আওয়ামী লীগ-বিএনপি ডিসেম্বর টার্গেট ধরেই এগোচ্ছে...
ডিসেম্বর টার্গেট ধরেই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। সরকারি দল ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে চাঙা করতে ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন, জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছে। তৃণমূলে কোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফর শুরু করেছেন। অন্যদিকে ২০ দল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠনে জেলায় জেলায় জনসভার মাধ্যম জোরালো কর্মসূচি দিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের তরফে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব না এলে আবারও রাজপথের আন্দোলনে নামবে। ইতিমধ্যে ২০দলীয় জোট নেত্রী জেলা সফর শুরু করেছেন।
ডিসেম্বরের মধ্যেই দল গোছানোর প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের চলতি বছরের মধ্যেই দল গোছানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন, জেলা ও উপজেলা সম্মেলন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে প্রাণবন্ত করতে ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্র থেকে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর দলের সবপর্যায়ে সম্মেলনের বিধান রয়েছে। কিন্তু দুই দশক ধরে সম্মেলন হয় না এমন জেলা যেমন রয়েছে আবার ১০ থেকে ১২ বছর ধরে সম্মেলন হয় না এমন জেলার সংখ্যাও ১০টির বেশি। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ বিগত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সারা দেশের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ১৫টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করতে পেরেছে। একই সঙ্গে আরও ৫শ’ উপজেলা ও থানা কমিটির সম্মেলন এই সময়ের মধ্যে হতে পারেনি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর সাংগঠনিক দিক থেকে অনেকটাই গতিহীন হয়ে পড়েছিল দলটি। ঝিমিয়ে পড়ে দলীয় কার্যক্রম। জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সময়মতো দলের কেন্দ্রীয় কমিটি করা হলেও জেলা, উপজেলা ও থানা কমিটিগুলো সম্মেলন করা যায়নি দফায় দফায় সময় বেঁধে দেয়ার পরও। এতে জেলায় জলায় বেড়েছে কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। তাই ঝিমিয়ে পড়া দলীয় কার্যক্রমকে সক্রিয় করা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফর শুরু করেছেন। সূত্র জানায়, বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন-কর্মসূচিকে মাথায় রেখেই দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়া হয়েছে। বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে বিরোধী দল আন্দোলনে যেতে পারে এ চিন্তা থেকেই এই সময়ের আগে দল গোছানোর কাজ শেষ করে আন্দোলন মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এবিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিন মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘ দিন পরে হলেও আমরা মেয়াদোত্তীর্ন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সম্মেলন করছি। এটা খুবই স্বাভাবিক যে এতে করে দলে গতিশীলতা আসবে। দল সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। তবে এ সম্মেলনের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলনের হুঙ্কারের কোন সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি কখন আন্দোলন করবে কখন তারা আন্দোলনের ঘোষণা দেবে এনিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।
তৃণমূলের সম্মেলনের বিষয়ে বিগত ঈদুল আজহার আগে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। এ সময় তিনি সম্মেলনে শেষ করার পাশাপাশি সম্মেলনকে ঘিরে যাতে কোনরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে জন্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দেন। গত ২০শে সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সকল মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা সম্মেলন শেষ করার বিষয়ে দলের উপদেষ্টাদের মতামত ও পরামর্শ চান শেখ হাসিনা। বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা জানিয়েছেন, দলকে চাঙ্গা করতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব জেলা ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারা বলেন, ইতিমধ্যে রাজশাহী বিভাগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ অন্যান্য জেলার সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে রাজশাহী বিভাগের আওতাধীন মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও খুলনা বিভাগের মহানগর, জেলা ও উপজেলা শাখার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সম্মেলন কর্মসূিচর অংশ হিসেবে ২৫শে অক্টোবর রাজশাহী মহানগর, ৯ই নভেম্বর জয়পুরহাট, ১৫ই নভেম্বর সিরাজগঞ্জ, ২০শে নভেম্বর চাঁপাই নবাবগঞ্জ ২৭শে নভেম্বর রাজশাহী জেলা, ২৯শে নভেম্বর পাবনা, ৩০শে নভেম্বর নাটোর, ৯ই ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট তারিখে এই সময়ের মধ্যে এসব জেলার বিভিন্ন উপজেলার সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। দলের দপ্তর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগের এসব সম্মেলনের সমন্বয় করবেন দলের এই বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। টিম প্রধান হিসেবে কাজ করবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক, কর্নেল (অব.) ফারুখ খান, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, খায়রুজ্জামান লিটন, আবদুর রহমান, আখতারুজ্জামান, মির্জা আজম ও এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। রংপুর জেলার দায়িপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাট জেলার সম্মেলন ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার সম্মেলনও ১৬ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়েছি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর, গাইবান্ধাসহ অন্য জেলার সম্মেলন হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চলছে। সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, হবিগঞ্জের জেলা সম্মেলন গত বছরই শেষ হয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের নভেম্বরে। মেয়াদ শেষে মহানগর ও জেলা সম্মেলন শেষ করতে চেষ্টা করব। এ ছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে তাই ডিসেম্বরের মধ্যে সুনামগঞ্জের জেলা সম্মেলনও শেষ হবে। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে খুলনা মহানগর ও দ্বিতীয় সপ্তাহে কুষ্টিয়া জেলার সম্মেলন হবে। এ ছাড়া বাকি জেলার সম্মেলন পর্যায়ক্রমে ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন, নভেম্বরের মধ্যেই খুলনার সকল উপজেলার সম্মেলন শেষ হবে।
সফর জনসংযোগের পর মাঠের কর্মসূচি দেবে বিএনপি
নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ফের মাঠে নামতে যাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দল। সাংগঠনিক পুনর্গঠন, জেলা পর্যায়ে জনসভা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে চাঙ্গা করা হচ্ছে জনসমর্থন। কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি সময় দেয়া হচ্ছে সরকারকেও। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের তরফে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব না এলে আবারও রাজপথের আন্দোলনে নামবে বিরোধী জোট। জেলা পর্যায়ে খালেদা জিয়ার সফর জনসংযোগের পর আসবে মাঠের কর্মসূচি। নির্দলীয় সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টিও ইস্যু হিসেবে সামনে আনতে পারে বিএনপি। নীলফামারীর জনসভায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে অথর্ব আখ্যায়িত করে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি ঘোষণার ব্যাপারে জোটের তরফে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিএনপি ও জোটের শরিক দলের একাধিক নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন। ২০শে অক্টোবর রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপি সমর্থিত মেয়র, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মতবিনিময় সভায় খোদ বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আমরা আন্দোলন করিনি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য অপেক্ষা করেছি। সরকারকে ১০ মাস সময় দিয়েছি। কিন্তু আর নয়। নীলফামারীর জনসভায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেবো। এ সরকারকে বিদায় করে আমরা ঘরে ফিরবো। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে। যারা দেশের পক্ষে থেকে, মানুষের পক্ষে থেকে আন্দোলন করে তারা পরাজিত হতে পারে না। অনেক মার খেয়েছি, এবার রক্ত দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। জয় আমাদের হবেই।
বিএনপি নীতিনির্ধারক ফোরামের দুই সদস্য জানান, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারাঙ্কোসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের প্রধান যুক্তি ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তখন তারা সে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্বল্পসময়ের সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেছিল। বিএনপি আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের সে অঙ্গীকারের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছিল। তাই ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর ফের আন্দোলনে নামতে সময় নিয়েছে বিরোধী জোট। তারা বলেন, সরকার তাদের অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়ে এখন পুরো বিষয়টিই অস্বীকার করছে। দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চায় সরকার। ফলে এখন আন্দোলনের বিকল্প নেই। নেতারা জানান, হঠাৎ করে যেমন আন্দোলন জমিয়ে তোলা যায় না তেমনি আগে-ভাগে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেও আন্দোলন সফল করা যায় না। পরিবেশ-পরিস্থিতি, জনগণে ফলে হুট করে নয়, নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি ও জনমত চাঙ্গা করেই বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে বিরোধী জোট। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানালেও আন্দোলনের সময় নির্ঘণ্ট না জানিয়ে নীলফামারীর জনসভায় খালেদা জিয়া বলেছেন, কবে আন্দোলন শুরু করবো তা আমি সময়মতো জানাবো। আগে মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে নিই। তারপর আন্দোলনের ডাক দেবো। আন্দোলন সম্পর্কে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা সহিংসতা চাই না। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমাদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের বিভিন্ন স্তর আছে। জনসভা করে আমরা গণসম্পৃক্ততার কাজটি করছি। নির্বাচন না দিলে আন্দোলনে আমরা এ সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবো। এদিকে যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে একাধিক পাবলিক পরীক্ষার শিডিউল রয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কোন বিঘ্ন ঘটাতে চায় না বিএনপি। তাই আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সফর ও রাজধানীতে ধারাবাহিক জনসভা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনসমর্থন ফের তুঙ্গে নেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানায়, জনসমর্থন ও আন্দোলনের ব্যাঘাত ঘটাতে নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে হুট করে অগোছালো কোন কর্মসূচি দেবে না ২০দল। দলীয় ইস্যুর চেয়ে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতেই বেশি গুরুত্ব দেবে ২০দল। তাই অযথা রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে যেতে নেতাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। আন্দোলন নিয়ে সরকারের অপপ্রচারের জবাবে খালেদা জিয়া বলেছেন, মানুষের জন্যই আমাদের আন্দোলন। আমরা আন্দোলন করবো- দেশের উন্নয়নে, মানুষের ভোটাধিকার আদায়ে, খুন-গুম থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্যই। আমাদের আন্দোলনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। দেশবাসীর আস্থা অর্জনে তিনি বলেন, দেশে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা পেলে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে, দেশের উন্নয়ন হবে। আমরা দেখিয়ে দেবো- আমরা পেরেছিলাম, আমরাই পারবো।
এদিকে দ্রুত নির্বাচনের দাবির পক্ষে জনসমর্থন গড়তে জেলায় জেলায় সফর জনসংযোগ শুরু করেছে বিএনপি। ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর ও নীলফামারী তিনটি জেলায় জনসভা করেছে ২০দল। তিনটি জনসভাতেই প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। সফর জনসংযোগের ধারাবাহিকতায় আরও তিনটি জেলায় জনসভার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে জোটের তরফে। আগামী ৩০শে অক্টোবর নাটোর ও ১২ই নভেম্বর কিশোরগঞ্জে জনসভা হবে। এছাড়া জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আগামী ৬ কিংবা ৭ই নভেম্বর কুমিল্লায় জনসভা হবে। সফর জনসংযোগের ধারাবাহিকতায় নভেম্বর-ডিসেম্বরে আরও কয়েকটি জেলায় জনসভা করতে পারে ২০দলীয় জোট। ওদিকে জনমত গঠনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপি সমর্থিত মেয়র, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অন্যান্য বিভাগীয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি মতবিনিময় করবেন। রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের প্রতিনিধি তাই জনগণের কাছে যাবেন। জনগণকে সরকারের অনিয়মের কথা বোঝাবেন। যে সময়ে আমি আন্দোলনের আহ্বান জানাবো, আপনারা হাজির হবেন। আন্দোলনের মাধ্যমেই এদের বিদায় করবো।
এদিকে নীলফামারী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিসুল আরেফিন চৌধুরী জানান, খালেদা জিয়ার জনসভার মাধ্যমে জনসমর্থনই কেবল সৃষ্টি হবে না সাংগঠনিক ভিত্তিও মজবুত হবে। জনসভা শেষে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। ওদিকে নাটোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বলেন, ৩০শে অক্টোবর খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে নানামুখী প্রস্তুতি চলছে। জেলা ও উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গদলের নেতাকর্মীরাও নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় প্রস্তুতি বৈঠক করছেন। প্রশাসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জনসভার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল ঢাকায় রাজশাহী বিভাগীয় ৯টি সাংগঠনিক জেলা বিএনপির নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, জনসভাটি হবে শহরের নবাব সিরাজউদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে। এ বিশাল মাঠে আওয়ামী লীগ কখনও জনসভার সাহস পায়নি। বারবার বিএনপিই এ মাঠে সমাবেশ করেছে এবং বিপুল লোকসমাগমের মাধ্যমে সফল করেছে। আশা করছি, জনসভায় নাটোরের স্মরণকালের বিপুল লোকের সমাগম ঘটবে। এদিকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার জানান, আগামী ৬-৭ই নভেম্বর সমাবেশের সম্ভাব্য দিন ঘোষণা করা হলেও ২৭শে অক্টোবর নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলা নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নেতৃত্বে সে বৈঠকে কুমিল্লা সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান সরকার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণে প্রস্তুতি শুরু করেছেন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। গতকালও কুমিল্লার হোমনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের নেতৃত্বে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। কুমিল্লা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে কুমিল্লায় আমাদের দু’জন সিনিয়র নেতা গুমসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। মামলায় জর্জরিত জেলার নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার সমাবেশ আয়োজনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে। তাই আমরা আশা করছি, কুমিল্লার সমাবেশ হবে স্মরণকালের বিশাল।
ডিসেম্বরের মধ্যেই দল গোছানোর প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের চলতি বছরের মধ্যেই দল গোছানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন, জেলা ও উপজেলা সম্মেলন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে প্রাণবন্ত করতে ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্র থেকে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর দলের সবপর্যায়ে সম্মেলনের বিধান রয়েছে। কিন্তু দুই দশক ধরে সম্মেলন হয় না এমন জেলা যেমন রয়েছে আবার ১০ থেকে ১২ বছর ধরে সম্মেলন হয় না এমন জেলার সংখ্যাও ১০টির বেশি। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ বিগত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সারা দেশের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ১৫টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করতে পেরেছে। একই সঙ্গে আরও ৫শ’ উপজেলা ও থানা কমিটির সম্মেলন এই সময়ের মধ্যে হতে পারেনি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর সাংগঠনিক দিক থেকে অনেকটাই গতিহীন হয়ে পড়েছিল দলটি। ঝিমিয়ে পড়ে দলীয় কার্যক্রম। জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সময়মতো দলের কেন্দ্রীয় কমিটি করা হলেও জেলা, উপজেলা ও থানা কমিটিগুলো সম্মেলন করা যায়নি দফায় দফায় সময় বেঁধে দেয়ার পরও। এতে জেলায় জলায় বেড়েছে কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। তাই ঝিমিয়ে পড়া দলীয় কার্যক্রমকে সক্রিয় করা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফর শুরু করেছেন। সূত্র জানায়, বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন-কর্মসূচিকে মাথায় রেখেই দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়া হয়েছে। বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে বিরোধী দল আন্দোলনে যেতে পারে এ চিন্তা থেকেই এই সময়ের আগে দল গোছানোর কাজ শেষ করে আন্দোলন মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এবিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিন মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘ দিন পরে হলেও আমরা মেয়াদোত্তীর্ন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সম্মেলন করছি। এটা খুবই স্বাভাবিক যে এতে করে দলে গতিশীলতা আসবে। দল সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। তবে এ সম্মেলনের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলনের হুঙ্কারের কোন সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি কখন আন্দোলন করবে কখন তারা আন্দোলনের ঘোষণা দেবে এনিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।
তৃণমূলের সম্মেলনের বিষয়ে বিগত ঈদুল আজহার আগে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। এ সময় তিনি সম্মেলনে শেষ করার পাশাপাশি সম্মেলনকে ঘিরে যাতে কোনরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে জন্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দেন। গত ২০শে সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সকল মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা সম্মেলন শেষ করার বিষয়ে দলের উপদেষ্টাদের মতামত ও পরামর্শ চান শেখ হাসিনা। বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা জানিয়েছেন, দলকে চাঙ্গা করতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব জেলা ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারা বলেন, ইতিমধ্যে রাজশাহী বিভাগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ অন্যান্য জেলার সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে রাজশাহী বিভাগের আওতাধীন মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও খুলনা বিভাগের মহানগর, জেলা ও উপজেলা শাখার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সম্মেলন কর্মসূিচর অংশ হিসেবে ২৫শে অক্টোবর রাজশাহী মহানগর, ৯ই নভেম্বর জয়পুরহাট, ১৫ই নভেম্বর সিরাজগঞ্জ, ২০শে নভেম্বর চাঁপাই নবাবগঞ্জ ২৭শে নভেম্বর রাজশাহী জেলা, ২৯শে নভেম্বর পাবনা, ৩০শে নভেম্বর নাটোর, ৯ই ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট তারিখে এই সময়ের মধ্যে এসব জেলার বিভিন্ন উপজেলার সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। দলের দপ্তর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগের এসব সম্মেলনের সমন্বয় করবেন দলের এই বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। টিম প্রধান হিসেবে কাজ করবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক, কর্নেল (অব.) ফারুখ খান, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, খায়রুজ্জামান লিটন, আবদুর রহমান, আখতারুজ্জামান, মির্জা আজম ও এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। রংপুর জেলার দায়িপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাট জেলার সম্মেলন ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার সম্মেলনও ১৬ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়েছি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর, গাইবান্ধাসহ অন্য জেলার সম্মেলন হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চলছে। সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, হবিগঞ্জের জেলা সম্মেলন গত বছরই শেষ হয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের নভেম্বরে। মেয়াদ শেষে মহানগর ও জেলা সম্মেলন শেষ করতে চেষ্টা করব। এ ছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে তাই ডিসেম্বরের মধ্যে সুনামগঞ্জের জেলা সম্মেলনও শেষ হবে। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে খুলনা মহানগর ও দ্বিতীয় সপ্তাহে কুষ্টিয়া জেলার সম্মেলন হবে। এ ছাড়া বাকি জেলার সম্মেলন পর্যায়ক্রমে ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন, নভেম্বরের মধ্যেই খুলনার সকল উপজেলার সম্মেলন শেষ হবে।
সফর জনসংযোগের পর মাঠের কর্মসূচি দেবে বিএনপি
নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ফের মাঠে নামতে যাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দল। সাংগঠনিক পুনর্গঠন, জেলা পর্যায়ে জনসভা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে চাঙ্গা করা হচ্ছে জনসমর্থন। কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি সময় দেয়া হচ্ছে সরকারকেও। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের তরফে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব না এলে আবারও রাজপথের আন্দোলনে নামবে বিরোধী জোট। জেলা পর্যায়ে খালেদা জিয়ার সফর জনসংযোগের পর আসবে মাঠের কর্মসূচি। নির্দলীয় সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টিও ইস্যু হিসেবে সামনে আনতে পারে বিএনপি। নীলফামারীর জনসভায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে অথর্ব আখ্যায়িত করে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি ঘোষণার ব্যাপারে জোটের তরফে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিএনপি ও জোটের শরিক দলের একাধিক নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন। ২০শে অক্টোবর রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপি সমর্থিত মেয়র, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মতবিনিময় সভায় খোদ বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আমরা আন্দোলন করিনি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য অপেক্ষা করেছি। সরকারকে ১০ মাস সময় দিয়েছি। কিন্তু আর নয়। নীলফামারীর জনসভায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেবো। এ সরকারকে বিদায় করে আমরা ঘরে ফিরবো। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে। যারা দেশের পক্ষে থেকে, মানুষের পক্ষে থেকে আন্দোলন করে তারা পরাজিত হতে পারে না। অনেক মার খেয়েছি, এবার রক্ত দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। জয় আমাদের হবেই।
বিএনপি নীতিনির্ধারক ফোরামের দুই সদস্য জানান, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারাঙ্কোসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের প্রধান যুক্তি ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তখন তারা সে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্বল্পসময়ের সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেছিল। বিএনপি আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের সে অঙ্গীকারের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছিল। তাই ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর ফের আন্দোলনে নামতে সময় নিয়েছে বিরোধী জোট। তারা বলেন, সরকার তাদের অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়ে এখন পুরো বিষয়টিই অস্বীকার করছে। দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চায় সরকার। ফলে এখন আন্দোলনের বিকল্প নেই। নেতারা জানান, হঠাৎ করে যেমন আন্দোলন জমিয়ে তোলা যায় না তেমনি আগে-ভাগে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেও আন্দোলন সফল করা যায় না। পরিবেশ-পরিস্থিতি, জনগণে ফলে হুট করে নয়, নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি ও জনমত চাঙ্গা করেই বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে বিরোধী জোট। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানালেও আন্দোলনের সময় নির্ঘণ্ট না জানিয়ে নীলফামারীর জনসভায় খালেদা জিয়া বলেছেন, কবে আন্দোলন শুরু করবো তা আমি সময়মতো জানাবো। আগে মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে নিই। তারপর আন্দোলনের ডাক দেবো। আন্দোলন সম্পর্কে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা সহিংসতা চাই না। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমাদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের বিভিন্ন স্তর আছে। জনসভা করে আমরা গণসম্পৃক্ততার কাজটি করছি। নির্বাচন না দিলে আন্দোলনে আমরা এ সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবো। এদিকে যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে একাধিক পাবলিক পরীক্ষার শিডিউল রয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কোন বিঘ্ন ঘটাতে চায় না বিএনপি। তাই আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সফর ও রাজধানীতে ধারাবাহিক জনসভা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনসমর্থন ফের তুঙ্গে নেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানায়, জনসমর্থন ও আন্দোলনের ব্যাঘাত ঘটাতে নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে হুট করে অগোছালো কোন কর্মসূচি দেবে না ২০দল। দলীয় ইস্যুর চেয়ে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতেই বেশি গুরুত্ব দেবে ২০দল। তাই অযথা রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে যেতে নেতাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। আন্দোলন নিয়ে সরকারের অপপ্রচারের জবাবে খালেদা জিয়া বলেছেন, মানুষের জন্যই আমাদের আন্দোলন। আমরা আন্দোলন করবো- দেশের উন্নয়নে, মানুষের ভোটাধিকার আদায়ে, খুন-গুম থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্যই। আমাদের আন্দোলনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। দেশবাসীর আস্থা অর্জনে তিনি বলেন, দেশে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা পেলে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে, দেশের উন্নয়ন হবে। আমরা দেখিয়ে দেবো- আমরা পেরেছিলাম, আমরাই পারবো।
এদিকে দ্রুত নির্বাচনের দাবির পক্ষে জনসমর্থন গড়তে জেলায় জেলায় সফর জনসংযোগ শুরু করেছে বিএনপি। ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর ও নীলফামারী তিনটি জেলায় জনসভা করেছে ২০দল। তিনটি জনসভাতেই প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। সফর জনসংযোগের ধারাবাহিকতায় আরও তিনটি জেলায় জনসভার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে জোটের তরফে। আগামী ৩০শে অক্টোবর নাটোর ও ১২ই নভেম্বর কিশোরগঞ্জে জনসভা হবে। এছাড়া জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আগামী ৬ কিংবা ৭ই নভেম্বর কুমিল্লায় জনসভা হবে। সফর জনসংযোগের ধারাবাহিকতায় নভেম্বর-ডিসেম্বরে আরও কয়েকটি জেলায় জনসভা করতে পারে ২০দলীয় জোট। ওদিকে জনমত গঠনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপি সমর্থিত মেয়র, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অন্যান্য বিভাগীয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি মতবিনিময় করবেন। রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের প্রতিনিধি তাই জনগণের কাছে যাবেন। জনগণকে সরকারের অনিয়মের কথা বোঝাবেন। যে সময়ে আমি আন্দোলনের আহ্বান জানাবো, আপনারা হাজির হবেন। আন্দোলনের মাধ্যমেই এদের বিদায় করবো।
এদিকে নীলফামারী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিসুল আরেফিন চৌধুরী জানান, খালেদা জিয়ার জনসভার মাধ্যমে জনসমর্থনই কেবল সৃষ্টি হবে না সাংগঠনিক ভিত্তিও মজবুত হবে। জনসভা শেষে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। ওদিকে নাটোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বলেন, ৩০শে অক্টোবর খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে নানামুখী প্রস্তুতি চলছে। জেলা ও উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গদলের নেতাকর্মীরাও নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় প্রস্তুতি বৈঠক করছেন। প্রশাসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জনসভার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল ঢাকায় রাজশাহী বিভাগীয় ৯টি সাংগঠনিক জেলা বিএনপির নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, জনসভাটি হবে শহরের নবাব সিরাজউদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে। এ বিশাল মাঠে আওয়ামী লীগ কখনও জনসভার সাহস পায়নি। বারবার বিএনপিই এ মাঠে সমাবেশ করেছে এবং বিপুল লোকসমাগমের মাধ্যমে সফল করেছে। আশা করছি, জনসভায় নাটোরের স্মরণকালের বিপুল লোকের সমাগম ঘটবে। এদিকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার জানান, আগামী ৬-৭ই নভেম্বর সমাবেশের সম্ভাব্য দিন ঘোষণা করা হলেও ২৭শে অক্টোবর নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলা নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নেতৃত্বে সে বৈঠকে কুমিল্লা সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান সরকার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণে প্রস্তুতি শুরু করেছেন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। গতকালও কুমিল্লার হোমনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের নেতৃত্বে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। কুমিল্লা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে কুমিল্লায় আমাদের দু’জন সিনিয়র নেতা গুমসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। মামলায় জর্জরিত জেলার নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার সমাবেশ আয়োজনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে। তাই আমরা আশা করছি, কুমিল্লার সমাবেশ হবে স্মরণকালের বিশাল।
No comments