কিস্তির টাকা যোগাতে শিক্ষার্থীর ঝুড়ি ভাজা বিক্রি
পায়ে
পুরাতন একট বার্মিস পাদুকা। মাথার অংশ থেকে বেশ খানিকটা ছিড়েগেছে পাদুকার।
এমনই এক জোড়া পাদুকা পায়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে
শিক্ষার্থীদের কাছে ঝুড়ি ভাজা বিক্রি করছে। হাতে ক্যামেরা দেখতেই ঝুড়ি ভাজা
ফেলে ছবি উঠার জন্য প্রস্তুত। ভাইয়া, আমাকে একটা ছবি তুলবেন? ছেলেটির নাম
শাহিন। বয়স দশ বছরের বেশি না। সারা দেশ থেকে ছুটে এসেছে অভিভাবক
শিক্ষার্থীরা। আর দশ জন শিক্ষার্থীর মত শাহিন ও তার জমজ ভাই সুমনও ইবি
ক্যাম্পাসে এসেছে। তবে তাদের চাওয়া ভিন্ন। ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীরা
তাদের ঝুড়ি ভাজা কিনবে এটাই তাদের চাওয়া। ঝুড়ি ভাজা বিক্রি থেকে আয়কৃত টাকা
দিয়ে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা যোগায় জমজ দুই ভাই। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ড
থানার ত্রিবেনী ইউনিয়নের বাসিন্দা সৌকত মোল্লার ছেলে বসির মোল্লা। স্ত্রী,
দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করে
মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। ছেলে দুইটা জমজ। শাহিন ও সুমন।
শাহিন-সুমন চলতি বছরে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
ঝুড়ি বিক্রি করতে আসলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নের বুকে লালন করে তারা।
শাহিনের ভাষ্য মতে, বাবা বসির মোল্লা ঝালমুড়ি বিক্রি করে। সাথে ঝুড়ি ভাজা।
মা আর বড় বোন বাসায় ঝুড়ি ভাজা তৈরী করে। বাবা আর দুই ছেলে সেগুলো
বাজারে/গ্রামে ঘুরে বিক্রি করে। বাড়িতে একটি গরু আছে। গরুর দেখা শোনা করে
শাহিনের মা নিজেই। ঝালমুড়ি আর ঝুড়ি ভাজা বিক্রি করে আয়কৃত অর্থ দিয়ে সংসার
চালায় শাহিনের বাবা। এছাড়াও তিনটি সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে তার পরিবার।
প্রতিমাসে ১১ হাজার ৫ শত টাকা কিস্তি দিতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে খেলাধুলা ছেড়ে
লেখাপড়ার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের জন্য ঝুড়ি ভাজা বিক্রি করে শাহিন-সুমন।
সারা দিন বিক্রি করে চার থেকে পাঁচ শত টাকা হয়। পাঁচশত টাকা বিক্রি হলে দুই
শত টাকার বেশি লাভ হয় বলে জানায় শাহিন। তবে ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার
উপলক্ষ্যে লোকজন বেশি থাকায় বিক্রি এখন বেশি। জমজ ভাই সুমন বেচা-বিক্রিতে
পারদর্শী না। তাই শাহিনের সাথে বিক্রি করে কোন দিনই পারে না সুমন। ঝুড়ি
ভাজা বিক্রেতা শাহিন-সুমন লালন করে এক বুক আশা। আমরা বড় হয়ে ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করব। তখন আর ঝুড়ি ভাজা বিক্রি করতে হবে না। এত
কষ্টও হবে না। আপনাদের মত আমরাও খেলতে পারব। আমি কিন্তু অনেক ভালো বল করতে
পারি। কিন্তু আমার মা আমাকে খেলতে দেয় না। ঝুড়ি ভাজা বিক্রি না করলে আব্বার
সপ্তাহ শেষে কিস্তির টাকা গোছে না। কথাগুলো হেসে হেসেই বলছিল শাহিন। তবে
তার চার পাশে দাড়িয়ে থাকা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চোখে ততক্ষনে পানি টলমল
করছে। শাহিন বলে, ‘ প্রতিদিন বিক্রি করে যে টাকা হয়, তা দিয়ে ময়দা কিনে
নিয়ে যাই। মা বাড়িতে ঝুড়ি ভাজে। আমরা দুই ভাই বিক্রি করি। আব্বা ঝাল মুড়ি
বিক্রি করে।’
No comments