মিডিয়াকে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। আমরা চাই, দেশে একটা
সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। সেটা ফিরে এসেছে। এটা যেন কেউ আর
বানচাল করতে না পারে, নষ্ট করতে না পারে। আমাদের সরকারের সময় ছয় হাজারের
মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। একটা নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে
পারে নাই। কারণ, আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করি নাই। করবোও না। জনগণের এটা
অধিকার। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলে আসছে। খুব কম গণমাধ্যমই
আছে যারা সরকারের পজেটিভ বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ করে। নেগেটিভই বেশি। আমরা
কারও কাছে দয়া-দাক্ষিণ্য চাই না। এটুকু দাবি করতেই পারি, আমরা যদি ভালো কাজ
করি সেটা যেন ভালো করে প্রচার করা হয়। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির
বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা এই দেশে কারফিউ দিয়েছে, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু কিনা, তা নিয়ে কথা বলে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিএনপি জোর গলায় গণতন্ত্রের কথা বলে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলো কিনা সে বিষয়ে বক্তব্য দেয়। কিন্তু আমরা যদি প্রশ্ন করি, এই দেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ কারা করেছে? জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। তার হ্যাঁ/না ভোট, তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, অথবা সেই ’৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন। প্রত্যেকটা নির্বাচনে ভোট চুরির প্রক্রিয়াটা আছে। এই দেশে দুর্নীতি এবং ঋণ খেলাপি কালচার, এটাতো তারাই তৈরি করেছে। অবৈধ ক্ষমতা দখল করে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে তাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই যারা অন্ধকার পথে ক্ষমতায় আসে, অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রেসিডেন্ট সায়েমকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে, তারা আবার গণতন্ত্র কীভাবে দেয়, সেটা আমি জানি না। এমনকি প্রতিদিন তো কারফিউ ছিল। তার মানে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছে, জনগণতন্ত্র তারা দেয় নাই। এটাই হলো বাস্তবতা এবং গণতন্ত্রের ভাষাও তারা বোঝে না। যারা সব সময় জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের মুখে নির্বাচন, গণতন্ত্র আবার নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কথা শুনতে হয়। সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, যারা দলও গঠন করতে পারে না, নির্বাচনও করতে পারে না। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশটা তাদের আছে। যদি কোনো অবৈধপন্থায় কেউ ক্ষমতা দখল করে, অথবা ইমার্জেন্সি আসে, অথবা মিলিটারি রুলার ক্ষমতা নেয়, তখন তাদের গুরুত্বটা বাড়ে। তখন তারা নাকি একটা পতাকা পায়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য এই দেশের।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। গণতন্ত্র আছে বলেই তো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, আজকে আকাশ জয় করেছি। এই স্যাটেলাইট নিয়ে কত কথা এবং আরো অনেক কথাই তারা বলে। নিজেদের যদি মাথায় ঘিলু কিছু কম-টম থাকে তাহলে তো বলবেই। আমি নেভির জন্য সাবমেরিন কিনেছি। বক্তৃতা শুনলাম যে, সাবমেরিন নাকি ফুটা, পুরনোটা কিনেছি। ওটা নাকি পানির নিচে চলে গেছে। সাবমেরিন তো পানির নিচেই যাবে। সেই জন্যই তো আনা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে যেদিন স্প্যান উঠলো। সব পত্রিকা লিখলো পদ্মা সেতুর স্প্যান উঠেছে। সেই কথা শুনেই একজন বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে, কেউ ওই সেতুতে উঠবেন না। আমি দেখবো ভবিষ্যতে এই সেতু হওয়ার পর তারা ওঠে কিনা। স্যাটেলাইট সম্পর্কে তো আরো কথা। কী যেন একটা আগুন জ্বালাইয়ে আকাশে উড়ে গেল, আমরা কী পেলাম? এটা থেকে কী পাবে, সেই সাধারণ জ্ঞানটুকুও যাদের নাই, তারা ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়নটা কীভাবে করবে- এটা আপনারাই বিবেচনা করেন। দেশবাসী বিবেচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টকশোতে বলছেন বা মাইকের সামনে বলছেন। কথাটা বলার পর যখন বলেন স্বাধীনতা নাই, তখন আমার প্রশ্ন, তাহলে এত কথা বললেন কীভাবে? অনলাইন মিডিয়া এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া-এর একটা নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। অনলাইন মিডিয়ার নীতিমালা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও। আমি জানি না সাংবাদিকরা কেন আতঙ্কিত হচ্ছে নীতিমালা নিয়ে। আমি সাংবাদিকদের বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ তো কখনও হয়রানি করে না। একটা মানসিক ব্যাধি আছে আমাদের দেশে। অনেকে মনে করে সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন না করলে গণমাধ্যম চলবে না। এই মানসিক ব্যাধি থেকে আমাদের বের হতে হবে। দেশের জন্য যদি ভালো কাজ করে থাকি, সেটা যেন একটু ভালোভাবে প্রচার করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে বাংলাদেশে আসার পর আজ (১৭ই মে) ৩৭ বছর পূর্ণ হলো। তবে দুঃখের কথা আমি কখনও প্রেসের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাইনি। সব সময় একটা বৈরিতা নিয়েই আমাকে এগুতে হয়েছে। সমালোচনার মুখোমুখি হয়েই আমাকে এগুতে হয়েছে। কিন্তু আমি সেগুলো নিয়ে কখনও মাথা ঘামাইনি। কারণ, আমি জানি আমি কী কাজ করছি। ন্যায় এবং সত্যের পথে থাকলে, সৎ পথে থাকলে ফলাফল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ২০০১ সালের পর আমি দেখেছি, বিএনপির অত্যাচার-নির্যাতনের কথাটা অনেকেই লিখতে চায়নি। আবার অনেকেই সাহসের সঙ্গে সংবাদ দিয়েছে। যারা দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানাই, আর যারা দেয় নাই তাদের করুণা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। আপনারা জানেন যে, দুটি পত্রিকা আমি কিন্তু পড়িও না, রাখিও না। গণভবনে ঢোকা নিষেধ। দরকার নেই আমার। ওই সার্কাসের গাধার মতো যারা বসেই থাকে দড়ি ছিঁড়বে কবে, আর পতাকা পাবে কবে? তারা তো আমার দেশের জন্য কল্যাণের কাজ হবে না। তাদের আমার দরকার নাই। তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো সাংবাদিকদের সাহায্য করে থাকি। আমরা ১২ হাজারের বেশি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা ৯টা ভাষা দিয়ে অ্যাপ তৈরি করেছি। বিভিন্ন ভাষা শেখা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, সংবাদকর্মীরা যারা আমাদের পাশে রয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। দাবি-দাওয়া ছাড়াই আমি কাজ করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কত পত্রিকা আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা লিখেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম দুর্নীতি প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু পরে তো কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। এসব মিথ্যা কথা বলা কি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? যারা এটা বলেছিল তাদের কী করা উচিত আপনারাই বলুন। এখন আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই ফিরিয়ে এনেছি। এই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র আছে বলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চার লাখ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। দুর্নীতি নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করেছিল। কিন্তু কেউ আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানাচ্ছি। এই একটি ঘটনাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর ইতিমধ্যে অষ্টম ওয়েজবোর্ড করে দিয়েছি। নবম ওয়েজবোর্ড করার প্রক্রিয়াও চলছে। কাজেই আশা করি সেটাও করা হবে। তবে আপনারা জানেন, ওয়েজবোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা থাকেন। তারা সবসময়ই একটু কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করেন। এটা আপনারা নিজেরাও ভালো করে বোঝেন। আমার এখানে কোনো ব্যাখ্যা দিতে হবে না।
সংবাদকর্মীদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী আবারো বলেন, এখানে যে প্রতিবন্ধকতাটুকু, সেটা কিন্তু আমাদের করা না। সেটা আপনাদেরই সাংবাদিক মহলের করা। কাজেই কে এসব করছে সেটা আপনারাই দেখবেন। কিন্তু আমরা চাই এটা তাড়াতাড়ি কার্যকর হোক।
আমি থাকতে থাকতে নতুন নেতা নির্বাচন করুন
এদিকে নিজের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৭তম দিবস উপলক্ষে গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শুভেচ্ছা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী আবারো দলে নতুন নেতৃত্ব দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাদের চিন্তা-ভাবনাও করতে বলেছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ৩৭ বছর হয়ে গেছে... একটা দলের সভাপতি হিসেবে ৩৭ বছরের বেশি থাকা বোধ হয় সমীচীন হবে না। এসময় শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সমস্বরে ‘না না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। শেখ হাসিনা হেসে বলেন, নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবা উচিত। আবারো সবাই ‘না না’ বলে ওঠেন। তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যতক্ষণ আছি... সংগঠনকে শক্তিশালী করা দরকার। ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাশে থেকে আওয়ামী লীগের যে কোনো কিছু অর্জন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। যারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। আর একটা শ্রেণি আছে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তারা মিলিটারি ডিক্টেটরদের পা চেটে চলতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা ডেমোক্রেসি দেখে না। বুটের লাথি খেলে ভালো লাগে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, তাদের আমলে ডেমোক্রেসি থাকে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য রাজনীতি করেননি। প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের জন্য আত্মবিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের বলেন, বারবার বাধা এসেছে, আসবে; এটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, যারা এই দেশে কারফিউ দিয়েছে, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু কিনা, তা নিয়ে কথা বলে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিএনপি জোর গলায় গণতন্ত্রের কথা বলে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলো কিনা সে বিষয়ে বক্তব্য দেয়। কিন্তু আমরা যদি প্রশ্ন করি, এই দেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ কারা করেছে? জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। তার হ্যাঁ/না ভোট, তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, অথবা সেই ’৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন। প্রত্যেকটা নির্বাচনে ভোট চুরির প্রক্রিয়াটা আছে। এই দেশে দুর্নীতি এবং ঋণ খেলাপি কালচার, এটাতো তারাই তৈরি করেছে। অবৈধ ক্ষমতা দখল করে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে তাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই যারা অন্ধকার পথে ক্ষমতায় আসে, অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রেসিডেন্ট সায়েমকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে, তারা আবার গণতন্ত্র কীভাবে দেয়, সেটা আমি জানি না। এমনকি প্রতিদিন তো কারফিউ ছিল। তার মানে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছে, জনগণতন্ত্র তারা দেয় নাই। এটাই হলো বাস্তবতা এবং গণতন্ত্রের ভাষাও তারা বোঝে না। যারা সব সময় জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের মুখে নির্বাচন, গণতন্ত্র আবার নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কথা শুনতে হয়। সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, যারা দলও গঠন করতে পারে না, নির্বাচনও করতে পারে না। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশটা তাদের আছে। যদি কোনো অবৈধপন্থায় কেউ ক্ষমতা দখল করে, অথবা ইমার্জেন্সি আসে, অথবা মিলিটারি রুলার ক্ষমতা নেয়, তখন তাদের গুরুত্বটা বাড়ে। তখন তারা নাকি একটা পতাকা পায়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য এই দেশের।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। গণতন্ত্র আছে বলেই তো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, আজকে আকাশ জয় করেছি। এই স্যাটেলাইট নিয়ে কত কথা এবং আরো অনেক কথাই তারা বলে। নিজেদের যদি মাথায় ঘিলু কিছু কম-টম থাকে তাহলে তো বলবেই। আমি নেভির জন্য সাবমেরিন কিনেছি। বক্তৃতা শুনলাম যে, সাবমেরিন নাকি ফুটা, পুরনোটা কিনেছি। ওটা নাকি পানির নিচে চলে গেছে। সাবমেরিন তো পানির নিচেই যাবে। সেই জন্যই তো আনা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে যেদিন স্প্যান উঠলো। সব পত্রিকা লিখলো পদ্মা সেতুর স্প্যান উঠেছে। সেই কথা শুনেই একজন বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে, কেউ ওই সেতুতে উঠবেন না। আমি দেখবো ভবিষ্যতে এই সেতু হওয়ার পর তারা ওঠে কিনা। স্যাটেলাইট সম্পর্কে তো আরো কথা। কী যেন একটা আগুন জ্বালাইয়ে আকাশে উড়ে গেল, আমরা কী পেলাম? এটা থেকে কী পাবে, সেই সাধারণ জ্ঞানটুকুও যাদের নাই, তারা ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়নটা কীভাবে করবে- এটা আপনারাই বিবেচনা করেন। দেশবাসী বিবেচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টকশোতে বলছেন বা মাইকের সামনে বলছেন। কথাটা বলার পর যখন বলেন স্বাধীনতা নাই, তখন আমার প্রশ্ন, তাহলে এত কথা বললেন কীভাবে? অনলাইন মিডিয়া এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া-এর একটা নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। অনলাইন মিডিয়ার নীতিমালা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও। আমি জানি না সাংবাদিকরা কেন আতঙ্কিত হচ্ছে নীতিমালা নিয়ে। আমি সাংবাদিকদের বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ তো কখনও হয়রানি করে না। একটা মানসিক ব্যাধি আছে আমাদের দেশে। অনেকে মনে করে সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন না করলে গণমাধ্যম চলবে না। এই মানসিক ব্যাধি থেকে আমাদের বের হতে হবে। দেশের জন্য যদি ভালো কাজ করে থাকি, সেটা যেন একটু ভালোভাবে প্রচার করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে বাংলাদেশে আসার পর আজ (১৭ই মে) ৩৭ বছর পূর্ণ হলো। তবে দুঃখের কথা আমি কখনও প্রেসের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাইনি। সব সময় একটা বৈরিতা নিয়েই আমাকে এগুতে হয়েছে। সমালোচনার মুখোমুখি হয়েই আমাকে এগুতে হয়েছে। কিন্তু আমি সেগুলো নিয়ে কখনও মাথা ঘামাইনি। কারণ, আমি জানি আমি কী কাজ করছি। ন্যায় এবং সত্যের পথে থাকলে, সৎ পথে থাকলে ফলাফল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ২০০১ সালের পর আমি দেখেছি, বিএনপির অত্যাচার-নির্যাতনের কথাটা অনেকেই লিখতে চায়নি। আবার অনেকেই সাহসের সঙ্গে সংবাদ দিয়েছে। যারা দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানাই, আর যারা দেয় নাই তাদের করুণা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। আপনারা জানেন যে, দুটি পত্রিকা আমি কিন্তু পড়িও না, রাখিও না। গণভবনে ঢোকা নিষেধ। দরকার নেই আমার। ওই সার্কাসের গাধার মতো যারা বসেই থাকে দড়ি ছিঁড়বে কবে, আর পতাকা পাবে কবে? তারা তো আমার দেশের জন্য কল্যাণের কাজ হবে না। তাদের আমার দরকার নাই। তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো সাংবাদিকদের সাহায্য করে থাকি। আমরা ১২ হাজারের বেশি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা ৯টা ভাষা দিয়ে অ্যাপ তৈরি করেছি। বিভিন্ন ভাষা শেখা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, সংবাদকর্মীরা যারা আমাদের পাশে রয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। দাবি-দাওয়া ছাড়াই আমি কাজ করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কত পত্রিকা আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা লিখেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম দুর্নীতি প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু পরে তো কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। এসব মিথ্যা কথা বলা কি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? যারা এটা বলেছিল তাদের কী করা উচিত আপনারাই বলুন। এখন আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই ফিরিয়ে এনেছি। এই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র আছে বলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চার লাখ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। দুর্নীতি নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করেছিল। কিন্তু কেউ আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানাচ্ছি। এই একটি ঘটনাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর ইতিমধ্যে অষ্টম ওয়েজবোর্ড করে দিয়েছি। নবম ওয়েজবোর্ড করার প্রক্রিয়াও চলছে। কাজেই আশা করি সেটাও করা হবে। তবে আপনারা জানেন, ওয়েজবোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা থাকেন। তারা সবসময়ই একটু কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করেন। এটা আপনারা নিজেরাও ভালো করে বোঝেন। আমার এখানে কোনো ব্যাখ্যা দিতে হবে না।
সংবাদকর্মীদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী আবারো বলেন, এখানে যে প্রতিবন্ধকতাটুকু, সেটা কিন্তু আমাদের করা না। সেটা আপনাদেরই সাংবাদিক মহলের করা। কাজেই কে এসব করছে সেটা আপনারাই দেখবেন। কিন্তু আমরা চাই এটা তাড়াতাড়ি কার্যকর হোক।
আমি থাকতে থাকতে নতুন নেতা নির্বাচন করুন
এদিকে নিজের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৭তম দিবস উপলক্ষে গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শুভেচ্ছা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী আবারো দলে নতুন নেতৃত্ব দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাদের চিন্তা-ভাবনাও করতে বলেছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ৩৭ বছর হয়ে গেছে... একটা দলের সভাপতি হিসেবে ৩৭ বছরের বেশি থাকা বোধ হয় সমীচীন হবে না। এসময় শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সমস্বরে ‘না না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। শেখ হাসিনা হেসে বলেন, নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবা উচিত। আবারো সবাই ‘না না’ বলে ওঠেন। তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যতক্ষণ আছি... সংগঠনকে শক্তিশালী করা দরকার। ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাশে থেকে আওয়ামী লীগের যে কোনো কিছু অর্জন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। যারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। আর একটা শ্রেণি আছে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তারা মিলিটারি ডিক্টেটরদের পা চেটে চলতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা ডেমোক্রেসি দেখে না। বুটের লাথি খেলে ভালো লাগে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, তাদের আমলে ডেমোক্রেসি থাকে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য রাজনীতি করেননি। প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের জন্য আত্মবিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের বলেন, বারবার বাধা এসেছে, আসবে; এটাই স্বাভাবিক।
No comments