সবার জন্য স্বাস্থ্যকর ঈদ by ডা. এ আর এম সাইফুদ্দীন একরাম
আমরা প্রতিদিন যা খাই তা আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে উৎসাহী করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক চর্চা এবং জৈবিক প্রয়োজন ও আধ্যাত্মিক চাহিদার মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
অথচ বাস্তব জীবনে তার খুব একটা প্রতিফলন দেখা যায় না।
২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের অভিবাসীদের মধ্যে পরিচালিত এক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা যায়, এশিয়ার মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে মুসলমানদের জীবনাচরণ এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে অন্য জনগোষ্ঠীর ২৪ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে, সেখানে ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি ধূমপায়ী। দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মধ্যে এর প্রকোপ অন্যদের চেয়ে পাঁচ গুণের মতো বেশি এবং ভারতীয়দের মধ্যে তিন গুণ বেশি। একজন মানুষের দৈনিক যতটুকু ফল ও সবজি খাওয়া উচিত, একজন বাংলাদেশি তার মাত্র ২৮ শতাংশ খেয়ে থাকে। আর একজন পাকিস্তানি খায় ৩৩ শতাংশ। কেবল দারিদ্র্যই কি আমাদের অপুষ্টি ও অসুখ-বিসুখের কারণ? না, তা নয়, পুষ্টি সম্পর্কে যথেষ্ট এবং যথাযথ জ্ঞানের অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।
প্রতিবছর আমাদের জীবনে রোজা এবং ঈদ আসে। আমাদের জীবনে রোজা এবং ঈদের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। এ সময়গুলোতে আমাদের খাবার অভ্যাসেও বেশ পরিবর্তন আসে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব দেখেও আমরা তা বুঝতে পারি। কিন্তু রোজা এবং ঈদের সময়ের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আমরা খুব কমই চিন্তা করি। প্রচলিত অভ্যাসবশত আমরা রোজার সেহরি ও ইফতারিতে যেসব খাবার গ্রহণ করি, তা আসলে কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত- সেই বিবেচনা খুব একটা করি না। কিংবা ঈদের দিন আমরা তেল-চর্বি কিংবা মিষ্টিসমৃদ্ধ যেসব খাদ্য গ্রহণ করি তা-ই বা কতটুকু স্বাস্থ্যকর?
আসলে দেহ ও মন উভয়ের ওপর রোজার প্রভাব রয়েছে। রোজার মাধ্যমে আমরা আত্মসংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়াতে পারি। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন এবং ক্ষতিকর অভ্যাস পরিত্যাগেরও এটা একটা সুযোগ। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আসে ঈদ। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এক মাস রোজা রাখার পর নানা রকম সুস্বাদু খাবার এবং নানাবিধ আচার-উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্যাপন করে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করে না। কাজেই সচেতন মুসলিমদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
প্রচলিত ঈদের খাবার সুষম ও পুষ্টিকর হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উৎসবের আমেজে অনেক সময় আমরা ভুলে যাই এবং বেশি খেয়ে ফেলি। এমন সব খাবার খাই, যার মধ্যে অতিরিক্ত চর্বি, লবণ ইত্যাদি থাকে। কিন্তু একটু সচেতন হলেই আমরা এগুলো এড়াতে পারি। সুতরাং ঈদের আনন্দে স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য আমাদের অনেক সাধারণ বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
ঈদের সময় আমরা সেমাই, জরদা, হালুয়া ও অন্যান্য মিষ্টি খাবার খেতে পছন্দ করি। এসব খাবারে চিনি-গুড় ও দুধ-ঘি যত কম ব্যবহার করা যায়, তত ভালো। গুড়-চিনির পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের টুকরো যেমন- খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। কলার পিঠা, তালের পিঠা, কাউনের ক্ষীর, চালকুমড়ার হালুয়া, পেঁপের হালুয়া, গাজরের হালুয়া, লাউ-দুধ, আনারসের জরদা, কমলার জরদা, সাদা দই ইত্যাদি বিভিন্ন বিকল্পের কথা ভাবা যেতে পারে।
ঈদের খাবারের মেন্যুতে অবশ্যই গরু কিংবা খাসির মাংস দিয়ে রেজালা, কোরমা ইত্যাদি রান্না করা হয়। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস পরিহার করা উচিত। মুরগির মাংসে চর্বি কম থাকে। কাজেই মুরগির মাংসকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। মোরগের কোরমা, রেজালা, চিকেন টিক্কা, মোরগের রোস্ট, হাঁসের কালিয়া, হাঁসের মালাইকারি ইত্যাদি অনেক স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।
মাংস ছাড়া মাছের রকমারি খাবার পরিবেশন করা যেতে পারে। যেমন- মাছের কোরমা, মাছের দোপেঁয়াজা, পাঙ্গাশ মাছের কারি, চিতল বা ফলি মাছের কোফতা, ইলিশের পেঁয়াজি, ইলিশ কাবাব, আনারস ইলিশ, নারিকেলি ইলিশ, শর্ষে ইলিশ, শর্ষে তেলাপিয়া, রুপচাঁদা দোপেঁয়াজা, রুই মাছের মুড়িঘণ্ট, চিংড়ির মালাইকারি, কৈ মাছের পাতুরিসহ নানা পদের মাছের ব্যঞ্জন পরিবেশন করা যায়।
খাবারের মেন্যুতে সবজি একটি অপরিহার্য অংশ। ঈদের খাবারেও তাই সবজি থাকা চাই। এ জন্য থাকতে পারে বিভিন্ন ধরনের তাজা সবজি ও ফলের সালাদ। যেমন- দই দিয়ে শসার সালাদ, টমেটো ও বাঁধাকপির সালাদ, পাকা ফলের সালাদ ইত্যাদি। এ ছাড়া পরিবেশন করা যেতে পারে সিদ্ধ ঢেঁড়স, বাঁধাকপি কিংবা ফুলকপি, শাকপাতার ভর্তা, পটোল কিংবা কাঁকরোলের ভর্তা, পেঁপে ভাজি, মুলা ভাজি, ভাজা ফুলকপি, ভুনা শালগম, ভুনা আলু-বেগুন, লাউ শুক্ত, ঝিঙে ডাল, কপি, আলু-মটরশুঁটির ডালনা ইত্যাদি।
শাকসবজি রান্নার আগে ধুয়ে কেটে নিতে হয়। খোসা ছাড়ানোর পর বড় টুকরা করে কেটে দেরি না করে রান্না করা ভালো। হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে অল্প পানিতে সিদ্ধ করতে হয়। শাকসবজি অতিরিক্ত তেলে না ভেজে সিদ্ধ করা কিংবা মাইক্রোওয়েভে রান্না করা ভালো। এর ফলে শাকসবজির ভিটামিন বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ঈদের খাবারের তালিকায় তেলে ভাজা খাদ্য যেমন- শিঙ্গাড়া, সমুচা, পাকোরা, ডালপুরি ইত্যাদি কম থাকা ভালো। রান্নার জন্য ঘি কিংবা মাখনের চেয়ে সয়াবিন তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর।
ঈদে মিষ্টি, তেল ও চর্বিসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অনেকেই একটু ঝাল-টক খেতে পছন্দ করেন। আর সেটা রুচিকর এবং পরিপাকের জন্যও সহায়ক। এ জন্য যোগ করা যেতে পারে পুদিনার চাটনি, জলপাইয়ের আচার, আমের চাটনি, আমড়া, তেঁতুল, করমচা কিংবা অন্য কোনো মৌসুমি ফলের আচার।
যাঁরা খাবারের সঙ্গে পানীয় রাখতে আগ্রহী, তাঁরা কোক-ফানটার বদলে বিভিন্ন ধরনের শরবতের কথা চিন্তা করতে পারেন। যেমন- কাঁচা আমের শরবত, বেলের শরবত, বাঙ্গি কিংবা তরমুজের শরবত, তেঁতুলের শরবত, লাচ্ছি, বোরহানি, ফালুদা, এলাচ চা, মধু চা ইত্যাদি।
দীর্ঘ এক মাস রোজার পর ঈদের দিন অতিভোজন না করাই উত্তম। লঘুপাক খাবার অল্প পরিমাণ বারবার খাওয়া শরীরের জন্য সহনীয়।
সবশেষে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, রোজা এবং ঈদ আমাদের জীবনে প্রতিবছর বয়ে আনে সংযম ও আত্মশুদ্ধি শিক্ষার পাশাপাশি আনন্দ ও খুশির বার্তা। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ঘরে রোজার শিক্ষা এবং ঈদের আনন্দ-খুশি দিয়ে ভরে উঠুক- এই কামনার পাশাপাশি আমাদের আরেকটি চাওয়া এই যে রোজা এবং ঈদের খাবার যেন হয় পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর। এর জন্য খুব একটা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন স্বাস্থ্যসচেতনতার। সবার ঈদ হয়ে উঠুক আনন্দ ও খুশিতে ভরপুর আর খাবার হোক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর।
লেখক : ভিজিটিং ফেলো, রয়াল মেলবোর্ন হাসপাতাল, অস্ট্রেলিয়া।
armsekram@yahoo.com
২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের অভিবাসীদের মধ্যে পরিচালিত এক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা যায়, এশিয়ার মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে মুসলমানদের জীবনাচরণ এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে অন্য জনগোষ্ঠীর ২৪ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে, সেখানে ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি ধূমপায়ী। দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মধ্যে এর প্রকোপ অন্যদের চেয়ে পাঁচ গুণের মতো বেশি এবং ভারতীয়দের মধ্যে তিন গুণ বেশি। একজন মানুষের দৈনিক যতটুকু ফল ও সবজি খাওয়া উচিত, একজন বাংলাদেশি তার মাত্র ২৮ শতাংশ খেয়ে থাকে। আর একজন পাকিস্তানি খায় ৩৩ শতাংশ। কেবল দারিদ্র্যই কি আমাদের অপুষ্টি ও অসুখ-বিসুখের কারণ? না, তা নয়, পুষ্টি সম্পর্কে যথেষ্ট এবং যথাযথ জ্ঞানের অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।
প্রতিবছর আমাদের জীবনে রোজা এবং ঈদ আসে। আমাদের জীবনে রোজা এবং ঈদের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। এ সময়গুলোতে আমাদের খাবার অভ্যাসেও বেশ পরিবর্তন আসে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব দেখেও আমরা তা বুঝতে পারি। কিন্তু রোজা এবং ঈদের সময়ের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আমরা খুব কমই চিন্তা করি। প্রচলিত অভ্যাসবশত আমরা রোজার সেহরি ও ইফতারিতে যেসব খাবার গ্রহণ করি, তা আসলে কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত- সেই বিবেচনা খুব একটা করি না। কিংবা ঈদের দিন আমরা তেল-চর্বি কিংবা মিষ্টিসমৃদ্ধ যেসব খাদ্য গ্রহণ করি তা-ই বা কতটুকু স্বাস্থ্যকর?
আসলে দেহ ও মন উভয়ের ওপর রোজার প্রভাব রয়েছে। রোজার মাধ্যমে আমরা আত্মসংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়াতে পারি। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন এবং ক্ষতিকর অভ্যাস পরিত্যাগেরও এটা একটা সুযোগ। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আসে ঈদ। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এক মাস রোজা রাখার পর নানা রকম সুস্বাদু খাবার এবং নানাবিধ আচার-উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্যাপন করে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করে না। কাজেই সচেতন মুসলিমদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
প্রচলিত ঈদের খাবার সুষম ও পুষ্টিকর হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উৎসবের আমেজে অনেক সময় আমরা ভুলে যাই এবং বেশি খেয়ে ফেলি। এমন সব খাবার খাই, যার মধ্যে অতিরিক্ত চর্বি, লবণ ইত্যাদি থাকে। কিন্তু একটু সচেতন হলেই আমরা এগুলো এড়াতে পারি। সুতরাং ঈদের আনন্দে স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য আমাদের অনেক সাধারণ বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
ঈদের সময় আমরা সেমাই, জরদা, হালুয়া ও অন্যান্য মিষ্টি খাবার খেতে পছন্দ করি। এসব খাবারে চিনি-গুড় ও দুধ-ঘি যত কম ব্যবহার করা যায়, তত ভালো। গুড়-চিনির পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের টুকরো যেমন- খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। কলার পিঠা, তালের পিঠা, কাউনের ক্ষীর, চালকুমড়ার হালুয়া, পেঁপের হালুয়া, গাজরের হালুয়া, লাউ-দুধ, আনারসের জরদা, কমলার জরদা, সাদা দই ইত্যাদি বিভিন্ন বিকল্পের কথা ভাবা যেতে পারে।
ঈদের খাবারের মেন্যুতে অবশ্যই গরু কিংবা খাসির মাংস দিয়ে রেজালা, কোরমা ইত্যাদি রান্না করা হয়। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস পরিহার করা উচিত। মুরগির মাংসে চর্বি কম থাকে। কাজেই মুরগির মাংসকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। মোরগের কোরমা, রেজালা, চিকেন টিক্কা, মোরগের রোস্ট, হাঁসের কালিয়া, হাঁসের মালাইকারি ইত্যাদি অনেক স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।
মাংস ছাড়া মাছের রকমারি খাবার পরিবেশন করা যেতে পারে। যেমন- মাছের কোরমা, মাছের দোপেঁয়াজা, পাঙ্গাশ মাছের কারি, চিতল বা ফলি মাছের কোফতা, ইলিশের পেঁয়াজি, ইলিশ কাবাব, আনারস ইলিশ, নারিকেলি ইলিশ, শর্ষে ইলিশ, শর্ষে তেলাপিয়া, রুপচাঁদা দোপেঁয়াজা, রুই মাছের মুড়িঘণ্ট, চিংড়ির মালাইকারি, কৈ মাছের পাতুরিসহ নানা পদের মাছের ব্যঞ্জন পরিবেশন করা যায়।
খাবারের মেন্যুতে সবজি একটি অপরিহার্য অংশ। ঈদের খাবারেও তাই সবজি থাকা চাই। এ জন্য থাকতে পারে বিভিন্ন ধরনের তাজা সবজি ও ফলের সালাদ। যেমন- দই দিয়ে শসার সালাদ, টমেটো ও বাঁধাকপির সালাদ, পাকা ফলের সালাদ ইত্যাদি। এ ছাড়া পরিবেশন করা যেতে পারে সিদ্ধ ঢেঁড়স, বাঁধাকপি কিংবা ফুলকপি, শাকপাতার ভর্তা, পটোল কিংবা কাঁকরোলের ভর্তা, পেঁপে ভাজি, মুলা ভাজি, ভাজা ফুলকপি, ভুনা শালগম, ভুনা আলু-বেগুন, লাউ শুক্ত, ঝিঙে ডাল, কপি, আলু-মটরশুঁটির ডালনা ইত্যাদি।
শাকসবজি রান্নার আগে ধুয়ে কেটে নিতে হয়। খোসা ছাড়ানোর পর বড় টুকরা করে কেটে দেরি না করে রান্না করা ভালো। হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে অল্প পানিতে সিদ্ধ করতে হয়। শাকসবজি অতিরিক্ত তেলে না ভেজে সিদ্ধ করা কিংবা মাইক্রোওয়েভে রান্না করা ভালো। এর ফলে শাকসবজির ভিটামিন বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ঈদের খাবারের তালিকায় তেলে ভাজা খাদ্য যেমন- শিঙ্গাড়া, সমুচা, পাকোরা, ডালপুরি ইত্যাদি কম থাকা ভালো। রান্নার জন্য ঘি কিংবা মাখনের চেয়ে সয়াবিন তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর।
ঈদে মিষ্টি, তেল ও চর্বিসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অনেকেই একটু ঝাল-টক খেতে পছন্দ করেন। আর সেটা রুচিকর এবং পরিপাকের জন্যও সহায়ক। এ জন্য যোগ করা যেতে পারে পুদিনার চাটনি, জলপাইয়ের আচার, আমের চাটনি, আমড়া, তেঁতুল, করমচা কিংবা অন্য কোনো মৌসুমি ফলের আচার।
যাঁরা খাবারের সঙ্গে পানীয় রাখতে আগ্রহী, তাঁরা কোক-ফানটার বদলে বিভিন্ন ধরনের শরবতের কথা চিন্তা করতে পারেন। যেমন- কাঁচা আমের শরবত, বেলের শরবত, বাঙ্গি কিংবা তরমুজের শরবত, তেঁতুলের শরবত, লাচ্ছি, বোরহানি, ফালুদা, এলাচ চা, মধু চা ইত্যাদি।
দীর্ঘ এক মাস রোজার পর ঈদের দিন অতিভোজন না করাই উত্তম। লঘুপাক খাবার অল্প পরিমাণ বারবার খাওয়া শরীরের জন্য সহনীয়।
সবশেষে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, রোজা এবং ঈদ আমাদের জীবনে প্রতিবছর বয়ে আনে সংযম ও আত্মশুদ্ধি শিক্ষার পাশাপাশি আনন্দ ও খুশির বার্তা। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ঘরে রোজার শিক্ষা এবং ঈদের আনন্দ-খুশি দিয়ে ভরে উঠুক- এই কামনার পাশাপাশি আমাদের আরেকটি চাওয়া এই যে রোজা এবং ঈদের খাবার যেন হয় পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর। এর জন্য খুব একটা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন স্বাস্থ্যসচেতনতার। সবার ঈদ হয়ে উঠুক আনন্দ ও খুশিতে ভরপুর আর খাবার হোক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর।
লেখক : ভিজিটিং ফেলো, রয়াল মেলবোর্ন হাসপাতাল, অস্ট্রেলিয়া।
armsekram@yahoo.com
No comments