আওয়ামী লীগে মোতাহার বিএনপিতে হাসান এগিয়ে
পাটগ্রাম
ও হাতীবান্ধা উপজেলা নিয়ে লালমনিরহাট-১ আসনটি এখন শাসক দল আওয়ামী লীগের
দখলে। গত তিন দফায় এ আসন থেকে জয়লাভ করে নৌকা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী
আওয়ামী লীগের এমপি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন আগামী নির্বাচনেও
মনোনয়ন প্রার্থী। ২০০৮ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি হন।
তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া এ এলাকাটিতে এর আগে রাজত্ব করে জাতীয় পার্টি।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে চার বার এমপি হন জাতীয় পার্টির
সাবেক নেতা জয়নুল আবেদিন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে রাগে-অভিমানে ২০১০ সালে তিনি
জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। বরাবরই এ আসনে বিএনপির অবস্থান কিছুটা
দুর্বল। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তারা আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসনটি নিজেদের
কব্জায় নিতে চায়। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে দলটি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন ছাড়াও
আওয়ামী লীগের আরও বেশ কয়েক জন মনোনয়ন প্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠে প্রচারে
ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরা হচ্ছেন- পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন
বাবুল, প্রবীণ নেতা মকবুল হোসেন, হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত
হোসেন বাচ্চু ও উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান। তবে
প্রার্থীদের ভিড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ মেজর (অব.) মো. খালেদ
আখতারের মনোনয়নের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে
তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন। নিজের মতো করে তিনি এলাকাকে গোছাচ্ছেন। তবে
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অথবা
কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে এ আসনের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। দলের
নেতাকর্মীরা বলছেন, এরশাদ এ আসনে নির্বাচন করলে সব হিসাব পাল্টে যাবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এমজি মোস্তফা বলেন, ‘সবাই চায়
আমাদের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বা কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ
আসনে নির্বাচন করুক।’ জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক একেএম মাহবুবুল আলম
মিঠু যুগান্তরকে জানান, লালমনিরহাট-১ আসনে মেজর (অব.) খালেদ আখতারের মনোনয়ন
চূড়ান্ত। এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এরা হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির সদস্য এবং পাটগ্রাম উপজেলার
বাসিন্দা ব্যারিস্টার হাসান রাজীব। মনোনয়ন তালিকায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন বলে
দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা হয়
কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে তারা বলেন, ‘বর্তমান
এমপি মোতাহার হোসেনের কারণে যারা দলীয় নেতা হিসেবে ইউপি নির্বাচনে
মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে চারজনই ছিলেন হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ওই চারজন ত্যাগী নেতাকে নৌকা
প্রতীক পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হলেও তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে
ভোটে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে
ক্ষোভ রয়েছে বলেও জানান তারা।’ এসব কারণে এলাকার মানুষ বর্তমান এমপির
বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট-১
আসনের এমপি মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন মুঠোফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ
করেন। তবে তিনি সংক্ষেপে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে হাতীবান্ধা-পাটগ্রামে
আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কথা আপনারা (সাংবাদিকরা) শোনেন,
আমি তো আর জানি না।’ ২০১৪ সাল থেকেই দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন পাটগ্রাম উপজেলা
পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহুল আমিন বাবুল।
১৯৮১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রথমে পাটগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ
সম্পাদক পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০১ সাল থেকে তিনি উপজেলা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। টানা দুই বার পাটগ্রাম
উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান তিনি। এ প্রসঙ্গে রুহুল আমিন বাবুল
বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপেক্ষাকৃত তরুণ সৎ ও
ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজছেন। সেদিক থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুও ছাত্রলীগের হাত
ধরে আওয়ামী লীগে আসেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির
দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। লিয়াকত হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘আমাদের এখানে
সাবেক মন্ত্রী মোতাহার ভাই আছেন। ওনার ওপর দিয়ে কথা বলা যাবে না। এর পরেও
যদি দল বিবেচনা করে তাহলে আন্তরিকভাবেই তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে
জানিয়েছেন। বর্তমান এমপি মোতাহার হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত
হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান
দলের সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। আগামী সংসদ
নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী। জানতে চাইলে সরওয়ার হায়াত বলেন, ‘মনে
অনেক দুঃখ-কষ্ট আছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা ত্যাগের কারণেই আমি মনোনয়ন
চাইব। তবে মোতাহার হোসেন মনোনয়ন পেলে তার কোনো আপত্তি নাই বলেও জানান।’
জোটভুক্ত নির্বাচনের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে এ আসনে নির্বাচনে করে আসছেন
জামায়াতের প্রার্থী। তবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের বাইরে চলে যাওয়া এবং
বিদ্যমান বাস্তবতার কারণে আগামী নির্বাচনে জামায়াত সরাসরি অংশ নিতে পারবে
না।
ফলে প্রায় ২১ বছর পর ধানের শীষ প্রতীকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার
সুযোগ তৈরি হয়েছে বিএনপির। এ লক্ষ্যে বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের মধ্যে
দ্বন্দ্ব-কোন্দল থাকার পরও আগামী নির্বাচনে আসনটি বিএনপি নিজের দখলে রাখতে
চাইছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান মাঠ গোছানোর
কাজে নেমে পড়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রবীণ নেতা ও সাবেক এমপি
জয়নুল আবদিনের পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন। এর পরিবর্তে তার তার ছেলে
সায়েদুজ্জামান কোয়েল তৎপর হয়ে উঠেছেন। এর বাইরে হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপির
সভাপতি মোশারফ হোসেন, যুবদল নেতা ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান
শামসুজ্জামান সেলিম, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা এমএ শাহীন আকন্দ আগামী সংসদ
নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক
নেতা বলেন, জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা ব্যারিস্টার হাসানের মনোনয়ন পাওয়ার
সম্ভাবনা উজ্জ্বল। পাটগ্রামের এ বাসিন্দা আইনি পেশার কারণে ঢাকায় থাকলেও
মাঝেমধ্যেই ছুটে আসছেন এলাকায়। জানতে চাইলে ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান
বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পাব বলে বিশ্বাস রাখি। সেইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে
হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের মানুষজন বিএনপির পক্ষেই রায় দেবে বলে মনে করি।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা শাহীন আকন্দ বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৮ বছর ছাত্রদলের
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি
হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের জনগণের জন্য কাজ করছি। তাই আগামী নির্বাচনে আমিও
মনোনয়ন প্রত্যাশী।
No comments