গিয়াস কামাল চৌধুরী by মীযানুল করীম
আজ ২৬ অক্টোবর। প্রখ্যাত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর এ দিনে তিনি ৭৪ বছর বয়সে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। এর আগে কয়েক বছর ধরে ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ২১ জুলাই ফেনী জেলার সদর উপজেলার শর্শাদির চৌধুরী পরিবারে। গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অঙ্গনে শুধু একজন সিনিয়র সাংবাদিকই ছিলেন না, সংবাদপত্রসেবীদের সংগ্রামী ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিসেবেও ছিলেন সুপরিচিত। ছাত্রজীবন থেকেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, সেই সাথে স্বতন্ত্র জাতিসত্তা এবং বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের প্রশ্নে গিয়াস কামাল ছিলেন বরাবর আপসহীন। আমাদের জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামি মূল্যবোধে উজ্জীবিত যে ধারা, এর সপক্ষে এবং সর্বপ্রকার আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তার অবস্থান ছিল সামনের সারিতে।
গিয়াস কামালের বাবা রফিক উদ্দীন চৌধুরী একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। মা মুনীর আখতার খাতুন চৌধুরাণী ছিলেন কাব্যপ্রতিভার অধিকারী। পিতার কর্মস্থল, চট্টগ্রাম শহরে জন্ম হলেও গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্কুলজীবন কেটেছে ফেনী (বর্তমানে সরকারি পাইলট) হাইস্কুলে। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলনে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে যান। তিনি মাস্টার্স ও আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি ছাড়াও সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তখনো এ দেশে সাংবাদিকতায় ডিগ্রি বা অনার্স কোর্স চালু হয়নি।
গিয়াস কামাল চৌধুরী রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ। ছাত্রজীবন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজের, যেখানে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার হবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় ১৯৬২ সালের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি কারারুদ্ধও হয়েছিলেন।
গিয়াস কামাল সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করে গেছেন একনাগাড়ে চার দশকেরও বেশি সময়। কর্মজীবনের সূচনা করেন ১৯৬৪ সালে ‘ঢাকা টাইমস’ পত্রিকায় যোগ দিয়ে। এটি ছিল ইত্তেফাক গ্রুপের সাপ্তাহিক প্রকাশনা। পরে তিনি ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজের সাথে জড়িত হন। বাংলাদেশ হওয়ার পরে যোগ দেন জাতীয় বার্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায়। এখানে কাটিয়েছেন প্রায় তিন দশক। শেষ জীবনে দৈনিক খবরপত্র সম্পাদনা করেছেন। তিনি বেশ কয়েক বছর ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি।
আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনকালে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সংবাদ শোনার জন্য দেশের মানুষ সাগ্রহে প্রতীক্ষা করত। এর কারণ, গিয়াস কামালের স্বকণ্ঠে দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি ফুটে উঠত এই সংবাদে। তিনি সরকার নিয়ন্ত্রিত বাসসের সাংবাদিক হয়েও তখন পেশাগত কাজে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
গিয়াস কামাল আজীবন সোচ্চার ছিলেন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে। সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতাসহ ন্যায্য দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি জাতীয় প্রেস কাবের সভাপতিও ছিলেন। যদিও লিখেছেন কম, তবুও সাপ্তাহিক বিক্রমসহ কয়েকটি পত্রিকায় তার কলামগুলো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার প্রতিফলন। সাংবাদিকতার অঙ্গনে অবদান রাখার জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে কুমিল্লা শহরের ঐতিহ্যবাহী দারোগাবাড়ির সাথে তার ছিল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা। সাহিত্যিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী ও প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু সম্পর্কের দিক দিয়ে তার চাচা। কবি বেলাল চৌধুরী তার আপন ভাই।
নব্বই দশকের প্রথম দিকে গিয়াস কামাল চৌধুরী ব্রেইন হেমারেজে আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও বিশেষ করে ২০১১ সালে আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। ফলে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং চলৎশক্তিরহিত অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন বহু দিন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি সরব সংগ্রামী জীবনের অবসান হলেও গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার কায়েমের আন্দোলনে তার বিরাট অবদান স্মরণীয় হয়ে থকাবে।
গিয়াস কামালের বাবা রফিক উদ্দীন চৌধুরী একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। মা মুনীর আখতার খাতুন চৌধুরাণী ছিলেন কাব্যপ্রতিভার অধিকারী। পিতার কর্মস্থল, চট্টগ্রাম শহরে জন্ম হলেও গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্কুলজীবন কেটেছে ফেনী (বর্তমানে সরকারি পাইলট) হাইস্কুলে। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলনে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে যান। তিনি মাস্টার্স ও আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি ছাড়াও সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তখনো এ দেশে সাংবাদিকতায় ডিগ্রি বা অনার্স কোর্স চালু হয়নি।
গিয়াস কামাল চৌধুরী রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ। ছাত্রজীবন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজের, যেখানে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার হবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় ১৯৬২ সালের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি কারারুদ্ধও হয়েছিলেন।
গিয়াস কামাল সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করে গেছেন একনাগাড়ে চার দশকেরও বেশি সময়। কর্মজীবনের সূচনা করেন ১৯৬৪ সালে ‘ঢাকা টাইমস’ পত্রিকায় যোগ দিয়ে। এটি ছিল ইত্তেফাক গ্রুপের সাপ্তাহিক প্রকাশনা। পরে তিনি ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজের সাথে জড়িত হন। বাংলাদেশ হওয়ার পরে যোগ দেন জাতীয় বার্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায়। এখানে কাটিয়েছেন প্রায় তিন দশক। শেষ জীবনে দৈনিক খবরপত্র সম্পাদনা করেছেন। তিনি বেশ কয়েক বছর ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি।
আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনকালে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সংবাদ শোনার জন্য দেশের মানুষ সাগ্রহে প্রতীক্ষা করত। এর কারণ, গিয়াস কামালের স্বকণ্ঠে দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি ফুটে উঠত এই সংবাদে। তিনি সরকার নিয়ন্ত্রিত বাসসের সাংবাদিক হয়েও তখন পেশাগত কাজে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
গিয়াস কামাল আজীবন সোচ্চার ছিলেন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে। সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতাসহ ন্যায্য দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি জাতীয় প্রেস কাবের সভাপতিও ছিলেন। যদিও লিখেছেন কম, তবুও সাপ্তাহিক বিক্রমসহ কয়েকটি পত্রিকায় তার কলামগুলো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার প্রতিফলন। সাংবাদিকতার অঙ্গনে অবদান রাখার জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে কুমিল্লা শহরের ঐতিহ্যবাহী দারোগাবাড়ির সাথে তার ছিল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা। সাহিত্যিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী ও প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু সম্পর্কের দিক দিয়ে তার চাচা। কবি বেলাল চৌধুরী তার আপন ভাই।
নব্বই দশকের প্রথম দিকে গিয়াস কামাল চৌধুরী ব্রেইন হেমারেজে আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও বিশেষ করে ২০১১ সালে আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। ফলে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং চলৎশক্তিরহিত অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন বহু দিন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি সরব সংগ্রামী জীবনের অবসান হলেও গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার কায়েমের আন্দোলনে তার বিরাট অবদান স্মরণীয় হয়ে থকাবে।
No comments