সংসদে কটুকথা বেশি, আত্ম পরিচয় সংকটে বিরোধী দল -টিআইবি’র গবেষণা
দশম
সংসদে আত্ম-পরিচয় সংকটে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ কারণে তাদের
ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারে তাদের দ্বৈত অবস্থান এবং গত চার বছরের বিভিন্ন
কার্যক্রমের মাধ্যমে দলটির এই অবস্থতার সৃষ্টি হয়েছে। যা তাদের নেতাদের
কথায় স্পষ্ট হয়েছে। গতকাল ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শিরোনামে দশম জাতীয় সংসদের
চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনের কার্যক্রমে ওপর পর্যবেক্ষণ ও
বিশ্লেষণভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি
ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৫টি অধিবেশনে কোরাম সঙ্কট আগের সংসদগুলোর
মতোই। অধিবেশনগুলোতে কোরাম সংঙ্কটে ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার
২৩৮ টাকা। এছাড়া আইন প্রণয়নে জনমত গ্রহণের বিদ্যমান পদ্ধতিগুলোর সীমিত
প্রয়োগ, সংসদীয় উন্মুক্ততা চর্চার ঘাটতি, সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায়
প্রধান বিরোধী দলের ব্যর্থতা এবং আইন প্রণয়নে ব্যয়িত মোট সময়ের শতকরা হার
পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণে সংসদের প্রত্যাশিত কার্যকারিতায়
ঘাটতি দেখা গেছে। সংসদে বিরোধীদের বিষয়ে কটু কথা হয়েছে অত্যধিক।
সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয়। টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন এডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোর্শেদা আক্তার, নিহার রঞ্জন রায় এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিত সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেদন অনুযায়ী, দশম সংসদের চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ- এই পাঁচটি অধিবেশনের কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রীদের উপস্থিতি হ্রাস পাওয়াসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ লক্ষণীয়। পাঁচটি অধিবেশনের প্রতি কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকট ৩০ মিনিট। মোট কার্যকালের ১৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে কোরাম সঙ্কটে। সে হিসাবে পাঁচ অধিবেশনে ৩৮ ঘণ্টা তিন মিনিট কোরাম সঙ্কটে ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৮ টাকা। তবে পাঁচটি অধিবেশনের কোনোটিতেই প্রধান বা অন্য বিরোধী সদস্যরা ওয়াকআউট ও সংসদ বর্জন করেননি। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন প্রণয়নে মাত্র ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে সময় ব্যয় হয় মাত্র ৩৫ মিনিট। যা খুবই কম সময়। উল্লেখ্য, ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসের গড় সময় ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট।
এ সংসদেও সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। আইন প্রণয়নে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের তুলনামূলক বেশি অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের মতামত ও প্রস্তাব যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি এবং আইন প্রণয়নে জনমত গ্রহণের বিদ্যমান পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগের ঘাটতির ফলে জন-অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত ছিল।
এছাড়া প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধিবেশনে উপস্থাপিত না হওয়ার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে সংঘটিত আলোচিত হত্যাকাণ্ড, জঙ্গি-তৎপরতা, বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়ের ওপর গঠনমূলক সমালোচনা, আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ পর্বে আলোচিত হলেও সদস্যগণের একাংশের বক্তব্যে অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার ও আচরণ বিধির ব্যত্যয় লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সদস্যদের বক্তব্যে বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়ের ওপর গঠনমূলক সমালোচনা হলেও সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে ব্যর্থতা হয়েছে। অপরপক্ষে সংসদীয় কমিটির নিয়মিত সভা অনুষ্ঠানের সংখ্যা তুলনামূলক বৃদ্ধি পেলেও কমিটি সদস্যদের একাংশের স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমিটির একাংশের বিধি অনুযায়ী নিয়মিত সভা না হওয়া, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব আরোপে ঘাটতি এবং সংসদের কার্যবিবরণী ও কমিটি প্রতিবেদনসমূহের উন্মুক্ততা ও অভিগম্যতার ঘাটতি দেখা গেছে। দশম সংসদের পাঁচটি অধিবেশন সময়ে ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে ৪৬টির সভা অনুষ্ঠিত হলেও ৪টি কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে ১৬টি কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১১টি কমিটির সদস্যদের সার্বিক গড় উপস্থিতি ৫৬ শতাংশ ৫টি কমিটির প্রতিবেদনে উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতিকে সরকারের বিভিন্ন কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করাসহ দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে দলীয় ফোরাম ও জনসভায় জোরালো বক্তব্য দিতে দেখা গেলেও সংসদীয় কার্যক্রমে এ সকল বিষয়ে তার অনুরূপ ভূমিকা ছিলো না। বর্তমান সংসদের মোট ১৮টি অধিবেশনের ৩২৭ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি উপস্থিত ছিলেন ৭৯ কার্যদিবস।
সংসদ অধিবেশনে অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার ও কোরাম সংকট অব্যাহত থাকার বিষয়কে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও জাবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সংসদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সরকারি ও বিরোধী উভয়দলই এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যারা নিজেদের দাবি করেন বা যাদের উপস্থাপন করা হয় আত্মপরিচয় নিয়ে তাদের মধ্যে সৃষ্ট সংকট বর্তমান সংসদের মেয়াদের শেষ বছরে তারা নিজেরাই স্বীকার করেছেন।
এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান প্রতিষ্ঠান সংসদ। মূল কাজ আইন প্রণয়ন হলেও প্রশংসা, নিন্দা ও কটুবাক্য ব্যবহারে এই সংসদের বেশির ভাগ সময় ব্যয়িত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে নিয়মিত উপস্থাপিত না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের সকল সম্পদের মালিক জনগণ। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব জনগণ যাদের ওপর অর্পণ করেন তাদের উচিত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করা। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংসদে তা উপস্থাপন করে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
প্রতিবেদনে সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে নবম সংসদে কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত ‘সংসদ সদস্য আচরণবিধি বিল’ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন সাপেক্ষে পুনরায় সংসদে উত্থাপন, চূড়ান্ত অনুমোদন ও আইন হিসেবে প্রণয়নের সুপারিশসহ মোট ১৪ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধে বিধি অনুযায়ী স্পিকারের আরো জোরালো ভূমিকা গ্রহণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ সংসদে উপস্থাপন, আইন প্রণয়নে বিরোধী দলের যৌক্তিক প্রস্তাবসমূহ সরকারি দলের বিবেচনায় নেয়া, খসড়া আইনের ওপর জনমত গ্রহণের লক্ষ্যে অধিবেশনে উত্থাপিত বিলসমূহ সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং বিধি অনুযায়ী সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা অনুষ্ঠান। কমিটির কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রাখা ও কমিটির নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সংসদীয় উন্মুক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংসদীয় কর্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশের ও সুপারিশ করে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয়। টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন এডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোর্শেদা আক্তার, নিহার রঞ্জন রায় এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিত সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেদন অনুযায়ী, দশম সংসদের চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ- এই পাঁচটি অধিবেশনের কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রীদের উপস্থিতি হ্রাস পাওয়াসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ লক্ষণীয়। পাঁচটি অধিবেশনের প্রতি কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকট ৩০ মিনিট। মোট কার্যকালের ১৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে কোরাম সঙ্কটে। সে হিসাবে পাঁচ অধিবেশনে ৩৮ ঘণ্টা তিন মিনিট কোরাম সঙ্কটে ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৮ টাকা। তবে পাঁচটি অধিবেশনের কোনোটিতেই প্রধান বা অন্য বিরোধী সদস্যরা ওয়াকআউট ও সংসদ বর্জন করেননি। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন প্রণয়নে মাত্র ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে সময় ব্যয় হয় মাত্র ৩৫ মিনিট। যা খুবই কম সময়। উল্লেখ্য, ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসের গড় সময় ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট।
এ সংসদেও সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। আইন প্রণয়নে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের তুলনামূলক বেশি অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের মতামত ও প্রস্তাব যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি এবং আইন প্রণয়নে জনমত গ্রহণের বিদ্যমান পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগের ঘাটতির ফলে জন-অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত ছিল।
এছাড়া প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধিবেশনে উপস্থাপিত না হওয়ার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে সংঘটিত আলোচিত হত্যাকাণ্ড, জঙ্গি-তৎপরতা, বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়ের ওপর গঠনমূলক সমালোচনা, আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ পর্বে আলোচিত হলেও সদস্যগণের একাংশের বক্তব্যে অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার ও আচরণ বিধির ব্যত্যয় লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সদস্যদের বক্তব্যে বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়ের ওপর গঠনমূলক সমালোচনা হলেও সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে ব্যর্থতা হয়েছে। অপরপক্ষে সংসদীয় কমিটির নিয়মিত সভা অনুষ্ঠানের সংখ্যা তুলনামূলক বৃদ্ধি পেলেও কমিটি সদস্যদের একাংশের স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমিটির একাংশের বিধি অনুযায়ী নিয়মিত সভা না হওয়া, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব আরোপে ঘাটতি এবং সংসদের কার্যবিবরণী ও কমিটি প্রতিবেদনসমূহের উন্মুক্ততা ও অভিগম্যতার ঘাটতি দেখা গেছে। দশম সংসদের পাঁচটি অধিবেশন সময়ে ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে ৪৬টির সভা অনুষ্ঠিত হলেও ৪টি কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে ১৬টি কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১১টি কমিটির সদস্যদের সার্বিক গড় উপস্থিতি ৫৬ শতাংশ ৫টি কমিটির প্রতিবেদনে উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতিকে সরকারের বিভিন্ন কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করাসহ দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে দলীয় ফোরাম ও জনসভায় জোরালো বক্তব্য দিতে দেখা গেলেও সংসদীয় কার্যক্রমে এ সকল বিষয়ে তার অনুরূপ ভূমিকা ছিলো না। বর্তমান সংসদের মোট ১৮টি অধিবেশনের ৩২৭ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি উপস্থিত ছিলেন ৭৯ কার্যদিবস।
সংসদ অধিবেশনে অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার ও কোরাম সংকট অব্যাহত থাকার বিষয়কে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও জাবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সংসদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সরকারি ও বিরোধী উভয়দলই এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যারা নিজেদের দাবি করেন বা যাদের উপস্থাপন করা হয় আত্মপরিচয় নিয়ে তাদের মধ্যে সৃষ্ট সংকট বর্তমান সংসদের মেয়াদের শেষ বছরে তারা নিজেরাই স্বীকার করেছেন।
এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান প্রতিষ্ঠান সংসদ। মূল কাজ আইন প্রণয়ন হলেও প্রশংসা, নিন্দা ও কটুবাক্য ব্যবহারে এই সংসদের বেশির ভাগ সময় ব্যয়িত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে নিয়মিত উপস্থাপিত না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের সকল সম্পদের মালিক জনগণ। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব জনগণ যাদের ওপর অর্পণ করেন তাদের উচিত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করা। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংসদে তা উপস্থাপন করে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
প্রতিবেদনে সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে নবম সংসদে কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত ‘সংসদ সদস্য আচরণবিধি বিল’ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন সাপেক্ষে পুনরায় সংসদে উত্থাপন, চূড়ান্ত অনুমোদন ও আইন হিসেবে প্রণয়নের সুপারিশসহ মোট ১৪ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধে বিধি অনুযায়ী স্পিকারের আরো জোরালো ভূমিকা গ্রহণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ সংসদে উপস্থাপন, আইন প্রণয়নে বিরোধী দলের যৌক্তিক প্রস্তাবসমূহ সরকারি দলের বিবেচনায় নেয়া, খসড়া আইনের ওপর জনমত গ্রহণের লক্ষ্যে অধিবেশনে উত্থাপিত বিলসমূহ সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং বিধি অনুযায়ী সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা অনুষ্ঠান। কমিটির কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রাখা ও কমিটির নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সংসদীয় উন্মুক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংসদীয় কর্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশের ও সুপারিশ করে টিআইবি।
No comments