এবার প্রক্টর-ছাত্রলীগ নেতার ফোনালাপ ফাঁস: কোটি টাকা ঈদ সালামি
এবার
ফাঁস হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের এক নেতার ফোনালাপের অডিও। কোটি টাকা লেনদেন নিয়ে ছাত্রলীগের
সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ
নেতার ফোনালাপ ফাঁসের কয়েক ঘণ্টা পরই নতুন ওই অডিও প্রকাশ পায়। প্রক্টরের
ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামজা
রহমান অন্তর। হামজা নিজেই এই ফোনালাপ ফাঁস করেন। ফোনালাপের এক পর্যায়ে
অন্তর বলেন- টাকার কথা এখন টক অব দ্যা টাউন। এটা তো অস্বীকার করারও কিছু
নাই স্যার। এ অডিও প্রকাশের বিষয়ে আগে থেকে জানিয়েছিলেনও তিনি। ফলে
শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।
পদত্যাগ করার আগে রাব্বানী অন্তরের মোবাইলে ফোন দিয়েই টাকা লেনদেনের খবর নিয়েছিলেন। ওই বিষয়ে জানতেই প্রক্টর ফিরোজ-উল-আলম তাকে ফোন করেন। এই ফোনালাপেও টাকা লেনদেনের তথ্য ওঠে আসে। কথোপকথনের সময় অন্তর দৃঢ়তার সঙ্গে প্রক্টরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ ব্যাচ পর্যন্ত এই টাকা ভাগ পেয়েছে। ওদিকে গতকাল জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন জানিয়েছেন, ভিসির কাছ থেকে ঈদের সালামি হিসেবে ১ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। এ টাকা নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
প্রক্টর ফিরোজ-উল-আলম ও হামজা রহমান অন্তরের কথোপকথন-
অন্তর: স্যার আসসালামু আলাইকুম
প্রক্টর: অন্তর, তুমি তোমার ফোন থেকে এমন একটা অডিও বানাইলা কেন?
অন্তর: স্যার আমি তো কিছু জানি না।
প্রক্টর: তোমার ফোন থেকেই তো কথা হয়েছে।
অন্তর: কথা তো হয়েছে দুই পক্ষ থেকে স্যার, আমার ফোন থেকে কিছু হয় নাই স্যার, এইটা শিউর থাকেন।
প্রক্টর: তুমিই তো কথা বললা, তোমার ফোন থেকেই তো কথা বলাই দিলা।
অন্তর: আমার ফোন থেকে কথা হইছে, কিন্তু ওই পাশে তো রাব্বানী ভাই ছিল। এখন রেকর্ডটা কি ওই পাশ থেকে হইছে, না কি গোয়েন্দা সংস্থা করছে সেটা তো আমি জানি না।
প্রক্টর: কবে তোমার সঙ্গে এই কথা হইছে?
অন্তর: স্যার, পরশু দিন রাতে যখন রাব্বানী ভাইদের কমিটি ভেঙে যাচ্ছিল। তখন আমারে হঠাৎ করে ফোন দিছে রাব্বানী ভাই। তখন আমার সঙ্গেই ছিল। তখন আমি বললাম, ভাই আমি তো বেশি কিছু জানি না, আপনি সাদ্দাম ভাই-এর সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললো। কথা বলে, আমার ফোন তো লক দেয়া আছে, আমার ফোনে তো কিছু করার সুযোগ নাই। ফোন কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনটা আমার হাতেই চলে আসে।
প্রক্টর: কিন্তু তোমার ফোন থেকেই তো কথোপকথনটা হলো রাব্বানীর সঙ্গে।
অন্তর: স্যার, আমার ফোন থেকে কথোপকথন কিন্তু ওই পাশে তো রাব্বানী ভাই ছিল।
প্রক্টর: রাব্বানীর যদি এমন রেকর্ড থাকে তাহলে এতদিন করে নাই কেন? এতদিন তোমার সঙ্গে কথা বলে আজকে সেটা পাবলিসড করতেছে কেন? ওই দিন করতো, কালকে করতো। নিজের হাতে ক্ষমতা নাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়টাকে নষ্ট করতে চায় কেন?
অন্তর: স্যার, আমি তো স্যার বেশি কিছু বলি নাই, স্যার আপনি হয়তো শুনছেন। আমি ধরাই দিছি ফোনটা।
প্রক্টর: হ্যাঁ তুমি ধরাই দিছো ফোনটা। কিন্তু আল্টিমেটলিতো ফোনটা তো তোমার।
অন্তর: স্যার, আমার ফোনে ফোন দিতে পারে না স্যার? সে আমার নেতা না?
প্রক্টর: না, ফোন দিতেই পারে। কিন্তু এই যে গল্পগুলো এই গল্পগুলো আগে বলেনি কেন? যদি এই গল্পগুলো থাকে?
অন্তর: স্যার, এই গল্পগুলো তো এখন টক অব দ্যা টাউন। এটা তো অস্বীকার করারও কিছু নাই স্যার। জাহাঙ্গীরনগরের এইটা তো একটা চলমান ইস্যু। আমি কি এইটা অস্বীকার করবো। রাব্বানী ভাই যখন আমারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করছে আমি কি অস্বীকার করবো? সে আমার নেতা না?
প্রক্টর: তুমি কি অস্বীকার করবা, তোমাকে কি অস্বীকার করতে বলছি? তোমাকে তো আমি কিছু অস্বীকার করতেই বলি নাই। তুমি স্বীকার করবা বা অস্বীকার করবা সেটা তো তোমার ব্যাপার।
অন্তর: স্যার, আপনি তো ভালো করেই জানেন স্যার। আমি হয়তো বাহিরে এক রকম বলবো কিন্তু আমার ঘরে যখন কেউ জিজ্ঞাস করবে তখন তো আমি আর মিথ্যা বলবো না।
প্রক্টর: আমি তোমাকে তো সত্য-মিথ্যা বলতে বলছি না।
অন্তর: আমার ফোন থেকে কিছু হয় নাই স্যার এইটা শিউর থাকেন।
প্রক্টর: কিন্তু এই যে সাদ্দাম যে কথাগুলো বলছে, এই কথাগুলো কতটুকু ট্রু?
অন্তর: স্যার ট্রু’র বিষয়টা তো স্যার জাস্টিফিকেশনের দায়িত্ব আমার না। রাব্বানী ভাই যদি সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতো সেটাও ফাঁস হইতো। কিন্তু আমার ফোন থেকে কথা বলে ফাঁস হলে তো এটা কিছু হয়ে আসে না। এই জিনিসটা তো স্যার সবাই জানে আপনিও জানেন স্যার।
প্রক্টর: না, আমি বলি তোমাকে, ফোনটা যেহেতু তোমার। দায়টা কিন্তু তোমাকেই নিতে হবে।
অন্তর: স্যার ফোন আলাপ ফাঁস হয় না? নির্বাচনের আগে দেখেন নাই আওয়ামী লীগ নেতাদের...
প্রক্টর: হ্যাঁ হয়। কিন্তু যেহেতু তোমার ফোনে করছে তুমি কি দায়টা এড়াতে পারো?
অন্তর: স্যার আমার কোনো দায় নাই স্যার, কারণ আমি করি নাই স্যার।
প্রক্টর: তুমি করো নাই ঠিক আছে, কিন্তু ধরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে এত বড় ষড়যন্ত্র... ওর অস্তিত্বে টান পড়ছে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এরকম করবে সে?
অন্তর: বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্র বিষয়টা এরকম না স্যার। ছাত্রলীগ নিয়েও তো স্যার ষড়যন্ত্র চলতেছে স্যার, গত চার পাঁচ দিন ধরে। এখন স্যার...
প্রক্টর: এইটা তো জাহাঙ্গীরনগরের ইস্যুর সঙ্গে না, তাদের বিরুদ্ধে তো পুরা গ্লোবাল ইস্যু আছে।
অন্তর: স্যার, আমি জাহাঙ্গীরনগরে না পড়লেও ছাত্রলীগ করতাম স্যার। আমার কাছে স্যার ছাত্রলীগ আগে।
প্রক্টর: সেটা তোমাকে আমি বলি নাই। ছাত্রলীগ আগে ভালো কথা। কিন্তু এখন জাহাঙ্গীরনগরে যেহেতু পড়ো জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রলীগ করো।
অন্তর: জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ তো আর জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে তৈরি হয় নাই। এইটা সেন্ট্রাল ছাত্রলীগ-এর একটা ইউনিট।
প্রক্টর: তুমি কিন্তু উল্টা দিকে কথা বলতেছো অন্তর।
অন্তর: না স্যার, আমি লজিক্যাল কথা বলতেছি স্যার, আমি আমার বাইরের লোক জিজ্ঞাস করলে আমি একটা কথা বলবো কিন্তু ঘরের লোক জিজ্ঞাস করলে আমি কি স্যার উল্টাপাল্টা কথা বলবো? আমি কি বলবো যে, ভাই হ্যাঁ এ রকম কিছু ঘটে নাই।
প্রক্টর: আমি তোমারে বলি, তুমি জাহাঙ্গীনগরে যদি না পড়তা, জাহাঙ্গীনগরের ছাত্রলীগ হিসাবে কিন্তু ইস্টাবলিস হতে না। জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ হিসেবেই তোমার পরিচয়।
অন্তর: স্যার, ক্যাম্পাসের ৪৪ থেকে ৪৫ ব্যাচ পর্যন্ত টাকা পাইছে স্যার, আমি এটা গোপন রাখার কে স্যার?
প্রক্টর: আচ্ছা তোমাদের কে টাকা দিলো আর কে টাকা দেয় নাই সেটা দেখার দায়িত্ব কি আমার?
অন্তর: স্যার আমাকেও তো টাকা সাধছে, আমি তো নেই নাই স্যার।
প্রক্টর: না তোমাকে কে সাধছে, না সাধছে সেটা তো আমি জানি না। কে দিয়েছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমার নাকি?
অন্তর: স্যার, আপনি যদি চান আমি আপনাকে প্রমাণ দেখাতে পারবো স্যার। ৪৪ থেকে ৪৫ ব্যাচও টাকা পাইছে স্যার।
প্রক্টর: আরে বাবা, এইটা নিয়ে কেন তুমি পড়ে আছো? টাকা কে দিছে, আমি তো সেটা জিজ্ঞাস করছি না।
এদিকে এই ফোনালাপ ফাঁস করায় অন্তরকে প্রক্টর হুমকি দিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে অভিযোগ করেছে। অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘অন্তরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো। আমি আসলে ফোনালাপ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ফোন দিয়েছি। সে অভিযোগ করছে আমি হুমকি দিয়েছি। আসলে এখানে হুমকিস্বরূপ একটা শব্দও নেই। অন্তর আসলে হতাশা থেকে তাড়াহুড়ো করে এই অভিযোগ করেছে।
পদত্যাগ করার আগে রাব্বানী অন্তরের মোবাইলে ফোন দিয়েই টাকা লেনদেনের খবর নিয়েছিলেন। ওই বিষয়ে জানতেই প্রক্টর ফিরোজ-উল-আলম তাকে ফোন করেন। এই ফোনালাপেও টাকা লেনদেনের তথ্য ওঠে আসে। কথোপকথনের সময় অন্তর দৃঢ়তার সঙ্গে প্রক্টরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ ব্যাচ পর্যন্ত এই টাকা ভাগ পেয়েছে। ওদিকে গতকাল জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন জানিয়েছেন, ভিসির কাছ থেকে ঈদের সালামি হিসেবে ১ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। এ টাকা নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
প্রক্টর ফিরোজ-উল-আলম ও হামজা রহমান অন্তরের কথোপকথন-
অন্তর: স্যার আসসালামু আলাইকুম
প্রক্টর: অন্তর, তুমি তোমার ফোন থেকে এমন একটা অডিও বানাইলা কেন?
অন্তর: স্যার আমি তো কিছু জানি না।
প্রক্টর: তোমার ফোন থেকেই তো কথা হয়েছে।
অন্তর: কথা তো হয়েছে দুই পক্ষ থেকে স্যার, আমার ফোন থেকে কিছু হয় নাই স্যার, এইটা শিউর থাকেন।
প্রক্টর: তুমিই তো কথা বললা, তোমার ফোন থেকেই তো কথা বলাই দিলা।
অন্তর: আমার ফোন থেকে কথা হইছে, কিন্তু ওই পাশে তো রাব্বানী ভাই ছিল। এখন রেকর্ডটা কি ওই পাশ থেকে হইছে, না কি গোয়েন্দা সংস্থা করছে সেটা তো আমি জানি না।
প্রক্টর: কবে তোমার সঙ্গে এই কথা হইছে?
অন্তর: স্যার, পরশু দিন রাতে যখন রাব্বানী ভাইদের কমিটি ভেঙে যাচ্ছিল। তখন আমারে হঠাৎ করে ফোন দিছে রাব্বানী ভাই। তখন আমার সঙ্গেই ছিল। তখন আমি বললাম, ভাই আমি তো বেশি কিছু জানি না, আপনি সাদ্দাম ভাই-এর সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললো। কথা বলে, আমার ফোন তো লক দেয়া আছে, আমার ফোনে তো কিছু করার সুযোগ নাই। ফোন কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনটা আমার হাতেই চলে আসে।
প্রক্টর: কিন্তু তোমার ফোন থেকেই তো কথোপকথনটা হলো রাব্বানীর সঙ্গে।
অন্তর: স্যার, আমার ফোন থেকে কথোপকথন কিন্তু ওই পাশে তো রাব্বানী ভাই ছিল।
প্রক্টর: রাব্বানীর যদি এমন রেকর্ড থাকে তাহলে এতদিন করে নাই কেন? এতদিন তোমার সঙ্গে কথা বলে আজকে সেটা পাবলিসড করতেছে কেন? ওই দিন করতো, কালকে করতো। নিজের হাতে ক্ষমতা নাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়টাকে নষ্ট করতে চায় কেন?
অন্তর: স্যার, আমি তো স্যার বেশি কিছু বলি নাই, স্যার আপনি হয়তো শুনছেন। আমি ধরাই দিছি ফোনটা।
প্রক্টর: হ্যাঁ তুমি ধরাই দিছো ফোনটা। কিন্তু আল্টিমেটলিতো ফোনটা তো তোমার।
অন্তর: স্যার, আমার ফোনে ফোন দিতে পারে না স্যার? সে আমার নেতা না?
প্রক্টর: না, ফোন দিতেই পারে। কিন্তু এই যে গল্পগুলো এই গল্পগুলো আগে বলেনি কেন? যদি এই গল্পগুলো থাকে?
অন্তর: স্যার, এই গল্পগুলো তো এখন টক অব দ্যা টাউন। এটা তো অস্বীকার করারও কিছু নাই স্যার। জাহাঙ্গীরনগরের এইটা তো একটা চলমান ইস্যু। আমি কি এইটা অস্বীকার করবো। রাব্বানী ভাই যখন আমারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করছে আমি কি অস্বীকার করবো? সে আমার নেতা না?
প্রক্টর: তুমি কি অস্বীকার করবা, তোমাকে কি অস্বীকার করতে বলছি? তোমাকে তো আমি কিছু অস্বীকার করতেই বলি নাই। তুমি স্বীকার করবা বা অস্বীকার করবা সেটা তো তোমার ব্যাপার।
অন্তর: স্যার, আপনি তো ভালো করেই জানেন স্যার। আমি হয়তো বাহিরে এক রকম বলবো কিন্তু আমার ঘরে যখন কেউ জিজ্ঞাস করবে তখন তো আমি আর মিথ্যা বলবো না।
প্রক্টর: আমি তোমাকে তো সত্য-মিথ্যা বলতে বলছি না।
অন্তর: আমার ফোন থেকে কিছু হয় নাই স্যার এইটা শিউর থাকেন।
প্রক্টর: কিন্তু এই যে সাদ্দাম যে কথাগুলো বলছে, এই কথাগুলো কতটুকু ট্রু?
অন্তর: স্যার ট্রু’র বিষয়টা তো স্যার জাস্টিফিকেশনের দায়িত্ব আমার না। রাব্বানী ভাই যদি সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতো সেটাও ফাঁস হইতো। কিন্তু আমার ফোন থেকে কথা বলে ফাঁস হলে তো এটা কিছু হয়ে আসে না। এই জিনিসটা তো স্যার সবাই জানে আপনিও জানেন স্যার।
প্রক্টর: না, আমি বলি তোমাকে, ফোনটা যেহেতু তোমার। দায়টা কিন্তু তোমাকেই নিতে হবে।
অন্তর: স্যার ফোন আলাপ ফাঁস হয় না? নির্বাচনের আগে দেখেন নাই আওয়ামী লীগ নেতাদের...
প্রক্টর: হ্যাঁ হয়। কিন্তু যেহেতু তোমার ফোনে করছে তুমি কি দায়টা এড়াতে পারো?
অন্তর: স্যার আমার কোনো দায় নাই স্যার, কারণ আমি করি নাই স্যার।
প্রক্টর: তুমি করো নাই ঠিক আছে, কিন্তু ধরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে এত বড় ষড়যন্ত্র... ওর অস্তিত্বে টান পড়ছে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এরকম করবে সে?
অন্তর: বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্র বিষয়টা এরকম না স্যার। ছাত্রলীগ নিয়েও তো স্যার ষড়যন্ত্র চলতেছে স্যার, গত চার পাঁচ দিন ধরে। এখন স্যার...
প্রক্টর: এইটা তো জাহাঙ্গীরনগরের ইস্যুর সঙ্গে না, তাদের বিরুদ্ধে তো পুরা গ্লোবাল ইস্যু আছে।
অন্তর: স্যার, আমি জাহাঙ্গীরনগরে না পড়লেও ছাত্রলীগ করতাম স্যার। আমার কাছে স্যার ছাত্রলীগ আগে।
প্রক্টর: সেটা তোমাকে আমি বলি নাই। ছাত্রলীগ আগে ভালো কথা। কিন্তু এখন জাহাঙ্গীরনগরে যেহেতু পড়ো জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রলীগ করো।
অন্তর: জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ তো আর জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে তৈরি হয় নাই। এইটা সেন্ট্রাল ছাত্রলীগ-এর একটা ইউনিট।
প্রক্টর: তুমি কিন্তু উল্টা দিকে কথা বলতেছো অন্তর।
অন্তর: না স্যার, আমি লজিক্যাল কথা বলতেছি স্যার, আমি আমার বাইরের লোক জিজ্ঞাস করলে আমি একটা কথা বলবো কিন্তু ঘরের লোক জিজ্ঞাস করলে আমি কি স্যার উল্টাপাল্টা কথা বলবো? আমি কি বলবো যে, ভাই হ্যাঁ এ রকম কিছু ঘটে নাই।
প্রক্টর: আমি তোমারে বলি, তুমি জাহাঙ্গীনগরে যদি না পড়তা, জাহাঙ্গীনগরের ছাত্রলীগ হিসাবে কিন্তু ইস্টাবলিস হতে না। জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ হিসেবেই তোমার পরিচয়।
অন্তর: স্যার, ক্যাম্পাসের ৪৪ থেকে ৪৫ ব্যাচ পর্যন্ত টাকা পাইছে স্যার, আমি এটা গোপন রাখার কে স্যার?
প্রক্টর: আচ্ছা তোমাদের কে টাকা দিলো আর কে টাকা দেয় নাই সেটা দেখার দায়িত্ব কি আমার?
অন্তর: স্যার আমাকেও তো টাকা সাধছে, আমি তো নেই নাই স্যার।
প্রক্টর: না তোমাকে কে সাধছে, না সাধছে সেটা তো আমি জানি না। কে দিয়েছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমার নাকি?
অন্তর: স্যার, আপনি যদি চান আমি আপনাকে প্রমাণ দেখাতে পারবো স্যার। ৪৪ থেকে ৪৫ ব্যাচও টাকা পাইছে স্যার।
প্রক্টর: আরে বাবা, এইটা নিয়ে কেন তুমি পড়ে আছো? টাকা কে দিছে, আমি তো সেটা জিজ্ঞাস করছি না।
এদিকে এই ফোনালাপ ফাঁস করায় অন্তরকে প্রক্টর হুমকি দিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে অভিযোগ করেছে। অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘অন্তরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো। আমি আসলে ফোনালাপ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ফোন দিয়েছি। সে অভিযোগ করছে আমি হুমকি দিয়েছি। আসলে এখানে হুমকিস্বরূপ একটা শব্দও নেই। অন্তর আসলে হতাশা থেকে তাড়াহুড়ো করে এই অভিযোগ করেছে।
জাবি ভিসির কোটি টাকা ‘ঈদ সালামি’
সদ্য অব্যাহতি দেয়া ছাত্রলীগ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের মধ্যে ফাঁস হওয়া ফোনালাপে আলোচিত ১ কোটি টাকা জাবি ভিসি ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি হিসেবে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন করেছেন সাদ্দাম হোসাইন। গতকাল সোমবার এই ফোনালাপ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি এই মন্তব্য করেন। জানা যায়, গতকাল সোমবার দুপুরে হঠাৎ করে দেড় শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী সমেত ঘণ্টাখানেক শোডাউন দেন সাদ্দাম হোসাইন। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা শোডাউন না। সামনে ভর্তি পরীক্ষা তো তাই ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করলাম। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে কিনা।’ এসময় তিনি বলেন, ভিসির বাসায় মিটিংয়ে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয় আমাদের ঈদ সেলামি বাবদ টাকা দেবে। সেখানে আমাদের ১ কোটি টাকা ঈদ সালামি হিসেবে দেওয়ার কথা হয়। পরদিন তারা জুয়েল (শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি) চঞ্চলের (শাখা ছাত্রলীগ সম্পাদক) কাছে টাকাটা পৌঁছে দিয়েছে। আমরা (সাদ্দাম গ্রুপ) চঞ্চলের কাছ থেকে আমদের ভাগের টাকা নিছি। ভিসি ম্যাম কোথা থেকে এই টাকাটা দিছে আমরা জানি না। আমরা টাকাটা নিয়ে আমরা সালামি বাবদ পুলাপাইনকে (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) টাকাটা দিছি।
প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, টেন্ডার শিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তখন আমরা (সাদ্দামের গ্রুপ) মাঠে নেমে সবার টেন্ডার ড্রপ করা নিশ্চিত করি। আমরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। যদি টাকা পয়সা বা দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে চান তবে শিডিউল বিক্রি থেকে ওপেন হওয়া পর্যন্ত ভিসির ছেলের (প্রতীক হোসেন) ফোন রেকর্ড যদি বের করতে পারেন তাহলে মোটামুটি সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশেষ করে ৯ই আগস্টের আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ের আগে ও পরে আমাদের সঙ্গে ভিসির ম্যামের ছেলের যে কথা হয়ছে তা বের করতে পারলে তবে আর কোনো সন্দেহ থাকবে না।’ শিডিউল ছিনতাইয়ের যে কথা বলছেন তার কি আপনারা তদন্ত বা বিচার চান কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, অবশ্যই। আমরা যেকোনো ধরনের দুর্নীতির বিপক্ষে। আমরা শিডিউল ছিনতাইয়ের যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার চাই।’
শোডাইনে শাখা সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লা, সহসভাপতি নিয়ামুল হোসেন তাজ, সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক হাসান ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, মওলানা ভাসানী হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও সালাম বরকত হলের দেড় শতাধিক নেতাকর্মীদের দেখা যায়। এই চার হল নিয়ন্ত্রণ করছে দাবি করে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘এছাড়াও মীর মশাররফ হোসেন হল ও আ ফ ম কামাল উদ্দীন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাদের সঙ্গে আছে। শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক ক্যাম্পাসে নেই। এখানে সাংগঠনিক নিয়ম মানা হয়না। যেসব প্রেস রিলিজ যাচ্ছে শাখা ছাত্রলীগের নাম করে তা সভাপতি একা দেয়, এটা একটা অংশের প্রেস রিলিজ। কখনো জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের কিছু না। আমি আমার গ্রুপের রাজনীতি সবাইকে নিয়ে করব।
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ফোনালাপ ওরা ওরা করছে, বানিয়ে করছে। আমার জানামতে আমার ছেলেও ওদের সঙ্গে আলাপ করেনি। এখানে শিক্ষকদের ইন্ধন থাকতে পারে। তবে কারা সেটা আমি বলব না।
এদিকে ফাঁসকৃত ফোনালাপ জাবি ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী ‘ষড়যন্ত্র’ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ভিসিপন্থি শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ। অন্যদিকে এই ফোনালাপকে ‘মিথ্যাচার’ দাবি করে সকলকে মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সমর্থন ও অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দুর্নীতির স্বরূপ উন্মোচন ও এর বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
No comments