রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু- সে সময়ে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা টেকনাফ ও কক্সবাজারে চলে আসে

দাঙ্গা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর আবারও চাপ এসেছে। ইতোপূর্বে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশসমূহ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার কথা বলে আসছিল।


গত প্রায় তিরিশ বছরে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগই মিয়ানমারে ফিরে যায়নি; ইতোমধ্যে এরা বাংলাদেশের জন্য নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রিটেন সফরকালেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও বিতাড়নের জন্য ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের ব্যাপক নিন্দা করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা কতটা যৌক্তিক? অনেক দেশই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে তাঁর বক্তব্য রেখেছেন। তিনি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে বাংলাদেশকে চাপ দেয়ার বদলে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্ড্রু মিশেল রবিবার সন্ধ্যায় লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে সাক্ষাত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে এ কথা বলেন। আসলে প্রায় তিন দশকেরও আগে থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যার সূচনা। সে সময়ে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা টেকনাফ ও কক্সবাজারে চলে আসে। তখনও জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিন্দায় সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু এই সমস্যা সমাধান আজ হয়নি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। এই দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশকে অনেকটা এককভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও তা অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার দুটি উদ্বাস্তু শিবিরে ২৮ হাজারেরও বেশি তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘ মিয়ানমার সরকারকে রাজি করাতে পারেনি। তবে এই তালিকাভুক্ত ছাড়াও বেআইনীভাবে আরও অনেক রোহিঙ্গা এদেশে অবস্থান করছে। কেউ কেউ বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ হিসাবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতি দায়িতশীল আচরণ করে আসছে। মিয়ানমারে যাতে রোহিঙ্গারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে লক্ষ্যে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশ কেন বিদেশী নাগরিকদের আশ্রয় দেবে? এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলোর আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.