ঢামেক কেবিনে জোসেফের আয়েশি জীবন by শুভ্র দেব
ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিআইপি কেবিন নং ১১১। কেবিনকে ঘিরে সার্বক্ষণিক
প্রহরায় তিনজন কারারক্ষী ও একজন পুলিশ সদস্য। ভেতরে সুসজ্জিত শীতাতপ
নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। রোগীর আরাম-আয়েশে থাকার সব ধরনের ব্যবস্থাই আছে। এই
কেবিনে বসেইআয়েশী জীবনযাপন করছেন দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমদ
জোসেফ। ১৯৯৯ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের মামলার রায়ে তাকে আদালত মৃত্যুদণ্ড
দিয়েছিলেন। পরে আপিল বিভাগ থেকে সাজা কমিয়ে যাবৎ জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামি কেবিনে বসেই নিজ অনুসারীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেন।
নির্দেশনা দেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের। কারাবন্দি থেকেও আধিপত্য বিস্তার করে
যাচ্ছেন সর্বত্র। অভিযোগ আছে তার কেবিনে নিয়মিত যাতায়াত করেন বিভিন্ন
নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আসামি হয়ে দিব্যি
ব্যবহার করছেন মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি
তার সব আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত মহলে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। এমনকি
দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর রাখেন। নিজের প্রয়োজনে
ডেকে নেন যে কাউকে। আসামি হিসাবে হাতকড়া ডান্ডা-বেড়ি পরার কথা থাকলেও তাকে
সেটা পরানো হয় না। মেডিকেল থেকে রোগীদের দেয়া খাবার না খেয়ে বাইরে থেকে আসা
খাবার খান। শুধু মেডিকেলের দেয়া সকালের নাস্তাটাই তিনি খান। গত কয়েকদিন
ঢামেকের নতুন ভবনের ১০ তলার কেবিন ব্লকের ১১১ নম্বর কেবিন নিয়ে প্রতিবেদকের
অনুসন্ধানে এমনটাই জানা গেছে।
ঢামেকের বিভিন্ন স্টাফ ও চিকিৎসারত রোগীর স্বজনরা জানান, জোসেফের অনুসারীরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কেবিনে যাতায়াত করছেন। অভিযোগ আছে, খোদ জোসেফের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীরাই তাকে মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। ডিউটিরত অবস্থায় কোনো কারারক্ষী মোবাইল ফোন ব্যবহার করার নিয়ম নেই। কিন্তু গত ২৯ শে এপ্রিল জোসেফের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শাওন হাওলাদার নামে এক কারারক্ষী মোবাইল ফোন ব্যবহারের দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা কর্মকর্তা বলেন, আমরা ছোট চাকরি করি। চোখের সামনে অনেক কিছুই ঘটে। কিন্তু আমরা কিছু বলতে পারি না। জোসেফ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও কোনো কিছু হলেই ওপর থেকে আমাদের ফোন করায়। তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। এ ধরনের বন্দি নিয়ে আমাদের অনেক আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
অভিযোগ আছে পিঠের ব্যথার কথা বলে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালেই কাটিয়ে দিচ্ছেন বছরের পর বছর। সর্বশেষ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছরের বেশি সময় ছিলেন। সেখান থেকে কারাগারে ফিরে আবার কিছুদিন থাকার পর আবার ভর্তি হোন সেখানেই। পরে চিকিৎসকরা তাকে ঢামেকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। ৩১শে মার্চ তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে ভর্তি হোন। এমনও অভিযোগ আছে দণ্ডপ্রাপ্ত বড় বড় আসামিদের আরাম-আয়েশের এক আস্তানা হয়ে গেছে ১১১ নম্বর কেবিন। কারণ জোসেফের আগে আরেক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদা সামান্য অসুখের অজুহাতে এখানে ছিলেন। একটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষ তাকে পুনরায় কারাগারে নিয়ে যায়। ৩১শে মার্চ আমিন হুদা ১১১ নম্বর কেবিন থেকে আউট হওয়ার পরেই সেখানে ইন হয়েছেন তোফায়েল আহমদ জোসেফ।
কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস মানবজমিনকে বলেন, জোসেফ পিঠের ব্যথা ও ইউরিনের সমস্যার কথা বললে আমরা তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাই। সেখান থেকেই পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করে। বর্তমানে ঢামেকেই তার চিকিৎসা চলছে। এর আগেও জোসেফ একই সমস্যায় হাসপাতালে ছিলেন দীর্ঘদিন। এখনও আবার একই সমস্যা কেন এমন প্রশ্নে কারা চিকিৎসক বলেন, কেউ যদি বলে আমার শরীরে ব্যথা করছে। সেটা তো আর পরীক্ষা করার উপায় নেই। তাই আমরা চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাই। আর এ ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমরাও বাড়তি ঝামেলায় থাকি। কারণ, হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়ে যদি কোনো ধরনের অঘটন ঘটায়। তার অনুসারীরাও উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারে। সেজন্য এ ধরনের বন্দি নিয়ে আমাদের বাড়তি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, জোসেফ পিঠে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও তিনি উচ্চ রক্ত চাপ, কিডনি সমস্যাসহ আরো কিছু রোগে ভুগছেন। তাই স্নায়ুরোগ ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে জোসেফকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তার চিকিৎসার জন্য আমরা চার সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম করেছি। তারাই জোসেফের বিষয়ে করণীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তোফায়েল আহমদ জোসেফ দেশের শীর্ষ পাঁচ জন সন্ত্রাসীদের একজন ছিলেন। বড় ভাই হারিছ আহমেদের হাত ধরে ছাত্রলীগে নাম লেখে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। এরপর থেকেই শুরু করেন ভয়ঙ্কর সব কর্ম। জোসেফ অপরাধের ষোলকলা পূর্ণ করেছিলেন। এমন কোনো অপরাধ ছিল না যা তিনি করেননি। ভাইয়ের হাত ধরে রাজনীতিতে এলেও পরে তিনি পুরোদমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। যোগ দেন তখনকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের গড়া সেভেন স্টার গ্রুপে। ওই সময় সেভেন স্টার ও ফাইভ স্টার গ্রুপ দাপিয়ে বেড়াত। এই দুই গ্রুপের আতঙ্কে তটস্থ থাকত রাজধানীবাসী। তখনকার আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর নাকের ডগায় বসে তারা করত সব অপকর্ম। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ পেত না। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়াই ছিল তাদের শক্তির প্রধান উৎস। জোসেফ ১৯৯৬ সালের ৭ই মে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে হত্যা করে। ২০০৪ সালের ২৫শে এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর বাইরে আরেকটি অস্ত্র মামলায় তার ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই বছর তৎকালীন সরকার জোসেফসহ আরো কিছু সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার একটি টিম তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
ঢামেকের বিভিন্ন স্টাফ ও চিকিৎসারত রোগীর স্বজনরা জানান, জোসেফের অনুসারীরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কেবিনে যাতায়াত করছেন। অভিযোগ আছে, খোদ জোসেফের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীরাই তাকে মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। ডিউটিরত অবস্থায় কোনো কারারক্ষী মোবাইল ফোন ব্যবহার করার নিয়ম নেই। কিন্তু গত ২৯ শে এপ্রিল জোসেফের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শাওন হাওলাদার নামে এক কারারক্ষী মোবাইল ফোন ব্যবহারের দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা কর্মকর্তা বলেন, আমরা ছোট চাকরি করি। চোখের সামনে অনেক কিছুই ঘটে। কিন্তু আমরা কিছু বলতে পারি না। জোসেফ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও কোনো কিছু হলেই ওপর থেকে আমাদের ফোন করায়। তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। এ ধরনের বন্দি নিয়ে আমাদের অনেক আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
অভিযোগ আছে পিঠের ব্যথার কথা বলে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালেই কাটিয়ে দিচ্ছেন বছরের পর বছর। সর্বশেষ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছরের বেশি সময় ছিলেন। সেখান থেকে কারাগারে ফিরে আবার কিছুদিন থাকার পর আবার ভর্তি হোন সেখানেই। পরে চিকিৎসকরা তাকে ঢামেকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। ৩১শে মার্চ তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে ভর্তি হোন। এমনও অভিযোগ আছে দণ্ডপ্রাপ্ত বড় বড় আসামিদের আরাম-আয়েশের এক আস্তানা হয়ে গেছে ১১১ নম্বর কেবিন। কারণ জোসেফের আগে আরেক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদা সামান্য অসুখের অজুহাতে এখানে ছিলেন। একটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষ তাকে পুনরায় কারাগারে নিয়ে যায়। ৩১শে মার্চ আমিন হুদা ১১১ নম্বর কেবিন থেকে আউট হওয়ার পরেই সেখানে ইন হয়েছেন তোফায়েল আহমদ জোসেফ।
কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস মানবজমিনকে বলেন, জোসেফ পিঠের ব্যথা ও ইউরিনের সমস্যার কথা বললে আমরা তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাই। সেখান থেকেই পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করে। বর্তমানে ঢামেকেই তার চিকিৎসা চলছে। এর আগেও জোসেফ একই সমস্যায় হাসপাতালে ছিলেন দীর্ঘদিন। এখনও আবার একই সমস্যা কেন এমন প্রশ্নে কারা চিকিৎসক বলেন, কেউ যদি বলে আমার শরীরে ব্যথা করছে। সেটা তো আর পরীক্ষা করার উপায় নেই। তাই আমরা চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাই। আর এ ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমরাও বাড়তি ঝামেলায় থাকি। কারণ, হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়ে যদি কোনো ধরনের অঘটন ঘটায়। তার অনুসারীরাও উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারে। সেজন্য এ ধরনের বন্দি নিয়ে আমাদের বাড়তি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, জোসেফ পিঠে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও তিনি উচ্চ রক্ত চাপ, কিডনি সমস্যাসহ আরো কিছু রোগে ভুগছেন। তাই স্নায়ুরোগ ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে জোসেফকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তার চিকিৎসার জন্য আমরা চার সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম করেছি। তারাই জোসেফের বিষয়ে করণীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তোফায়েল আহমদ জোসেফ দেশের শীর্ষ পাঁচ জন সন্ত্রাসীদের একজন ছিলেন। বড় ভাই হারিছ আহমেদের হাত ধরে ছাত্রলীগে নাম লেখে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। এরপর থেকেই শুরু করেন ভয়ঙ্কর সব কর্ম। জোসেফ অপরাধের ষোলকলা পূর্ণ করেছিলেন। এমন কোনো অপরাধ ছিল না যা তিনি করেননি। ভাইয়ের হাত ধরে রাজনীতিতে এলেও পরে তিনি পুরোদমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। যোগ দেন তখনকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের গড়া সেভেন স্টার গ্রুপে। ওই সময় সেভেন স্টার ও ফাইভ স্টার গ্রুপ দাপিয়ে বেড়াত। এই দুই গ্রুপের আতঙ্কে তটস্থ থাকত রাজধানীবাসী। তখনকার আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর নাকের ডগায় বসে তারা করত সব অপকর্ম। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ পেত না। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়াই ছিল তাদের শক্তির প্রধান উৎস। জোসেফ ১৯৯৬ সালের ৭ই মে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে হত্যা করে। ২০০৪ সালের ২৫শে এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর বাইরে আরেকটি অস্ত্র মামলায় তার ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই বছর তৎকালীন সরকার জোসেফসহ আরো কিছু সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার একটি টিম তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
No comments