থিমপার্ক চিড়িয়াখানা খোলা, উদ্যানে ঢল নামবে মানুষের- নতুনরূপে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্র পার্ক ॥ by মোরসালিন মিজান

আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! সত্যি, আকাশে বাতাসে আনন্দ খেলা করছে এখন। ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। ধনী গরিব নেই। সব ঘরে চলছে ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি। আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। তবে কিছু মানুষ শহর ঢাকার।


এখানেই ঈদ করেন। প্রথম দিনটি তাঁরা মোটামুটি বাসায় কাটান। দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয় ফাঁকা ঢাকায় ঘুরে বেড়ানো। নতুন পোশাক পরে মনের আনন্দে ছুটে বেড়ান তাঁরা। এ সময় তাঁদের মূল ঠিকানা হয় প্রধান প্রধান বিনোদন কেন্দ্র। নিশ্চিত করে বলা যায়, এবারও তাই হবে। বিনোদন কেন্দ্রগুলো এ জন্য বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
ঢাকা শিশুপার্ক ॥ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত ঢাকা শিশুপার্ক। এটি শহরের অতি পুরনো বিনোদন কেন্দ্র। সারাবছরই এখানে ছোটমণিদের উৎসব লেগে থাকে। আর ঈদ হলে তো কথাই নেই। জানা যায়, অন্যান্য বছরের মতো এবারও অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে আছে শিশুপার্ক। ঈদ উপলক্ষে নতুন করে সেজেছে। রাইডগুলোর ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে শিশুকিশোরদের উপভোগের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বেশ কিছু রাইডে নতুন রং করা হয়েছে। রাখা হয়েছে বাড়তি আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি পার্কের পরিবেশ আরও বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে বর্তমানে ১০টি রাইড রয়েছে। ঈদের প্রথম চার দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে পার্ক। এখানে প্রবেশমূল্য ৮ টাকা। তবে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। শিশুপার্কের সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন আধুনিক বিনোদ কেন্দ্র থাকলেও শিশুপার্কের দর্শনার্থী কমেনি। ঈদে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার দর্শনার্থী আসেন। এবার লম্বা ছুটি থাকলেও দর্শনার্থীর সংখ্যা কমবে না জানিয়ে তিনি বলেন, শিশুপার্ক সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে।
চিড়িয়াখানা ॥ ঈদে সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশ পরিবার পরিজনসহ চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যায়। বিচ্ছিত্র জন্তুজানোয়ার দেখে চমৎকার সময় কাটান। জানা যায়, এবার ঈদের প্রথম পাঁচ দিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে চিড়িয়াখানা। প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ঈদের সময় একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় জাদুঘর ॥ অনেকেই জানেন না, এখন ঈদের ছুটিতে খোলা থাকে জাতীয় জাদুঘর। বিশেষ এ উদ্যোগ বিভিন্ন মহলে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। এবারও ঈদের দিন খোলা থাকবে জাতীয় জাদুঘর। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক প্রকাশচন্দ্র বলেন, আমাদের এখানে অনেক অমূল্য স্মারক আছে। কিন্তু এগুলো শুধু সংরক্ষণ করলেই হবে না সাধারণ মানুষকে দেখার সুযোগ করে দিতে হবে। সে লক্ষ্যে ঈদসহ বিভিন্ন বন্ধের দিনে জাতীয় জাদুঘর খোলা রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শিশুমেলা ॥ শ্যামলীর শিশুমেলা আলোচনায় একটু কম আসে। তবে আশপাশ এলাকার শিশুকিশোরদের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র এটি। এখানে শুধু শিশুরা চড়তে পারবে এমন রাইড আছে ৩৫টি। পরিবারের সকলের চড়ার মতো আছে ১২টি রাইড। শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকবে। প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা। শিশুমেলার ম্যানেজার এবিএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঈদের মূল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন রং করার কাজ চলছে। পুরো এলাকাটিকে আকর্ষণীয় করতেই এ আয়োজন।
ফ্যান্টাসি কিংডম ॥ রাজধানীর বাইরে হলেও এখন ফ্যান্টাসি কিংডম অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র। এবার ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ফ্যান্টাসি কিংডম। বড়দের প্রবেশমূল্য ২৫০ টাকা। ছোটদের ১৫০। প্রবেশসহ সব রাইডে চড়তে চাইলে বড়দের জন্য ৪৫০ এবং ছোটদের জন্য ২৫০ টাকার টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। বাড়তি ২৭০ টাকার টিকেট কেটে সাঁতার কাটা যাবে ওয়াটার কিংডমে। একই সঙ্গে ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব সøাইড, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইডে চড়া যাবে।
নন্দন পার্ক
সাঁতার কাটাসহ পানির সঙ্গে হরেক খেলাধুলার জন্য যাওয়া চাই নন্দন পার্কে। এটিও ঢাকার বাইরে। এর পরও ঈদে নন্দন ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও ড্রাই পার্কে রাজধানীর মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এখানে একটি প্যাকেজসহ প্রবেশমূল্য ৩৪০ টাকা। প্যাকেজ ছাড়া আলাদাভাবে প্রবেশ করতে চাইলে ১৭০ টাকার টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। এর বাইরে ২৪টি রাইডে চড়তে ১৫ থেকে ৬০ টাকার টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে পার্ক।

হেরিটেজ পার্ক
ফ্যান্টাসি কিংডমের পাশেই হেরিটেজ পার্ক। এখানে দেখা যাবে বেশি কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা। রেপ্লিকা ধরনের হলেও নিদর্শনগুলো দেখে ভাল লাগবে দর্শনার্থীদের। পাশাপাশি চড়া যাবে জায়ান্ট ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, ড্রাই সøাইড, কফি কাপ, ব্যাটারি কার, ফ্যামিলি ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইডে। সব রাইডসহ প্রবেশমূল্য ১৮০ টাকা।
এসবের বাইরে ছোট-বড় আরও বহু বিনোদন কেন্দ্রে ঈদ উদ্যাপনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবনসহ বিভিন্ন খোলামেলা জায়গায় জমবে ঈদের আনন্দ আড্ডা। তবে এই পথে, খোলা প্রান্তরে যারা সারাবছর কাটায় সে ছিন্নমূলদের ঈদ কটা ঈদ হবে? আনন্দের কোন উপলক্ষ কি আমরা তাঁদের উপহার দিতে পারি না? রাজধানী ঢাকা কটা প্রস্তুত এ জন্য? আসুন একটু, ভাবি। সকলকে নিয়ে ঈদ করি। সবার জন্য সমান আনন্দের হোক ঈদ।

No comments

Powered by Blogger.