নবজাতক সারাকে ফেলে লাপাত্তা মা-বাবা by মরিয়ম চম্পা
নবজাতক
সারা। বয়স মাত্র চার দিন। জন্মের দুই দিনের মাথায় হাসপাতালেই তাকে ফেলে
গেছেন বাবা-মা । সারার এই নামটি রেখেছে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুধুমাত্র জন্ম পরিচয় সংকটের কারণে বাবা-মা দু’জনেই ফেলে গেছে ফুটফুটে এই
কন্যা শিশুটিকে। সারার মায়ের বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার জন্ম। এটা নিয়েই
মূলত বাবা-মায়ের দ্বন্দ্বের শুরু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়েছে গল্পের
ডালপালা। ইতোমধ্যে নবজাতকটিকে দত্তক নিতে হাসপাতালে এসেছেন একাধিক পরিবার।
তারা শিশুটির ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে চান। তবে সময় যত গড়িয়েছে নবজাতকটির
অভিভাবকত্বের বিষয়টি ততোটাই জটিল হচ্ছে। এখন সারার প্রকৃত বাবা-মাকেও তাকে
সন্তান হিসেবে পেতে হলে পারিবারিক আদালতের মধ্যে দিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে
হবে। ইতোমধ্যে শিশুটিকে সমাজকল্যাণ অধিদফতরের অধীনে পরিচালিত শিশু নিবাস
ছোটমনিতে হস্তান্তরের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মানবজমিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
ঢাকা মেডিকেলের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে জন্ম নেয় নবজাতকটি। ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেয়া ছন্দার মা ফরিদা বেগম মানবজমিনকে বলেন, শিশুটিকে ম্যাট-০৪ এবং বেড নং-২৪ এ ফেলে রেখে যায় তার বাবা-মা। ঘটনার দিন দুপুরে নবজাতক মা নাহারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় বাবা রাসেলের। রাসেল তার স্ত্রীকে বলেন, তোমাকে বিয়ে করেছি মাত্র ছয় মাস। অথচ বাচ্চার বয়স ১০ মাস। এটা তো আমার বাচ্চা না। তাহলে এই বাচ্চার দায়িত্ব আমি কেনো নিবো? বায়োলজিকালি আমি এই বাচ্চার বাবা না। এটা কার বাচ্চা? শিশুটির মা বলেন, তুমি তো আগের স্বামীর কাছ থেকে আমাকে নিয়ে এসেছো। এখন খারাপ ব্যবহার করছো কেনো? এছাড়া বাচ্চাকে স্তন পান করানো নিয়ে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত আনসার ইসলাম নূরের সঙ্গেও স্বামী রাসেলের কথা কাটাকাটি হয়। আনসারকে রাসেল বলে, তুই আমার স্ত্রীর দিকে কুনজরে তাকিয়েছিস কেনো। এরপর আনসার সদস্যকে দুই থেকে তিনটি ধাক্কা দেয়। বকাঝকা করে। পরে রাসেল তার মুঠোফোনে শিশুটির ছবি তোলেন। পরবর্তীতে সে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যায়।
এসময় নবজাতকের মা নাহার বেগম তার মাকে ফোন দিয়ে বলেন, গাড়ি নিয়ে তারাতারি এসো, আমাকে নিয়ে যাও। এসময় তার মা একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে তাকে নিয়ে যায়। আমি শিশুটির মায়ের হাত ধরে অনেক অনুরোধ করে বলেছিলাম, শিশুটিকে ফেলে যাবেন না। পরিকল্পনা করে স্বামী-স্ত্রী আনসার সদস্যদের ওপর দোষ দিয়ে দুজনেই পালিয়ে যায়। তাদের কথাবার্তা শুনে ধারণা করা হচ্ছে শিশুটির জন্মদাতা হচ্ছে অন্য কেউ।
প্রত্যক্ষদর্শী অপর এক নারী বলেন, শিশুটির জন্য আমার খুব কষ্ট লেগেছে। ওর জন্য আমি কেঁদেছি। মূলত জন্মপরিচয় সংকটের কারণে শিশুটিকে বাবা-মা দুজনেই পূর্বপরিকল্পনা করে ফেলে গেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাচ্চাকে হাসপাতাল থেকে নিবে না। এতো সুন্দর ফুটফুটে একটি শিশুকে কোনো মা ফেলে যেতে পারে। বেশভূষা দেখে মনে হয়েছে মেয়েটির মা ভালো পরিবারের ।
এ বিষয়ে ঘটনার দিন দায়িত্বরত আনসার সদস্য বলেন, নবজাতক ওয়ার্ডে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। শিশুটির বাবা এসে জোর করে ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে চাইলে আমি বাধা দেই। পরবর্তীতে সে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ করে এসে সে আমাকে বকাঝকা শুরু করে। এবং বলে, ‘তুই আমার স্ত্রীর দিকে খারাপ নজরে তাকিয়েছিস কেনো’। সে আমাকে একাধিক ধাক্কা দেয়। শিশুটির মা’ও তখন এখানে চলে আসে। পরবর্তীতে তারা দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়ে যায়। এসময় শিশুর মা’কে ডেকে বলি বাচ্চা নিয়ে যেতে। সে বলেন, বাচ্চা লাগবে না আমার। আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেছি। এমন বাবা-মা আমি জীবনেও দেখিনি। এটা ওদের আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল যে, আমার সঙ্গে ঝগড়া করে শিশুকে ফেলে পালিয়ে যাবে।
ঢাকা মেডিকেলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, পুরো হাসপাতাল সিসি ক্যামেরার অধীনে থাকলেও কে নবজাতকটির বাবা-মা, সেটা চিহিৃত করা বেশ কঠিন। তাছাড়া সিজারের আগে তারা অসম্পূর্ণ ঠিকানা দিয়েছে। ফলে তাদেরকে সরাসরি চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তাদের মুঠোফোন নাম্বার থাকলে হয়তো ট্র্যাকিং করা যেত। এখন তো কেউ শিশুটির অভিভাবকত্য দাবি করলেও হবে না। যে ই তাদের বাবা-মা হন না কেনো কিংবা অভিভাবকত্য দাবি করবেন, তাদেরকে ডিএনএ পরীক্ষা এবং পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আসতে হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ইচ্ছা করে ফেলে রেখে গেছে। হয়তো শিশুটির জন্ম পরিচয় সংক্রান্ত কোনো সমস্যা রয়েছে। কিংবা সামাজিক সমস্যা হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের সঙ্গে শিশুটিকে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছি। দুই একদিনের মধ্যে এসে তারা ওকে নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে শিশুটিকে অভিভাবকত্ব নিতে একটি পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু আইনি কিছু জটিলতার কারণে আমরা তাকে দিতে পারিনি।
ঢাকা মেডিকেলের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে জন্ম নেয় নবজাতকটি। ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেয়া ছন্দার মা ফরিদা বেগম মানবজমিনকে বলেন, শিশুটিকে ম্যাট-০৪ এবং বেড নং-২৪ এ ফেলে রেখে যায় তার বাবা-মা। ঘটনার দিন দুপুরে নবজাতক মা নাহারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় বাবা রাসেলের। রাসেল তার স্ত্রীকে বলেন, তোমাকে বিয়ে করেছি মাত্র ছয় মাস। অথচ বাচ্চার বয়স ১০ মাস। এটা তো আমার বাচ্চা না। তাহলে এই বাচ্চার দায়িত্ব আমি কেনো নিবো? বায়োলজিকালি আমি এই বাচ্চার বাবা না। এটা কার বাচ্চা? শিশুটির মা বলেন, তুমি তো আগের স্বামীর কাছ থেকে আমাকে নিয়ে এসেছো। এখন খারাপ ব্যবহার করছো কেনো? এছাড়া বাচ্চাকে স্তন পান করানো নিয়ে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত আনসার ইসলাম নূরের সঙ্গেও স্বামী রাসেলের কথা কাটাকাটি হয়। আনসারকে রাসেল বলে, তুই আমার স্ত্রীর দিকে কুনজরে তাকিয়েছিস কেনো। এরপর আনসার সদস্যকে দুই থেকে তিনটি ধাক্কা দেয়। বকাঝকা করে। পরে রাসেল তার মুঠোফোনে শিশুটির ছবি তোলেন। পরবর্তীতে সে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যায়।
এসময় নবজাতকের মা নাহার বেগম তার মাকে ফোন দিয়ে বলেন, গাড়ি নিয়ে তারাতারি এসো, আমাকে নিয়ে যাও। এসময় তার মা একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে তাকে নিয়ে যায়। আমি শিশুটির মায়ের হাত ধরে অনেক অনুরোধ করে বলেছিলাম, শিশুটিকে ফেলে যাবেন না। পরিকল্পনা করে স্বামী-স্ত্রী আনসার সদস্যদের ওপর দোষ দিয়ে দুজনেই পালিয়ে যায়। তাদের কথাবার্তা শুনে ধারণা করা হচ্ছে শিশুটির জন্মদাতা হচ্ছে অন্য কেউ।
প্রত্যক্ষদর্শী অপর এক নারী বলেন, শিশুটির জন্য আমার খুব কষ্ট লেগেছে। ওর জন্য আমি কেঁদেছি। মূলত জন্মপরিচয় সংকটের কারণে শিশুটিকে বাবা-মা দুজনেই পূর্বপরিকল্পনা করে ফেলে গেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাচ্চাকে হাসপাতাল থেকে নিবে না। এতো সুন্দর ফুটফুটে একটি শিশুকে কোনো মা ফেলে যেতে পারে। বেশভূষা দেখে মনে হয়েছে মেয়েটির মা ভালো পরিবারের ।
এ বিষয়ে ঘটনার দিন দায়িত্বরত আনসার সদস্য বলেন, নবজাতক ওয়ার্ডে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। শিশুটির বাবা এসে জোর করে ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে চাইলে আমি বাধা দেই। পরবর্তীতে সে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ করে এসে সে আমাকে বকাঝকা শুরু করে। এবং বলে, ‘তুই আমার স্ত্রীর দিকে খারাপ নজরে তাকিয়েছিস কেনো’। সে আমাকে একাধিক ধাক্কা দেয়। শিশুটির মা’ও তখন এখানে চলে আসে। পরবর্তীতে তারা দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়ে যায়। এসময় শিশুর মা’কে ডেকে বলি বাচ্চা নিয়ে যেতে। সে বলেন, বাচ্চা লাগবে না আমার। আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেছি। এমন বাবা-মা আমি জীবনেও দেখিনি। এটা ওদের আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল যে, আমার সঙ্গে ঝগড়া করে শিশুকে ফেলে পালিয়ে যাবে।
ঢাকা মেডিকেলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, পুরো হাসপাতাল সিসি ক্যামেরার অধীনে থাকলেও কে নবজাতকটির বাবা-মা, সেটা চিহিৃত করা বেশ কঠিন। তাছাড়া সিজারের আগে তারা অসম্পূর্ণ ঠিকানা দিয়েছে। ফলে তাদেরকে সরাসরি চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তাদের মুঠোফোন নাম্বার থাকলে হয়তো ট্র্যাকিং করা যেত। এখন তো কেউ শিশুটির অভিভাবকত্য দাবি করলেও হবে না। যে ই তাদের বাবা-মা হন না কেনো কিংবা অভিভাবকত্য দাবি করবেন, তাদেরকে ডিএনএ পরীক্ষা এবং পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আসতে হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ইচ্ছা করে ফেলে রেখে গেছে। হয়তো শিশুটির জন্ম পরিচয় সংক্রান্ত কোনো সমস্যা রয়েছে। কিংবা সামাজিক সমস্যা হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের সঙ্গে শিশুটিকে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছি। দুই একদিনের মধ্যে এসে তারা ওকে নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে শিশুটিকে অভিভাবকত্ব নিতে একটি পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু আইনি কিছু জটিলতার কারণে আমরা তাকে দিতে পারিনি।
No comments