ঈদ মোবারক-বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য

দীর্ঘ এক মাসের সংযম সাধনার পর ঘরে ঘরে, জনে জনে আনন্দ ও খুশির বার্তা পৌঁছে দিতে আবার এসেছে ঈদুল ফিতর। রমজানের শুরু থেকেই এ দিনটির জন্য মুসলিম বিশ্ব অপেক্ষা করে থাকে। বিশ্বজুড়ে মুসলিম সমাজে দিনটি বিশেষ আনন্দঘন পরিবেশে উদ্‌যাপন করা হয়।

বিশ্বের মুসলিম সমাজকে ঐক্যের পথে, কল্যাণের পথে, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত করে ঈদুল ফিতর। ইসলাম ধর্ম মতে, ঈদ আসে ইবাদত ও মানবতার কল্যাণের বার্তা নিয়ে। ঈদের আগের রমজান মাসটি হচ্ছে সংযম ও প্রশিক্ষণের মাস। ফিতরা প্রদান, জাকাত আদায় ও ঈদের নামাজের ভেতর দিয়ে এমন কিছু কাজ ও আচরণ প্রদর্শন করতে হয়, যার প্রভাব পড়ে সারা জীবনে। বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য রমজানের শিক্ষা অপরিহার্য। ঈদুল ফিতর আমাদের সেই বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষাই দেয়।
ঈদ একটি আনন্দোৎসব। এ আনন্দোৎসব তখনই তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে যখন তা একটি সর্বজনীন রূপ নেয়। তাই ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার ভেতর দিয়েই ঈদের আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। ইসলাম ধর্মে ধনী-গরিবের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছে। ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। একই সঙ্গে সামর্থ্যবানদের জন্য জাকাত আদায় করা ফরজ। ফিতরা ও জাকাত আদায়ের মাধ্যমে শ্রেণীভেদ ভুলে সবাই একত্রে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারলেই সার্থক হয়ে ওঠে ঈদ।
ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে গ্রামমুখী মানুষ। নাড়ির টানে বাড়িতে ফেরা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। এবার ঈদের ছুটি লম্বা হওয়ায় অনেকেই শহর ছেড়ে যাবেন গ্রামের দিকে। তবে ঈদযাত্রায় বরাবরের মতো এবারও হয়তো সড়ক ভোগান্তির শিকার হতে পারে ঘরমুখী মানুষ। বরাবরের মতো এবারও ঈদে বাড়ি ফেরার একটি টিকিট সংগ্রহ করতে অনেককেই হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রথম দিনেই উধাও হয়ে গেছে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট। এর পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে যানজট ভোগান্তি হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। কাল দেখা গেলে পরশু। ঈদের খুশি সবাই যেন সমানভাবে পায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া আমাদের সবারই দায়িত্ব। এটাও সত্য যে আমাদের দেশে দিনে দিনে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। কিন্তু মানবতার ধর্ম ইসলাম এ বৈষম্যকে স্থান দেয় না। ধনী-গরিবের বৈষম্য যেন ঈদোৎসবের আনন্দকে ক্ষুণ্ন্ন করে না দেয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সব সংকীর্ণতার ঊধর্ে্ব উঠে, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেওয়ার শিক্ষা দেয় ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরে আমরা সবাই ভুলে যেতে চাই সব ভেদাভেদ। দিতে চাই আত্মশুদ্ধি ও মানবিক গুণাবলির পরিচয়।
ঈদ আমাদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এ উৎসবের দিনে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হবে সব আনন্দ। রমজান আমাদের চিত্ত শুদ্ধির যে শিক্ষা দিয়েছে, ঈদুল ফিতর সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর দিন। আজ একটি দিনের জন্য হলেও ধনী-গরিব সবাই দাঁড়াবে এক কাতারে। আজ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হবে ঈদের আনন্দ। ভুলে যেতে হবে সব বৈষম্য, সব ভেদাভেদ। সবার ঘরে পৌঁছে যাক ঈদের সওগাত। আলিঙ্গনের ভেতর দিয়ে সবাই ভুলে যাক হিংসা-বিদ্বেষ। আমাদের ঘরে ঘরে ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত হোক দেশ। ঈদুল ফিতরে এটাই আমাদের কামনা। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।