মুদি দোকানিদের ব্যস্ততা বেড়েছে, সেমাই কেনার ধুম- ঈদ বাজার
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ-উল- ফিতর। তাই পোশাক, জুতা, শাড়ি আর গহনা কেনা শেষ। শুরু হয়েছে খাদ্যপণ্য কেনার পালা। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে সেমাই। সব শ্রেণীর মানুষের প্রিয় এই সেমাই তৈরিতে কারখানাগুলোতে শ্রমিকের দম ফেলার ফুরসত নেই।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের দামে খুব একটা তারতম্য নেই। উত্তাপ রয়েছে গরম মসলার বাজার। স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম।রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে অন্যান্য দোকানির মতো মুদি দোকানিদেরও ব্যস্ততা বাড়ছে সমানতালে। মুদি দোকানগুলোতে এখন থরে থরে সাজানো রয়েছে নানা ধরনের সেমাই। অন্য যে কোন পণ্যের চেয়ে এখন সেমাই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্যাকেট সেমাইয়ের কদর একটু বেশি। প্রায় পাঁচ-ছয় রকমের প্যাকেট সেমাই বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে কুলসুম, বনফুল, বোম্বে সেমাই, ফুলকলি ও ড্যানিশ লাচ্ছা সেমাই। খোলা লাচ্ছা সেমাইয়ের দাম এবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল বছর এই সেমাই বাজারে পাওয়া যেত ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এ বছর প্রতিকেজি খোলা লাচ্ছা সেমাই কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দিয়ে। কোথাও এর চেয়েও বেশি দাম রাখছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর বাজারে যেসব সেমাই দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশই আসছে পুরান ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন কারখানা থেকে। এখন একেবারে দম ফেলার ফুরসত নেই তার কারখানার শ্রমিকদের। পুরান ঢাকার সেমাই কারখানার এক শ্রমিক জানান, তার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ খাঁচি সেমাই উৎপাদন করা হচ্ছে। তিনি প্রতিখাঁচি স্পেশাল সেমাই পাইকারি বিক্রি করছেন দুই হাজার টাকা এবং লুজ বা একটু নিম্নমানের সেমাই বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। অন্যদিকে গতবার তার এই স্পেশাল সেমাইয়ের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং নিম্নমানেরটি ১ হাজার ২০০ টাকা।
খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। স্পেশাল সেমাইয়ের দাম রয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। তবে লুজ বা নিম্নমানের বাংলা সেমাই ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বাজারে বনফুলের ২০০ গ্রাম ওজনের লাচ্ছা সেমাই ৩০ টাকা, খোলা লাচ্ছা প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কুলসুম ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রাম ৩৫ টাকা, ৮০০ গ্রামের স্পেশাল সেমাই ১৬০ টাকা, বোম্বে ব্র্যান্ডের ৮০০ গ্রাম ওজনের এক প্যাকেট ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারের আইয়ুব স্টোরের বিক্রেতা মোঃ সুলতান বলেন, আগের চেয়ে সেমাই বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। এ ছাড়া বাজারজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানির নুডুলস, ফিরনি মিক্স, হালিম মিক্স, চটপটি মিক্স পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দামে।
এবারের রমজানে চিনির দাম নিয়ে বেশি হৈ চৈ না হলেও দাম নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদন্দ্বে ছিলেন ক্রেতারা। তবে গতবার চিনি নিয়ে এক ধরনের তেলেসমাতি দেখেছেন ক্রেতারা। এবার বাজারে চিনির দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যেই ছিল। বাজারে এখন প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, রোজার শুরুতে চিনির চাহিদা বেশি হওয়ায় সাধারণত দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার দাম বাড়েনি। কারণ এবার বাজারে চিনির প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। কাওরান বাজারের সুফি জেনারেল স্টোরের মালিক আল মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, আমার দোকানে প্রতিদিন এক বস্তা চিনি লাগে কেবল খুচরা ক্রেতাদের জন্য। রোজার শুরুর দিকে এসব ক্রেতা এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা বেশি কিনছেন চিনি। আর এখন বেশি নিচ্ছেন মিষ্টির দোকানদাররা। ঈদের আগ পর্যন্ত চিনি ভালোই বিক্রি হবে। ঈদের পর বিক্রি একেবারে কমে যাবে।
ঈদ সামনে রেখে মসলার বাজারে কিছুটা উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে। মসলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি কেজি জিরা ৩৭৫ থেকে ৪৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মরিচের গুঁড়া ১৫০ টাকা হলুদের গুঁড়া ১২৫ টাকা, গোটা ধনে ৮০ টাকায়, গোটা হলুদ ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকায়, রসুন ১০০ টাকা, আদা ৫৫ টাকায়, ডাবলি ৫৫ টাকায়, ঘি ওজন ভেধে ৭০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছে বিক্রিতারা। মসলা আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েত উল্লাহ জনকন্ঠকে জানান, যে বছর ভারতে মসলার উৎপাদন ভাল হয়, সে বছর আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দাম কম থাকে। কিন্তু এবার উৎপাদন ভালো না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে ভারত থেকে সরাসরি মসলা আমদানি বাড়ছে। তা ছাড়া দেশটি থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম পরিবহন খরচ ও স্বল্প সময়ে আমদানি করা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতার কারণে ভারতে দাম বাড়াসহ দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানির ৫ লিটার ভোজ্যতেলের দাম ৬৬৫ টাকা ও পাম তেলের দাম ১১২ টাকায়, আলু ২৪ থেকে ২৬ টাকায়, খেসারি ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ মাসকলাই ১২০ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা। প্যাকেট আটা ২ কেজি ৬৫ খোলা আটা ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। টমেটো কেজি প্রতি ৮০-১০০ টাকা, বেগুন প্রকারভেদে ১৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা, শসা ২গ থেকে ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১৫ থেকে ২০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি। ফার্মের মুরগি বাজার অনুসারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি অপরদিকে পাকিস্তানী কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। ডিম বিক্রি হচ্ছে হালি প্রতি ৩৮ টাকায় যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২ টাকা। অপরদিকে গরু বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৮০, খাসি ৪৩০ টাকায়। দেশী মুরগি আকারভেধে ২শ’ হতে ৪শ’ টাকায়।
শুক্রবার রাজধানীর পাইকারী ও খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, সরবরাহ বেশি থাকায় সবজির দাম ৩০ এর নিচে রয়েছে। ফুলকপি পিস প্রতি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ আকার ভেধে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া আকার ভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকায়, মুলা ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, পটল ২০ টাকায়, ঢেঁড়স ২০ টাকায়, কাকরল ২০ টাকায়, করলা ২৫, কচুমূখী ২৪ টাকায়, পেঁপে ১৫ থেকে ২০ টাকায়, চিচিঙ্গা ২০ থেকে ২৪ টাকায়, জিঙ্গা ২০ থেকে ২৫, সবজি কলার হালি ১৫ থেকে ২০ টাকায়, কুমড়া আকার বেধে ৩০ থেকে ৮০ টাকায়, সাজনা ৫০ টাকায় বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। এছাড়া ধনেপাতা কেজিতে ১৫০ টাকা, বেবীকন প্রতি পিচ ২০-৩০, পেপসিকন ২৫-৩০ টাকায়, বিলেতি ধনে পাতা ১শ‘ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকের আঁটি ৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ২শ টাকা থেকে ১০০০ টাকায়, রুই কেজি প্রতি ১৬০ টাকায়, গলধা চিংড়ি কেজি প্রতি ৫শ টাকায়, ছোট চিংড়ি কেজি প্রতি ২শ’ টাকায়, সিং কেজি প্রতি ৫শ, মাগুর কেজি প্রতি ৬০০ টাকায়, কাতল কেজি প্রতি ৩০০ টাকায়, চাষ করা কই কুড়িতে ২শত টাকায়, কাচকী কেজি প্রতি ২শ’ ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
No comments