নিয়মনীতি মানছেন না রিকশাচালকেরা
কোনো
নিয়মনীতি নেই। যার যেভাবে খুশি চালাচ্ছেন। চলছে ভিআইপি সড়কেও। কোনো কোনো
এলাকায় চলছে ব্যাটারি লাগিয়ে। কখনো কখনো পুরো শহরটাকে মনে হয় ‘যেন রিকশার
শহর’। কোনো কোনো এলাকায় রিকশাই বাধা হচ্ছে পথ চলতে। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট
সূত্র জানায়, নগরীর রাস্তায় চলাচলকারী সব যানবাহন ও চালকের জন্য আইন থাকলেও
রিকশা চলছে কোনো আইন না মেনেই। অথচ ভুক্তভোগীরা বলেছেন, প্রতিদিন
রাজধানীতে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে তার বেশির ভাগের জন্য দায়ী এই রিকশা।
রাজধানীর অলিগলি থেকে ভিআইপি সড়ক সবই এখন রিকশার দখলে। ১২-১৪ বছরের শিশু
থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এসব রিকশার চালক। দিন-রাত এই রিকশা চলছে কোনো
নিয়মনীতি ছাড়াই। যেভাবে পারছে, যে জায়গা থেকে পারছে রিকশা চলছে। রিকশার
গ্যারেজ মালিক ও রিকশা চালকদের তথ্যানুযায়ী রাজধানীতে এখন ১২ লাখের ওপর
রিকশা চলছে। তবে এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে কোনো তথ্য নেই।
রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশা চালকেরা নিষেধাজ্ঞাও মানছেন না। রাজধানীর ভিআইপি
সড়কসহ কিছু কিছু সড়কে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না
চালকেরা। যাদের দায়িত্ব রয়েছে এগুলো নিয়ন্ত্রণের সেই ট্রাফিক পুলিশও এ
ব্যাপারে নির্বিকার। পুলিশের সামনে দিয়েই ভিআইপি সড়কে রিকশা চলছে। আর এ
ক্ষেত্রে সুযোগ করে দিচ্ছে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। গতকাল
দুপুরের দিকে মৎস্যভবন এলাকায় দেখা যায় ১০ মিনিটে ৩১টি রিকশা দায়িত্বরত
ট্রাফিক কনস্টেবলকে ম্যানেজ করে ভিআইপি রাস্তায় ঢুকে যেতে। রিকশাগুলো
শিল্পকলার গেট পার হয়েই গোপনে ট্রাফিক কনস্টেবলের হাতে কী যেন গুঁজে
দিচ্ছে, আর তিনি রিকশাগুলো ছেড়ে দিচ্ছেন। শামীম হাওলাদার নামে এক
মোটরসাইকেল চালক বলেন, যতবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন প্রতিবারই ঘটেছে
রিকশাওয়ালাদের জন্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিদিন নতুন করে রিকশা নামছে
রাজধানীর রাস্তায়। রিকশার কোনো লাইসেন্স লাগে না। চালকেরও কোনো লাইসেন্স
বা প্রশিক্ষণ লাগে না। শুধু প্যাডেল ঘোরাতে পারলেই চলে। অভিযোগ রয়েছে এই
রিকশা এখন প্রশাসন থেকে শুরু করে একটি সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কোটি কোটি
টাকার উপার্জনের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৫ বছরে অন্তত শত কোটি টাকা হাতিয়ে
নেয়া হয়েছে রিকশার ভুয়া নম্বর প্লেট বিক্রি করে। আর ওই নম্বর প্লেটকেই বৈধ
বলে ধরে গণ্য করছে পুলিশ প্রশাসন।
ওই নম্বর প্লেট যেসব রিকশার রয়েছে তা
অবাধে চলতে পারছে রাজধানীতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ এই বাণিজ্য চলছে
রিকশা-ভ্যান মালিক ও শ্রমিক নামধারী কিছু সংগঠনের ব্যানারে। সহায়তা করছে
সিটি করপোরেশন এবং মহানগর পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য। বানানো ওই নম্বর প্লেট
দিয়েই চলছে অন্তত ১২ লাখ রিকশা ও ভ্যান। তবে এর নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই
ঢাকা সিটি করপোরেশন বা ট্রাফিক পুলিশের কাছে। এখন রাজধানীর সব পথঘাট
উন্মুক্ত পেয়ে রিকশা ও ভ্যানের সংখ্যা আরো বেড়ে চলছে। সূত্র জানায়, সরকারি
কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও রাজধানীতে রিকশাচালকের সংখ্যা ১৫ লাখের কম হবে
না। সূত্র জানায়, যারা এক সময় রিকশার নম্বর প্লেট বিক্রি করতেন তাদের
অনেকেই এখন রাজনৈতিক দলের বড় নেতা। রিকশা-ভ্যান মালিক-শ্রমিক সংগঠন সূত্রে
জানা যায়, রাজধানীতে বর্তমানে কমপক্ষে ১০ লাখ রিকশা-ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও
ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। কিন্তু বৈধ লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৮৭ হাজার। এই লাইসেন্সও
অনেক পুরনো। এর মধ্যে রিকশা ৭৯ হাজার ৫৫৪টি, ভ্যান ৮ হাজার। বাদবাকি
ঠেলাগাড়ি ও ঘোড়াগাড়িসহ অন্যান্য অযান্ত্রিক বাহন। ১৯৮৬ সালে শেষ লাইসেন্স
ইস্যু করা হয়। অজ্ঞাত কারণে গত ৩১ বছর ধরে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো বৈধ
লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে না। আর পুরনো লাইসেন্স নবায়নও করা হচ্ছে না। আর
এই সুযোগে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন সংগঠনের নামে রিকশা-ভ্যানের লাইসেন্স
দিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় রিকশা মালিক ও
শ্রমিকদের নামে অন্তত ২৮টি সংগঠন রয়েছে। এরাই মূলত রাজধানীর রিকশা ব্যবসা
নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কোনো এলাকায়
মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রিকশা নিষিদ্ধ করা হয়। ওই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল
আছে। কিন্তু তা কার্যকর নেই। এই সুযোগে ভিআইপি রোডেও চলছে রিকশা-ভ্যান।
No comments