মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আসছে
থার্ড
কমিটির পর এবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে রোহিঙ্গা
নির্যাতনের অভিযোগে একটি প্রস্তাব পাস হতে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার জেনেভায়
কাউন্সিলের ২৭তম বিশেষ অধিবেশনে আলোচনা শেষে যে প্রস্তাবটি গৃহীত হতে
যাচ্ছে, এর খসড়ায় রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ
করা হয়েছে। জেনেভার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের অনুরোধে
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল ‘মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী
ও অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক অধিবেশনটি ডেকেছে। এখন
থেকে এক দশক আগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অধিবেশন ডেকেছিল জাতিসংঘ মানবাধিকার
কাউন্সিল। ২০০৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের পঞ্চম বিশেষ
অধিবেশনে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর একটি প্রস্তাব
পাস হয়েছিল। প্রস্তাবটিতে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমনের
নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কারাবন্দী সব রাজনীতিবিদকে মুক্তির দাবি করা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে
বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অনুরোধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশেষ
অধিবেশনটি ডাকা হয়েছে। এ ধরনের অধিবেশন ডাকতে হলে ৪৭ সদস্যের কাউন্সিলে
ন্যূনতম ১৬টি দেশ বা এক-তৃতীয়াংশ সমর্থনের প্রয়োজন। এ পর্যন্ত সৌদি আরব
ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ কাউন্সিলের ৩৩টি
সদস্যদেশ ও ৪০টি পর্যবেক্ষক দেশ বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রস্তাবে সমর্থন
দিয়েছে। গত রোববার ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে
বিশেষ ওই অধিবেশনে এখনো দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীন ও ভারতের সমর্থন পায়নি
বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের জোরালো সমর্থন চীন এ
নিয়ে আগ্রহী নয়। থার্ড কমিটির মতো এখানেও চীন বিরোধিতা করতে পারে বলে
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে। জানা গেছে, এ ধরনের বিশেষ অধিবেশনের পর
সভাপতির বক্তব্য কিংবা প্রস্তাব গ্রহণ দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের অনুরোধে আহূত অধিবেশনটিতে প্রস্তাব পাসের উদ্যোগ বাংলাদেশ এক
মাস আগেই নিয়েছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ গত মাসে মিয়ানমারের
সঙ্গে চুক্তি সই করায় কোনো কোনো দেশ প্রস্তাব পাস না করার পক্ষে তৎপরতা
চালাচ্ছে। থার্ড কমিটি নামে পরিচিত জাতিসংঘের সামাজিক, মানবিক ও
সংস্কৃতিবিষয়ক ফোরামে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে প্রস্তাব পাসের ১৮
দিন পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে একটি প্রস্তাব পাস হতে যাচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, খসড়া প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি নিয়ে
ভোটাভুটি হতে পারে কিংবা সর্বসম্মতভাবেও তা পাস হতে পারে। খসড়া
প্রস্তাবটিতে থার্ড কমিটির উপাদানগুলো থাকার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসনসহ তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে
বাড়তি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার
কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে প্রস্তাব পাসের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে
বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকেরা বলেন, সাধারণ কাউন্সিলের নিয়মিত অধিবেশনে
পাস হওয়া প্রস্তাব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আছে। বিশেষ অধিবেশনের প্রস্তাবও
সেভাবে অনুসরণ করতে হয়। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিলে প্রস্তাবটি পাস হওয়া যথেষ্ট
গুরুত্বপূর্ণ।
No comments