ঘরে ১০ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার কাজ করেন নারী -সিপিডির গবেষণা
নারী ঘরে করেন এমন কাজের আর্থিক মূল্য গত
অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশের সমান। চলতি
মূল্যে টাকার অঙ্কে তা ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। স্থায়ী মূল্যে এটা
পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাবে, ওই বছর চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ছিল ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ কোটি টাকার।
মজুরি দেওয়া হয় না বা স্বীকৃতি নেই গৃহস্থালির এমন কাজের অন্যতম হলো রান্না, বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিবারের সদস্যদের পরিচর্যা ও সহায়তা করা। এসব কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করাতে যত ব্যয় হতো, সেই হিসাবে এর আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় প্রতিস্থাপন পদ্ধতি। তবে মজুরি না পাওয়ায় জাতীয় আয়ে নারীর এ ধরনের কাজের আর্থিক প্রতিফলন ঘটে না।
গ্রহণযোগ্য মূল্যপদ্ধতি ব্যবহার করে নারীর এ ধরনের কাজের আর্থিক মূল্য নির্ধারণের আরেকটি হিসাবে দেখা গেছে, জাতীয় আয়ের বাইরে রয়ে গেছে, এমন কাজের আর্থিক মূল্য জিডিপির ৮৭ দশমিক ২ শতাংশের সমান। গত অর্থবছরে নারীর এমন কাজের আর্থিক মূল্য প্রায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার দুই কোটি টাকা। স্থায়ী মূল্যে এটা ছয় লাখ ৭৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। নারীরা যে কাজ করে কোনো মজুরি পান না, এমন কাজ করাতে চাইলে একজন লোক যে মজুরি দিতেন, সেই পদ্ধতি ব্যবহার করে এ হিসাব করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে পরিবারের সদস্যদের পরিচর্যা ও সহায়তামতো বিষয়গুলোকে যুক্ত করা হয়।
মজুরি দেওয়া হয় না বা স্বীকৃতি নেই গৃহস্থালির এমন কাজের অন্যতম হলো রান্না, বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিবারের সদস্যদের পরিচর্যা ও সহায়তা করা। এসব কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করাতে যত ব্যয় হতো, সেই হিসাবে এর আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় প্রতিস্থাপন পদ্ধতি। তবে মজুরি না পাওয়ায় জাতীয় আয়ে নারীর এ ধরনের কাজের আর্থিক প্রতিফলন ঘটে না।
গ্রহণযোগ্য মূল্যপদ্ধতি ব্যবহার করে নারীর এ ধরনের কাজের আর্থিক মূল্য নির্ধারণের আরেকটি হিসাবে দেখা গেছে, জাতীয় আয়ের বাইরে রয়ে গেছে, এমন কাজের আর্থিক মূল্য জিডিপির ৮৭ দশমিক ২ শতাংশের সমান। গত অর্থবছরে নারীর এমন কাজের আর্থিক মূল্য প্রায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার দুই কোটি টাকা। স্থায়ী মূল্যে এটা ছয় লাখ ৭৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। নারীরা যে কাজ করে কোনো মজুরি পান না, এমন কাজ করাতে চাইলে একজন লোক যে মজুরি দিতেন, সেই পদ্ধতি ব্যবহার করে এ হিসাব করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে পরিবারের সদস্যদের পরিচর্যা ও সহায়তামতো বিষয়গুলোকে যুক্ত করা হয়।
>>রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল সিপিডি আয়োজিত ‘অর্থনীতিতে নারীদের অবদান নিরূপণ: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ সংলাপে (বাঁ থেকে) সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান l প্রথম আলো
বেসরকারি
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণায় এ তথ্য
বেরিয়ে এসেছে। গতকাল শনিবার ‘অর্থনীতিতে নারীদের অবদান নিরূপণ: বাংলাদেশ
প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এ গবেষণার ওপর সংলাপের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।
সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে রাজধানীর এক হোটেলে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অর্থনীতিবিদ, নারীনেত্রী, এনজিও ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। ‘মর্যাদায় গড়ি সমতা’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এ গবেষণায় সহায়তা দিয়েছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা আখতার, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট শাহিদা পারভীন এ গবেষণা করেন।
ফলাফল: গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন নারী প্রতিদিন গড়ে একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সময় এমন কাজ করেন, যা জাতীয় আয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। একজন নারী এমন কাজ করেন প্রতিদিন গড়ে ৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা। আর পুরুষ করেন মাত্র আড়াই ঘণ্টা। একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজ করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ কাজের গড় সংখ্যা ২ দশমিক ৭। জাতীয় আয়ে নারীর যে পরিমাণ কাজের স্বীকৃতি আছে, তার চেয়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৯ গুণ কাজের স্বীকৃতি নেই।
গবেষণার ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, মজুরিহীন কাজে সম্পৃক্ত নারীদের তিন-চতুর্থাংশই মজুরি পাওয়া যাবে এমন কাজ করতে চান না। শহরে এমন নারীর হার ৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ, গ্রামে ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ। মজুরি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নন এমন নারীদের ৬০ শতাংশই বলেছেন, তাঁদের পরিবার চায় না তাঁরা বাইরে কাজ করুক। ওই নারীদের কাজ করতে না চাওয়ার অন্য কারণগুলো হলো পরিবারকে অধিক সময় দিতে চান, পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়ার কেউ নেই, উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না, অসুস্থতা, অর্থের প্রয়োজন নেই এবং পারিবারিক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা।
গবেষণায় দেখা গেছে, মজুরির টাকা খরচ করতে ৪০ শতাংশ নারীকে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। আর ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী নিজের ইচ্ছামতো খরচ করতে পারেন। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৮৯ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত রয়েছেন, যাঁরা কোনো মজুরি পান না।
নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জাতীয় হিসাবব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা, গৃহস্থালির কাজের ভার কমানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ, নারীর মজুরি বৃদ্ধি।
সারা দেশের ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের মোট ১৩ হাজার ৬৪০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী আট হাজার ৩২০ জন এবং পুরুষ পাঁচ হাজার ৩২০ জন। গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে জরিপকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আলোচনা: সংলাপ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাকে হিসাববিদ বানিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়নি, মায়ের অবদান জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’ তিনি মনে করেন, নারীকে বাইরে রেখে কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সফল হবে না। তাই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতিতে নারীর অবদান যথেষ্ট মাত্রায় অবমূল্যায়িত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে নারীদের কীভাবে আরও বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করা যায়, সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেসব নারী আয় করেন, কিন্তু তাঁদের ইচ্ছামতো খরচ করার অধিকার নেই। পরিবার বা স্বামীর সঙ্গে আলাপ করে খরচ করতে হয়। এ ছাড়া মজুরি বা বাজারভিত্তিক সমস্যাও রয়েছে। অনেক নারী বলেছেন, ঘরে-বাইরে কাজ করার পর তাঁরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান না। এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, নারীর অবদানের স্বীকৃতি নেই, এটা সব সময় বলা হয়। কিন্তু কীভাবে তাঁদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া যায়, নীতিকাঠামোতে তা থাকা উচিত।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম মনে করেন, সমাজে নারীদের প্রকৃত মর্যাদা দেওয়া হয় না। বিনা মজুরিতে করা কাজের হিসাব না করায় সমাজে তাঁদের অবদান বোঝা যায় না। তাঁদের অবদান নীতিনির্ধারকদের জানা দরকার।
মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেনের মতে, নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে সন্তানদের স্কুল থেকে আনা-নেওয়া করেন মায়েরা। মায়েদের এ কাজের স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়টি পুরুষদের কৃষ্টিগত সমস্যা। আর নিরাপত্তাহীনতা রাজনৈতিক সমস্যা। পুরো বিষয়টি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও দেখতে হবে।
সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মালেকা বেগম বলেন, মেয়েদের কাজটা নির্দিষ্ট করা হয় নিম্নতম মজুরি দিয়ে। তাঁদের অফিসের টেলিফোন অপারেটর, অভ্যর্থনাকেন্দ্রের কর্মীর মতো কাজ দেওয়া হয়। সেখানে তো কম মজুরিই দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘আমরা নারী নির্যাতনের কথা নীতিনির্ধারকদের অনেক বলেছি, কাজ হয়নি। কিন্তু বিবিএস যখন এ নিয়ে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করল, তখন নীতিনির্ধারকেরা নড়েচড়ে ওঠেন।’
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, জাতিসংঘের সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা খান, বেসরকারি সংস্থা নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, ব্র্যাকের পরিচালক ফস্টিনা পেরেইরা, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সায়েমা এইচ বিদিশা, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অর্থনীতিবিদ সালমান জাইদী প্রমুখ।
সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে রাজধানীর এক হোটেলে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অর্থনীতিবিদ, নারীনেত্রী, এনজিও ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। ‘মর্যাদায় গড়ি সমতা’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এ গবেষণায় সহায়তা দিয়েছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা আখতার, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট শাহিদা পারভীন এ গবেষণা করেন।
ফলাফল: গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন নারী প্রতিদিন গড়ে একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সময় এমন কাজ করেন, যা জাতীয় আয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। একজন নারী এমন কাজ করেন প্রতিদিন গড়ে ৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা। আর পুরুষ করেন মাত্র আড়াই ঘণ্টা। একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজ করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ কাজের গড় সংখ্যা ২ দশমিক ৭। জাতীয় আয়ে নারীর যে পরিমাণ কাজের স্বীকৃতি আছে, তার চেয়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৯ গুণ কাজের স্বীকৃতি নেই।
গবেষণার ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, মজুরিহীন কাজে সম্পৃক্ত নারীদের তিন-চতুর্থাংশই মজুরি পাওয়া যাবে এমন কাজ করতে চান না। শহরে এমন নারীর হার ৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ, গ্রামে ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ। মজুরি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নন এমন নারীদের ৬০ শতাংশই বলেছেন, তাঁদের পরিবার চায় না তাঁরা বাইরে কাজ করুক। ওই নারীদের কাজ করতে না চাওয়ার অন্য কারণগুলো হলো পরিবারকে অধিক সময় দিতে চান, পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়ার কেউ নেই, উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না, অসুস্থতা, অর্থের প্রয়োজন নেই এবং পারিবারিক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা।
গবেষণায় দেখা গেছে, মজুরির টাকা খরচ করতে ৪০ শতাংশ নারীকে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। আর ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী নিজের ইচ্ছামতো খরচ করতে পারেন। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৮৯ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত রয়েছেন, যাঁরা কোনো মজুরি পান না।
নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জাতীয় হিসাবব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা, গৃহস্থালির কাজের ভার কমানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ, নারীর মজুরি বৃদ্ধি।
সারা দেশের ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের মোট ১৩ হাজার ৬৪০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী আট হাজার ৩২০ জন এবং পুরুষ পাঁচ হাজার ৩২০ জন। গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে জরিপকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আলোচনা: সংলাপ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাকে হিসাববিদ বানিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়নি, মায়ের অবদান জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’ তিনি মনে করেন, নারীকে বাইরে রেখে কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সফল হবে না। তাই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতিতে নারীর অবদান যথেষ্ট মাত্রায় অবমূল্যায়িত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে নারীদের কীভাবে আরও বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করা যায়, সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেসব নারী আয় করেন, কিন্তু তাঁদের ইচ্ছামতো খরচ করার অধিকার নেই। পরিবার বা স্বামীর সঙ্গে আলাপ করে খরচ করতে হয়। এ ছাড়া মজুরি বা বাজারভিত্তিক সমস্যাও রয়েছে। অনেক নারী বলেছেন, ঘরে-বাইরে কাজ করার পর তাঁরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান না। এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, নারীর অবদানের স্বীকৃতি নেই, এটা সব সময় বলা হয়। কিন্তু কীভাবে তাঁদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া যায়, নীতিকাঠামোতে তা থাকা উচিত।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম মনে করেন, সমাজে নারীদের প্রকৃত মর্যাদা দেওয়া হয় না। বিনা মজুরিতে করা কাজের হিসাব না করায় সমাজে তাঁদের অবদান বোঝা যায় না। তাঁদের অবদান নীতিনির্ধারকদের জানা দরকার।
মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেনের মতে, নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে সন্তানদের স্কুল থেকে আনা-নেওয়া করেন মায়েরা। মায়েদের এ কাজের স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়টি পুরুষদের কৃষ্টিগত সমস্যা। আর নিরাপত্তাহীনতা রাজনৈতিক সমস্যা। পুরো বিষয়টি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও দেখতে হবে।
সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মালেকা বেগম বলেন, মেয়েদের কাজটা নির্দিষ্ট করা হয় নিম্নতম মজুরি দিয়ে। তাঁদের অফিসের টেলিফোন অপারেটর, অভ্যর্থনাকেন্দ্রের কর্মীর মতো কাজ দেওয়া হয়। সেখানে তো কম মজুরিই দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘আমরা নারী নির্যাতনের কথা নীতিনির্ধারকদের অনেক বলেছি, কাজ হয়নি। কিন্তু বিবিএস যখন এ নিয়ে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করল, তখন নীতিনির্ধারকেরা নড়েচড়ে ওঠেন।’
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, জাতিসংঘের সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা খান, বেসরকারি সংস্থা নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, ব্র্যাকের পরিচালক ফস্টিনা পেরেইরা, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সায়েমা এইচ বিদিশা, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অর্থনীতিবিদ সালমান জাইদী প্রমুখ।
No comments