দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে : খালেদা জিয়া
বাংলাদেশে
এখন ভয়াবহ দুঃসময় বয়ে চলছে মন্তব্য করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা
জিয়া বলেছেন, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পূর্বাপর বাংলাদেশকে
বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীন জোট সীমাহীন রক্তপাত ও
বেপরোয়া নিপীড়ন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে
হরণ করে নিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকারের পরিপূরক। অথচ
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূণ্যের নিচে অবস্থান করছে।
আগামীকাল রোববার আন্তজার্তিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমে দেয়া এক
বিবৃতিতে বেগম জিয়া এসব বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
মৌলিক মানবিক অধিকার হারা নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে
বলেন, যারা বাক, ব্যাক্তি, চিন্তা, প্রার্থনা, মূদ্রণসহ নাগরিক স্বাধীনতার
জন্য সোচ্চার হতে গিয়ে ক্ষমতাসীন স্বেচ্ছাচারী গোষ্ঠির নৃশংস নিপীড়নে
আত্মদান করেছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। খালেদা জিয়া বলেন, আজো
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানুষ একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসন, গোষ্ঠী,
বর্ণ ও জাতিগত সংঘাতে অবলীলায় খুন ও গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছে এবং অদৃশ্য
হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে
অসংখ্য মানুষ। জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষণায় বলা হয়েছে বিশ্বের সব জাতির সকল
মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু দেশে দেশে
নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকেরা জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার
নির্দেশনাগুলোকে তাচ্ছিল্য করে নিজ দেশের জনগণের উপর চালিয়ে যাচ্ছে
বর্বোরোচিত আক্রমণ। শুধু ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য জনমতকে
অগ্রাহ্য করতে হয়, আর সেজন্য এই সকল গণবিরোধী শাসক গোষ্ঠী জনগণের
মানবাধিকারের তোয়াক্কা করেনা। সুতরাং দুঃশাসনের অচলায়তন তৈরী করতে গিয়ে
তারা প্রতিবাদি জনগণের ওপর নামিয়ে আনে পৈশাচিক উৎপীড়ন। যারা সত্য উচ্চারণ
করতে চায় তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজিবিসহ নাগরিক
সমাজের যেই হোকনা কেনো, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং
কারাবাস, শারিরিকভাবে নির্যাতনসহ জখম, হত্যা ও গুমেরও শিকার হতে হয়। সাবেক
এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময় চলছে। এদেশে শুধু
বিরোধীদলের নেতাকর্মীরাই শুধু নয়, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র,
শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোই কোনো নিরাপত্তা নেই। এদের অধিকাংশই
গুম, গুপ্ত হত্যা এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। সরকারের
বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দল নিরেপক্ষ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টকশো আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে
এবং কাউকে কাউকে কারান্তরীণও করে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘মানবাধিকার
দিবস’ এর এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “আমাদের অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা;
সর্বদা”। বর্তমানে বাংলাদেশে জনগণের না আছে নাগরিক স্বাধীনতা, না আছে মৌলিক
মানবিক অধিকার। সুতরাং এই নৈরাজ্যকর দুঃশাসনের ছোবল থেকে মুক্তি পেতে হলে
আমাদের এই মুহুর্তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য
এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের
মিলিত কন্ঠের আওয়াজ তুলে বর্তমান অপশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত
মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।
No comments