিক বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা হন। ভোর চারটার দিকে কুমিল্লার চান্দিনায় এসে যানজটে আটকা পড়েন। মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে দাউদকান্দি টোল প্লাজায় পৌঁছান পাঁচ ঘণ্টা পর সকাল নয়টায়। অথচ ভোর পাঁচটার দিকে তাঁর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের বাসের যাত্রী ফয়সাল আহমেদ ও সুমন আহমেদ বলেন, ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ভোর চারটার দিকে মেঘনা সেতু পার হওয়ার পর যানজটে আটকা পড়েন। এরপর দাউদকান্দির গৌরীপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে তাঁদের সময় লাগে চার ঘণ্টা। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়ে শিশুদের প্রচণ্ড কষ্ট হয়। অনেক যাত্রী সেহরিও খেতে পারেননি।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাস্তার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং চালকদের সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
ঢাকা-টাঙ্গাইল: মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড়, কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার চক্রবর্তী পর্যন্ত এবং টাঙ্গাইলের দিকে মির্জাপুর পর্যন্ত গতকাল দিনভর যানজট ছিল। তবে সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে তা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত এজি (তানিয়া) টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকেরা বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত নয়টার দিকে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নিলেও যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় যানজট কমেনি। রাত দুইটার দিকে মহাসড়কের দেওহাটা এলাকায় বালুবোঝাই একটি ট্রাক বিকল হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে যানজট যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। রাত তিনটার দিকে ট্রাকটি সরিয়ে নিলে যানবাহন চলতে শুরু করে। তার পরও মহাসড়কের কালিয়াকৈর থেকে পাকুল্যা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছিল।
এ ছাড়া গতকাল সকাল সোয়া সাতটার দিকে মির্জাপুরের সোহাগপুরে বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যাত্রী নিহত হন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, যানজট নিরসনে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ৯৫০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা ও টাঙ্গাইলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গাজীপুরের ট্রাফিক-ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট নেই।
যানজটের কারণে পরিবহন-সংকট: যানজটের কারণে গতকাল সকাল থেকে পরিবহন-সংকট দেখা দেয়। সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাসের জন্য শত শত যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এমনই একজন কালিয়াকৈরের মৌচাক তেলিচালা এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক সাইদুর রহমান। রংপুর যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাইদুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। অনেকে ট্রাকে উঠে যাচ্ছে। স্ত্রী, বাচ্চা নিয়ে ট্রাকে যেতে পারব না, তাই বাসের অপেক্ষায় আছি।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন মাসুদ রানা, গাজীপুর; সোহেল মোহসীন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল); আবদুর রহমান, দাউদকান্দি (কুমিল্লা) ও মহিউদ্দিন আহমেদ, (গজারিয়া) মুন্সিগঞ্জ]
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে চট্টগ্রামগামী একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আড়াআড়ি হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এতে মহাসড়কের চান্দিনার কুটুম্বপুর থেকে মেঘনা সেতু এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশ রেকার এনে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই লরিটি অন্যত্র সরায়। দীর্ঘক্ষণ চলাচল বন্ধ থাকায় মহাসড়কের দুই পাশে বাড়ে যানবাহনের চাপ। গতকাল দুপুরের দিকে যানজট কমে আসে।
কিন্তু মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি এলাকায় গতকাল বেলা পৌনে দুইটার দিকে দুটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চার যাত্রী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরেক যাত্রীর। ওই দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের দুই পাশে আবার যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশ রেকার এনে আধা ঘণ্টার মধ্যে ওই দুটি বাস মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের চালক মো. আবু সিদ্দিক বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা হন। ভোর চারটার দিকে কুমিল্লার চান্দিনায় এসে যানজটে আটকা পড়েন। মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে দাউদকান্দি টোল প্লাজায় পৌঁছান পাঁচ ঘণ্টা পর সকাল নয়টায়। অথচ ভোর পাঁচটার দিকে তাঁর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের বাসের যাত্রী ফয়সাল আহমেদ ও সুমন আহমেদ বলেন, ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ভোর চারটার দিকে মেঘনা সেতু পার হওয়ার পর যানজটে আটকা পড়েন। এরপর দাউদকান্দির গৌরীপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে তাঁদের সময় লাগে চার ঘণ্টা। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়ে শিশুদের প্রচণ্ড কষ্ট হয়। অনেক যাত্রী সেহরিও খেতে পারেননি।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাস্তার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং চালকদের সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
ঢাকা-টাঙ্গাইল: মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড়, কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার চক্রবর্তী পর্যন্ত এবং টাঙ্গাইলের দিকে মির্জাপুর পর্যন্ত গতকাল দিনভর যানজট ছিল। তবে সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে তা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত এজি (তানিয়া) টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকেরা বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত নয়টার দিকে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নিলেও যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় যানজট কমেনি। রাত দুইটার দিকে মহাসড়কের দেওহাটা এলাকায় বালুবোঝাই একটি ট্রাক বিকল হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে যানজট যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। রাত তিনটার দিকে ট্রাকটি সরিয়ে নিলে যানবাহন চলতে শুরু করে। তার পরও মহাসড়কের কালিয়াকৈর থেকে পাকুল্যা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছিল।
এ ছাড়া গতকাল সকাল সোয়া সাতটার দিকে মির্জাপুরের সোহাগপুরে বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যাত্রী নিহত হন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, যানজট নিরসনে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ৯৫০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা ও টাঙ্গাইলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গাজীপুরের ট্রাফিক-ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট নেই।
যানজটের কারণে পরিবহন-সংকট: যানজটের কারণে গতকাল সকাল থেকে পরিবহন-সংকট দেখা দেয়। সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাসের জন্য শত শত যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এমনই একজন কালিয়াকৈরের মৌচাক তেলিচালা এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক সাইদুর রহমান। রংপুর যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাইদুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। অনেকে ট্রাকে উঠে যাচ্ছে। স্ত্রী, বাচ্চা নিয়ে ট্রাকে যেতে পারব না, তাই বাসের অপেক্ষায় আছি।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন মাসুদ রানা, গাজীপুর; সোহেল মোহসীন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল); আবদুর রহমান, দাউদকান্দি (কুমিল্লা) ও মহিউদ্দিন আহমেদ, (গজারিয়া) মুন্সিগঞ্জ]
No comments