বর্ষপূর্তি বিশেষ: ইতিহাস যখন চলমান বাস্তব by নোজোমি হায়াসে
[জাপানি
কলাম লেখক ও প্রবন্ধকার নোজোমি হায়াসে। মানব উন্নয়ন নিয়ে স্নাতকোত্তর
সম্পন্ন করেছেন তিনি। পিএইচডি করেছেন মনোবিজ্ঞানে। তার লেখালেখি ও সক্রিয়তা
সব মানুষের স্বাধীনতার প্রতি উৎসর্গিত। জনসমাজকে শক্তিশালী করতে তথ্য
ফাঁসকারী ও ক্রিপ্টো কারেন্সির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসহ মুক্তমত ও জবাবদিহি
সংক্রান্ত ইস্যুগুলো তার কাজের এলাকা। ক্ষমতাশালীদের তথ্য ফাঁসকারী সাড়া
জাগানো সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস-এর উত্থান থেকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে
সাম্প্রতিক বিচার প্রক্রিয়ার সূচনার ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখেছেন নোজোমি।
বইটির নাম ‘উইকিলিকস, দ্য গ্লোবাল ফোর্থ এস্টেট: হিস্ট্রি ইজ হ্যাপেনিং’।
২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল বইটি প্রকাশিত হয়। বইটির শেষ পর্বের শিরোনাম
‘হিস্ট্রি ইজ হ্যাপেনিং’, আমরা যার ভাষান্তর করেছি ‘ইতিহাস যখন চলমান
বাস্তব’।]
উইকিলিকস-এর জন্মের মধ্য দিয়ে প্রথম বৈশ্বিক ফোর্থ এস্টেটের উত্থান। আমরা দাঁড়িয়েছি এক নব্য ইতিহাসের বাঁকপর্বে। এমন এক সৃজনশীল শক্তি হিসেবে সংস্থাটির আবির্ভাব, অতীতের ঐতিহাসিক ক্ষতচিহ্নগুলোকে যা মুছে দিতে সক্ষম। লড়তে সক্ষম মানুষের চিরস্থায়ী দুর্ভোগ-দুর্দশার কারণ হিসেবে জারি থাকা নিষ্ঠুর ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। বাস্তবতা হলো, উইকিলিকস ইতিহাস ব্যাপারটাকেই আদতে বদলে দিয়েছে।
ডিজিটাল যুগের উদ্ভাবন উইকিলিকস আবির্ভূত হয়েছে অবাধ তথ্য প্রবাহের প্রেরণা হয়ে। সংস্থাটি ইন্টারনেটকে এমন এক স্থানে পরিণত করেছে, যেখানে ইতিহাস নির্মিত হয়। ইতিহাস এখন আর অতীতের কোনও বিষয় নয়। জনসম্পৃক্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত মানুষের হাতেই এখন ইতিহাস নির্মিত হচ্ছে, বর্তমানে সাহসী ভূমিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তা (ইতিহাস) রূপান্তরিত হচ্ছে ভবিষ্যতে।
প্রয়াত ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন বলেন: ‘দুঃসময়ে আশাবাদী হওয়া নিছক নির্বোধ রোমান্টিকতা নয়। বরং এই সত্য উপলব্ধি করা যে, মানব-ইতিহাস কেবল নিষ্ঠুরতার নয়; সহানুভূতি-আত্মদান-সাহস-মমতারও বটে। জটিলতর এই ইতিহাসের মধ্যে যে উপাদানগুলোকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নির্বাচন করবো, সেগুলোই আমাদের জীবনের নির্ধারক হবে।
সবকিছুতে কেবল নেতিবাচকতা খুঁজলে আমাদের সক্রিয় হওয়ার সক্ষমতা নষ্ট হবে। আমরা যদি [সহানুভূতি-আত্মদান-সাহস-মমতার] ঐতিহাসিক সময় ও স্থানগুলোকে স্মরণ করি, তখন আমরা এমন বহু ঘটনা দেখতে সক্ষম হবো, যেখানে মানুষ চমৎকার সব কীর্তি গড়েছে। এতে অন্ততপক্ষে পরিবর্তনোন্মুখ বিষয়গুলোকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
আমরা যদি সামান্য পরিমাণেও সক্রিয় হই, তবে আমাদের কোনও একটা কল্পবাদী আদর্শ সমাজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ভবিষ্যৎ হলো বর্তমানের অবিরত যাত্রাপথের পরম্পরা; আর আমাদের চারপাশে খারাপ যা কিছু আছে তাকে উপেক্ষা করতে পারাটাই অনেক বড় ব্যাপার। মানবজাতির যাপনক্রিয়া যেমন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি, সেভাবে যাপন করতে পারাটাই এক অবিশ্বাস্য রকমের জয়।
ইতিহাসের অতীতকে মানুষের প্রত্যক্ষ দৃশ্যমান বর্তমানের মধ্যে স্থাপন করেছে উইকিলিকস। সম্মিলিত জনসাধারণের ক্ষমতার সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে উইকিলিকস-এর যে ন্যায়যুদ্ধ, তার মধ্যে আমি মানবতার অতীত ও ভবিষ্যৎ দাবির জন্য সংগ্রাম দেখেছি। সরকার ও ক্ষমতাশালী করপোরেশনগুলোর বাধা ও নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে এর সাহস, সৃজনশীলতা ও বিবেকবোধকে দেখেছি আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। উইকিলিকস-এ সাধারণ মানুষের অধিকার সংরক্ষিত হওয়ায় সংঘাত আর দুর্নীতির প্রাবল্য সত্ত্বেও আমি এমন মুহূর্তের আবির্ভাব হতে দেখেছি, যেখানে শান্তির বিজয়কেতন ওড়ে, ন্যায়বিচারের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দিন। প্রতারণাই যেখানে বাস্তবতা, সেখানে সমর্পণ আর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যেখানে একসময় ঘৃণা বিরাজিত ছিল, সেখানে দেখেছি প্রত্যেক মানুষের হৃদয়জাত ভালোবাসা। মানুষে মানুষে সহজাত দায়িত্ববোধ আর অঙ্গীকারের কথা মনে রেখে তাদের সংগ্রাম করতে দেখেছি।
আর্কাইভের মধ্য দিয়ে উইকিলিকস মানুষের প্রাত্যহিকতাকে ইতিহাসের সম্মুখ সারিতে নিয়ে এসেছে। বৈশ্বিক এই ফোর্থ এস্টেটকে ঘিরে জনসাধারণের ক্ষমতার নতুন একটি নেটওয়ার্ক-এর উত্থান ঘটছে। এটি এমন এক ক্ষমতা, যার মধ্য দিয়ে মুক্তমত ও সমতার প্রশ্ন সব মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়। ইতিহাস এখন আর আমাদের স্মৃতিতে জমাট বাঁধা কিংবা বিস্মৃত কোনও অতীত নয়। আবার গুটিকয়েকের ইশারায় এখন আর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ নেই। ইতিহাস এখন উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিদিনের চলমান বাস্তবতা হিসেবে, যে উন্মোচন-প্রক্রিয়ায় আমরা প্রত্যেকেই এক-একজন রচয়িতা কিংবা পরিবর্তক অথবা সংস্কারক।
উইকিলিকস-এর জন্মের মধ্য দিয়ে প্রথম বৈশ্বিক ফোর্থ এস্টেটের উত্থান। আমরা দাঁড়িয়েছি এক নব্য ইতিহাসের বাঁকপর্বে। এমন এক সৃজনশীল শক্তি হিসেবে সংস্থাটির আবির্ভাব, অতীতের ঐতিহাসিক ক্ষতচিহ্নগুলোকে যা মুছে দিতে সক্ষম। লড়তে সক্ষম মানুষের চিরস্থায়ী দুর্ভোগ-দুর্দশার কারণ হিসেবে জারি থাকা নিষ্ঠুর ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। বাস্তবতা হলো, উইকিলিকস ইতিহাস ব্যাপারটাকেই আদতে বদলে দিয়েছে।
ডিজিটাল যুগের উদ্ভাবন উইকিলিকস আবির্ভূত হয়েছে অবাধ তথ্য প্রবাহের প্রেরণা হয়ে। সংস্থাটি ইন্টারনেটকে এমন এক স্থানে পরিণত করেছে, যেখানে ইতিহাস নির্মিত হয়। ইতিহাস এখন আর অতীতের কোনও বিষয় নয়। জনসম্পৃক্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত মানুষের হাতেই এখন ইতিহাস নির্মিত হচ্ছে, বর্তমানে সাহসী ভূমিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তা (ইতিহাস) রূপান্তরিত হচ্ছে ভবিষ্যতে।
প্রয়াত ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন বলেন: ‘দুঃসময়ে আশাবাদী হওয়া নিছক নির্বোধ রোমান্টিকতা নয়। বরং এই সত্য উপলব্ধি করা যে, মানব-ইতিহাস কেবল নিষ্ঠুরতার নয়; সহানুভূতি-আত্মদান-সাহস-মমতারও বটে। জটিলতর এই ইতিহাসের মধ্যে যে উপাদানগুলোকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নির্বাচন করবো, সেগুলোই আমাদের জীবনের নির্ধারক হবে।
সবকিছুতে কেবল নেতিবাচকতা খুঁজলে আমাদের সক্রিয় হওয়ার সক্ষমতা নষ্ট হবে। আমরা যদি [সহানুভূতি-আত্মদান-সাহস-মমতার] ঐতিহাসিক সময় ও স্থানগুলোকে স্মরণ করি, তখন আমরা এমন বহু ঘটনা দেখতে সক্ষম হবো, যেখানে মানুষ চমৎকার সব কীর্তি গড়েছে। এতে অন্ততপক্ষে পরিবর্তনোন্মুখ বিষয়গুলোকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
আমরা যদি সামান্য পরিমাণেও সক্রিয় হই, তবে আমাদের কোনও একটা কল্পবাদী আদর্শ সমাজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ভবিষ্যৎ হলো বর্তমানের অবিরত যাত্রাপথের পরম্পরা; আর আমাদের চারপাশে খারাপ যা কিছু আছে তাকে উপেক্ষা করতে পারাটাই অনেক বড় ব্যাপার। মানবজাতির যাপনক্রিয়া যেমন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি, সেভাবে যাপন করতে পারাটাই এক অবিশ্বাস্য রকমের জয়।
ইতিহাসের অতীতকে মানুষের প্রত্যক্ষ দৃশ্যমান বর্তমানের মধ্যে স্থাপন করেছে উইকিলিকস। সম্মিলিত জনসাধারণের ক্ষমতার সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে উইকিলিকস-এর যে ন্যায়যুদ্ধ, তার মধ্যে আমি মানবতার অতীত ও ভবিষ্যৎ দাবির জন্য সংগ্রাম দেখেছি। সরকার ও ক্ষমতাশালী করপোরেশনগুলোর বাধা ও নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে এর সাহস, সৃজনশীলতা ও বিবেকবোধকে দেখেছি আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। উইকিলিকস-এ সাধারণ মানুষের অধিকার সংরক্ষিত হওয়ায় সংঘাত আর দুর্নীতির প্রাবল্য সত্ত্বেও আমি এমন মুহূর্তের আবির্ভাব হতে দেখেছি, যেখানে শান্তির বিজয়কেতন ওড়ে, ন্যায়বিচারের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দিন। প্রতারণাই যেখানে বাস্তবতা, সেখানে সমর্পণ আর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যেখানে একসময় ঘৃণা বিরাজিত ছিল, সেখানে দেখেছি প্রত্যেক মানুষের হৃদয়জাত ভালোবাসা। মানুষে মানুষে সহজাত দায়িত্ববোধ আর অঙ্গীকারের কথা মনে রেখে তাদের সংগ্রাম করতে দেখেছি।
আর্কাইভের মধ্য দিয়ে উইকিলিকস মানুষের প্রাত্যহিকতাকে ইতিহাসের সম্মুখ সারিতে নিয়ে এসেছে। বৈশ্বিক এই ফোর্থ এস্টেটকে ঘিরে জনসাধারণের ক্ষমতার নতুন একটি নেটওয়ার্ক-এর উত্থান ঘটছে। এটি এমন এক ক্ষমতা, যার মধ্য দিয়ে মুক্তমত ও সমতার প্রশ্ন সব মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়। ইতিহাস এখন আর আমাদের স্মৃতিতে জমাট বাঁধা কিংবা বিস্মৃত কোনও অতীত নয়। আবার গুটিকয়েকের ইশারায় এখন আর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ নেই। ইতিহাস এখন উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিদিনের চলমান বাস্তবতা হিসেবে, যে উন্মোচন-প্রক্রিয়ায় আমরা প্রত্যেকেই এক-একজন রচয়িতা কিংবা পরিবর্তক অথবা সংস্কারক।
No comments