সুফিয়া কামাল হলের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শোকজ
সরকারি
চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে গত ১০ই এপ্রিল
মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত
ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে হল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
দেয়ার পর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ
দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে ছাত্রীদের হল অফিসে ডেকে এসব নোটিশ দেয়া
হচ্ছে। গত ১৫ই মে ইস্যুকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের স্বাক্ষর করা এই
নোটিশের উত্তর দুই সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১০ই
এপ্রিল মধ্যরাতে আপনি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে
পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা, অসত্য রটনা ও গুজব ছড়িয়েছেন যে, উক্ত হলের আবাসিক
শিক্ষার্থী ইফফাত জাহান ইশা, মুর্শিদা আক্তার নামক একজন আবাসিক ছাত্রীর রগ
কেটে দিয়েছে এবং তাকে মারধর করেছে। আপনি অন্যান্য আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে
বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করেছেন ও তার আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার এ ধরনের পূর্বপরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা হলের
ছাত্রীদের ভীষণভাবে উত্তেজিত ও আতঙ্কিত করে। তাছাড়া, আপনি পূর্ব
পরিকল্পনানুসারে সংঘবদ্ধ হয়ে ইফফাত জাহান ইশাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন এবং
জোরপূর্বক ইফফাত জাহান ইশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং তার বস্ত্র হরণ
করেন।’ এতে আরো বলা হয়, ‘উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত
কমিটি ঘটনার সঙ্গে আপনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। একজন শিক্ষার্থী
কর্তৃক এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও
মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে- যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও আইনের
সুস্পষ্ট পরিপন্থি।’ এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা পরিষদ ও সিন্ডিকেটের
সুপারিশ মোতাবেক কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে নোটিশে। এছাড়াও
নোটিশ প্রাপ্তির দুই সপ্তাহের মধ্যে উত্তর না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শাস্তি
হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয় এতে। এদিকে এমন নোটিশ দেয়ার পর সুফিয়া কামাল
হলের সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। নোটিশপ্রাপ্ত এক ছাত্রী
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আমি এশা আপুকে লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম
না। তারপরেও তালিকার শেষ দিকে আমার নাম দেয়া হয়েছে। হল থেকেও নোটিশ দেয়া
হয়েছিল। সেটার উত্তর দিয়েছি। এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হয়েছে। আমার
পরীক্ষা চলছে। আমরা নতুন করে হয়রানির আশাঙ্কা করছি।’ নোটিশ দেয়ার বিষয়ে
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী
বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী
দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে।’ ছাত্রীদের হয়রানির আশঙ্কার বিষয়ে
তিনি বলেন, ‘কারো শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এখানে যারা অভিযুক্ত তাদেরই নোটিশ
দেয়া হয়েছে। বিনা কারণে কাউকে হয়রানি করা হবে না।’ তবে কতজনকে নোটিশ দেয়া
হয়েছে তা জানাতে পারেননি প্রক্টর। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বলতে
পারবেন।’ তবে হলের আবাসিক ছাত্রীদের সূত্রে জানা গেছে প্রায় ২৬ জনকে এ
ধরনের নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা
রেজওয়ানা রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ
করেননি। এদিকে ছাত্রীদের নোটিশ দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার
সংরক্ষণ পরিষদ এর যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘সেদিন দু’টা পক্ষের মধ্যে
ঝামেলা হয়েছে। একটি পক্ষ আন্দোলনে যেতে বাধা ও ছাত্রীদের নির্যাতন করায়
অন্যরা প্রতিবাদ করেছে। তবে সেখানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এটি ভুল
বোঝাবুঝি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িগড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেটি আরো
বেড়েছে। তাই আমি বলবো এখন এসব নোটিশ দিয়ে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়। কারণ
তাতে ঝামেলা হতে পারে। কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের সিরিয়াস সিদ্ধান্তের দিকে
না যাওয়া উচিত। উভয়পক্ষকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত।’
এর আগে গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা কর্তৃক কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের নিজ কক্ষে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোর্শেদা খানমের রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তেজিত ছাত্রীরা ইফফাত জাহান এশাকে লাঞ্ছিত করে। অপরাধ স্বীকার করায় ও বেশ কয়েক দিক থেকে রগ কাটার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন দাবি করে তাৎক্ষণিকভাবে ইশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। কিন্তু পরবর্তীতে উল্টো ইশাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা কর্তৃক কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের নিজ কক্ষে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোর্শেদা খানমের রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তেজিত ছাত্রীরা ইফফাত জাহান এশাকে লাঞ্ছিত করে। অপরাধ স্বীকার করায় ও বেশ কয়েক দিক থেকে রগ কাটার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন দাবি করে তাৎক্ষণিকভাবে ইশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। কিন্তু পরবর্তীতে উল্টো ইশাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।
No comments